নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশিত সংবাদের কারণেই চট্টগ্রামের সাংবাদিক গোলাম সরওয়ারকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়। উদ্ধার হওয়ার পর সোমবার গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানান গত চারদিন নিখোঁজ থাকা এই সাংবাদিক।
তবে ঠিক কোন সংবাদের কারণে তাকে অপহরণ ও নির্যাতন করা হয় সে বিষয়ে কোন স্পষ্ট ধারণা দিতে পারেন নি গোলাম সরওয়ার।
সরওয়ার জানান, তাকে ধরে অজ্ঞাত একটি স্থানে নিয়ে শরীরে কাপড় জাতীয় কিছু একটা মুড়িয়ে কাঠের তক্তা ও বেল্ট দিয়ে মারধর করা হয়েছিল। যারা নির্যাতন করছিল, তারা বলছিল, ‘আর নিউজ করবি? তোদের কোন নিরাপত্তা নাই। তোরা কি করতে পারবি?’
তিনি আরও বলেন, মারধরের সময় ওই ঘরে থাকা লোকজন বাইরের কারও সঙ্গে ‘স্যার’ সম্বোধন করে মোবাইল ফোনে কথা বলছিল। তারা বলছিল- ‘স্যার রাখব নাকি ফেলে দিব?’ অপর প্রান্ত থেকে বলে- ফেলতে হবে না, তারে দিয়ে অন্য সাংবাদিকদের শিক্ষা দেওয়া দরকার, তাকে মারার দরকার নাই। তাকে আনা হয়েছে, সে বেশি উড়ছে এজন্য।’
সরওয়ার জানান, চন্দনাইশ উপজেলায় নিজ বাড়িতে যাওয়ার জন্য বুধবার রাত ১২টার দিকে নগরীর ব্যাটারি গলির বাসা থেকে বের হন তিনি। বাস ধরতে শাহ আমানত সেতু এলাকায় যাওয়ার জন্য ১০০ টাকায় একটি ভাড়ায়চালিত মোটর সাইকেলে উঠেছিলেন। সেখানে আরেকজন লোক উঠে তাকে অজ্ঞান করে নিয়ে যায়। এরপর একটি বাসায় নিয়ে চোখ বেঁধে মারধর করা হয়৷
তিনি বলেন, যে বাসায় তাকে আটকে রাখা হয়েছিল, সেখানে চারজন ছিলেন। তাদের মধ্যে একজন চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় আর অন্যরা শুদ্ধ বাংলায় কথা বলছিলেন। আটকে রাখা ঘর থেকে ট্রেনের শব্দ শোনার কথাও জানান তিনি।
কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন বলেন, গাড়িতে করে আনার সময় সরওয়ার কিছু তথ্য দিয়েছে। তার সাথে বেশি কথা বলা সম্ভব হয়নি। আমরা আবার হাসপাতালে যাচ্ছি কথা বলতে। তার বলা প্রত্যেকটি বিষয় নিয়ে তদন্ত হবে। আমরা কাজ শুরু করেছি। আগের করা সাধারণ ডায়েরি প্রত্যাহার করে নিয়ে সরোয়ারের পরিবারের পক্ষ থেকে একটি মামলা করা হবে।
এদিকে সরওয়ারের চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎকসরা একটি বোর্ড গঠন করেছেন।
সাপ্তাহিক আজকের সূর্যোদয়ের চট্টগ্রাম অফিসে কর্মরত গোলাম গোলাম সরওয়ার সিটিনিউজবিডি নামে একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের নির্বাহী সম্পাদকও। তার নিখোঁজ হওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন আজকের সূর্যোদয়ের চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান জোবায়ের সিদ্দিকী। এরপর চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে।
পরে রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সীতাকুণ্ডের কুমিরা ইউনিয়নের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী একটি খালের পাশে অজ্ঞান অবস্থায় এই সাংবাদিককে দেখতে পান স্থানীয়রা।
জ্ঞান ফেরার পরই হঠাৎ ”প্লিজ, প্লিজ… আমি আর নিউজ করবো না” বলে চিৎকার শুরু করেন তিনি। তার পরিচয় পাওয়ার পর স্থানীয়রা পুলিশকে জানায় এবং তাকে হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করে।
ভয়ার্ত কণ্ঠে সাংবাদিক সরোয়ারের ওই আর্তনাদের একটি ভিডিও ক্লিপ এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে ঘুরছে।