দিলশানা পারুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, কারও ওপর ভর করে আন্দোলন করা যাবে না। আন্দোলন করতে হবে আপনার নিজের পায়ে ভর করে। আমাকে কেউ কিছু করে দেবে না। তিনি আরও বলেন, বিএনপির আমলে দেশের শ্রমীজীবী মানুষ ভালো ছিল। বর্তমান সরকারের ম্যাক্রো ইকোনোমিতে কোনো কন্ট্রোল নেই।
বাংলা আউটলুককে দেওয়া দীর্ঘ আলাপে আরও অনেক বিষয় নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন মির্জা ফখরুল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দিলশানা পারুল। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ শেষ পর্ব।
বাংলা আউটলুক: ভারতের সাথে বা পার্শ্ববর্তী অন্য পরাশক্তি দেশের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের সম্পর্কটা আপনি কীভাবে দেখবেন?
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: আমরা ভারতের বিরুদ্ধে নয়। ভারত আমাদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ, বড় প্রতিবেশী এবং বন্ধু। সেই ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে তাদের অবদানের কথা আমরা কখনো অস্বীকার করি না। নিঃসন্দেহে তারা যুদ্ধ করেছে আমাদের জন্য। তাদের সহযোগিতা নিয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে আমাদের। এটার জন্য আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। তার অর্থ তো এই নয়, আমি বাংলাদেশের স্বাধীনতা তাদের কাছে জিম্মি করে দেব। এটা করব না। আপনি দেখেন, প্রধানমন্ত্রী যে ভারতে গেলেন, তিনি যে চুক্তিগুলো করে এসেছেন, কী নিয়ে এসেছেন?
ওনি ভারতের ট্রানজিট দেবেন, ভারতের রেললাইন চলবে বাংলাদেশের ভেরত দিয়ে। যত সুযোগ-সুবিধাগুলো ভারতকে দিচ্ছেন, আমরা কী পাচ্ছি? আমি তো এখন পর্যন্ত পানি পেলাম না। তিস্তা নদীর পানি যেটা আমার অধিকার, আবার অভিন্ন নদী যেগুলো আছে, সেগুলোর কোনো হিস্যা আমরা পাচ্ছি না। পশ্চিমবঙ্গের সরকারের আপত্তির কারণে আমাদের পানি বন্ধ হয়ে আছে। পানি দিচ্ছে না আমাদের। চুক্তি করছে না। অন্যদিকে তিস্তা প্রকল্পের জন্য বলছে, আমি তোমাদের টাকা দেব। অর্থাৎ প্রধান ইস্যু পানির হিস্যা বাদ দিয়ে তারা অন্যদিকে চলে যাচ্ছে। এটা সম্পূর্ণ আওয়ামী লীগের জন্য। ইন্ডিয়া তো তার স্বার্থে কাজ করবেই। কিন্তু আমি আমার স্বার্থে কী করছি? আমি সরকারে আছি, এটা আমার ডিউটি, আমার দায়িত্ব, আমার স্বার্থটাকে রক্ষা করা। আমি এখন পর্যন্ত কী নিতে পেরেছি, নিজেদের ক্ষমতায় রাখা ছাড়া? আর কী কাজটা তারা করতে পেরেছে?
সীমান্তে গুলি হয়। গুলি করে মেরে দিচ্ছে, কোনো সাড়াশব্দ নেই। আর মিয়ানমার ওইদিকে গুলি করে রোহিঙ্গা ঠেলে দিচ্ছে। ১০-১২ লক্ষ রোহিঙ্গা এসেছে। কোনো সাড়াশব্দ নেই। ১০ বছর হয়ে গেল রোহিঙ্গারা এখানে। কী করতে পেরেছে সরকার? সত্যিকার অর্থে এরা নিজেদের ক্ষমতায় রাখার জন্য সকলের কাছে নতজানু। দেশ থেকে তোমরা কী নিবা নিয়ে নাও, আমাকে শুধু ক্ষমতায় বসিয়ে রাখো এটাই তাদের চাওয়া।
বাংলা আউটলুক: এই নেগোসিয়েশনের জন্য সরকারকে এমপাওয়ার হতে হয়। মানে যথেষ্ট পরিমাণে বার্গেনিং করতে হয়?
