প্রাচীন কালের অত্যাচারী রাজা-বাদশাহ-পাইক-পেয়াদা, মধ্যযুগের সামন্ত-প্রভু -জমিদার- লাঠিয়াল কিংবা বর্তমানের স্বৈর শাসক-পুলিশ- র্যাব, ছাত্রলীগ এদের সবার কিছু কিছু জায়গায় মিলগুলি অদ্ভুত এরা সবাই নিজেদের ঠুনকো ইজ্জত বা ভাবমর্যাদা রক্ষার্থে সারাক্ষণ আতংকে থাকে। এরা সবাই মূর্তি বা ভাস্কর্যের পরম ভক্ত। মানুষকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলিংএর জন্যে এদের প্রয়োজন হয় একজন বিশেষ দেবতার। যে দেবতা তাদেরকে জনগণের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাওয়ার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে দেয় । দেবতার ভয় দেখিয়ে মানুষকে সন্ত্রস্থ করে রাখতে পারে ।
এদের অনেক গোপন কথা, গোপন লজ্জা ঢেকে রাখার প্রয়োজন হয়। জনগণের মুখ বন্ধ করতে সেই এনালগ থেকে অনেক ডিজিটাল আইন- কানুন কৌশল বানাতে হয়েছে ।
এরকম এক রাজার একটি কান কাঁটা ছিল। সেই কান কাটা পড়ারও একটা লজ্জা জনক ও বেদনাবিধূর ইতিহাস রয়েছে।
সেই রাজার ভয়ে রাজ্যের সমস্ত বাপ মা নিজেদের উঠতি বয়সের মেয়েদের মাথার চুল ন্যাড়া করে মুখে কালি দিয়ে রাখত। যাতে রাজার পাইক পেয়াদার নজরে না পড়ে। তারপরেও রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কিশোরী তরুণীদের ধরে রাজার হারেমে ঢুকিয়ে দিত। মানুষকে যখন অত্যাচারের শেষ সীমায় পৌছে দেয়া হয় তখন নিজের জীবনের ভয় উবে যায় । এমনি এক নিপীড়িত তরুণী
রাজার কানে কামড় বসিয়ে পুরো কানটি আলাদা করে ফেলে ।
রাজা-বাদশাহ এবং ধনীক শ্রেণীর খরচের একটা বিরাট অংশ ব্যয় হয় এরকম অনেক কাহিনী গোপন রাখতে বা অনেকের মুখ বন্ধ রাখতে। এক পাপ ঢাকতে গিয়ে এরকম শত শত পাপ করতে হয়।
যাই হোক, এই রাজা বিশেষ ডিজাইনের মুকুট পরিধান করে সেই কানটি ঢেকে রাখত। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় ক্ষৌরকর্ম করতে গিয়ে । অন্য সবার কাছে এই তথ্যটি গোপন করে রাখা সম্ভব হলেও নাপিতের কাছ থেকে সেটা সম্ভব না। আবার ক্ষৌরকর্ম ছাড়া রাজা মশায়ের পক্ষে থাকাও সম্ভব নহে ।
রাজার এই তথ্যটি ঢাকার জন্যে রাজা তথ্যমন্ত্রীর পরামর্শ নেয়। এই রাজারও একজন হাসান মাহমুদ ছিল । এ সংক্রান্ত সকল চিকনা বুদ্ধি এবং ডিজাইন তারই করা। সেই হাসাও মাহমুদের পরামর্শমত অনেক টাকা পারিশ্রমিকের কথা ঘোষণা করা হয় । লটারির মাধ্যমে নাম উঠলে সেই নাপিতকে ডাকা হয় । রাজ- উপঢৌকন যাতে আবার দস্যুরা নিয়ে না যায় তাই সবাই কে যথাসম্ভব গোপনে গোপনে আসার পরামর্শ দেয়া হয়।
