করোনা মোকাবেলায় সরকারের সব কার্যক্রম ব্যর্থ : ফখরুল

Daily Nayadiganta

গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর – ছবি : নয়া দিগন্ত

করোনা নিয়ন্ত্রণে টিকা সংগ্রহ ও বিতরণ সংক্রান্ত বিষয়গুলোতে সরকারের দায়িত্বহীনতা, উদাসীনতা, অযোগ্যতা এবং দুর্নীতির কারণে পুরো কার্যক্রম ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে বিএনপি।

রোববার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ মন্তব্য করেন।
সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সভায় নেয়া সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অবহিত করা হয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, কোভিড নিয়ন্ত্রণে টিকা সংগ্রহ ও বিতরণ সংক্রান্ত বিষয়গুলোতে কোনো পরিকল্পিত ও কার্যকরী রোড ম্যাপ তৈরী করা হয়নি এবং জনগণের সামনে তা প্রকাশ করা হয়নি। বিএনপি বারবার এই বিষয়ে সতর্ক করেছে এবং বিকল্প উৎস সন্ধানের কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের তাগাদা দিয়েছে কিন্তু এই সরকারের দায়িত্বহীনতা, উদাসীনতা, অযোগ্যতা এবং দুর্নীতির কারণে পুরো কার্যক্রম ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে।

তিনি বলেন, ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের টিকা সরবরাহে অপারগতা এবং চীন ও রাশিয়ার প্রস্তাব শুরুতে ফিরিয়ে দেয়া ও একটি মাত্র বেসরকারি ব্যবসায়ী কোম্পানির কাছে আটকে থাকার কারণে আজকে গোটা জাতি চরম স্বাস্থ্য বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। ইতোমধ্যে সরকার সাত দিনের জন্য আবারো লকডাউন বা শাটডাউন ঘোষণা করেছে। যা এখন তামাশায় পরিণত হয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকারের অযোগ্যতার কারণে লকডাউন সম্পূর্ণ অকার্যকর হয়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষ, দিন আনে দিন খায় শ্রেণীর মানুষের খাদ্যের ব্যবস্থা না করে অপ্রাতিষ্ঠানিক সেক্টরের শ্রমিক ও কর্মরত ব্যক্তিদের নগদ টাকা ট্রান্সফারের ব্যবস্থা না করে লকডাউন কখনোই কার্যকর হতে পারে না। মানুষ ক্ষুধার তাগিদে কাজের সন্ধানে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ে। প্রকৃতপক্ষে করোনাভাইরাস নিয়ে সরকারের কোনো সুপরিকল্পিত কর্মসূচি নেই।

তিনি বলেন, প্রণোদনার ক্ষেত্রে, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা ও ভ্যাকসিন সংগ্রহ এবং বিতরণে চরম অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি এবং অযোগ্যতার কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, দলের স্থায়ী কমিটির সভায় রাজধানী ও সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ নেয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

সভায় করোনাভাইরাস সংক্রান্ত কমিটির আহ্বায়ক ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু সভাকে সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেন। তিনি বলেন, রোগীর চাপে সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোয় দেখা দিয়েছে জরুরি চিকিৎসা উপকরণ সঙ্কট এবং জীবন রক্ষাকারী ওষুধের মারাত্মক সঙ্কট। এছাড়াও আইসিইউ বেড, অক্সিজেন কনসেনট্রেটর অক্সিজেন সিলিন্ডার এর পরিমান অত্যন্ত অপর্যাপ্ত। জেলা হাসপাতালগুলোতে পরিস্থিতি সব থেকে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। সভায় সুচিকিৎসার স্বার্থে অবিলম্বে সমন্বিত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, সুনামগঞ্জের উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে দুই মন্ত্রীর পাল্টাপাল্টি বক্তব্য এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর করোনা ভ্যাকসিন সংগ্রহে বিষয়ে মন্তব্য প্রমাণ করেছে যে, সরকারের মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। চরম সমন্বয়হীনতা, অযোগ্যতা এবং দুর্নীতি প্রতিটি উন্নয়ন প্রকল্পকে শুধুমাত্র লুটপাটের ক্ষেত্র পরিণত করা হয়েছে।

এ সময় মির্জা ফখরুল এই সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ করে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় অবাধ, সুষ্ঠু ও একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেন। অন্যথায় বাংলাদেশ একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।