মির্জা ফখরুল: নির্বাচন তো হয় না। তাহলে সে সরকার আছে, সেটা তো দখলদারি সরকার। তার তো নৈতিক অর্থাৎ আইনগতভাবে ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে যায়। সবচেয়ে বড় কথা জনগণের সমর্থন না থাকলে সরকার কখনও সফল হতে পারে না। তার তো তা নেই। সে দাঁড়াবে কী নিয়ে। এ জন্য তো ভারত যা বলে তাই শুনতে হয়, মিয়ানমার যা বলে তাই শুনতে হয়। চীন যা বলে তাই শুনতে হয়।
বাংলা আউটলুক: বিএনপি গত ১৫ বছরে যে পরিমাণ হামলা-মামলা, নির্যাতন ও নিষ্ঠুরতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, এর ফলে মনে হয়েছে যে চরিত্রগতভাবে বিএনপির একটা ফান্ডামেন্টাল পার্থক্য তৈরি হয়ে গেছে। সেটা আমাদের চোখে কী হয়েছে? যেমন আপনাদের মিছিল-মিটিংগুলোর দিকে নজর দিলে দেখবেন বিপুল পরিমাণ তৃণমূল পর্যায়ের জনগোষ্ঠীকে দেখা যাচ্ছে, বিপুল পরিমাণে শ্রমজীবী মানুষ যারা দিন আনতে দিন খাই এই গোষ্ঠীটাকে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু ১০-১২ বছর আগে আমরা দেখতাম, বিএনপির আসলে মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্তের একটা বড় স্টেকহোল্ডার ছিল। এখন এই যে জনগোষ্ঠীটা, শ্রমজীবী, তৃণমূল জনগোষ্ঠীটা উঠে এসেছে, যারা বিএনপিকে সর্বভাবে সমর্থন দিচ্ছে, তাদের ধারণ করার মতো রাজনৈতিক প্লাটফর্ম বা ফরমেট আপনার দলের মধ্যে আছে কি না?
মির্জা ফখরুল: এখানে একটা বিষয় আপনাকে বলি, খুব ভালো প্রশ্ন করেছেন। আপনি মনে করছেন, বিএনপির যে পলিটিক্স, সোজা কথায় সামাজিক চরিত্র, আপনি যদি দেখতে চান এটা উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত এই ধরনের একটা দল। হ্যাঁ সেটা এখনো আছে। তবে মূল্য বিষয়টা হচ্ছে এখন যেটা বললেন আপনি, এটা সত্য। যেখানে কর্মজীবী মানুষ সংপৃক্ত হচ্ছে। এর দুটো কারণ আছে। একটা কারণ হচ্ছে, সরকার কর্মজীবী মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়িত করতে ফেল করেছে। অর্থাৎ তাদের বেচে থাকা, জিনিসপত্রের দাম এত অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে যে, তাদের পক্ষে বেচে থাকা সম্ভব হচ্ছে না।
অন্যদিকে বিএনপির সময় যখন ছিল, তখন কিন্তু তারা একটা ভালো অবস্থানে ছিল। ম্যাক্রো ইকোনোমি যেটা, ভালো অবস্থায় ছিল। আপনি দেখেন এখন ব্যাংকগুলো কী ভয়াবহ অবস্থা। এই একটা জিনিস থেকে বোঝা যাবে ম্যাক্রো ইকোনোমিতে তার কোনো কন্ট্রোল নেই।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চুরি হয়ে যায়। হ্যাক হয়ে যায়। শেয়ার বাজারে লুট হয়ে চলে যায়। ব্যাংকগুলো থেকে টাকা লুক করে পাচার করে চলে যাচ্ছে। ম্যাক্রো ইকোনোমি বলতে কিছুই নেই।
