কল্যাণমূলক ব্যবস্থা আইনে আছে, বাস্তবতা ভিন্ন


বাংলাদেশের শ্রমজীবী মানুষের এক বিরাট অংশ কৃষি ও রিকশা চালনার পেশায় নিয়োজিত। এ দু’টি পেশায় নিয়োজিত অনেকে নিজ ভ‚মিতে অথবা বর্গাচাষি হিসেবে মালিকের ভূমিতে অথবা বদলা হিসেবে মালিকের ভ‚মিতে শ্রম দিয়ে থাকে। রিকশা চালনা পেশায় নিয়োজিত শ্রমিকদের অধিকাংশই নির্ধারিত জমার (টাকা) বিনিময়ে মালিকের রিকশা চালায়। তবে নগণ্যসংখ্যক রিকশা চালক আছে যারা রিকশার মালিক। এ ধরনের রিকশা শ্রমিকদের দেখা যায় আট ঘণ্টা ব্যাপ্তির একবেলা রিকশা চালিয়ে সমব্যাপ্তির অবিশষ্ট বেলা নির্ধারিত জমার বিনিময়ে রিকশাকে ভাড়ায় খাটান। ঢাকাসহ কিছু জেলা শহরে একই রিকশা দু’বেলায় দু’জন চালক চালিয়ে থাকেন; তবে অপরাপর শহরের ক্ষেত্রে দিনের সম্পূর্ণ ভাগ ও রাতের প্রথম প্রহর সমন্বয়ে গঠিত একটি বেলায় একজন রিকশা শ্রমিক নির্ধারিত জমার বিনিময়ে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। কৃষি ও রিকশা চালনা অদ্যাবধি সরকার কর্তৃক শিল্প সেক্টর হিসেবে ঘোষিত না হওয়ায় এ দু’টি পেশায় যারা শ্রম দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন তারা শ্রম আইনের অন্তর্ভুক্ত নন। এ দু’টি পেশার মতো আরো কিছু শিল্প সেক্টর যেমন- ইটভাটা, জুয়েলারি, সিমেন্ট কারখানা, ইলেকট্রনিক্স, টুপি, গৃহকর্মী, সিরামিকস, পেপার মিল, ক্যাব্ল প্রস্তুতকারী, বেভারেজ, সিগারেট, অডিও-ভিডিও, বলপেন, পোলট্রি ফার্ম, দুগ্ধ খামার, দোকান কর্মচারী, সারকারখানা, কমিউনিটি সেন্টার, সাইকেল যন্ত্রাংশ, ইঞ্জিনচালিত বোট ও ট্রলার, লঞ্চ মেনুফ্যাকচারিং, গার্মেন্ট এক্সেসরিজ, পাওয়ার লুম ও হ্যান্ড লুম, ড্রাই ফিশ, বাঁশ ও বেতের আসবাবপত্র, ফিশ প্রসেসিং, পেইন্ট মেনুফ্যাকচারিং প্রভৃতিতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শ্রমিকের কর্মসংস্থান হলেও এসব সেক্টর সরকার ঘোষিত শিল্প সেক্টরগুলোর অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় এখানে কর্মরত শ্রমিকরা শ্রম আইনের আওতার বাইরে।

সরকার ও ব্যক্তিমালিকানাধীন যেসব সেক্টর শিল্প সেক্টর হিসেবে ঘোষিত এসব সেক্টরে কর্মরত শ্রমিকরা শ্রম আইনের আওতাভুক্ত। শ্রম আইন এসব সেক্টরে কর্মরত শ্রমিকদের জন্য কিছু কল্যাণমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে; তবে বাস্তবতা হলো শ্রম আইনের নির্দেশনা অনুযায়ী এসব কল্যাণমূলক ব্যবস্থা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রায়ই কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে অবহেলা ও ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়।

শ্রম আইন নির্ধারিত কল্যাণমূলক ব্যবস্থাগুলো হলো, প্রাথমিক চিকিৎসা সরঞ্জাম, সেফটি রেকর্ড বুক সংরক্ষণ, ধৌতকরণ সুবিধা, ক্যান্টিন, বিশ্রাম কক্ষ ও শিশু কক্ষ। শিশু কক্ষ বিষয়ে আগেকার একটি লেখায় বিস্তারিত আলোচনা করায় এই নিবন্ধে শিশু কক্ষবিষয়ক আলোচনা পরিহার করা হলো। চা বাগানে কর্মরত শ্রমিকদের জন্য ভিন্নধর্মী কিছু কল্যাণমূলক ব্যবস্থা বিষয়ে শ্রম আইনে উল্লেখ রয়েছে। ভবিষ্যতে অপর একটি নিবন্ধে পৃথকভাবে এ বিষয়ে আলোচনার লক্ষ্যে আলোচ্য নিবন্ধে এ বিষয়টির অবতারণা করা হলো না।