কাক পক্ষী কাউকে না জানিয়ে গোপনে গোপনে রাজ প্রাসাদের ভেতরে ঢুকে পড়ে। রাজার ক্ষৌরকর্ম শেষ করে রাজ দক্ষিণা এবং গোপন কথাটি জানানোর অভিপ্রায়ে যখন দ্রুত গেইট পার হতে যায় তখনই বিশেষ কলটিপে মুহুর্তেই মাটির নিচে ফেলে দিয়ে মাটি চাপা দেয়া হয় ।
এরকম অনেক নাপিতকে মাটি চাপা দেয়া হয়েছে ।
একদিন রাজ বংশীবাদক ঐ রাস্তা দিয়া যাওয়ার সময় দেখে গেইটের পাশে সুন্দর একটি বাঁশ ঝাড় সৃষ্টি হয়েছে। সেখান থেকে একটি কচি বাঁশ কেটে বাশী বানায়। সেই বাঁশীর সুরে সবাই মুগ্ধ হয়। হাসান মাহমুদরা এটাকে রাজার শৌর্য বীর্য উন্নয়নের নমুনা বলে দাবি করে । সেই শৌর্য বীর্য উন্নয়নের কথা দেশবাসী কে জানানোর জন্যে একটি মহা পরিকল্পনা আটে । রাজার পরবর্তী জন্মদিনে এই বিশেষ বাঁশের বাশী বানিয়ে সারা রাজ্যের বংশীবাদকদের একযোগে বাজানোর নির্দেশ দেয়া হয় ।
সেই নির্দেশমত রাজার জন্মদিনের সকালে সারা দেশের বংশীবাদক এক যোগে বাঁশীর সুর তুলে। তখন সবাইকে অবাক করে প্রতিটা বাঁশী থেকে বেরিয়ে আসে, ওগো দেশবাসী শুনো, আমাদের রাজার ডান কান কাটা। আর সেই কান কেটেছে নিতাইগঞ্জের সখিনা। ….. “
এই কান কাটা রাজার মতই হয়েছে সরকারের লেজেগুবরে অবস্থা । এত নিয়ন্ত্রণ, এত কন্ঠরোধ, এত গোপনীয়তার পরেও এই সরকারের কুকীর্তি এমন হাতে নাতে প্রকাশ পেয়েছে তা দেখে অবাক হতে হয়। মনে হয় আরেক কান কাটা রাজার কাহিনী। গুটিকয় সংবাদপত্র এবং টিভি চ্যানেলকে মাটি চাপা দিতে গিয়ে হাজার হাজার টিভি চ্যানেল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম জনগণের গোচরে এসেছে। যে কয়জন সাংবাদিকদের দেশ থেকে বের করা হয়েছে এখন তারা অবৈধ সরকারের জন্যে একেকটা এটম বোমা হয়ে পড়েছে। এদের একজনের মুখ বন্ধ করলে আরো একশত গজিয়ে পড়বে। সরকার পক্ষের যে কোনো লেবেলের নেতা কর্মী স্বপক্ষ ত্যাগ করলে রাতারাতি ভাইরাল হয়ে পড়ে। এটি যেমন সরকারের ক্ষতি বয়ে আনতে পারে তেমনি দেশের জনগণের আবেগ ও ক্ষোভকে উল্টো দিকে প্রবাহিত করে এই জাতির চরম ক্ষতি করাও অসম্ভব নয়। জানি না এটি উপলব্ধি করার মত প্রজ্ঞা এখনও সরকারের পলিসি মেকিং লেবেলে অবশিষ্ট আছে কি না ।
যুগে যুগে জালিম শাসকদের সাজার ব্যবস্থা প্রকৃতিই সম্পন্ন করেছে। এদের কৃতকর্মের কোনো কিছুই আনপেইড রাখে নাই। সেই সব সাজার কিছু জনগণের গোচরে এসেছে, অনেক কিছুই মানব জাতির অগোচরে থেকে গেছে। মানবজাতির কলংক এই সব গণশত্রুদের আসল সাজা মজুদ আছে অন্য জগতে, ভিন্ন এরেঞ্জমেন্টে। দুনিয়ার সময় এবং আয়োজন সেই সব সাজার জন্যে পর্যাপ্ত নহে ।
