কিস্তি দুই: কিস্তি একঃ ‘জনগণ’, ‘জনগণের অভিপ্রায়’ এবং গণরাজনীতির চ্যালেঞ্জ

 Farhad Mazhar    4 August 2022
কিস্তি দুই: কিস্তি একঃ ‘জনগণ’, ‘জনগণের অভিপ্রায়’ এবং গণরাজনীতির চ্যালেঞ্জ
………………………………………………………………………………………
১. দ্বিজাতিতত্ত্ব – অর্থাৎ জাতিবাদের যুগে ধর্মই জাতীয় পরিচয় এবং জাতিরাষ্ট্রের ভিত্তি – এই আদর্শের ভিত্তিতে ভারত ভাগ হয়েছে। পাশ্চাত্যে গড়ে ওঠা জাতিবাদ এবং জাতিরাষ্ট্রের ধারণা উপনিবেশবিরোধী জাতিবাদ বা পরিচয়বাদকে নির্মাণ করেছে। পাশ্চাত্যের জাতিবাদী চিন্তার পরিমণ্ডলের মধ্যে ভারতে উপনিবেশ বিরোধী আন্দোলন হয়েছে। পাশ্চাত্যের আধুনিক জাতিবাদ ভারতে ধর্মীয় জাতিবাদ বা পরিচয়বাদের রূপ পরিগ্রহণ করে। এর সঙ্গে ধর্মের সম্পর্ক বাহ্যিক।  দ্বিজাতিতত্ত্ব বাইরে থেকে ধর্মবাদী বা ধর্মীয় তত্ত্ব মনে হলেও আদতে ইংরেজি শিক্ষিত উঠতি মধ্যবিত্ত শ্রেণীর আধুনিক জাতিবাদী চিন্তা চেতনারই নির্মাণ। আলাদা কিছু না। উপমহাদেশে ধর্ম, ধর্মের ইতিহাস এবং ধর্মের পর্যালোচনা যেসকল শক্তিশালী ধারা গড়ে উঠেছিল, পাশ্চাত্য জাতিবাদ অচিরেই তাদের অর্জনকে আড়াল করে ফেলতে সক্ষম হয়েছে। এখ্ন আমরা ডুগডুগি বাজিয়ে বাউলদের মঞ্চে নাচাই। কিন্তু বুঝতে পারি না ভক্তি আন্দোলন ছিল জাতপাত, নারীপুরুষ ভেদ এবং  ব্রাহ্মণ্য এবং আশরাফ শ্রেণীর ধর্মীয় ব্যাখ্যা, ক্ষমতা এবং ক্ষমতাচর্চার বিরুদ্ধে গণমানুষের মতাদর্শিক ও রাজনৈতিক লড়াই। ঔপনিবেশিক ডামাডোলে সুতা যেখানে ছিঁড়ে গিয়েছে সেখান থেকে আবার গিঁট বাঁধতে হবে। কিন্তু ইতোমধ্যে ফকিরফ্যাকড়া বাউলগিরি, বয়াতিগিরি, পীরমুর্শিদি নামে যা কিছু এখনও অবশিষ্ট আছে তারা প্রায় সবই আগবাগডুম ‘কাল্ট’ হয়ে গিয়েছে। তারা  সমাজবিচ্ছিন্ন অন্তর্মুখী ধারা এবং বিনোদন ইন্ড্রাস্ট্রির কাঁচামালে পর্যবসিত।  এই জঞ্জাল থেকে সকল প্রকার পরিচয়বাদ, জাতিবাদ ও মানুষের সঙ্গে মানুষের সহজ সম্পর্ক নির্মান বা ঐক্যের ধারা গড়ে তোলা স্রেফ সাংস্কৃতিক বিনোদনগিরি না, রীতিমতো বুদ্ধিবৃত্তিক, সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক কাজ। ‘সহজ মানুষ’ উদ্ধার দীর্ঘ ও কঠিন রাজনীতি। এই হুঁশ দ্রুত আমাদের ফিরে পাওয়া দরকার। এই ধরনের অবস্থাকে সাধারণ ভাবে আমরা উত্তরোপনিবেশিক (Post-colonial)  অবস্থা বা হাল বলতে পারি। একে আমলে নিয়েই আমাদের রাজনীতি, সাহিত্য, সংস্কৃতি এবং বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াই গড়ে তুলতে হবে।
