সম্মানটা ব্রিটেনের। ব্রিটিশ ক্রিকেটারদেরই তাই এ সম্মানটা বেশি জোটে, নামের আগে স্যার লেখার সুযোগ হয় তাঁদের। এ পর্যন্ত ১৪ জন ব্রিটিশ ক্রিকেটার নাইটহুড পেয়েছেন। তবে এ সম্মান যে অন্য দেশে দিতে আপত্তি নেই, সেটা বোঝা যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাপারে। এ পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজের ১৩ ক্রিকেটার সম্মাসূচক নাইটহুড পেয়েছেন। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া থেকে পেয়েছেন মাত্র একজন—স্যার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যান।
অস্ট্রেলিয়ার আর কোনো ক্রিকেটারকেই এই সম্মানে ভূষিত করেনি ইংল্যান্ড। কেন, সে প্রশ্নের উত্তর অন্য দিন খোঁজা যাবে। আপাতত জেনে রাখুন, অস্ট্রেলিয়া থেকে আরেকজন ক্রিকেটার নাইটহুড পেলেও পেতে পারেন। অন্তত তাঁকে এই খেতাব দেওয়ার পক্ষে চাপ ক্রমেই বাড়ছিল। মৃত্যুর পর দাবিটা আরও জোরালো হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার এবং মৃত্যু—এ দুটি তথ্য থেকে বুঝে ফেলার কথা সেই ক্রিকেটারটি শেন ওয়ার্ন। কিছুদিন আগে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান লেগ স্পিন কিংবদন্তি। ওয়ার্ন বেঁচে থাকতে তিন বছর আগে থেকেই পিটিশনের মাধ্যমে এই দাবি তোলা হয়। ৪ মার্চ ৫২ বছর বয়সী ওয়ার্নের মৃত্যুর পর অনলাইনে ‘লেটস ইউনাইট অ্যান্ড মেক ওয়ার্নি আ নাইট’ প্রচারণা শুরু করেন বেন মালৌফ ও তাঁর শ্যালক ম্যাথু—জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়ান সংবাদমাধ্যম।
এই প্রচারণায় দাবি করা হয়, প্রয়োজনে ব্রিটেনের সংবিধান সংশোধন করে ওয়ার্নকে নাইটহুড দেওয়া হোক। ব্রিটেনের সংবিধান অনুযায়ী, নাইটহুড দেওয়া হয় শুধু জীবিতদের। যাঁকে নাইটহুড দেওয়া হয়, ব্রিটেনের রানি তাঁর কাঁধে সম্মানসূচক একটি তরবারি ছুঁইয়ে থাকেন। ওয়ার্ন যেহেতু মারা গেছেন, তাই সংবিধান সংশোধনের দাবি তোলা হচ্ছে।
উইজডেনের বেছে নেওয়া শতাব্দীর সেরা পাঁচ ক্রিকেটারের মধ্যে শুধু ওয়ার্নের নামের সঙ্গেই ‘স্যার’ উপাধি নেই। বাকি চারজনই নাইটহুড পেয়েছেন—স্যার ডন ব্র্যাডম্যান, স্যার গারফিল্ড সোবার্স, স্যার জ্যাক হবস ও স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস। ২০১১ সালে টেলিগ্রাফে লেখা কলামে ওয়ার্ন এ নিয়ে মজা করেছিলেন, ‘ভবিষ্যতে কী হবে জানি না, কিন্তু খেয়াল করে দেখলাম, উইজডেনের শতাব্দীর সেরা পাঁচ ক্রিকেটারের মধ্যে অন্য চারজনের সবাই “স্যার”। আমার নাইটহুড সম্ভবত হারিয়ে গেছে।’
পিটিশনে বলা হয়েছে, ওয়ার্নকে নাইটহুড না দেওয়ার পেছনে কোনো যুক্তি থাকতে পারে না, ‘ওয়ার্নের সম্মানের পক্ষে তাঁর অর্জনগুলোই কথা বলে। টেস্টে ৭০৮ উইকেট, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১৩১৯ উইকেট, ওয়ানডেতেও শত উইকেটের বেশি, অ্যাশেজ ও বিশ্বকাপ জয়ের পাশাপাশি শক্তিশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তাদেরই মাটিতে হারিয়েছেন, ৯৯ রানে আউট হওয়া, ফ্লিপার, বারান্দায় শ্যাম্পেন ছিটানো, দৈনন্দিন জীবন…মানুষটাই একজন কিংবদন্তি। এটা শুধুই তাঁর ক্রিকেট জীবন। এর বাইরে তিনি মানবহিতৈষী, সংবাদকর্মী, খুব সহজেই সময়ের সেরা ধারাভাষ্যকারদের একজন, একজন আনন্দদায়ী ও অস্ট্রেলিয়ান নায়ক।’
বেঁচে থাকতে ওয়ার্ন অস্ট্রেলিয়ার পক্ষ থেকে কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো স্বীকৃতি পাননি। রানির আগামী জন্মদিনে তাঁকে অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম সেরা সম্মানসূচক উপাধি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ‘অফিসার’ কিংবা ‘মেম্বার অব দ্য অর্ডার অব অস্ট্রেলিয়া’—এ দুটি স্বীকৃতির একটি পেতে পারেন ওয়ার্ন। ব্রিটেনের নাইটহুডের জন্য ওয়ার্নের পক্ষে প্রচারণা শুরুর পর গত চার দিনে পিটিশনে সই করেছেন ৪২৭৩ জন।