মিয়ানমারে সামরিক জান্তা ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে চলমান লড়াই আরও তীব্র হচ্ছে। দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সাগাইং অঞ্চলের কাওলিন শহরের প্রায় ৮০ শতাংশ এলাকা ধ্বংস করেছে জান্তা সৈন্যরা। দুই সপ্তাহ আগে প্রতিরোধ বাহিনীর কাছ থেকে শহরটি পুনরুদ্ধার করার পর থেকে সেখানকার বাড়িঘরে আগুন দিচ্ছে সেনা বাহিনীর সদস্যরা। স্থানীয় বাসিন্দারা এ তথ্য জানিয়েছেন। অন্যদিকে আরাকান আর্মির সঙ্গে লড়াইয়ে রাজ্যটির রামরি শহরে জান্তা বাহিনীর প্রায় ৮০ সেনা নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে রাখাইনের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। খবর- দ্য ইরাবতি
একটি ড্রোন থেকে তোলা একটি ছবিতে দেখা গেছে, কাওলিন শহরের প্রায় সব বাড়ি পুড়ে গেছে। বেসামরিক জাতীয় ঐক্য সরকারের (এনইউজি) অধীনে জাতিগত সেনাবাহিনী ও পিপলস ডিফেন্স ফোর্স গ্রুপ (পিডিএফ) কয়েক দিন ধরে আক্রমণ করার পর গত বছরের ৬ নভেম্বর জেলা শহরটি দখল করে। ১২ ফেব্রুয়ারি কাওলিনে বড় অভিযান চালিয়ে জান্তা সরকার তা পুনরুদ্ধার করে।
শহরটি পুনরুদ্ধার করার পর থেকে সেখানকার বহুতল ভবনগুলোতে জান্তা সৈন্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। তাদের জন্য বাধা এমন যেকোনো স্থাপনা ধ্বংস করছে।
কাওলিনের শহুরে প্রায় ২৫ হাজার বাসিন্দা। সেখানকার ২৫টি গ্রামের মানুষ দুই পক্ষের সংঘাতে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। শহরের উপকণ্ঠে কিয়াউকটান গ্রামের কাছে তুমুল সংঘর্ষ চলছে। মান্দালে-শয়েবো সড়কে যানবাজন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে অবরুদ্ধ মাইটকিনা-ইন্দাও-কাইউকটান সড়কেও যানবাহন আটকা পড়েছে।
রাখাইনে ৮০ জান্তা সৈন্য নিহত: এদিকে আরাকান আর্মির সঙ্গে লড়াইয়ে রাখাইনের উপকূলীয় শহর রামরিতে জান্তা বাহিনীর প্রায় ৮০ সেনা নিহত হয়েছেন। তিন দিনের লড়াইয়ে এসব সেনা নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে রাখাইনের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। আরাকান আর্মির অগ্রযাত্রা থামানোর জন্য শনিবার সেখানে নতুন করে সেনা সদস্যদের পাঠায় জান্তা সরকার। শনিবার চারটি সামরিক হেলিকপ্টারে ১২০ জন সৈন্যকে রামরি শহরে আনা হয়। সোমবার রামরি দ্বীপ থেকে পিছু হটার সময় তাদের সঙ্গে লড়াইয়ে জান্তা বাহিনীর আরও ২০ সেনা নিহত হন। শহরটিতে বিদ্রোহীদের অবস্থান লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালাচ্ছে জান্তা বাহিনী। এসব হামলায় শহরটির অনেক বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে।
আরাকান আর্মি বলছে, শনিবার লড়াইয়ে ৬০ জনের মতো জান্তা সৈন্য নিহত হয়েছে। যদিও ভারী অস্ত্রশস্ত্র ছিল জান্তাদের হাতে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রচুর অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ সৈন্যদের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সেখানে সংঘর্ষ শুরু হয় ডিসেম্বরের মাঝামাঝি যখন আরাকান আর্মির সৈন্যরা রামরি শহরের দক্ষিণে অং চ্যান থার পাহাড়ের চূড়ার প্যাগোডায় অবস্থান করা শাসক বাহিনীর ওপর আক্রমণ চালায়।
প্রসঙ্গত, মিয়ানমারের জান্তা সরকারের বিরোধী জাতিগত বিদ্রোহী গ্রুপগুলো হামলা চালিয়ে আসছে দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে। এরই মধ্যে সরকারের হাতছাড়া হয়েছে বিশাল এলাকা।
সমকাল