অন্যদিকে জিনিসপত্রের দাম এত বেড়ে গেছে যে যেটা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা সরকারের নেই। কারণ সরকারের সিন্ডিকেটগুলো জড়িত এর সঙ্গে। আর টাকা লুট করে বাইরে পাঠিয়ে দিলে তো এগুলো হবেই। সেই অবস্থার কারণে আজকে সাধারণ মানুষ মনে করছে আমরা বিএনপির আমলে বেটার ছিলাম। ভালো ছিলাম। আমাদের এত ভোগান্তি পোহাতে হতো না। অন্যদিকে সুশাসনের অভাব এত বেশি, সর্বক্ষেত্রে, যার ফলে সেই ইনস্টিটিউশনগুলো ফাংশন করছে না। কার্যকর করছে না। আজকে সেই কারণেই মানুষ মনে করছে এখন বিএনপি আমাদের জন্য বেটার।
আমাদের তো এমনিতেই সাংগঠনিকভাবে কৃষক দল আছে। শ্রমিক দল আছে। এই সংগঠনগুলো তো আমাদের আছে। সেগুলো তো আমরা দাঁড় করিয়েছি। বিএনপি মার্চ বেজ পলিটিক্যাল পার্টি। এ কথা সব সময় আপনাদের মনে রাখতে হবে। বিএনপি নট অর্গানাইজেশন বেজ পলিটিক্যাল পার্টি। বিএনপি মার্চ বেজ পলিটিক্যাল পার্টি। বিএনপির সমর্থকেরাই বিএনপির শক্তি। জনগণই বিএনপির শক্তি।
উই আর ফাইট অ্যাগেইনস্ট ফ্যাসিস্ট, এটা তো মানুষ জানে, বুঝতে পারছে। মানুষ রাত হলে শান্তিতে ঘুমাতে পারে না, পুলিশের চাঁদা দিতে দিতে হয়, আওয়ামী লীগের চাঁদা দিতে হয়। তাদের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। ঢাকা শহরে বঙ্গবাজার নামে একটি বিশাল বাজার ছিল। এখানে ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করত। এদের আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হলো। ক্ষতিগ্রস্ত হলো হাজার হাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, তাই না? তাদের এখন পর্যন্ত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হলো না। দেখবেন কিছুদিন হলো হরিজনদের উচ্ছেদ করা হলো, তাদের চৌদ্দপুরুষ সেখানে বাস করত। ওই জায়গা থেকে তাদের কেউ ওঠায় না। বরং খোকা সাহেব তাদের ঘর পাকা করে দিয়েছিলেন, যখন মেয়র ছিলেন বিএনপির। এখন এরা (আওয়ামী লীগ) তাদের বলছে উচ্ছেদ করবে। টিভিতে দেখলাম এক বৃদ্ধ বলছেন, আমার দাদা এখানে থেকেছেন। আমার বাবার জন্ম হয়েছে এখানে। তারা এখন তুলে দেবে। যদি তাদের জন্য আগে বিকল্প ব্যবস্থা করে বলতো তোমরা ওখানে যাবা, তাও একটা কথা ছিল। কিছুই বলে না। যাবে কোথায়? বস্তি শেষ করে দিচ্ছে, যাবে কোথায়? ছোট ছোট বাজার পুড়িয়ে শেষ করে দিচ্ছে, যাবে কোথায়? অর্থাৎ এদের সাধারণ মানুষের প্রতি কোনো দরদ নাই।
