১৫ মার্চ ২০২৩
নিজস্ব প্রতিনিধি
আওয়ামী লীগের দালাল ভারতপন্থি তথাকথিত সুশীল সমাজের গিরগিটির মতো রং পাল্টানোর স্বরূপ এখন মানুষের কাছে দিবালোকের মতো পরিষ্কার। যখনই দেশের জাতীয় সংস্কৃতি ও ইসলাম ধর্মীয় মূল্যবোধের বিরোধীতার দরকার হয়, তখনই এসব তথাকথিত সুশীলেরা বিভিন্ন ব্যানারে গর্ত থেকে বের হয়। অথচ, গণতন্ত্র বিনাশকারী, ভোট ডাকাত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দুঃশাসনে সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচনে গুণ্ডা পুলিশের হামলায় একদম নীরবতা পালন করছে তাঁরা। এমনকি ছাত্রলীগের নারী সন্ত্রাসীদের দ্বারা বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ ছাত্রীরা আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। এমনকি সাধারণ ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণের খবর বের হচ্ছে। তারপরও এই কথিত সুশীলদের খোঁজ মিলে না।
সর্বশেষ সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচনে ভোট ডাকাতি করে জিততে গুণ্ডা পুলিশ দিয়ে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের ওপর বর্বর হামলা চালানো হয়েছে। সেই হামলায় রক্তাক্ত করা হয়েছে সাংবাদিকদেরও। অথচ বরাবরের মতোই শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদকে বৈধতা দিতে বিচারালয় প্রাঙ্গনে পুলিশ ও আওয়ামী আইনজীবীদের গুণ্ডামি নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে তথাকথিত সুশীলেরা। ঢাকার বার আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়মের সময়ও এই সুশীলদের খোজ পাওয়া যায়নি।
এদিকে আওয়ামী কারিগরিতে পঞ্চগড়ে কাদিয়ানীদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে ঘাদানিক নেতা শাহরিয়ার কবীর গংদের মাঠে নামানো হয়েছে। আওয়ামী ও ভারতপন্থি পত্রিকা গুলো তাদের নামের আগে বিশিষ্ট বিশেষণ ব্যবহার করে গুরুত্ব বাড়ানোর অপচেষ্টা করতে দেখা যায়। আওয়ামী লীগের অপকর্ম আড়াল করতে শাহরিয়ার কবীর গং পঞ্চগড়ে হামলার দায় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর ওপর চাপানোর অপচেষ্টা করছেন।
পাঠ্যপুস্তকে হিন্দুত্ববাদ অন্তর্ভুক্তি ও জাতীয় ঐতিহ্য বিরোধী পাঠ অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে ঝড় উঠলে সরকার দু’টি বই প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অথচ, এই হিন্দুত্ববাদি এবং জাতীয় ঐতিহ্য বিরোধী পাঠ্যপুস্তকের পক্ষে কথিত সুশীলদের সেমিনার করতে দেখা গেছে। কিন্তু পেশাজীবী সংগঠন গুলোর নির্বাচনে আওয়ামী ভোট ডাকাতির সময় তারা নীরব এবং গর্তে লুকিয়ে থাকেন।
বাংলাদেশে গণতন্ত্র ধ্বংস এবং ফ্যাসিবাদের উত্থানে কথিত এসব সুশীলদের ভূমিকা ও অপতৎপরতা মানুষ চিরদিন মনে রাখবে। সংবিধানে সকল নাগরিকের বৈষম্যহীনতার কথা বলা রয়েছে। অথচ, নিজেদের ব্রাহ্মণ হিসাবে হাজির করে সমাজে বৈষম্যের দেয়াল তৈরি করছেন এই সুশীলরাই। কথিত কিছু সুশীল ছাড়া বাকী সকল জনগণকে তারা তুচ্ছ মনে করেন। এই সুশীল গোত্রের লোকদেরই কখনো সুশাসনের কথা বলে আবার কখনো যোগ্য প্রার্থী বাছাই আন্দোলনের শ্লোগান দিয়ে সরব হতে দেখা গেছে ২০০২ সাল থেকে। কারণে অকারণে তাদের প্রায় প্রতিদিন দেখা যেত জাতির সামনে নানা সবক নিয়ে হাজির হতে।
এই সুশীল গোষ্ঠী ২০০৭ সালের ১১ই জানুয়ারি সেনাবাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণের মাধ্যমে তাদের প্রথম লক্ষ্য হাসিল করে। সেই লক্ষ্য হাসিলে সুশীলদের নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে, ইসলামবিদ্বেষী এবং এক সময়ের বাম-রাম আন্দোলনের নেতা প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের ট্রাষ্টি দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সুলতানা কামাল চক্রবর্তী গংদের। তাদের নেতৃত্বেই ২০০১ সালের পর নানা ইস্যু বানিয়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরির পালে হাওয়া দেয়া হত।
