কিছু লোক লাশের ওপর দিয়ে ক্ষমতায় যেতে চায়: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কিছু লোক লাশের ওপর দিয়ে ক্ষমতা দখলের কথা ভাবছে, যা খুবই অমানবিক। তিনি বলেন, যারা জনগণকে হত্যা করে লাশের ওপরে পাড়া দিয়ে ক্ষমতায় যাবার চিন্তা করে তাদের মতো অমানবিকতা আমি আর কোথাও দেখি না। মঙ্গলবার বিকালে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে ‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস- ২০২৩’ উপলক্ষ্যে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেয়া ভাষণে এসব কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, মানুষ যখন একটু শান্তিতে ছিল, স্বস্তিতে ছিল, একটু আশার আলো দেখছিল এবং সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল ঠিক সেই সময়ে এই অগ্নিসন্ত্রাস, হরতাল, অবরোধ মানুষের জীবনটাকে আবার ব্যাহত করছে। একটা শঙ্কার মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। এটাই হচ্ছে সবথেকে কষ্টের বিষয়।
তিনি বলেন, যারা এই ধ্বংসাত্মক কাজ করছে তাদের বোধোদয় হবে সেই আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা এ ধরনের ধ্বংসাত্মক কাজ না করে গণতান্ত্রিক ধারায় যোগ দিক, জনগণের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রাখুক।

সরকার একটার পর একটা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোভিড-১৯ আমরা যেভাবে মোকাবেলা করলাম এরপরে অগ্নিসন্ত্রাস থেকে শুরু করে নানা ধরনের ঝামেলা মাঝে মাঝে শুরু হয়-সাধারণ মানুষকে কেন পুড়িয়ে মারা হয় সেটাই আমার প্রশ্ন? তিনি বলেন, এই সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে মারা, বাসে আগুন দেয়া, রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্ট করা এটা কি কারণে? আমার কাছে এটা এখনো বোধগম্য নয়।

বাংলাদেশকে শান্তির অন্বেষক উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, শান্তি শুধু দেশের অভ্যন্তরে নয় আঞ্চলিক এবং সারা বিশ্বব্যাপী আমরা শান্তি চাই।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতি ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়,’ এর  এর উল্লেখ করে বলেন, অন্তত আমি এটুকু দাবি করতে পারি এ পর্যন্ত আমরা আমাদের এই পররাষ্ট্র নীতি নিয়েই চলেছি। সকলের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে, আঞ্চলিকভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে আমাদের সমুদ্রসীমা, আমাদের স্থল সীমা, পার্বত্য শান্তি চুক্তি করে আমাদের রিফিউজিদের ফিরিয়ে আনার মত ব্যবস্থা আমরা করেছি। সুচারুভাবে আমরা এগুলো করতে পেরেছি। এমনকি ছিটমহলগুলো আমরা শান্তিপূর্ণভাবে বিনিময় করতে পেরেছি। কাজেই বাংলাদেশ শান্তির দেশ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৯৬ সালে সরকার এসেই আওয়ামী লীগ সরকার সশস্ত্র বাহিনীতে নারী সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনেও আমাদের দেশের নারী সদস্যরা অনেক সুনাম করেছে।
তিনি বলেন, জাতিসংঘের মহাসচিবের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে এবং তিনি শান্তি রক্ষা মিশনে বাংলাদেশের আরো নারী সদস্যদের অন্তর্ভুক্তি প্রত্যাশা করেছেন। এটাই আমাদের জন্য সবচেয়ে আনন্দের বিষয়। নারীর ক্ষমতায়ন এবং নারীর যে কর্ম ক্ষমতা সেটা আমরা বৃদ্ধি করতে পেরেছি। সমাজের কোন স্তরের মানুষই পেছনে পড়ে থাকবে না,’ বলেন তিনি। 

তিনি আরও বলেন, হিজড়া, বেদে, কুষ্ঠ রোগীর থেকে শুরু করে সব শ্রেণীর মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কাজ করছে সরকার। তাদের বিনামূল্যে ঘর করে দেয়া হচ্ছে, জীবন জীবিকার ব্যবস্থা করে দেয়া হচ্ছে এবং আয় উপার্জনের সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছে সরকার। সরকারের উন্নয়ন কেবল রাজধানী কেন্দ্রিক নয়, কেবল ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল বা কর্ণফুলী টানেল নির্মাণের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। সমগ্র বাংলাদেশের উন্নয়ন করা হচ্ছে। যাতে গ্রামে বসে প্রত্যেকটি গ্রামের মানুষ শহরের সব রকমের সুযোগ সুবিধা পেতে পারে, বলেন তিনি।
তিনি বলেন মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে, ব্যাপকভাবে কর্মসংস্থান করা হচ্ছে ফলে সারা বিশ্বে আজকে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে।
তিনি বলেন, এ দেশটা আমাদের কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা যেকোনো রকমের দুর্যোগ দেখা দিলে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী মানুষের পাশে দাঁড়ায়। সীমিত সম্পদের দেশ হলেও যেখানে দুর্যোগ হোক সে জায়গায় বাংলাদেশ ছুটে যায় এবং মানুষের পাশে দাঁড়ায় এবং আমাদের সশস্ত্র বাহিনী সেখানে ভূমিকা রাখে।

’৭৫-এর বিয়োগান্তক অধ্যায় স্মরণ করিয়ে দিয়ে দেশের ভাগ্যহত মানুষের মুখে হাসিফোটাবার জন্যই তাঁর পথচলা উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, বাবা মা ভাই সব হারিয়েছি, আমার আর হারাবার কিছু নেই। পাওয়ারও কিছু নেই। এই বাংলাদেশের মানুষের জন্য আমার বাবা যেহেতু সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন তাই বাংলাদেশটাকে  আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।

তিনি বলেন, ২০২০ সালে আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করেছি, সেই সময় বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। যেটা ২০০৮ এর নির্বাচন ইশতেহার আমরা ঘোষণা করেছিলাম এবং সেই মোতাবেক কাজ করে আমরা এই লক্ষ্য অর্জন করতে পেরেছি। তিনি বলেন, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের যাত্রা শুরু হবে ২০২৬ সালে। ২০২৬ সালের এই যাত্রা যেন আমরা ভালোভাবে করতে পারি সেজন্য ইতিমধ্যে আমরা পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছি। বাংলাদেশের এই অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা যেন কেউ বন্ধ করতে না পারে। সেটাই আমার একমাত্র লক্ষ্য। তিনি বলেন, শান্তিতে সমরে সব জায়গায় আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সদা সচেষ্ট এবং শক্তিশালী। সেই শক্তিশালী হিসেবেই একে আমরা গড়ে তুলছি।

মানব জমিন