প্রাথমিক চিকিৎসা সরঞ্জাম বিষয়ে শ্রম আইনে সুস্পষ্টরূপে উল্লেখ রয়েছে যে, প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে সব কর্মসময়ে যাতে সহজে পাওয়া যায় এমনভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা সরঞ্জাম সমৃদ্ধ বাক্স অথবা বিধিনির্ধারিত সরঞ্জামসমৃদ্ধ আলমিরার ব্যবস্থা করতে হবে। ওইরূপ বাক্স বা আলমিরার সংখ্যা, প্রতিষ্ঠানে সাধারণত প্রত্যেক ১৫০ জন শ্রমিকের জন্য একটির কম হবে না। প্রত্যেক প্রাথমিক চিকিৎসার বাক্স অথবা আলমিরা এমন একজন দায়িত্বপূর্ণ ব্যক্তির জিম্মায় থাকবে যিনি প্রাথমিক চিকিৎসায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং যাকে প্রতিষ্ঠানের সব কর্মসময়ে পাওয়া যাবে। প্রত্যেক কর্মকক্ষে ওই ব্যক্তির নাম সম্বলিত একটি নোটিশ টাঙ্গিয়ে দেয়া হবে এবং ওই ব্যক্তি তাকে সহজে শনাক্ত করা যায় মতো ব্যাজ পরিধান করবেন। যেসব প্রতিষ্ঠানে সাধারণত ৩০০ বা ততোধিক শ্রমিক নিয়োজিত থাকেন সেসব প্রতিষ্ঠানে বিধি দ্বারা নির্ধারিত মাপের ও যন্ত্রপাতি সজ্জিত অথবা অন্যান্য সুবিধা সম্বলিত ডিসপেনসারিসহ একটি রোগী কক্ষ থাকবে এবং ওই কক্ষটি বিধি দ্বারা নির্ধারিত চিকিৎসক ও নার্সিং স্টাফের দায়িত্বে থাকবে।

সেফটি রেকর্ড বুক সংরক্ষণ বিষয়ে শ্রম আইনে যে বিধানাবলি রয়েছে তাতে বলা হয়েছে- ২৫ জনের অধিক শ্রমিক সম্বলিত প্রত্যেক কারখানা বা প্রতিষ্ঠানে নির্ধারিত পদ্ধতিতে বাধ্যতামূলক সেফটি রেকর্ড বুক ও সেফটি বোর্ড সংরক্ষণ করতে হবে।

ধৌতকরণ সুবিধা সম্পর্কে শ্রম আইনের বিধান হলো- প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকদের ব্যবহারের জন্য যথেষ্ট সংখ্যক উপযুক্ত গোসলখানা ও ধৌতকরণের সুবিধা এবং এর রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা থাকতে হবে। ওইরূপ সুবিধাদি পুরুষ ও মহিলা শ্রমিকদের জন্য স্বতন্ত্রভাবে থাকতে হবে এবং তা যথাযথভাবে পর্দাঘেরা থাকবে। ওইরূপ সুবিধাদি সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে এবং সহজে গমনযোগ্য হতে হবে। ওইরূপ সুবিধাগুলোর মান সরকার প্রণীত বিধি দ্বারা নির্ধারিত হবে।

কল্যাণমূলক ব্যবস্থা হিসেবে ক্যান্টিন বিষয়ে শ্রম আইনে যা বলা হয়েছে তা হলো, যে প্রতিষ্ঠানে সাধারণত ১০০ জনের অধিক শ্রমিক নিযুক্ত থাকেন সে প্রতিষ্ঠানে তাদের ব্যবহারের জন্য যথেষ্ট সংখ্যক ক্যান্টিন থাকবে। সরকার বিধি দ্বারা ক্যান্টিনের নির্মাণ, স্থান, সংস্থান, আসবাবপত্র এবং অন্যান্য সরঞ্জামের মান নির্ধারণ করবে। ক্যান্টিনের জন্য একটি ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন এবং এর ব্যবস্থাপনায় শ্রমিক প্রতিনিধিত্বের জন্য বিধান থাকবে। ক্যান্টিনে কী ধরনের খাদ্য সরবরাহ করা হবে এবং এর মূল্য কত হবে তা ওই ব্যবস্থাপনা কমিটি নির্ধারণ করবে।

