এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে থেকে নেমেই যানজট

logo

নাজমুল হুদা

১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, সোমবার

পুরোপুরি নির্মাণ শেষ হয়নি ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের। তবে রাজধানীর যানজট কমাতে যান চলাচলের জন্য আংশিক খুলে দেয়া হয়েছে এক্সপ্রেসওয়ে। এখন কাওলা থেকে  ফার্মগেট পর্যন্ত সাড়ে ১১ কিলোমিটার পথ মাত্র ১০ থেকে ১২ মিনিটে পাড়ি দিতে পারছে যানবাহনগুলো। উপর দিয়ে কোনো বাধা পেরোতে না হলেও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র‌্যাম্প দিয়ে নামার পর বাঁধে বিপত্তি। নিচের সড়কের চিরচেনা যানজটের সঙ্গে উপরের গাড়ি মিলিত হয়ে যানজট আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। এতে নিচে দীর্ঘ সময় যানজটের মধ্যে পড়তে হয় যানবাহনগুলোকে। বিশেষ করে বিমানবন্দর, মহাখালী ও ফার্মগেট সড়কে তীব্র হয় এই যানজট।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে কেবল ব্যক্তিগত গাড়িগুলোকেই বেশি চলতে দেখা যায়। মাঝেমধ্যে দুই একটা পিকআপ কিংবা কাভার্ডভ্যানও চলে। তবে লোকাল কোনো গণপরিবহন চলছে না এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে। এতে করে এর কোনো সুফল পাচ্ছে না গণপরিবহনে চলাচল করা সাধারণ মানুষ।

বরং এক্সপ্রেসওয়ের র‌্যাম্পগুলো যেখানে যেখানে নেমেছে সেখানে আরও বেশি যানজটে পড়তে হচ্ছে তাদের। অবশ্য আজ থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাওলা-ফার্মগেট রুটে পরীক্ষামূলকভাবে আটটি বাস চলাচল করবে। জসীম উদ্দীন, বিমানবন্দর রেলস্টেশন ও কাওলা থেকে যাত্রীরা বাসে উঠতে পারবেন, নামবেন ফার্মগেটে। সংসদ ভবনের খেজুরবাগান গোলচত্বর, খামারবাড়ি ও বিজয় সরণি থেকেও বাসে ওঠা যাবে।

ফার্মগেট থেকে এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে বিমানবন্দর সড়কের কাওলা প্রান্তে নামে যানবাহন। এই অংশের গাড়িগুলো মিলিত হয় এয়ারপোর্টের আগেই। এতে উপর দিয়ে দ্রুত চলে আসলেও কাওলা নেমে ফের যানজটের মধ্যে পড়তে হয় যানবাহনগুলোকে। নিচের যানজটের সঙ্গে উপরের গাড়িগুলো মিলিত হওয়ায় এই পয়েন্টে যানজটের মাত্রাও বেড়েছে। ওই এলাকার ট্রাফিক সার্জেন্টরা জানান, এখন পিক আওয়ারে বিমানবন্দর এলাকায় তীব্র যানজট হয়। বিশেষ করে অফিস ছুটির সময় সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত যানজট লেগেই থাকে। বিমানবন্দর এলাকায় রাস্তার কাজ চলার কারণে রাস্তা সরু হয়ে এই যানজট হচ্ছে। এ ছাড়া মেরামতের জন্য এয়ারপোর্টে ফ্লাইওভার বন্ধ থাকার কারণকেও উল্লেখ করেন তারা। দুই সপ্তাহ পর ফ্লাইওভার চালু হলে ফের যানজট স্বাভাবিক হবে বলেও দাবি করেন ট্রাফিক সংশ্লিষ্টরা। এদিকে এয়ারপোর্ট রুটে চলাচল করা বাসের হেলপাররা জানান, ইদানীং সন্ধ্যার পর এয়ারপোর্ট এলাকায় তীব্র যানজট হয়। গাড়িগুলো থেমে থেমে চলাচল করে। এই যানজট এয়ারপোর্ট থেকে বাড্ডা নতুন বাজার পর্যন্ত চলে যায়। বলাকা বাসের হেলপার ইউসুফ বলেন, সন্ধ্যা ৬টায় এই এলাকায় ঢুকলেই যানজটে পড়তে হয়। অনেক সময় সকালের দিকেও যানজটে পড়তে হয়। ভিআইপি মুভমেন্টের কারণে রোববারও যানজট হয়েছে। মাহাবুব নামের এক যাত্রী জানান, এদিকে এখন প্রচুর যানজট হয়। বিকাল ৫-৬টার পরে আর রাতে বেশি যানজট হয়। আগে এত যানজট ছিল না।