মুখে কথা বলবে বাংলাদেশের মানুষ নাকি তাদের জন্য পাগল। একটা নির্বাচন দিয়ে দেখুক না, নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন দিয়ে দেখুন কে কার জন্য কতটা পাগল আছে। আমরা তো সেটাই চাচ্ছি। আমরা তো বলছি না বিএনপিকে ক্ষমতায় বসিয়ে দাও বা বিরোধীদলকে ক্ষমতায় বসিয়ে দাও। তোমরা একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন দাও, সেই নির্বাচনে জনগণ তার ভোটের অধিকার প্রয়োগ করুন। সেটা তারা করবে না। তারা তাদের মতো করবে। সরকার আমার থাকবে, আমার পুলিশ থাকবে, আমার আদালত থাকবে, নির্বাচন কমিশন আমার থাকবে, আমি সেখানে নির্বাচন করব, ওইখানে করতে গিয়ে কি হচ্ছে, নির্বাচনে তাকে ক্যান্ডিডেট দিতে হয়, তখন আর কোনো ক্যান্ডিডেট খুঁজে পায় না। পরে ডামি ক্যান্ডিডেট দেয়। তাদের লোকজনই বলছে এটা ডামি ক্যান্ডিডেট। একটা বিরোধী দল তৈরি করে জাতীয় পার্টির মতো। তাদেরকে বলা হয় আসো আসন ভাগ করি। এভাবে তো একটা গণতন্ত্র থাকতে পারে না। তামাশা একটা।
বাংলা আউটলুক: একটুখানি ফিরে যায়, আপনাদের অক্টোবর যে আন্দোলন ছিল এবং বিএনপির সাম্প্রতিক সময়ের আন্দোলনের বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কি? আপনার কী মনে হয় আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছে?
মির্জা ফখরুল: আমি এটা কখনোই মনে করি না, আন্দোলন কখনোই ব্যর্থ হয় না। আপনার সময় লাগতে পারে। আপনার ১৭৫৬ সালে যখন সিপাহি বিদ্রোহ হয়েছিল ভারতে, সেটা ছিল ইংরেজদের বিরুদ্ধে। সেই আন্দোলন কী ব্যর্থ হয়েছিল? ২০০ বছর পর তাদের কিন্তু যেতে হয়েছে। ব্যর্থ হয় নাই। আজকে ওরা টেম্পোরারি অনেক পাওয়ারফুল। তাদের স্টেট পাওয়ার আছে। তবে আন্দোলন কখনোই ব্যর্থ হয়নি। প্রত্যেকটা মানুষের সাথে কথা বলুন, সবাই বলবে এই গভর্নমেন্টকে চায় না। পরিবর্তন চায়। এটা বাস্তব, তারা পরিবর্তন চায়। এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা। পরিবর্তন চায় গণতান্ত্রিকভাবে। ওই জিনিসটা ধরেই আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।
বাংলা আউলুক: ধরেন নির্বাচনের আগে বহির্বিশ্বে পরাশক্তি বিশেষ করে আমেরিকা-ভারত এদের একটা অবস্থান ছিল। নির্বাচনের আগে মনে হচ্ছিল এই ধরনের কৌশল বা ডিপ্লোমেটিক পলিসি কারণে হয়তো অন্য কিছু আসতে পারে। এরকম একটা ধারণা হয়েছিল। আবার ঠিক নির্বাচনের পরবর্তী মনে হল যে, আওয়ামী লীগ সরকার খুব সফলভাবেই তাদের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে পেরেছে। তাহলে এই যে নির্বাচন কেন্দ্রিক পরাশক্তিগুলোর সাথে সম্পর্ককে আপনি কীভাবে দেখেন বা মূল্যায়ন করবেন?
