বাংলাদেশের মানবাধিকার সুরক্ষায় শক্ত অবস্থান নেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়েছে ৭টি মানবাধিকার সংগঠন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস (১০ ডিসেম্বর) উপলক্ষ্যে এক যুক্ত বিবৃতিতে সাতটি মানবাধিকার সংগঠন এই আহ্বান জানায়।
বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টায় এই যুক্ত বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। এতে স্বাক্ষর করেছে-Asian Federation Against Involuntary Disappearances (AFAD), Asian Human Rights Commission (AHRC), Asian Network for Free Elections (ANFREL), International Federation for Human Rights (FIDH), Human Rights Watch (HRW), Robert F. Kennedy Human Rights, World Organisation Against Torture (OMCT)|
বিবৃতিতে বলা হয়, কোভিড-১৯ মহামারী পরিস্থিতিকে সামনে রেখে বাংলাদেশ সরকার স্বাধীন মত প্রকাশ ও গণমাধ্যমের কণ্ঠ চেপে ধরেছে। এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার তাদের কর্তৃত্ববাদী শাসনকে আরো পোক্ত করে তুলেছে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, সরকার ধারাবাহিকভাবে ডিজিটাল সুরক্ষা আইন-২০১৮, বিশেষ ক্ষমতা আইন -১৯৭৪ এবং অন্যান্য কঠোর আইনের অপব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করছে। এছাড়া নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও ভিন্নমতের লোকদের গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ নানা নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের মত জঘন্য এসব কর্মকাণ্ডে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে দায়মুক্তি দেয়া হচ্ছে।
বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম আর নির্যাতনের অভিযোগে র্যাবের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিতে সাবেক ট্রাম্প প্রশাসনকে মার্কিন সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটির ১০ সদস্যের গত ২৮ অক্টোবরের চিঠির প্রতিও সমর্থন জানানো হয়েছে এই বিবৃতিতে।
উল্লেখ্য, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাবের সুনির্দিষ্ট জ্যেষ্ঠ সদস্যদের বিরুদ্ধে গ্লোবাল মেগনিটস্কি হিউম্যান রাইটস অ্যাকাউন্টেবিলিটি অ্যাক্ট এবং ফারদার কনসোলিডেটেড অ্যাপ্রোপ্রিয়েশনস অ্যাক্ট-২০২০ এর ৭০৩১ (সি) ধারাসহ প্রয়োজনীয় কাঠামোর আওতায় র্যাবের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের অনুরোধ করে মার্কিন সিনেটে ডেমোক্রেটিক পার্টির সিনেটর বব মেনেনডেজ ও রিপাবলিকান পার্টির সিনেটর টড ইয়াং এবং তাঁদের আট সিনেট সহকর্মী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এবং অর্থমন্ত্রী স্টিভেন মানুচিনকে অনুরোধ করেছিলেন।
৭ মানবাধিকার সংগঠনের বিবৃতিতে আরো বলা হয়, মানবাধিকার লংঘনে জড়িত র্যাবসহ বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হলে তা হবে এসব বাহিনীর বিরুদ্ধে যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এতে করে বাংলাদেশে দায়মুক্তির সংস্কৃতি বন্ধ হবে এবং ভবিষ্যতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোও রোধ করা সম্ভব হবে।
নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্য, কানাডা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) সহ অন্যান্য দেশগুলোকেও একই ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপের পথ অনুসরণ করা উচিত বলে বিবৃতিতে বলা হয়।
এতে আরো বলা হয়, কোভিড-১৯ মহামারীর ফলে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের ভয়াবহ দুর্নীতির বিষয়টিও উঠে এসেছে।
রাজনৈতিক নেতা ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের ওপর ক্রমাগত চাপ অব্যাহত রয়েছে। এদিকে, এসব বিষয়ে সরকারের সমালোচনা করা হলে নির্বিচারে গ্রেপ্তার এবং আটকের ঘটনা ঘটেছে।
কোভিড-১৯ মহামারীকালে কারাগারে কম ঝুঁকিপূর্ণ আসামি এবং বিচারাধীন আসামিদের মুক্তি দিতে জাতিসংঘের আহ্বানকে তোয়াক্কা না করে এর মধ্যেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে দৈনিক সংগ্রাম সম্পাদক প্রবীন সাংবাদিক আবুল আসাদ, রুহুল আমীন গাজী, ফটো সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল, কার্টুনিস্ট আহমেদ কিশোর, লেখক মুশতাক আহমেদকে।
বিবৃতিতে বলা হয়, জাতিসংঘ, নাগরিক সমাজ এবং দাতাদের দিকনির্দেশকে পুরোপুরি উপেক্ষা করে সরকার রোহিঙ্গাদের ভাসান চরের প্রত্যন্ত দ্বীপে স্থানান্তরিত করেছে। অথচ এই দ্বীপের প্রযুক্তিগত এবং সুরক্ষা মূল্যায়ন না করে সেখানে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্থানান্তরিত না করার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলো বাংলাদেশ।
মানবাধিকার সংস্থাগুলি জানিয়েছে, প্রত্যন্ত দ্বীপে অনেককেই জোর করে স্থানান্তর করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে এবং এর মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, বাংলাদেশ সরকার বারবার প্রমাণ করেছে মানবাধিকার রক্ষায় তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের বিভিন্ন সংস্থা এবং নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর জবাবদিহিত নিশ্চিত করা, একটি স্বাধীন বিচার বিভাগ, এবং সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একটি সুস্পষ্ট অবস্থান গ্রহণ করা উচিত।