প্রকাশ : মঙ্গলবার ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০:৫০

ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আমলে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দেশ থেকে বাধাহীনভাবে পাচার করেছে দুর্বৃত্ত চক্র। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগসহ (সিপিডি) একাধিক গবেষণা সংস্থা ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর জানিয়েছিল, বাংলাদেশ থেকে ১৫ বছরে ২৮ লাখ কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা পাচার হয়েছে। চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশবাসী আশা করেছিল এবার হয়তো অর্থ পাচারকারীরা আইনের আওতায় আসবে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর অতিক্রান্ত হলেও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে তেমন কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া যায়নি।
বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারের কথা এলে যে দেশটির নাম সবার আগে আসে, তা কানাডা। এ দেশে অর্থ পাচারকারীরা পালিয়ে গিয়ে আয়েশী জীবন কাটাচ্ছে। তাদের পরিবারের সদস্যদের বসবাসের এলাকাকে ‘কানাডার বেগমপাড়া’ হিসেবে বলা হয়ে থাকে। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য, রাজনৈতিক ব্যক্তি, ঠিকাদার, আমলারা দেশ থেকে অর্থ পাচার করে কানাডায় বাড়ি করে নির্বিঘ্নে বসবাস করার অভিযোগ উঠেছে।
যদিও অন্তর্বর্তী সরকারের অনুরোধে সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্য, আরব আমিরাতসহ নানা দেশে পাচারকারীদের সম্পদ জব্দ করা হয়েছে। কিন্তু কানাডায় পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারের তেমন উদ্যোগ এখনো নেয়া হয়নি। অথচ কানাডার হালনাগাদ মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০২৫ অনুযায়ী যেকোনো দেশের পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধার অন্য বহু দেশের তুলনায় অনেক বেশি অনুকূল।
নয়া দিগন্তের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাথমিক তদন্তে বলা হয়েছে এস আলম একাই ১১টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সোয়া দুই লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে। সালমান এফ রহমান, নাসা গ্রুপের নজরুল ইসলাম মজুমদার, সামিট গ্রুপ, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান, জেমকন গ্রুপ, শিকদার গ্রুপ, শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা ও শেখ পরিবারসহ ১২টি গ্রুপকে বিশদ তদন্তের আওতায় আনা হয়। দুদকের অনুরোধে এসব ব্যক্তি ও তাদের প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা দেশী-বিদেশী সম্পদ জব্দের নির্দেশ দেন আদালত। ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশে থাকা পাচারকারীদের অর্থ জব্দ করেছে ওই সব রাষ্ট্র। বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে এসব সম্পদ জব্দ করা হয়। তবে বিভিন্ন দেশে পাচার হওয়া সম্পদ জব্দের আদেশ দেয়া হলেও সুরক্ষিত রয়েছে ‘কানাডার বেগমপাড়া’য় বসবাসরত দুর্নীতিবাজরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট-বিএফআইইউ কানাডায় সুনির্দিষ্ট ১৮টি অর্থ পাচারের তথ্য বের করেছিল। দেশটির কাছে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারকারীদের তথ্যও চাওয়া হয়েছে। কিন্তু বিএফআইইউ থেকে সংশ্লিষ্ট একজন পরিচালককে অন্য বিভাগে বদলি করেছেন ছুটিতে যাওয়া বিএফআইইউয়ের বিতর্কিত প্রধান শাহীনুল ইসলাম। শুধু পরিচালক বদলি করা হয়নি, এস আলমের অর্থ পাচারের তদন্ত টিমের দলনেতাকেও বদলি করা হয়েছে। বদলি করা হয় টাঁকশালের আওয়ামী লীগ আমলের বিতর্কিত এক ঠিকাদারের বিরুদ্ধে তদন্ত করা একজন চৌকস কর্মকর্তাকে। এ যেন সরষের মধ্যে লুকিয়ে থাকা ভূত। তবে আশার কথা হলো- বর্তমানে অর্থ মন্ত্রণালয় গঠিত একটি কমিটি শাহীনুলের বিষয়ে তদন্ত করছে। ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনও জমা দেয়া হয়েছে।
আমরা মনে করি, বিগত সাড়ে ১৫ বছরে দেশ থেকে বিদেশে যে বিপুল অর্থ পাচার হয়েছে; তা উদ্ধারে অন্তর্বর্তী সরকারের আন্তরিকতায় কোনো ঘাটতি নেই। কিন্তু এই কার্যক্রমে ধীরগতি লক্ষণীয়। বলা ভালো, কচ্ছপ গতিতে এগোচ্ছে। সঙ্গতকারণে সবার প্রত্যাশা পাচারকৃত অর্থ দ্রুত দেশে এনে তা রাষ্ট্রীয় কল্যাণে ব্যয় করা হোক।