কারাগারে কারও সঙ্গে কোনো বৈঠক হয়নি : বিশেষ সাক্ষাৎকার: মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

কারাগারে কারও সঙ্গে কোনো বৈঠক হয়নিমির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

বিএনপিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে কারাগারে সরকারের কোনো ‘প্রতিনিধি’র সঙ্গে বৈঠক হয়নি বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, বিএনপি যাতে নির্বাচনে যেতে না পারে, সে ব্যাপারে সরকার আগে থেকেই নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করে রেখেছিল। সে জন্য সংলাপের প্রস্তাবও নাকচ করে দিয়েছে। আর সমঝোতা করতে চাইলে গ্রেপ্তারের আগেই করতেন বলে জানান বিএনপি মহাসচিব। একই সঙ্গে তিনি বলেন, সরকার যদি দমননীতি পরিহার না করে, দেশে উগ্রবাদীরা সুযোগ নেবে। গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন তিনি।

দীর্ঘ সাড়ে তিন মাস কারাবন্দি থেকে বৃহস্পতিবার জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর গতকাল শুক্রবার সমকালকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল।

নির্দলীয় সরকারের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে বিগত কয়েক বছর ধরে আন্দোলন করছে বিএনপি। সে আন্দোলনের চূড়ান্ত মুহূর্তে গত ২৮ অক্টোবর ঢাকার নয়াপল্টনে দলটির মহাসমাবেশ পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে পণ্ড হয়ে যায়। প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার মামলায় পরদিন ২৯ অক্টোবর গ্রেপ্তার করা হয় তাঁকে। বিএনপির ভোট বর্জনের মধ্যেই ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ৩৮ দিন পর মুক্তি পান বিএনপি মহাসচিব।

সমকাল: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্বের শুরুতেই কারাবন্দি হলেন। দীর্ঘ সাড়ে তিন মাস কারাগারে কেমন ছিলেন?

মির্জা ফখরুল: কারাগারে শারীরিক কষ্টের চেয়ে রাজনৈতিক কষ্ট ছিল বেশি। জনগণের প্রত্যাশা ছিল– দেশে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার ফিরে আসবে। দেশে পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা জনগণের মধ্যে ছিল, তা পূরণ হয়নি। অধিকাংশ দেশপ্রেমিক ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল নির্দলীয় সরকারের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে সর্বাত্মক আন্দোলন করেছে।
২০১৪ এবং ২০১৮ সালে মানুষ ভোট দিতে পারেনি। এবার সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পরিবেশে ভোট দিয়ে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছি। কিন্তু সরকারের অত্যাচার-নির্যাতন ও দমননীতির কারণে তা সম্ভব হয়নি।

গত ২৮ অক্টোবরেই শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ পণ্ড করে দেওয়ার ঘটনায় মনে হয়েছে, সরকার আমাদের নির্বাচনে যাওয়ার সুযোগ দেবে না। এমনকি ২৯ অক্টোবর আমাকেসহ দলের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তারের মাধ্যমে তা প্রমাণিত। আমার সঙ্গে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাসহ দলের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের প্রায় ১০ হাজার নেতাকর্মী কেরানীগঞ্জ কারাগারে ছিলেন। কারাগারে এসব নেতাকর্মী অনেককে দেখেছি; কেউ হতাশ হননি। সবার প্রত্যাশা ছিল– দেশে গণতন্ত্র ফিরবে। কিন্তু একদলীয় নির্বাচনে তা হয়নি। তবে তারা এখন আশাবাদী, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হবেই। সাধারণ মানুষের আকাঙ্ক্ষা আরও তীব্র হবে।

সমকাল: গুঞ্জন ছিল– বিএনপিকে নির্বাচনে নিতে আপনার সঙ্গে কারাগারে সরকারের প্রতিনিধির কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। এটা কি সত্য?

