কাউকে পাশে পাচ্ছেন না শেখ হাসিনা

দীর্ঘদিন যারা সরকারকে সহায়তা করে আসছিলো তাদের অধিকাংশকেই দুঃসময়ে পাশে পাচ্ছেন না শেখ হাসিনা। সেনাবাহিনী ও সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রীদের নিষ্ক্রিয়তা তাকে কার্যত একা করে ফেলেছে।

সেনাবাহিনীর একটি সূত্র জানিয়েছে, বাহিনীটির বেশীরভাগ অফিসার ও জওয়ান এই আন্দোলনে ছাত্রছাত্রীদের পক্ষে রয়েছে। তারা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর যে কোন ধরনের সহিংস পদক্ষেপ নিতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

গতকাল সেনাবাহিনীর বিশেষ বৈঠকেও সরকারের ভুল পদক্ষেপ ও জনগণের মুখোমুখি সেনাবাহিনীকে দাঁড় করিয়ে দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন বৈঠকে অংশ নেয়া সেনা কর্মকর্তারা। তবে ৪৬ ব্রিগ্রেড এর কমান্ডার ব্রিগ্রেডিয়ার এম ইমরান হামিদ এখনও সরকারের প্রতি তার আনুগত্য প্রকাশ করে সরকার প্রধানের পাশে থাকার কথা জানিয়েছেন। এ নিয়ে ৪৬ পদাতিক ডিভিশনে তার অধীনস্তদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। এর আগে গত সপ্তাহে ব্রিগ্রেডিয়ার এম ইমরান হামিদের নেতৃত্বেই ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

আজ ৪ আগস্ট ঢাকার রাওয়া ক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে সামরিক বাহিনীকে ছাউনিতে ফিরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সাবেক সেনা কর্মকর্তারা। সংবাদ সম্মেলনের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহেদুল আনাম খানসহ ছয়জন সাবেক জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা, সাবেক সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) নুরুদ্দীন খান উপস্থিত ছিলেন।

এরই মাঝে দেশজুড়ে আজ সকাল থেকে আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গ সংগঠনগুলোর সন্ত্রাস, ধ্বংসযজ্ঞ ও তাণ্ডব শুরু করেছে। ইতিমধ্যে ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় অন্তত ৩২ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে আজ সকাল থেকে দেশের দেশের বিভিন্ন স্থানে কোটা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী জানিয়েছে তারা ছাত্রদের পাশে থাকবেন।

কিন্তু সেনাবাহিনী ছাত্রদের পাশে থাকলেও রাজপথে আন্দোলনরত ছাত্রদেরকেই আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগ, পুলিশ ও ডিবির বিরুদ্ধে মোকাবেলা করতে হবে। চলমান সংঘাতে সেনাবাহিনী কোন পক্ষই নিবে না।

আন্দোলনকারীদের উপর পুলিশের নির্বিচারে গুলি বর্ষণ ও হত্যার বিষয়ে সরকারের তথ্য প্রতিমন্ত্রী এম এ আরাফাত বলেন, তারা পুলিশকে গুলি করার নির্দেশ দেয়নি। যে সকল পুলিশ সদস্য গুলি করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। সেদিক বিবেচনায় পুলিশ এ মুহূর্তে কেন আন্দোলনকারীদের উপর চড়াও হচ্ছেন তা আসলে পরিষ্কার নয় অনেকের কাছে। সংকটের এই সময়ে সরকারের মন্ত্রণালয় ও নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক সমন্বয়হীনতাও দৃশ্যমান।

গতকাল ৩ আগস্ট সমাজের সর্বস্তরের জনগণ ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে সরকারের পদত্যাগ দাবি করেন। সুশীল সমাজ, অভিনেতা, শিল্পী সবাই এই গণহত্যার দায় স্বীকার করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রীসভার পদত্যাগ দাবি করেছেন। বিগত ১৫ বছরের শাসনকালে এমন পরিস্থিতে সরকার প্রধান ও তার দলকে পড়তে হয়নি।

গত কয়েকদিন ধরে ছাত্রলীগ গা ঢাকা দিলেও গতকাল রাতভর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদেরকে গুজব ছড়াতে দেখা যায়। ছাত্রলীগ তাদের বিভিন্ন সেল ও ইউনিট ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের দেখে নেয়ার হুমকি ও একদফা কবর দেয়ার কথা বলে প্রচারণা করে। তবে এর কোন কিছুতেই ছাত্রলীগের দুই আলোচিত সমালোচিত নেতা সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ইনানকে কোথাও দেখা যায়নি। বেশির ভাগ জায়গাতেই সহিংসতার নির্দেশনা দিয়ে তারা তৃণমূল নেতাকর্মীদের সামনে ঠেলে দিচ্ছেন।

তবে তীব্র জনরোষের ভয়ে ইতিমধ্যে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে শুরু করেছে সরকারের মন্ত্রী এমপিরা। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সহকারী পরিচালক (এডসেক আইডি পারমিট) নাছিমা শাহীন এর সাক্ষর সম্বলিত বিমানবন্দরের ভিআইপি টার্মিনাল -১ রজনীগন্ধার যাত্রীদের একটি তালিকা বাংলা আউটলুকের হাতে আসে। তালিকায় থাকা ব্যাক্তিদের মধ্যে ছিলেন গণপূর্ত মন্ত্রী জনাব র আ ম উবায়দুল মোকতাদির, অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো তাজুল ইসলাম, কৃষি মন্ত্রী ডঃ মো আব্দুস শহীদ, সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, সাবেক বস্ত্র পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ এর স্ত্রী, সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন মঞ্জু সহ সরকারের সাবেক শীর্ষ স্থানীয় আমলারা পরিবারের সদস্যসহ দেশ ছাড়ার সত্যতা নিশ্চিতও হওয়া গেছে।

bangla outlook