এমন অনেক কারখানা বা প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখানে শ্রমিকের সংখ্যা হাজারের ঊর্ধ্বে অথবা কয়েক হাজার। এসব কারখানার ক্যান্টিনে উপযুক্ত ও যথাযথ সেবা দেয়ার জন্য উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শ্রমিক নিয়োগের আবশ্যকতা রয়েছে। এসব শ্রমিক কারখানা শ্রমিক হিসেবে বিবেচিত হবে কি না এবং তারা শ্রম আইনের অন্তর্ভুক্ত হবে কি না এ বিষয়ে বিতর্ক রয়েছে।

অতীতে দেখা গেছে, সমবায় সমিতি দ্বারা শ্রমিক নিয়োগের মাধ্যমে পরিচালিত ক্যান্টিনের শ্রমিক কারখানা অবসায়নের কারণে কারখানা শ্রমিক মর্মে বিবেচিত হবে কি না প্রশ্ন দেখা দিলে শ্রম আদালত কর্তৃক সিদ্ধান্ত প্রদান করা হয় যে, কারখানার জন্য ক্যান্টিন বাধ্যতামূলক হলেও ওই ক্যান্টিন সমবায় সমিতি দ্বারা চালিত হলে এর বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণে কারখানার অবসায়নে ক্যান্টিন শ্রমিকরা কারখানার শ্রমিক হিসেবে বিবেচিত হবে না।

বিশ্রাম কক্ষ কল্যাণমূলক ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত একটি বিধান। এ বিষয়ে শ্রম আইনের ভাষ্য মতে, সাধারণত ৫০ জনের অধিক শ্রমিক নিযুক্ত থাকেন এরূপ প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকদের ব্যবহারের জন্য যথেষ্ট এবং উপযুক্ত সংখ্যক বিশ্রাম কক্ষের ব্যবস্থা ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে এবং ওই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকরা যাতে তাদের সাথে আনীত খাবার খেতে পারেন সে জন্য পান করার পানির ব্যবস্থাসহ একটি উপযুক্ত খাবার কক্ষেরও ব্যবস্থা এবং রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। তবে যেসব কারখানা বা প্রতিষ্ঠানে পৃথক ক্যান্টিনের ব্যবস্থা থাকে সেসব কারখানা বা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে বিশ্রাম কক্ষ বা খাবার কক্ষের বিধান শিথিল করা যেতে পারে। এ বিষয়ে আরো বলা হয়েছে, খাবার কক্ষ বিদ্যমান রয়েছে এমন কারখানা বা প্রতিষ্ঠানে কোনো অবস্থাতেই শ্রমিকরা কর্ম কক্ষে বসে কোনো খাবার যেন খেতে না পারে সেটি নিশ্চিত করতে হবে। ওই বিশ্রাম কক্ষ এবং খাবার কক্ষ যথেষ্টভাবে আলোকিত এবং বায়ু সম্বলিত হতে হবে এবং পরিষ্কার রাখাসহ সহনীয় তাপমাত্রায় রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। যেসব প্রতিষ্ঠানে ২৫ জনের অধিক মহিলা শ্রমিক নিযুক্ত থাকবেন সেখানে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য পৃথক বিশ্রাম কক্ষের ব্যবস্থা এবং যেসব প্রতিষ্ঠানে ২৫ জনের কম মহিলা শ্রমিক নিযুক্ত থাকবেন সেখানে বিশ্রাম কক্ষে মহিলাদের জন্য পৃথক পর্দাঘেরা জায়গার ব্যবস্থা থাকবে।

সরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন শিল্প সেক্টরের মধ্যে আমাদের দেশে বর্তমানে পোশাক শিল্প সেক্টরের সর্বাধিক শ্রমিক নিয়োজিত। পোশাক শিল্পের দু’টি শাখা রয়েছে। এর একটি হলো তৈরী পোশাক এবং অপরটি বুনন। পোশাক শিল্প সংশ্লেষে যেসব পশ্চাৎপদ সংযোগ শিল্প গড়ে উঠেছে সেগুলোতেও বিপুলসংখ্যক শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে। কটন টেক্সটাইল ও কম্পোজিট টেক্সটাইল মিল তৈরী পোশাক শিল্পর সহায়ক সেক্টর। এ সেক্টরটিতেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন। তৈরী পোশাক শিল্প সংশ্লেষে যেসব ঘোষিত অথবা অঘোষিত শিল্প সেক্টর রয়েছে এর প্রায় সবই ব্যক্তিমালিকানাধীন। কারখানা ও শ্রমিক সংশ্লিষ্ট ২৫টি আইনকে একীভূত করে ২০০৬ সালে সমন্বিত শ্রম আইন প্রণয়ন করা হয়।