এক্সপ্রেসওয়ের বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি গাড়ি চলাচল করে। ফার্মগেট অংশের র‌্যাম্প নেমেছে তেজগাঁও কলেজের সামনে ইন্দিরা রোডে। যেসব গাড়ি ফার্মগেট থেকে বাংলামোটরের দিকে যাবে সেসব গাড়িকে র‌্যাম্প দিয়ে ইন্দিরা রোডে নেমে ফের খামারবাড়ি দিয়ে চক্রাকারভাবে ঘুরে ফার্মগেট আসতে হয়। এতে আগের চেয়ে যানজট বেড়েছে এই ফার্মগেটেও। এ ছাড়া কাওরান বাজার, তেজগাঁও এলাকার যানজটকেও প্রভাবিত করছে ফার্মগেটের যানজট। এয়ারপোর্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউ বাসের হেলপার সাগর হোসেন বলেন, আগে ফার্মগেট আসলে একটানে যেতে পারতাম। কাওরান বাজার গিয়ে সিগন্যালে পড়তাম। কিন্তু এখন ফার্মগেটেও সিগন্যালে পড়তে হয়। খামারবাড়ির দিক দিয়ে গাড়ি বেশি আসে। আয়াত বাসের হেলপার শান্ত বলেন, আগে বিজয় সরণির সিগন্যাল পার হলে ফার্মগেটে আর সিগন্যাল পেতাম না। কিন্তু এখন বিজয় সরণিতেও পাই, ফার্মগেটেও পাই।

এদিকে মহাখালী টার্মিনাল সড়কে সব সময় তীব্র যানজট লেগেই থাকে। টার্মিনালের বাসগুলো একপাশের রাস্তা দখল করে রাখে। এতে টার্মিনালের পাশের রাস্তা সরু হয়ে যানজট সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া আগে থেকেই মহাখালী ও আমতলী থেকে মহাখালী বাস টার্মিনাল পর্যন্ত যানজট লেগেই থাকতো। এরমধ্যে মহাখালীতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র‌্যাম্প নামার কারণে দুই পাশের রাস্তাতেই গাড়ির চাপ আরও বেড়ে যানজট বাড়িয়ে দিচ্ছে। মহাখালীতে যেসব যানবাহন নামছে সেগুলোকে মগবাজারের দিকে যেতে হলে আমতলী দিয়ে ইউটার্ন নিয়ে আসতে হয়। এতে যানবাহনের জটলা লেগেই থাকে। এ ছাড়া বনানী র‌্যাম্প দিয়ে নামা গাড়িগুলো নিচের সড়কে মিলিত হলেও মাঝেমধ্যে গাড়ির চাপ বেড়ে যানজট দেখা যায়। মহাখালী র‌্যাম্পের ট্রাফিকের দায়িত্বে থাকা মো. পারভেজ বলেন, র‌্যাম্প থেকে যে গাড়িগুলো নামে তা আমরা রাস্তায় দ্রুত নামিয়ে দেই। র‌্যাম্পে কোনো গাড়ির জটলা থাকে না। তবে নিচের সড়কে অনেক যানজট হয়। আমতলী থেকে যানজট শুরু হয়। টার্মিনালের কারণে আরও বেশি যানজট লাগে। গাজীপুর পরিবহনের হেলপার ইয়াসিন বলেন, আমরা তো নিচ দিয়ে চলাচল করি। নিচে তো কোনো সুবিধা নাই। সব সময় যানজট লেগেই থাকে। যাদের প্রাইভেটকার আছে তারা আরামে উপর দিয়ে যেতে পারে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিকের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. মুনিবুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, পুরোটা হয়ে গেলে যানজট কমে যাবে। তখন ফার্মগেটে কিংবা মহাখালী সবাই নামবে না। এখন হয়তো অনেকের দূরে যাওয়ার কথা কিন্তু তারা দূরে না গিয়ে কাছেই নামছে। যখন র‌্যাম্প আরও বেড়ে যাবে তখন তারা দূরেই নামবে। তখন ফার্মগেটের সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। এখন আংশিক খুলেছে তাই প্রেসারটা বেশি। মহাখালীতে অনেকটা ঘুরে আসতে হয়। সেখানে একটা ইউটার্ন করে দিলে ভালো হতো। এয়ারপোর্টে একটা ফুট ওভারব্রিজ ছিল। সেটা খুলে ফেলছে। এজন্য মানুষ পায়ে হেঁটে পারাপার হয়। এজন্য গাড়িগুলো যখন নামে তখন মানুষ পায়ে হেঁটে পারাপার হওয়ায় গাড়ির স্পিড কমে যায়।