ওয়ান্ডার কিডের গোল্ডেন গোল

ওয়ান্ডার কিডের গোল্ডেন গোল

এক দিন পরই ১৭তম বসন্তে পা দেবেন। ১৬ বছর ৩৬২ দিনে ধনুকের মতো বাঁক খাওয়ানো শটে যে চোখ ধাঁধানো গোল করেছেন লামিন ইয়ামাল, তাতে ছড়িয়েছে মুগ্ধতা। মিউনিখের অ্যালিয়াঞ্জ অ্যারেনায় মঙ্গলবার ইউরোর সেমিফাইনালে ২৫ গজ দূর থেকে স্প্যানিশ এই কিশোরের গোলের রিপ্লের সঙ্গে ফ্রান্সের আদ্রিয়ান র্যাবিওটের হতাশার ছবিটাও বারবার ভেসে উঠেছে ক্যামেরায়। ওয়ান্ডার কিডের ওয়ান্ডার গোলটি নিয়ে পুরো ফুটবল দুনিয়ায় মাতামাতি চলছে। ঈশ্বর প্রদত্ত প্রতিভার অধিকারী ইয়ামালকে আগামীর লিওনেল মেসি মনে করছেন বোদ্ধারা। তাই তো ১৭ বছর আগে মেসির কোলে ইয়ামালের সেই ছবিটা এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। নতুন কীর্তি, নতুন গল্প লেখা স্পেনের এ তারকাকে যেন এর কিছুই স্পর্শ করেনি। ম্যাচের পর রাতে হোটেলে ফিরে স্কুলের পড়ায় মনোযোগী এক ছাত্র তিনি।

ফুটবলের বড় মঞ্চে ১৬ বছরের কিশোর ইয়ামালের সামর্থ্য নিয়ে ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন তুলেছিলেন র্যাবিওট। অনেকটা তাচ্ছিল্যের মতোই প্রশ্ন কর্তার জবাব দিয়েছিলেন তিনি। ইউরোর সেমিফাইনালে স্রেফ ১৬ বছরের এই কিডের কাছেই হেরেছিল ফ্রান্স। ফরাসিদের ২-১ গোলে হারিয়ে স্বপ্নের ফাইনালে পা দেওয়ার পর স্প্যানিশ নতুন এই সেনসেশনকে নিয়ে কাড়াকাড়ি। ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে র্যাবিওটকে জবাবও দিয়েছেন ইয়ামাল, ‘এখন বলো, এখন বলো।’

ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে রাত সোয়া ১২টায় ইয়ামাল যখন নিজের স্বপ্নের কথা জানাচ্ছিলেন, এই সময় ১৬ বয়সীরা ঘুমের ঘোরে আচ্ছন্ন। জার্মানির শিশুশ্রম আইনে রাত ১১টার পর কোনো শিশু শ্রমিক কাজ করতে পারবে না। ফুটবলকে সেই কাজের মধ্যে ধরে নিয়েছে জার্মানি। তাই তো জার্মানির এই আইন নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন স্পেন কোচ লুইস দে লা ফুয়েন্তে। ইয়ামালের ইতিহাস গড়ার রাতে আইন যে স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছে জার্মানরা! ইউরো এবং বিশ্বকাপ মিলিয়ে সেমিফাইনালে এই প্রথম গোল করলেন কোনো ১৬ বছরের কিশোর। এর আগে সবচেয়ে কম বয়সে গোল করার রেকর্ডটি ছিল ব্রাজিলের কিংবদন্তি প্রয়াত পেলের। দেশের জার্সিতে ১৯৫৮ বিশ্বকাপে গোল করার সময় তাঁর বয়স ছিল ১৭ বছর ২৩৯ দিন।

১৯৮৮ ইউরোতে মার্কো ফন বাস্তেনের অ্যাঙ্গেল ভলি, ১৯৬৬ সালে পল গ্যাসকোইনেসের একক প্রচেষ্টার সেই গোল, একই টুর্নামেন্টে কারেল পোবোরস্কির চিপ; ফুটবল ইতিহাসে অনিন্দ্য সুন্দর এই গোলগুলো চিরস্মরণীয়। মনে রাখার মতো বলে বারবার রিপ্লেতেও সেই গোলগুলো দেখে মুগ্ধতা ছড়িয়েছে। ফ্রান্সের বিপক্ষে ১৬ বছরের ইয়ামালের গোলটিকে সেরার তালিকায় শুধু যুক্ত করার পর সাবেক ইংল্যান্ড তারকা গ্যারি লিনেকার বিবিসিতে বলেছেন, ‘নতুন সুপারস্টারের জন্ম।’ সত্যিই তো!

এবারের ইউরোতে বিস্ময় জাগানিয়া পারফরম্যান্স করা ইয়ামালকে ২০২২ সালে খুঁজে বের করেন বার্সেলোনার সাবেক কোচ জাভি হার্নান্দেজ। তাঁকে সিনিয়র দলের সঙ্গে নিয়মিত অনুশীলন করান তিনি। মেসির সঙ্গে ইয়ামালের তুলনা করেছিলেন একসময় আর্জেন্টাইন সুপারস্টারের সতীর্থ জাভি। সবচেয়ে কম বয়সে নানা কিছু রেকর্ড গড়েছেন ক্লাবের জার্সিতে ৩৭ ম্যাচ খেলা এ অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার। রেকর্ড বইয়ের পাতা এলেমেলো করলেও স্প্যানিশ এ তারকা পা মাটিতেই রাখছেন, “এসব নিয়ে আমি খুব একটা ভাবি না। ‘আইকন’ হয়েছি কিনা, এসব জানি না। এসব ব্যাপার তো মাঠে কোনো কাজে লাগে না। আমার দরকার দলকে সহায়তা করা, সেটাই চেষ্টা করি সব সময় এবং আজও করেছি।’

২০০৮ সালে স্পেন যখন ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতেছিল, সেই সময় ইয়ামাল সদ্য এক বছরের শিশু। কে জানত ১৬ বছল পর এই শিশুই হবেন স্পেনের নতুন তারকা। স্পেনের বাসিন্দা হলেও তাঁর সম্পর্ক রয়েছে আফ্রিকার সঙ্গেও। লামিন ইয়ামালের বাবা মরোক্কান এবং মা ইকুয়েটরিয়াল গিনির নাগরিক। বাবা মরোক্কান হওয়ায় এবং নিজে স্পেনের নাগরিক হওয়ায় লামিন ইয়ামাল চাইলে দুই দেশের হয়েই প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন। ইকুয়েটরিয়াল গিনির হয়েও চাইলে খেলতে পারেন তিনি। ইয়ামাল বেছে নিয়েছেন স্পেনকেই। তাতে লা ফুরিয়া রোজারা পেয়েছেন ফুটবলের নতুন রত্নকে। ফুটবল বিশ্বও তাই।

samakal