মির্জা ফখরুল: কারাগারে আমার সঙ্গে নির্বাচন বা রাজনৈতিক ইস্যুতে কারও কোনো বৈঠক হয়নি। কেউ সাক্ষাৎও করেননি। রাজনৈতিক কোনো সমঝোতা বা বিএনপিকে নির্বাচনে নিতে চাইলে সরকার আগেই সংলাপের উদ্যোগ নিত। তারা তো আগেই সংলাপের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে। এমনকি এটা পরিকল্পিতভাবেই সরকার করেছে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী বিরোধী নেতাকর্মীকে মিথ্যা ও সাজানো মামলায় গণহারে গ্রেপ্তার ও পুরোনো মামলায় সাজা দেওয়া শুরু করেছে।

সমকাল: কারাগার থেকে বেরিয়ে আপনি বলেছেন, গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার ফিরিয়ে না আনা পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। এখন গণসংযোগ করছেন। কবে নাগাদ রাজপথে আন্দোলনের কর্মসূচি দেবেন?

মির্জা ফখরুল: হ্যাঁ, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার দাবিতে আমরা আন্দোলনে আছি এবং থাকব। এর কোনো বিকল্প নেই। দলীয় ফোরামের বৈঠকে সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে আন্দোলনের কর্মসূচির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

সমকাল: কারামুক্তির পর আপনার আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাকে ‘দিবাস্বপ্ন’ আখ্যায়িত করে তা বাদ দিয়ে বিএনপিকে এখন থেকেই পরবর্তী নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এ সম্পর্কে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

মির্জা ফখরুল: মাত্র কারামুক্ত হয়েছি। পরে এসব বক্তব্যের বিস্তারিত জবাব দেব। একদলীয় নির্বাচন করা যাদের চরিত্র, তাদের মুখে অন্য দলকে নির্বাচনের প্রস্তুতির কথা শোভা পায় না।

সমকাল: আপনি কারাগারে থাকা অবস্থায় বিএনপির সিনিয়র নেতারা অভিযোগ করেছেন, আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় আনতে নির্বাচনে ভারত, চীন ও রাশিয়া ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছে। আপনিও কি একমত?

মির্জা ফখরুল: অনেক দিন আমি কারাগারের ভেতর ছিলাম। এখনও সবকিছু জানি না। এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে কথা বলব।

সমকাল: বিগত ১৫ বছরে পরপর তিনটি নির্বাচনে আগে নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করে বিএনপিসহ সমমনা বিরোধী দলগুলো কার্যত ব্যর্থ হয়েছে। অনেকে মনে করেন, এটা দলের সাংগঠনিক ও নেতৃত্বের দুর্বলতা।

মির্জা ফখরুল: সারাদেশে বিএনপি সাংগঠনিকভাবে এবং নেতৃত্বের দিক থেকে কোনোভাবেই দুর্বল নয়। সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকতে টানা ১৫ বছর বিএনপি নেতাকর্মীর ওপর ব্যাপক অত্যাচার-নির্যাতন, মামলা-হামলা ও গ্রেপ্তার অভিযান চালিয়ে আসছে। বারবার দল ভাঙতে নানাভাবে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় সরকার। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি শক্তিশালী সাংগঠনিক ভিত্তির ওপর ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। কোনো গণতান্ত্রিক আন্দোলন কখনও ব্যর্থ হয় না, এবারও ব্যর্থ হয়নি। আওয়ামী লীগই একপক্ষীয় নির্বাচন করে ব্যর্থ হয়েছে। একনায়কত্ব ও কর্তৃত্ববাদী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে সফল হতে হয়তো একটু সময় লাগে। কিন্তু জনগণের বিজয় হবেই হবে। সরকার যদি নিজেদের পরিবর্তন না করে; দেশ যদি সঠিক ও গণতান্ত্রিক পথে না চলে এবং দমননীতি পরিহার না করলে এখানে উগ্রবাদীরা সুযোগ নেবে। তবে আমি আশাবাদী, দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে।

সমকাল : রাজপথের বিরোধী দল বিএনপিকে ছাড়া নির্বাচন করে সরকার কি আবারও পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকতে পারবে– এমন প্রশ্ন রয়েছে বিভিন্ন মহলে। আপনি কী বলেন?