মির্জা ফখরুল: আপনার নির্বাচন কেন্দ্রিক পরাশক্তির ব্যাপারটা পরিষ্কার। চীন কিন্তু বহু আগেই বলে দিয়েছে আমরা এই সরকারকে সমর্থন করবো। ভারতও কিন্তু বলে দিয়েছিল এই সরকারকে সমর্থন করবো, তবে তেমন ভিজিবল ছিল না। আর আমেরিকা ভিজিবল কিছু কাজ করেছে। তাদের যে নীতি আছে, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোতে গণতান্ত্রিক চর্চার জন্য। বাইডেন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের এটা কমিটমেন্ট। সেভাবে তারা এখানে সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চেয়েছে। ভোটারদের অংশগ্রহণে ইলেকশন দেখতে চায়। ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশন দেখতে চায়। তারা দেখেছে গত কয়েকটি ইলেকশনে আওয়ামী লীগ তার করতে পারেনি। যে কারণে এবার তারা বেশ জোরেশোরে ছিল। অন্যদিকে আপনার এখানে দুর্নীতি, তারপর এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং (বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড) হিউম্যান রাইটস ভায়োলেন্স। এগুলোর ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কড়া সমালোচনা করেছে সব সময় এবং ইউনাইটেড ন্যাশনও করেছে, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে করেছে।
তারা কিন্তু তাদের অবস্থান থেকে এখনো সরেনি। তারা পরিষ্কার করে এই কথা বলছে, আমরা এ নির্বাচনটাকে মনে করি না ভালো নির্বাচন। কখনো ভালো নির্বাচন হিসেবে বিবেচনা করে না। তারা মনে এটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয়নি। এখন একটা দেশ তাদের নিজের ইন্টারেস্টে কাজ করে। তাদের ইন্টারেস্টে কারণ, এখানে তাদের পুঁজি আছে, বিনিয়োগ আছে, সেই ইনভেস্টমেন্টের কারণে তাদের তো গভর্নমেন্ট টু গভর্নমেন্ট রিলেশনশিপ রাখতেই হয়। এটা বাস্তবতা। আর কারও ওপর ভর করে তো আন্দোলন করা যাবে না। আপনাকে আন্দোলন করতে হবে আপনার নিজের পায়ে ভর করে। যখন আপনি মনে করবেন ভারত আপনাকে করে দিয়ে যাবে বা আমেরিকা আপনাকে করে দিয়ে যাবে বা চীন করে দিয়ে যাবে তখনই আপনি আপনার জায়গা থেকে সরে যাবেন। আপনাকে আপনার জায়গায় স্টিল থাকতে হবে। আমাকে কেউ কিছু করে দেবে না। ওই জিনিসটা মাথায় রেখে আমরা কাজ করছি। হ্যাঁ টেম্পোরালি একটা সেটব্যাক হয়েছে। ওই সেটব্যাক বেশিদিন থাকবে না। এ দেশের মানুষই তা থাকতে দেবে না। বিএনপিও দেবে না।
বাংলা আউটলুক: আপনাদের ৩১ দফার বিষয়ে কিছু বলবেন?
মির্জা ফখরুল: যেমন জিয়াউর রহমানের সেই সময় ছিল ১৯ দফা ছিল বাংলাদেশের রাজনীতি ও অর্থনীতিকে পরিবর্তন করে নতুন একটা স্বপ্ন দেখানো। সেই স্বপ্নকে বাস্তবিত করার জন্য কাজ করা। এটা জিয়াউর রহমান সাহেব দেখেছিলেন। আজকের পরিবর্তিত জিও পলিটিকস সবকিছু মিলিয়ে এবং এর মধ্যে যে সময়টা এগিয়ে আছে বাস্তবতার ওপর ভিত্তি করে বর্তমান সরকারের ভয়াবহ দমনপীড়ন নির্যাতন, ইনস্টিটিউশনগুলো যে ফেল করে দেওয়ার চেষ্টা করা সব মিলেই কিন্তু আমরা ৩১ দফা দিয়েছি।