২. দ্বিজাতিতত্ত্বের মর্ম হচ্ছে ধর্ম বা ধর্ম পরিচয়ই আমাদের জাতি পরিচয় নির্ণয় করে। যদি দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে দেশভাগ হয়ে থাকে তাহলে পাকিস্তান যেমন মুসলমানদের রাষ্ট্র, ভারতও তেমনি হিন্দুদের রাষ্ট্র হিশাবেই সাতচল্লিশে ভাগ হয়েছিল। সেকুলারিজমের জোব্বা এবং সংবিধান প্রণয়ণের সাফল্য দিয়ে ভারত রাষ্ট্র নিজের হিন্দুত্ববাদী সত্তা এতোকাল আড়াল রাখতে পেরেছিল, এখন তা খসে যাচ্ছে;  নোংরা ও বীভৎস চেহারা নিয়ে ভারত উদাম হয়ে পড়েছে। রাষ্ট্র হিশাবে ভারতের টিকে থাকা না থাকা এখন হিন্দুত্ববাদী চরম সন্ত্রাস বনাম ভারতীয় সংবিধান টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ে পর্যবসিত হয়েছে। ভারত বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর অস্তিত্বের জন্যও হুমকি হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি ভারতে হিন্দুত্ববাদ বনাম ভারতীয় সংবিধানের দ্বন্দ্ব প্রখর হয়েছে। এর ফল কি দাঁড়ায় আগামিতে ধীরে ধীরে দেখা যাবে।
৩. স্রেফ ভৌগলিক কারণে পাকিস্তান একটি এবসার্ড রাষ্ট্র। একটি দেশ যার দুই ভাগ হাজার মাইলে দুইদিকে বিভক্ত, মাঝখানে শত্রু ভারত!! অবিশ্বাস্য। পাকিস্তান ভৌগলিক কারণেই ভেঙে যেত। তবু পাকিস্তান কিছুকাল টিকে ছিল। সেটাই বরং আশ্চর্যের। সাতচল্লিশে পাকিস্তান ও ভারত দুটোই ধর্মবাদী রাষ্ট্র বা ধর্মের পরিচয়কেই জাতীয় পরিচয় গণ্য করে বিভক্ত হয়েছিল। কিন্তু ধর্মবাদী ভারত চরম হিন্দুত্ববাদী ও উপমহাদেশ থেকে ইসলাম নির্মূল নীতি চর্চা করেও টিকে আছে। প্রশ্ন হচ্ছে হিন্দুত্ববাদী ভারত যদি টিকল, তুলনায় ধর্মবাদী মুসলমানদের পাকিস্তান টিকল না কেন? একটি কারন সহজে আমরা বুঝি। ভারত নিদেনপক্ষে একটা ‘সংবিধান’ বানাতে পেরেছে, পাকিস্তান তাও পারে নি। ভারত সংবিধান প্রণয়ন করবার সামর্থের জোরে এখনও টিকে রয়েছে, কিন্তু পাকিস্তান জনগণের জন্য ‘সংবিধান’ প্রণয়ন দূরের কথা সংবিধান প্রণয়ণের ব্যর্থতার ফলে টিকে থাকতে পারল না। সংবিধান প্রণয়ন করবার ব্যর্থতাই পাকিস্তান ভেঙে যাবার কারন। তাহলে সংবিধানকে আমরা যতো সহজে উকিল-মোক্তার, এডভোকেট, ব্যারিস্টার, বিচারপতিদের খেলাধূলার বিষয় মনে করি ব্যাপারটা মোটেও তা না। আমামদের সকলের জন্যই খুবই গুরুতর রাজনৈতিক বিষয়, যা আমাদের ইতিহাস, ভবিষ্যৎ এবং বর্তমান জীবনকে সরাসরি প্রভাবিত করে।