এ সমন্বিত আইনটি করার পেছনের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল যাতে কারখানা ও শ্রমিকসংক্রান্ত সব আইন একটি পুস্তকের মধ্যে সন্নিবেশিত হয়। একীভ‚ত শ্রম আইন প্রণয়ন পূর্ববর্তী কারখানা ও শ্রমিকবিষয়ক যেসব আইন ছিল এর প্রায় সবই পৃথক বিধি ছিল। একীভূত শ্রম আইন প্রণয়ন-পরবর্তী শ্রম আইনের অধীন পৃথক বিধি প্রণয়নের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ২০১৩ সালে শ্রম আইনে কিছু সংশোধনী আনা হলেও তাতে শ্রমিকপক্ষ থেকে মালিকপক্ষের স্বার্থই অধিক সংরক্ষণ করা হয়।

আমাদের রাজধানী শহর ঢাকা ও বাণিজ্যিক শহর চট্টগ্রাম এবং এ দু’টির আশপাশে এমন অনেক তৈরী পোশাক কারখানা রয়েছে যেগুলোতে শ্রমিকের সংখ্যা ১০ হাজারের ঊর্ধ্বে। শ্রমিক সংখ্যানুযায়ী এসব কারখানায় প্রাথমিক চিকিৎসা সরঞ্জাম, সেফটি রেকর্ড বুক সংরক্ষণ, ধৌতকরণ সুবিধা, ক্যান্টিন ও বিশ্রাম কক্ষ প্রভৃতির সংস্থানের কথা বলা হলেও শ্রম আইন নির্ধারিত কল্যাণমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে এমন কারখানার সংখ্যা নগণ্য। শ্রম আইন যে ধারণা দেয় তা থেকে অনুধাবন করা যায় ৩০০ শ্রমিকের অধিক শ্রমিক কর্মরত কারখানায় ডিসপেনসারির ব্যবস্থাসহ সার্বক্ষণিক একজন চিকিৎসক থাকা আবশ্যক। কিন্তু এক হাজার শ্রমিক কর্মরত রয়েছে এমন কারখানাগুলোতেও ডিনপেনসারি ও সার্বক্ষণিক চিকিৎসকের অনুপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়।

আমাদের তৈরী পোশাক শিল্প খাত রফতানিমুখী খাত হওয়ায় এবং এ খাত সংশ্লেষে দুর্ঘটনায় সর্বাধিক সংখ্যক শ্রমিক নিহত হওয়ায় এ খাতটির নিরাপত্তা ও শ্রমিকদের কল্যাণমূলক ব্যবস্থা অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিকভাবে বারবার আলোচনায় এসেছে। আমাদের দেশের পোশাক কারখানাগুলোর মান ও সুযোগ-সুবিধাদি অন্যান্য শিল্পকারখানার তুলনায় অধিক হলেও তা যে শতভাগ শ্রম আইনসম্মত এ কথাটি বলা যাবে না। শ্রম আইনের বিধানাবলি সঠিকভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে কি না তা দেখাসহ নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকার ও মালিক উভয়পক্ষের। তা ছাড়া শ্রম মন্ত্রণালয়, কলকারখনা প্রতিষ্ঠান ও পরিদর্শন অধিদফতর এবং শ্রম পরিদফতর যথাযথভাবে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করলে কল্যাণমূলক ব্যবস্থা বিষয়ে আইনের অনুসরণ সঠিকভাবে হতো। আর অনুসরণ সঠিকভাবে না হওয়ার কারণেই যে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ব্যত্যয় এ বিষয়ে আজ আর কোনো বিতর্ক নেই। এ কথাটিও ঠিক, শ্রম আইনে শ্রমিকদের জন্য ট্রেড ইউনিয়ন, যৌথ দরকষাকষি প্রতিনিধি (সিবিএ) ও অংশগ্রহণ কমিটি সংক্রান্ত যে বিধান রয়েছে তাতে শ্রমিকদের মধ্যে বিভাজন না থাকলে পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়নে কোনো ধরনের অন্তরায় সৃষ্টি হতো না। কিন্তু কিছু সুবিধাভোগী শ্রমিক মালিকপক্ষের সাথে হাত মিলিয়ে শ্রমিকদের স্বার্থে যে কুঠারাঘাত করছে এ কথাটি বলার শক্তিও আজ শ্রমিকরা হারিয়ে ফেলেছেন। আর তাই কল্যাণমূলক ব্যবস্থাগুলো বাস্তবায়ন বিষয়ে নিরীহ শ্রমিকদের মর্মবেদনা ও অন্তর্জ্বালা তাদের হৃদয়ের অভ্যন্তরেই থেকে যাচ্ছে।

লেখক : সাবেক জজ, সংবিধান, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক
E-mail: [email protected]