এই কুলাঙ্গাররা যেমন অপরাপর মানুষের জীবন দুর্বিষহ করেছে তেমনি নিজেরাও একটি বিকৃত ও অস্বাভাবিক জীবন পার করে-মানব জীবনের প্রকৃত স্বাদ আস্বাদন এই সব হতভাগাদের কপালে জুটে না। জনগণের সম্পদ লুট করে যারা নিজেদের ভাগ্য গড়ে, ক্ষমতার মদমত্তে অকাতরে মানুষকে খুন-গুম করে, পাশবিক শক্তি কিংবা চাপাবাজির মাধ্যমে জনগণের কন্ঠকে স্তব্দ করে-এদের প্রত্যেকের পরিবারে জটিল মানসিক, শারীরিক ও আবেগগত সমস্যা লেগেই থাকে। জীবন যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে কারও স্ত্রী (শাসক পরিবারের ঘনিষ্ঠ এক মন্ত্রী) আত্মহত্যা করে। কারও স্ত্রী চার তলা থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করে ( জনৈক এমপি)। আসল ঘটনা ডিগ করতে তখন পুলিশও ভয় পেয়েছিল ! এর পরেও হানিফ বলে, জনগণ বিএনপির নেতা কর্মীর কাছে মেয়ে বিয়ে দিতে চায় না। এদেশের শান্তি প্রিয় মানুষ অভিশপ্ত ঐশ্বর্য চায় না। আদরের দুলালীর লাশ দেখতে চায় না। শুধু এতটুকু শান্তি চায় ।
আবার দক্ষিণ ভঙ্গের এক এমপির পুত্রবধূ নিহত হলে হতভাগিনীর পিতাকে প্রধান মন্ত্রী ভর্ৎসনা করে বলেছিলেন, এমন ঘরে কেন মেয়ে বিয়ে দিয়েছিলেন? এই বাণী শুণে ঐ হতভাগা পিতা কতটুকু সান্ত্বনা পেয়েছিলেন জানি না। তবে ধাক্কা খেয়েছে দেশবাসী! যাকে তিনি এমপি বানাতে পারেন, তাকে অন্য কেউ মেয়ের শ্বশুর বানাতে পারবে না ! কেমন ভয়ংকর চরিত্রের মানুষগুলিকে তিনি এমপি মন্ত্রী বানাচ্ছেন !
এদের অনেকের আবার পরিবার বলে কিছু থাকে না। এক প্রাক্তন জাঁদরেল মন্ত্রীকে তার একমাত্র ছেলে নিজের বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। কয়েক বছর আগে ভোট ডাকাত এক এমপির মাদকাসক্ত ছেলে ট্রাফিক জ্যামে আটকা পড়ে নির্বিচারে গুলি করে একজন রিক্সাওয়ালা সহ কয়েকজন মানুষকে বিনা কারণে হত্যা করেছে। সর্বশেষ এক এমপির ছেলে নেভি অফিসারের দাঁত ভেঙে বাপের জন্যে সত্যিকার বিড়ম্বনা সৃষ্টি করেছে । পড়বি তো পড় এক্কেবারে মালির ঘাড়ে !
অর্থাৎ মানুষের সম্পদ লুট করে এরা নিজেদের ঘরে এরকম মাদকাসক্ত সন্তান তৈরি করে। এই হারাম টাকা এদের শান্তি ও স্বস্তি নিশ্চিত করতে পারে না। এদের ঘরে ঘরে পুলিশ-কন্যার মত ঐশী তৈরি হয়। কারো কারো পারিবারিক ও ব্যক্তিগত কুকর্ম ঢাকতে বা আশেপাশের লোকজনের মুখ বন্ধ করতে কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করতে হয় ।
এই অবৈধ সম্পদ নিজেদের জন্যেও যে অকল্যাণকর হচ্ছে, তা এদের উপলব্ধিতে আসে না। প্রকৃতির স্রষ্টা এদের শাস্তি দেয়, এই হতভাগারা তা টের পায় না। স্রষ্টা এখানে কিছুটা অবকাশ দেন। সেই অবকাশকে এই জালিমরা প্রকৃতির অনুমোদন বা নিস্পৃহতা বা উদাসীনতা বলে ভুল করে।