৪. বাংলাদেশের অভ্যূদয় নিয়ে যে সকল গল্প আমরা শুনি সেখানে ‘লিগাল ফ্রেইমওয়ার্ক অর্ডার ১৯৭০’- [ এলএফও] এর কথা আমরা একদমই শুনি না। এর অধীনে সত্তরের নির্বাচন, নির্বাচনের পরে গণপরিষদ আহ্বান না করার মধ্য দিয়ে পাকিস্তানে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ও রাজনৈতিকতার যে ছেদ ঘটেছে এবং পাকিস্তান দুই ভাগ হয়ে গেল, তা নিয়ে আলোচনা আমরা কমই করি। না করার সঙ্গত কারণ আছে। যদি করা হয় তাহলে বাহাত্তরের সংবিধানের তাৎপর্য পরিষ্কার ধরা পড়ত। আমরা স্বীকার করতাম লিগাল ফ্রেইম ওয়ার্ক অর্ডারের অধীনে যারা পাকিস্তানের সংবিধান প্রণয়ণের জন্য নির্বাচিত হয়েছিল, তারা কোন ভাবেই স্বাধীন ও মুক্ত বাংলাদেশে বাংলাদেশের ‘গঠনতন্ত্র’ প্রণয়ণের অধিকারী হতে পারে না। সত্তরের নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ ইয়াহিয়া খানের লিগাল ফ্রেইমওয়ার্ক অর্ডারের অধীনে পাকিস্তানের গণপরিষদে পাকিস্তানীদেরই নির্বাচিত করেছিল। কারণ তারা পাকিস্তানের গণপরিষদের জন্যই  নির্বাচিত হয়েছিলেন।
বাংলাদেশের ইউসুফ আলী স্বাক্ষরিত ‘স্বাধীনতার ঘোষণা’তেও পাকিস্তান গণপরিষদের জন্য নির্বাচিত পাকিস্তানীরা নিজেদের স্বাধীন বাংলাদেশের ‘গণপরিষদ’ হিশাবে ঘোষণা করেছেন। অথচ সেটা ছিল অবৈধ। পাকিস্তান গণপরিষদের জন্য নির্বাচিত সদস্যরা নিজেদের স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রতিনিধি হতে পারে না। তারা নিজেদের বিপ্লবী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হিশাবে ঘোষণা করে নি। তারা পাকিস্তান ও লিগাল ফ্রেইম ওয়ার্ক অর্ডারের ধারাবাহিকতা রক্ষা করেছে। গণপরিষদের সদস্য দাবি করার অর্থ পাকিস্তানের সংবিধানের অধীনে নিজেদের নির্বাচিত গণ্য করা। তারা নিজেরাই তাদের আইনী-রাজনৈতিক (Juridico-political)সত্তাকে পাকিস্তানের গণপরিষদের ধারাবাহিকতা হিশাবে ঘোষণা করেছে। অতএব স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করবার কোন অধিকার তাদের ছিল না।
ঠিক তেমনি মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জনগণের বিজয়ের পরও এই পাকিস্তানীরাই নিজেদের বাংলাদেশের গণপরিষদ হিশাবে বহাল বলে ঘোষণা দেয় এবং স্বাধীন বাংলাদেশে্র সংবিধান প্রণয়ণের জন্য নিজেদের কোন নির্বাচন ছাড়াই স্বঘোষিত গণপরিষদ হিশাবে ঘোষণা দেয়। এই পাকিস্তানীরাই বাহাত্তরের সংবিধান বানায় ও বাংলাদেশের জনগণের ওপর চাপিয়ে দেয়। অথচ সংবিধান প্রণয়ণের কোন ঐতিহাসিক বা বৈধ এখতিয়ার তাদের ছিল না।
৫. ভাবুন, পাকিস্তানের সংবিধান প্রণয়নের জন্য পূর্ব পাকিস্তানের যে সকল পাকিস্তানী ইয়াহিয়া খানের লিগাল ফ্রেইম ওয়ার্ক অর্ডার (১৯৭০) মেনে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল তারা কিভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ণের অধকারী হতে পারে? লিগাল ফ্রেইম ওয়ার্কের অধীনে পূর্ব পাকিস্তানের