- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১১ আগস্ট ২০২০
টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জনে সিদ্ধান্তগ্রহণ, নীতি-কৌশল প্রণয়ন, কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ এবং সেগুলোর বাস্তবায়নে তরুণ প্রজন্মের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একই সাথে টিআইবি দেশে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন ও দুর্নীতি নির্মূলের আহ্বান এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যথেচ্ছ প্রয়োগ বন্ধ করা ও বিতর্কিত ধারাসমূহের বাতিলের দাবি জানিয়েছে। ১২ আগস্ট আন্তর্জাতিক যুব দিবস উপলক্ষ্যে এবছরের মূল প্রতিপাদ্য ‘বৈশ্বিক লক্ষ্য অর্জনে তরুণদের অংশগ্রহণ’র প্রতি সরকার ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আজ প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই আহবান জানায় সংস্থাটি।
টিআইবির উদ্যোগে বাংলাদেশে পরিচালিত দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলনে তরুণরাই মূল চালিকাশক্তি উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘২০০৬ সাল থেকে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণদের সম্পৃক্ত করে ইয়ুথ এনগেজমেন্ট অ্যান্ড সাপোর্ট (ইয়েস) প্লাটফর্মের মাধ্যমে দুর্নীতিবিরোধী বিভিন্ন সচেতনতা ও প্রচারণামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে টিআইবি। যার মূল ভিত্তি হচ্ছে সচেতনতা তৈরির মাধ্যমে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের সমস্যা ও সমাধান সম্পর্কে তরুণদের সচেতন করা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার মাধ্যমে সামাজিক পরিবর্তনের এজেন্ট হিসেবে তৈরি করা। জাতিসঙ্ঘ ঘোষিত এবারের যুব দিবসের মূল প্রতিপাদ্য ‘বৈশ্বিক লক্ষ্য অর্জনে তরুণদের অংশগ্রহণ’-কে তারই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মনে করছে টিআইবি।’
কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে তরুণ জনগোষ্ঠী শিক্ষা, পেশা ও মানসিক স্বাস্থ্যগত ব্যাপক ঝুঁকির মধ্যে আছে উল্লেখ করে নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘পুরো বিশে^র মতো কোভিড-১৯ বাংলাদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও ব্যাপক ও গভীর ক্ষত তৈরি করেছে। সমাজের সকল শ্রেণী পেশার মানুষের উপর এর প্রভাব পড়লেও বিশেষ করে তরুণ জনগোষ্ঠীর জন্য ঝুঁকিটা বেশি। অতিমারি পরিস্থিতিতে তরুণদের চাকুরীর ক্ষেত্রগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তাদের কর্মক্ষেত্র সংকুচিত হয়েছে; নতুন ও অভিনব কর্মক্ষেত্রে অভিগম্যতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিশাল সম্ভাবনাময় তরুণদের সিংহভাগই পিছিয়ে আছে। নতুন স্বাভাবিকতায় বাজারে যে নতুন ধরনের দক্ষতার প্রয়োজন হবে, একদিকে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার পুঞ্জীভূত দূর্বলতা ও অন্যদিকে দীর্ঘদিন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সাথে যুক্ত না থাকায় সেটি অর্জনও তরুণদের জন্য বাড়তি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন বাস্তবতায় ভবিষ্যত ভাবনায় তাদের মানসিক স্বাস্থ্যেও ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তরুণদের অংশগ্রহণে সিদ্ধান্ত ও কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়ন জরুরি।’
বাংলাদেশ বর্তমানে ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড’ কাল অতিক্রম করছে উল্লেখ করে নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার বড় অংশটিই বর্তমানে কর্মক্ষম যুব সমাজ; অথচ রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক পরিসরে নীতি কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে তরুণদের অংশগ্রহণের ঘাটতি যেমন বিদ্যমান তেমনি তরুণদের রাজনীতিবিমুখতার হারও আশংকাজনক। রাজনৈতিক ও সামাজিক নানা কর্মকান্ডে তরুণদের অংশগ্রহণের পথও নানা আইনী ও পদ্ধতিগত বাঁধায় আটকে আছে। বিশেষ করে, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যথেচ্ছ প্রয়োগে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্বাধীন মতপ্রকাশের সাংবিধানিক অধিকার ব্যাপকভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নীতি-কৌশল এবং রাষ্ট্রীয়, সামাজিক বা রাজনৈতিক বিভিন্ন ইস্যুতে মত প্রকাশের দায়ে নাগরিকদের অযাচিত মামলা ও আটকের ঘটনায় যুবসমাজের ওপরই বেশি প্রভাব পড়েছে। এতে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন ইস্যুতে যুবকদের অংশগ্রহণ ও মত প্রকাশ সীমিত ও সংকুচিত হচ্ছে।’
নির্বাহী পরিচালক টিআইবির পক্ষ থেকে এবারের আন্তর্জাতিক যুব দিবসে নিন্মোক্ত দাবিগুলো উত্থাপন করছেন:
১. এসডিজি অর্জনে সিদ্ধান্তগ্রহণ, নীতি-কৌশল প্রণয়ন, কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ এবং সেগুলোর বাস্তবায়নে তরুণ প্রজন্মের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে;
২. রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন ও দুর্নীতি বন্ধ করে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার দূর্বলতা হ্রাস এবং উন্নত ও টেকসই নীতি-কৌশল নির্ধারণে সমাজ-রাজনীতি-অর্থনীতির ক্ষেত্রে যে কোনো ধরনের অসঙ্গতি নিয়ে তরুণ সমাজ যাতে সমস্ত ধরণের ভয়ভীতির উর্ধ্বে উঠে নির্বিঘ্নে তাদের মতামত প্রকাশ ও প্রতিবাদ করার আইনি অধিকারের চর্চা করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে এবং এক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ একই ধরণের অন্যান্য আইনের বিতর্কিত ধারাসমূহ বাতিল করতে হবে;
৩. সরকারি-বেসরকারি সকল ক্ষেত্রে চাকুরিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া দুর্নীতিমুক্ত করে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে সমান প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র নিশ্চিত করতে হবে;
৪. জাতীয় যুবনীতি ২০১৭ এর পূর্ণ বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট ও সময়াবদ্ধ কৌশল ও কর্ম-পরিকল্পনা নির্ধারণ করে সেগুলোর বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ এবং আধুনিক, সময়োপযোগী, বিশেষ করে তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর অবকাঠামো নির্মাণ করতে হবে;
৫. কোভিড-১৯ অতিমারি ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বৈশি^ক মানবিক বিপর্যয় মোকাবিলায় তরুণদের কার্যকর ও অর্থবহ অংশগ্রহণ ও পদক্ষেপ গ্রহণের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে;
৬. কোভিড-১৯ বাস্তবতায় নতুন স্বাভাবিকতার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত ও ব্যবস্থাপনাগত দক্ষতা অর্জনের সুযোগ তৈরি করতে হবে; সৃজনশীলতা, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড ও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার সুযোগ বৃদ্ধি করতে হবে; এবং
৭. তরুণ উদ্যোক্তাদের অর্থায়নের পাশাপাশি পরামর্শ ও উৎসাহ প্রদান, আইনি সহায়তা এবং বাজারে অভিগম্যতা নিশ্চিত করতে হবে, এবং এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ এবং ব্যাংক ঋণ পাবার শর্ত ও সুদ হার সহজ করতে হবে।