শেখ হাসিনা বলেন, ‘যোগাযোগের নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করার মাধ্যমে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে এবং বাংলাদেশকে আর কেউ পেছনে টানতে পারবে না। এর মাঝেই কিছু কিছু ঘটনা মাঝে মাঝে ঘটছে, ইচ্ছাকৃতভাবে ঘটানো হচ্ছে, সেটা আপনারা নিজেরাও টের পান। যাতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। সেই সাথে প্রচারও চালানো হয়। আমরা যতই উন্নতি করি, ভালো কাজ করি, একটা শ্রেণিই আছে, বাংলাদেশের বদনাম করতেই তারা ব্যস্ত।’
এই শ্রেণির উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ দেশের স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকুক, তারা কি তা চায় না? একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তাদের একটু কদর বাড়ে। সে জন্য উন্নয়নটা তারা দেখে না, বরং ধ্বংসই সব সময় করতে চায়, এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। এ ব্যাপারে দেশবাসীকে আরও সতর্ক থাকতে হবে।’
ঢাকা-বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার লেবুখালী এলাকার খরস্রোতা পায়রা নদীর ওপর নির্মাণ করা হয়েছে এই পায়রা সেতু।
সেতুটি চালু হওয়ায় বরিশাল, খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের সঙ্গে পর্যটন নগরী কুয়াকাটা ও পায়রা বন্দর পর্যন্ত সড়কপথ ফেরিবিহীন হয়ে গেছে। অতীতে বরিশাল থেকে মহাসড়ক পথে কুয়াকাটা পৌঁছাতে হলে ছয়টি স্থানে ফেরি পার হতে হতো। এর আগে পাঁচটি সেতুর পর এখন ৬ নম্বরে এই পায়রা সেতু নির্মিত হওয়ায় এ অঞ্চলে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হলো।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। সড়ক পরিবহন ও সেতু বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম প্রকল্পগুলোর ওপর প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস গণভবন থেকে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
অনুষ্ঠানে প্রকল্পগুলোর ওপর পৃথক ভিডিও চিত্র পরিবেশিত হয়। প্রকল্পের উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী পটুয়াখালী ও সিলেট প্রান্তে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত প্রশাসন, আওয়ামী লীগ নেতা ও জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গণভবন প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বরিশাল ও পটুয়াখালীর সংযোগ সৃষ্টিকারী হবে এই পায়রা সেতু। আর নদীর নামে একটা সেতু হলে নদীটারও একটা পরিচয় পাওয়া যাবে। যে কারণে এ নামই আমি পছন্দ করেছি। আর পায়রা শান্তির প্রতীক। কাজেই এই সেতু হওয়ার পর এই অঞ্চলের মানুষের যে আর্থিক উন্নতি হবে, তার ফলে মানুষের মনে একটা শান্তি আসবে এবং মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নের ফলে তারা ভালোভাবে বাঁচতে পারবে, সেই সুযোগের সৃষ্টি হবে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘খাল, বিল, নদীনালার এই বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে যাচ্ছে। কাজেই এই অঞ্চলের আর্থসামাজিক উন্নতি যত দ্রুত আমরা করতে পারি, ততই এ অঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নয়নের সহায়ক হবে। ফলে এর একটা বিরাট প্রভাব দেশের অর্থনীতিতে পড়বে এবং দেশটাকে আমরা আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব।’
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকারের প্রথম মেয়াদে প্রথম লাউকাঠি নদে পটুয়াখালী সেতু নির্মাণ করা হয়। পর্যায়ক্রমে কীর্তনখোলা নদীর ওপর শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত সেতু (দপদপিয়া সেতু), খেপুপাড়ায় আন্ধারমানিক নদের ওপর শহীদ শেখ কামাল সেতু, হাজীপুরে সোনাতলা নদীর ওপর শহীদ শেখ জামাল সেতু এবং মহিপুরে খাপড়াভাঙ্গা নদীর ওপর শহীদ শেখ রাসেল সেতু নির্মিত হয়েছে। আর আজ পায়রা নদীর ওপর দৃষ্টিনন্দন পায়রা সেতু নির্মিত হলো। এর ফলে এখানে পর্যটনের সুযোগ যেভাবে বৃদ্ধি পাবে, তেমনি তাঁর সরকার পায়রায় যে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করছে, সেখানে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগও সৃষ্টি হবে। আর পুরো বাংলাদেশেও একটা যোগাযোগ নেটওয়ার্ক তৈরি হয়ে যাবে।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী আগামী বছর পদ্মা সেতু চালুর ঘোষণার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘এই পদ্মা সেতু চালু হলে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের আর কষ্ট থাকবে না। যে কারণে অন্য সেতুগুলোও আমরা সঙ্গে সঙ্গে করে ফেলছি।’
আধুনিক প্রযুক্তি তৃণমূলের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ায় সরকার উদ্যোগ নিয়েছে, যাতে করে ঘরে বসেও মানুষ কাজ করে খেতে পারে, স্বাবলম্বী হতে পারে।
এ দেশের যতটুকু উন্নয়ন, সেটা আওয়ামী লীগ সরকারই করে যাচ্ছে, উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারা বাংলাদেশে একটি যোগাযোগের নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার জন্য ’৯৬ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করেই আওয়ামী লীগ সরকার ‘ধরলা সেতু’ নির্মাণ করে। যমুনা নদীর ওপর রেল যোগাযোগসহ বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ই করা।