গণপরিষদের জন্য যারা নির্বাচিত হয়েছিল তারা পাকিস্তানী হিশাবেই নির্বাচিত হয়েছিলেন। ইতিহাসের এই জোড়াতালি দেওয়া অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং ধামাচাপা দেওয়া দিক কখনই আমাদের আলোচনার বিষয় হয় নি। ইতিহাস, আইন ও রাজনীতি এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে আমাদের চরম নিশ্চেতনা, অজ্ঞতা এবং মূর্খতা আজ অবধি বাংলাদেশকে ইতিহাস, রাজনীতি বা আইনের কোন শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে পারে নি।
এলএফও আরও উল্লেখ করেছে যে গণপরিষদ যে সংবিধান প্রণয়ন করবে ভবিষ্যতের সে সংবিধানে পাঁচটি নীতি অন্তর্ভুক্ত রাখতে হবে। তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে রাষ্ট্রের আদর্শ হবে ‘ইসলামী’। এবং একমাত্র মুসলমানই রাষ্ট্রপ্রধান হতে পারবে। রাষ্ট্র প্রধানের পদ একচেটিয়াভাবে মুসলমানদের জন্য সংরক্ষণ এবং একটি ইসলামি আদর্শ ভিত্তিক রাষ্ট্র কায়েম করবার জন্যই লিগাল ফেইম ওয়ার্কের অধীনে পাকিস্তানের প্রতিনিধিরা নির্বাচিত হয়েছি। প্রশ্ন হোল পাকিস্তানী আদর্শে বিশ্বাসীরা রাতারাতি বাঙালি জাতিবাদী বনে গেল? কোন যুক্তিতে বাহাত্তরে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নেও তারাই অধিকারী হয়?
৬.পাকিস্তানী ভূত আমাদের ঘাড় থেকে নামে নি। নতুন রাজনৈতিক জনগোষ্ঠি হিশাবে নিজেদের গঠনের ক্ষেত্রে এই পাকিস্তানী ভূত আমাদের প্রধান প্রতিবন্ধকতা। এর দ্বারা সহজে বারবারই আমরা প্রতারিত হয়ে চলেছি। কারন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ‘গণ পরিষদ’, ‘সংবিধান প্রণয়ন’, রাষ্ট্র ‘গঠন’ ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বোঝে না। তাদের প্রতারিত করা খুবই সহজ।
কিন্তু আর কত?  রাষ্ট্র হিশাবে বাংলাদেশ গঠনের গোড়ার ত্রুটি এবং পাকিস্তানী গণ পরিষদের জন্য নির্বাচিত পাকিস্তানীদের প্রতারণা আমাদের বুঝতে হবে। সর্বোপরি বাংলাদেশের জনগণকে তাদের অভিপ্রায় অনুযায়ী ‘গঠনতন্ত্র’ প্রণয়ন থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এর চেয়ে বড় কোন রাজনৈতিক অপরাধ হতে পারে না। বাহাত্তরে পাকিস্তানের গণপরিষদের জন্য নির্বাচিত গণপরিষদ ছিল বাংলাদেশের গঠনতান্ত্রিক ইতিহাসের চরম ব্যর্থতা ও প্রতারণাপূর্ণ মূহূর্ত। বাংলাদেশকে অবশ্যই ঘাড় থেকে এই পাকিস্তানী ভূত তাড়াতে হবে। যারা এখনও বিদ্যমান ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ব্যবস্থা – টিকিয়ে রেখে এর সংস্কার চান, তারা আসলে পাকিস্তানী ভূতের ধারাবাহিকতা চান। তারা এখনও স্বাধীন বাংলাদেশের জনগণকে তাদের নিজেদের অভিপ্রায় অনুযায়ী রাজনৈতিক ভাবে গঠনের গুরুত্ব বুঝতে পারেন না, আমরা আশা করবো তারা ভাবতে শিখবেন এবং বাংলাদেশে গণরাজনীতির বিকাশের পথে বাধা না হয়ে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবেন।