অথচ, ২০১০ সাল থেকে শুরু হওয়া, গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং লুটপাট নিয়ে তাদের কোনো আওয়াজ নেই। দেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা এখন শূন্যের কোঠায়। ফ্যাসিবাদ চরম রূপ ধারণ করছে। ভিন্নমতের রাজনীতিক এবং গণমাধ্যমকে গলাটিপে ধরা হয়েছে। তারপরও এই সুশীলরা নীরব । বরং ক্ষেত্র বিশেষে তাদেরকে ভিন্নমত দমনের সহযোগীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে দেখা যায়।
ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দুঃশাসনে সব ধরনের নির্বাচনে ভয়াবহ ডাকাতির ঘটনার পরও এসব তথাকথিত সুশীল সমাজের লোকেরা নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত।
২০০৬ সালের ২৮শে অক্টোবর গণতান্ত্রিক সরকারের বিদায়ের দিনে রাজপথে প্রকাশ্যে মানুষ পিটিয়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীদের প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যার পর লাশের ওপর নৃত্য করেছিল আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী বাম-রামের কর্মীরা। ওই পৈশাচিকতার কোনো রকম নিন্দা না জানিয়ে বরং দেশব্যাপী চরম নৈরাজ্য তৈরিতে তথাকথিত এই সুশীলরা অবদান রেখেছিলেন।
গত ১৪ বছরে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার শাসনকালে কেবল ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে সুশীলদের নড়েচড়ে বসতে দেখা গিয়েছিল। সুশীলরা জেগে উঠেছিলেন ভিন্নমতের রাজনীতিকদের বিনা বিচারে ফাঁসির দাবীতে। তারা তখন একটি বিদেশী দূতাবাসের ইঙ্গিতে ইসলামবিদ্বেষী ব্লগার গোষ্ঠীকে সাথে নিয়ে শাহবাগ সার্কাসের সূচনা করেছিলেন।। সেই সময় ভিন্নমতের গণমাধ্যমকে লাঠির ভয় দেখিয়ে থামিয়ে দিতে সুশীলদের প্ররোচনায় শাহবাগ থেকে দৈনিক আমার দেশ সম্পাদকের অফিস অভিমুখে লাঠি মিছিল বের করা হয়েছিল। সুশীলদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ পদচারনায় মুখরিত শাহবাগে সেদিন ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটেছিল। সুশীলরা দলে দলে এসে ফ্যাসিবাদের উত্থানে শেখ হাসিনাকে সহযোগিতা করেন । ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠায় সুশীলদের গণতন্ত্র বিনাশী কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বর্তমান শেখ হাসিনার সরকার।
মানবাধিকার লঙ্ঘন, ভিন্নমতের রাজনীতিকদের ধরে নিয়ে গুম, পুলিশ কর্তৃক রাজপথে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে মানুষ হত্যা এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করে দুর্নীতি-দু:শাসনের বিরুদ্ধে চিহ্নিত সুশীল গোষ্ঠী এখন নীরব। তারা যেন সেই দিনের যোগ্যপ্রার্থী বাছাই আন্দোলন, মানবাধিকারের কথা বেমালুম ভুলে গেছেন। অবশ্য বাজারদর ধরে রাখার জন্য মাঝে মধ্যে দু-একটি ইস্যুতে লোক দেখানো কিছু বললেও ফ্যাসিবাদ টিকিয়ে রাখতেই তারা মরিয়া।
উল্লেখ্য, গত ১৪ বছরেরও বেশি সময় ধরে ফ্যাসিবাদী কায়দায় দেশ শাসন করছেন শেখ হাসিনা। গুম-খুন, বাকস্বাধীনতা হরণের মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন করে চলেছে শেখ হাসিনার এই ফ্যাসিবাদী সরকার। ১৯৯১ সালের পর থেকে এনজিও গুলো ভোটের অধিকার নিয়ে গ্রামে গ্রামে কাজ করলেও ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারী এবং ২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বরে ভোটের নামে ডাকাতির বিষয়ে তারা নীরব। রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের দলীয় করণ, সরকারদলীয় সরকারির কর্তাদের ব্যাপক দুর্নীতিতে সাধারণ মানুষের অবস্থা দিশেহারা। ফ্যাসিবাদী শাসনের সাথে সংশ্লিষ্টদের লুটপাটে ব্যাংক গুলো দেউলিয়া হওয়া পথে। এই অবস্থায় সরকারকে টিকিয়ে রাখতেই ভারতের মদদে ভারতপন্থি এনজিওগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে গড়ে তোলা হয়েছে বলে মনে করেন অনেকে।
সবশেষ, ঢাকা বার ও সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচনে গুণ্ডা পুলিশকে ব্যবহার করে আওয়ামী আইনজীবীদের ভোট ডাকাতির ঘটনাতেও সুশীলদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।