এখানে দেখবেন, আমরা দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্টের কথা বলেছি। দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্টে আমরা মনে করি, একটা চেক ইন ব্যালেন্সের মতো ব্যবস্থা আছে। সব ক্ষমতা এক ব্যক্তির হাতে থাকে না। শুধু প্রধানন্ত্রীর কাছে সব থাকবে না। আমরা জুডিশিয়াল কমিশন গঠন করতে বলেছি। জুডিশিয়ালের যে অবস্থা এখন আছে, এটা কোনো মতেই জনগণের কাছে উপযোগী না। সেজন্য জুডিশিয়াল কাউন্সিল করে এটাকে সঠিক পর্যায়ে নিয়ে আসার কথা বলেছি।
সংবিধানে কাজ করার কথা বলেছি, যেটা পরিবর্তন নিয়ে এসেছে, সেটার পরিবর্তন আবার দেখে যেটা মানুষের জন্য উপযোগী সেগুলো করতে হবে। এই বিষয়গুলো কিন্তু এখানে ইউনিক এবং আমরা মনে করি এটা একটা পরিবর্তনের জন্য জরুরি ব্যাপার। আমরা সবসময় যে কথাটা বলে এসেছি।
বাংলাদেশে আপনার সকল মত এবং পথ একসাথে বিকশিত হতে দেখতে চাই। আমরা একটা রেনবো নেশন তৈরি করতে চাই। যেখানে সকলে সবার মতামত প্রকাশ করতে পারবে। স্বাধীনভাবে প্রকাশ করতে পারবে। তারা তাদের চিন্তা ভাবনাকে সামনে নিয়ে আসতে পারবে। এই সবগুলোকে মিলিয়ে একটা রাষ্ট্র নির্মাণ করা। এই কাজটা আমাদের করতে হবে।
বাংলা আউটলুক: খুবই ভালো লাগলো আজকে আপনার সাথে কথা বলে। আমার আর খুব বেশি প্রশ্ন নেই। আপনার যদি কোন কিছু সংযোজন করার থাকে?
মির্জা ফখরুল: সংযোজন করার একটাই হচ্ছে, আজকে বাংলাদেশের মানুষ মানে, বাংলা ভাষাভাষী মানুষ যারা বাইরে রয়েছেন প্রবাসে রয়েছেন, তারাও বাংলাদেশের ব্যাপারে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। আমার মনে হয় শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ যারা বাইরে রয়েছে তারা মনে করেন বাংলাদেশ গণতন্ত্র নাই। এখানে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠান দরকার। তারা মনে করেন এখানে জনগণের কোনো নিরাপত্তা নেই এবং একটা এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে একটা ছোট জায়গায় নিয়ে গেছে। শুধুমাত্র উন্নয়নের কথা বলে গণতান্ত্রিক বিশ্বে জায়গা করে নিয়ে যায় না। ওখানে আপনার ভ্যালুসগুলো, ইথিক্স গুলো দেয়ার গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। সে জিনিসগুলো আপনার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আপনার প্রবাসী যারা আছেন, তারা তাদের ভূমিকা অনেকেই পালন করছেন আরও জোরে পালন করা উচিত আর বাংলাদেশের মানুষের কাছে আমার একটাই আহ্বান থাকবে যে এই অন্যায় অত্যাচার নির্যাতন, এই ন্যায় বিচারের অভাব, হত্যা, এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং ভোট দিতে না পারা সবগুলো মিলিয়ে যে রাজনৈতিক কাঠামো তা পরিবর্তন করতে হলে অবশ্যই তাদের বেরিয়ে আসতে হবে। সোচ্চার হতে হবে। শুধু বিএনপির আন্দোলন করবে বা বিরোধী দল আন্দোলন করবে তা তো হতে পারে না। আমরা এবার তো ৬২টা দল একসাথে হয়েছিলাম। জনগণকে কিন্তু রাস্তায় নেমে আসতে হবে।
এটা তাদের করতে হবে। তাদের নিজেদের স্বার্থে। এই আন্দোলন শুধু বিএনপির নয়। এই আন্দোলনটা মানুষের অধিকার রক্ষার । জনগণের অধিকার রক্ষার। তার গণতন্ত্র, তার ভোটের অধিকার, তার ধর্মীয় অধিকার, তার সাংস্কৃতিক অধিকার, সব কিছুই রক্ষা করতে হলে তার স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করত হলে বাংলাদেশের মানুষকে সামনে এগিয়ে আসতে হবে।
Bangla Outlook