৭. জনগণকে যদি আমরা ইতিহাস সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা দিতে পারি এবং রাজনীতি এবং আইনের পারস্পরিক সম্বন্ধ এবং রাষ্ট্রের গাঠনিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে শেখাতে ও বোঝাতে পারি তাহলে জনগণ নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেবে কিভাবে তারা নিজেদের রাজনৈতিক ভাবে ‘গঠন’ করবে। বাহাত্তরে যে অধিকার থেকে তাদের বঞ্চিত করা হয়েছে কিভাবে তারা তা বাস্তবায়িত করবে সেটা জনগণের ওপর আমরা আপাতত ভরসা করে ছেড়ে দিতে পারি। অতএব আগামিতে ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ব্যবস্থা আমরা সংস্কার করব এটা আগাম বলা এখন আমাদের কাজ না। বিজয়ী গণঅভ্যূত্থানের পরে জনগণ ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখবে নাকি নতুন ভাবে গঠন করবে আমরা এখনও জানি না। তবে কিভাবে গঠন করতে হয় সেটা জানি। জনগণকে সেই গাঠনিক প্রক্রিয়া বোঝানোই আমাদের কাজ। বাংলাদেশে ঝড় আসন্ন। কিন্তু বাংলাদেশের অবস্থা যেন শ্রীলংকার মতো উদ্দেশ্যহীন গণবিদ্রোহ না হয়, তার জন্য আমাদের দিনরাত কাজ করতে হবে। আমাদের এখনকার প্রধান কাজ হচ্ছে যে সকল রাজনৈতিক ধ্যানধারণা তামাদি হয়ে গিয়েছে – যে সকল রাজনৈতিক বর্গ জীর্ণ ও ব্যবহারের অযোগ্য – সেই দিকগুলো ঝেড়ে ফেলতে হবে। নতুন রাজনীতির জন্য নতুন ভাবে ভাবনাচিন্তা করা জরুরি। রাজনীতিতে একটা সংখ্যাগরিষ্ঠ মত ও অভিমুখ তৈরি করা এই মূহূর্তের প্রধান কাজ। এটাই গণরাজনীতির ধারা বিকাশের পথ সাফ ও ত্বরান্বিত করবে।
তাহলে সংবিধান(?) সংস্কার নাকি নতুন সংবিধান ?) সেটা তর্কের বিষয় না। জনগণ আগামি দিনে কিভাবে কোথা থেকে  কেমনে করে নিজেদের নিজেরা  রাজনৈতিক ভাবে গঠন করবে সেটা আগাম না বলে আমাদের উচিত রাজনৈতিক ভাবে নিজেদের ‘গঠন’ করা, জনগণের দ্বারা  ‘গঠনতন্ত্র’ প্রণয়ন, ‘গণশক্তি’ হয়ে ওঠা ইত্যাদি বলতে কি বোঝায় সেইসব সহজ সরল ভাষায় ব্যাখ্যা করে জনগণকে বোঝানো। এটাই এখন আমাদের কাজ। সর্বোপরি ‘জনগণ’ বলতে আমরা কি বুঝি রাজনীতির সেই সকল অ আ ক খ পাঠ এখন বেশী জরুরি। আর কতোকাল আমরা অপ্রাপ্তবয়স্ক বালক থাকব? রাষ্ট্রচিন্তার সেমিনারে আমি সেই কথাই খানিক সাহসের সঙ্গে বলতে চেষ্টা করেছি।
আশা করি কমরেডরা আমার কথা বুঝবেন এবং আমল করবেন।