মির্জা ফখরুল : জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে তাদের ভোটাধিকার হরণকারী সরকার ক্ষমতায় থাকবে, নাকি বিদায় জানাবে। দেশ কি একদলীয় শাসনে চলবে, নাকি বহুদলীয় শাসনে চলবে? জনগণ গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের পক্ষে আছে এবং গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার পক্ষেই থাকবে।

সমকাল: জনগণ ভোট বর্জন করেছে এবং ডামি নির্বাচন বলে আপনারা দাবি করলেও প্রভাবশালী বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীন, রাশিয়াসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নতুন সরকারকে এরই মধ্যে অভিনন্দন জানিয়েছে। একসঙ্গে কাজ করার ঘোষণাও দিয়েছে।

মির্জা ফখরুল: এটা তাদের দ্বিপক্ষীয় কূটনৈতিক সম্পর্কের বিষয়। আমি যতটুকু জানি, অনেক দেশই বাংলাদেশের নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ এবং গ্রহণযোগ্য হয়নি বলে আগের দেওয়া বক্তব্যেই বহাল রয়েছে বলে জানিয়েছে। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না এবং দেশে-বিদেশি কেউ জানার বাকি নেই, নির্বাচন সম্পূর্ণ একদলীয়ভাবে হয়েছে। আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে তাদের দলের নেতারাই স্বতন্ত্রভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এবার বিজয়ী হওয়ার পরও স্বতন্ত্র ৬২ জন তথাকথিত এমপির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী গণভবনে বৈঠক করেছেন। তারা সরকারি দলের হুইপের অধীনেই সংসদে চলবেন। ডামি প্রতিদ্বন্দ্বী, ডামি বিরোধী দল এবং সর্বোপরি ডামি নির্বাচন। আসন ভাগাভাগির এই নির্বাচন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হয়নি।

সমকাল : বিএনপি আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততা ঘটাতে পারেনি বলে দেশের সুশীল সমাজ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত। আপনার বক্তব্য কী?

মির্জা ফখরুল: আমি একমত নই। দেশের সব মানুষ মানসিকভাবে আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল এবং এখনও আছে। ২৮ অক্টোবরের মহাসাবেশে এবং আগের সারাদেশের সভা-সমাবেশগুলোতেও সাধারণ মানুষের ব্যাপক অংশগ্রহণ ছিল। এ ধরনের কর্তৃত্ববাদী সরকারকে হটানো সহজ নয়। তবে শেষ পর্যন্ত জনগণ সফল হবেই।

সমকাল : অনেকে মনে করেন, বিএনপি নেতাকর্মীরা গণআন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায়ের চেয়ে সরকারের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার চাপের মাধ্যমে সুফল পাওয়ার ব্যাপারে বেশি আশাবাদী ছিলেন। এখনও আবার কূটনৈতিকপাড়ায় যোগাযোগ বৃদ্ধি করা হচ্ছে বলে গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে।

মির্জা ফখরুল: না, এটা সঠিক নয়। যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব পররাষ্ট্রনীতি রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গণতন্ত্র ও মৌলিক মানবাধিকার প্রশ্নে ব্যত্যয় ঘটলে তারা নিষেধাজ্ঞা দিয়ে থাকে। বাংলাদেশের ব্যাপারে তারা একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিএনপি গণমানুষের দল। দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়েই আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায়ে বদ্ধপরিকর এবং সেই চেষ্টাই আমরা করে যাচ্ছি। বাইরের কারও প্রভাবের ওপর নির্ভরশীল নয়।

সমকাল : দেশে চলমান মূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট ও অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করা সরকারের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে করেন অনেকে। অর্থনীতির প্রাক্তন ছাত্র ও অধ্যাপক হিসেবে আপনার মূল্যায়ন কী?

মির্জা ফখরুল : সরকারি দলের লোকদের লাগামহীন দুর্নীতি, ব্যাংক লুটপাট ও বিদেশে টাকা পাচারের কারণে অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। এটি আমার বক্তব্য নয়, দেশের অর্থনীতিবিদদের বক্তব্য। এ সংকট মোকাবিলা করতে হলে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার প্রয়োজন, ভোটাধিকার হরণকারী সরকারের এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। এটা মন্ত্রিসভার সদস্যদের দেখে বোঝা যায়।

সমকাল : দেশের অর্থনৈতিক সংকট ও নিত্যপণ্যের মূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে স্বল্প আয়ের মানুষের জীবন বিপর্যস্ত। অনেকে মনে করেন, বিএনপি জনসম্পৃক্ত ইস্যুতে তেমন একটা কর্মসূচি দেয়নি বলেই দলীয় ইস্যুর আন্দোলনে মানুষ সাড়া দেয়নি?

