www.bbc.com/bengali
- কাদির কল্লোল
- বিবিসি বাংলা, ঢাকা
বাংলাদেশে ওয়াজ বা ধর্মীয় সমাবেশের বক্তাদের বিভিন্ন সংগঠন অভিযোগ করেছে, এবার শীত মৌসুমে দেশের বিভিন্ন জায়গায় তাদের ওয়াজ মাহফিল করার অনুমতি দেয়ার ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন কড়াকড়ি আরোপ করছে।
তারা আরও বলেছেন, অনেক জায়গায় ওয়াজ করার অনুমতিও দেয়া হচ্ছে না।
তবে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো: ফরিদুল হক খান বলেছেন, ওয়াজ মাহফিলের ওপর কোন বিধিনিষেধ নেই। তবে তিনি উল্লেখ করেছেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে বড় জমায়েত না করে সীমিত পরিসরে ওয়াজ মাহফিল করার অনুমতি দেয়া হচ্ছে।
এছাড়াও কর্মকর্তারা বলেছেন, ওয়াজ বা ধর্মীয় সমাবেশে কিছু বক্তা বিতর্কিত বা উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে থাকেন। এমন বক্তাদের নজরদারিতে রাখা হচ্ছে।
শীতের সময়েই দেশের মহানগরী, জেলা-উপজেলা এবং একেবারে গ্রাম পর্যায়ে ওয়াজ মাহফিল বা ধর্মীয় সমাবেশ হয়ে থাকে।
ওয়াজ মাহফিলের বক্তাদের বিভিন্ন সংগঠন অভিযোগ তুলেছে, এবার তাদের ওয়াজ করার অনুমতি পাওয়ার ক্ষেত্রে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের কাছে বক্তাদের তালিকা দিতে হচ্ছে।
তারা বলেছেন, তালিকার কোন বক্তার কোন রাজনৈতিক পরিচয় আছে কিনা, এছাড়া ইউটিউবসহ সামাজিক মাধ্যমে এবং অন্য কোন এলাকায় আগে বিতর্কিত বা উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন কিনা – এসব বিষয়ে খতিয়ে দেখার পর সীমিত পরিসরে জমায়েতের অনুমতি দেয়া হচ্ছে।
তারা আরও অভিযোগ করেছেন, অনেক ক্ষেত্রে অনুমতি মিলছে না।
আরও পড়ুনঃ
ওয়াজ মাহফিলে বক্তাদের কয়েকটি সমিতি বা সংগঠন রয়েছে। একটি সংগঠনের মহাসচিব হাসান জামিল জানিয়েছেন, গত মাসে দেশের আটটি জায়গায় অনুমতি না পাওয়ায় তার ওয়াজ মাহফিল করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু আবার ঐ আটটি এলাকার বাইরে অন্ন এলাকায় অনুমতি পেয়ে তিনি মাহফিলে বক্তব্য রেখেছেন।
তিনি বলেছেন, “কোথাও কোথাও কোন বিশেষ ব্যক্তির কারণে ওয়াজ করতে দেয়া হচ্ছে না। কোথাও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ অথবা কোথাও জনপ্রতিনিধিদের হস্তক্ষেপের কারণে প্রোগ্রাম করতে দেয়া হচ্ছে না। নানান জায়গা থেকে এরকম অভিযোগ আমাদের কাছে আসছে। “
“বিশেষ করে বড় প্রোগ্রাম যেগুলো জেলা পর্যায়ে হয় বা বড় জমায়েত হয়, অধিকাংশ জায়গায় এমন প্রোগ্রাম করতে দেয়া হচ্ছে না” বলে তিনি মন্তব্য করেন।
হাসান জামিল জানিয়েছেন, অনুমতি না দেয়ার ক্ষেত্রে স্পষ্ট কারণ বলা হয় না।
‘রাজনৈতিক, বিতর্কিত এবং উস্কানিমূলক‘ বক্তাদের ওপর ‘নজরদারি’
মাহফিলে বক্তাদের আরও দু’জন অভিযোগ করেছেন, ওয়াজ মাহফিল করার সময় তাদের গোয়েন্দা সংস্থার কড়া নজরদারিতেও রাখা হয়।
তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, ওয়াজ করার সময় কিছু বক্তা রাজনৈতিক, বিতর্কিত এবং উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে থাকেন। এমন বক্তাদেরই শুধু নজরদারির আওতায় আনা হচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মীয় অনেক বক্তার বিরুদ্ধে বিতর্কিত এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার মতো উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে তা সামাজিক মাধ্যমেও ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ ওঠে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে পেশ করা একটি গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টেও এ ধরনের অভিযোগ এসেছে বলে জানা গেছে।
গত ২০১৯ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছিল।
তাাতে বলা হয়, ওয়াজ মাহফিলে কিছু বক্তা নারী অধিকারসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিদ্বেষ ও হিংসা ছাড়াচ্ছেন। অনেকে সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদে উৎসাহ দিচ্ছেন।
এমন ১৫জন বক্তাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চিহ্নিতও করেছে।
তবে মাহফিলে বক্তাদের মধ্যে অন্যতম একজন হাবিবুল্লাহ মো: কাসেমী বলেছেন, বিতর্কিত বা উস্কানিমূলক বক্তব্য দেয়ার বিচ্ছিন্ন দু’একটি ঘটনা ঘটতে পারে।
কিন্তু সামগ্রিকভাবে বক্তারা সতর্ক থাকেন বলে তিনি মনে করেন।
“যারা দায়িত্বশীল বা ভাল আলোচক আছেন এবং শীর্ষ আলোচক যারা আছেন, তারা অবশ্যই অত্যন্ত সতর্কতার সাথে বাক্য এবং শব্দ চয়ন করে থাকেন। তাদের আলোচনাগুলো গঠনমূলক হয়ে থাকে। তবে কোন কারণে যদি কোন ব্যক্তির ব্যাপারে বিতর্কিত বা উস্কানিমূলক বক্তব্য দেয়ার অভিযোগ আসে, সেটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা” বলে তিনি মনে করেন।
মাহফিলে বক্তাদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা তাদের অভিযোগ নিয়ে স্বরাষ্ট্র এবং ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনা করেছেন বলে তারা জানিয়েছেন।
ধর্মপ্রতিমন্ত্রী মো: ফরিদুল হক খান বলেছেন, “ওয়াজ মাহফিল সব জায়গায় হয়, এখনও হচ্ছে। সেটা নিয়ে কোন সমস্যা নাই। সমস্যা শুধু একটাই করোনাভাইরাস পরিস্থিতি। সেজন্য বড় আকারে না করে স্বাস্থ্য বিধি মেনে ছোট আকারে করার ব্যাপারে বলা হয়েছে। মানে পাঁচ- দশ হাজার লোকের বড় জমায়েত যেন না হয়, এটুকুই তাদের বলা হযেছে।”
তিনি আরও বলেছেন, বক্তব্য দেয়ার ব্যাপারেও সতর্ক থাকা উচিত।
“ধর্মের অনুভূতি নিয়ে যদি তারা ওয়াজ মাহফিল করে, সেটা সবচেয়ে ভাল। উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে একটা অস্বস্তিকর বা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি চিন্তা বা চেষ্টা যদি কেউ করে, সেটা দৃষ্টিকটু” – মন্তব্য করেন তিনি।
মাহফিলের বক্তাদের অনেকে বলেছেন, বিতর্কিত বা উস্কানিমূলক বক্তব্য যেন না আসে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকার জন্য তাদের নিজেদের বিভিন্ন সংগঠনের পক্স থেকেই প্রশিক্ষণ এবং সেমিনারের আয়োজনও তারা করেছিলেন।