মির্জা ফখরুল: জনস্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ইস্যুতে বিএনপি আন্দোলন করেনি– এ কথা সঠিক নয়। নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে অনেক কর্মসূচি পালন করেছি। নির্বাচনের আগে যুগপৎ আন্দোলনের ৩১ দফা দাবিতেও দ্রব্যমূল্যের ইস্যুটি ছিল। পরে এক দফা দাবিতে আসা হয়েছে। দাবি আদায়ের দীর্ঘ আন্দোলনে ১৮ জন নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। ২৭ হাজার নেতাকর্মী কারাবন্দি হয়েছেন।

সমকাল : বিএনপির অভ্যন্তরে একটি গুঞ্জন আছে– ‘নানা কারণে’ কারামুক্তির পর আপনি রাজনীতি থেকে অবসর নিতে পারেন?

মির্জা ফখরুল : যারা এগুলো বলেন বা শোনেন, তারাই এসব গুঞ্জন তৈরি করেন। যদি এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নিই তা পাবলিকলি নেব। আমার রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম। সারাজীবন রাজনীতি করেছি, বাকি জীবনও করতে চাই। সব কিছু নির্ভর করবে শারীরিক সুস্থতার ওপর।

সমকাল : নির্বাচনের আগে চূড়ান্ত আন্দোলনের কর্মসূচি গ্রহণের বিষয়ে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা দলগুলোর সঙ্গে বিএনপি যথাযথভাবে সমন্বয় করেনি বলে অভিযোগ করেছেন দলগুলোর নেতারা। এই অভিযোগ কতটা সঠিক?

মির্জা ফখরুল : যুগপৎ আন্দোলনে সমমনা দলগুলো নিজ নিজ অবস্থান থেকে আন্দোলন করেছে। নির্বাচনের আগে আমি কারাগারে ছিলাম। যতটুকু জানি, সমমনাদের সঙ্গে বিএনপির বড় কোনো মতবিরোধ নেই। তারা সাহসিকতার সঙ্গেই পৃথক মঞ্চ থেকে যুগপৎ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।

সমকাল : জামায়াতে ইসলামী আনুষ্ঠানিকভাবে যুগপৎ আন্দোলনে সমমনা না হলেও বিএনপির সঙ্গে মিল রেখে আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়েছে। নির্বাচনের পর বিএনপির সঙ্গে তাদের দূরত্ব তৈরি হয়েছে বলে গুঞ্জন রয়েছে।

মির্জা ফখরুল : অনেক দলই বিএনপির সঙ্গে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন করেছে। একই দাবিতে জামায়াতও পৃথকভাবে কর্মসূচি পালন করেছে। এখানে সম্পর্ক গভীর বা দূরত্বের কোনো বিষয় নেই।

সমকাল : বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপির সামনে চ্যালেঞ্জগুলো কী?

মির্জা ফখরুল : এবারের চ্যালেঞ্জটা পুরো জাতির, বিএনপির একার বিষয় নয়। একনায়কতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদী সরকারের হাত থেকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা সব নাগরিকের দায়িত্ব। আমি বিশ্বাস করি, জনগণ সেই জায়গাতেই থাকবে। বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যের লন্ডনভিত্তিক দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টিলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) প্রকাশ করা ২০২৩ সালের গণতন্ত্র সূচকে (ডেমোক্রেসি ইনডেক্স) বলা হয়েছে, গণতন্ত্র সূচকে গতবারের তুলনায় আরও দুই ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বের ১৬৭টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ৭৫তম। আর বাংলাদেশে এখনও ‘হাইব্রিড শাসনব্যবস্থা’ রয়েছে। এই হাইব্রিড শাসনের কথা বিএনপির বক্তব্য নয়, কিন্তু এটাই সত্যি।

এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে বিএনপির সঙ্গে দেশ ও গণতন্ত্রপ্রিয় জনগণকে সক্রিয়ভাবে এগিয়ে আসতে হবে। পৃথিবীর অনেক দেশেই এ ধরনের কর্তৃত্ববাদী সরকার টিকে থাকার চেষ্টা করেছে। শেষ পর্যন্ত জনগণের আন্দোলন বিজয়ী হয়েছে। বাংলাদেশেও জনগণের বিজয় হবে ইনশাআল্লাহ।

সমকাল