এবিবি-বাফেদার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে নিম্নমুখী রেমিট্যান্স প্রবাহ

চলতি মাসের প্রথম ১০ দিনে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স এসেছে ৮৩৯ মিলিয়ন ডলার। পরবর্তী ১৪ দিনে এসেছে ৬৮৯ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ প্রথম দিকে রেমিট্যান্স আসার যে প্রবাহ ছিল, তা শেষ দিকে এসে কমে যাচ্ছে।

ব্যাংকাররা বলেন, বর্তমানে যে পদ্ধতিতে ডলারের দাম বাড়তে না দিয়ে স্থানীয় মুদ্রা টাকাকে শক্তিশালী করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, তার প্রভাব পড়েছে প্রবাসী আয়ে। ইচ্ছামতো প্রণোদনা দেয়ার সুযোগ অনেক ব্যাংক কাজে লাগিয়েছে। তাই শুরুতে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছিল। এখন কড়াকড়ি করার পাশাপাশি ডলারের দর কমায় শেষ দিকে রেমিট্যান্স বৈধ পথে আসছে না। তাই রেমিট্যান্স প্রবাহ কমছে। এবিবি ও বাফেদার এমন অদ্ভুত সিদ্ধান্তের ফলে পরবর্তীকালে রেমিট্যান্স আরও কমবে।

জানা যায়, গত ২২ অক্টোবর এবিবি ও বাফেদার অনুষ্ঠিত সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ১১০ টাকা ৫০ পয়সায় রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের ডলার কিনবে। তবে সরকারের ঘোষিত আড়াই শতাংশের সঙ্গে আরও আড়াই শতাংশ বাড়তি প্রণোদনা দিতে পারবে ব্যাংকগুলো। ২৩ অক্টোবর থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ায় আট দিনের মাথায় তা পরিবর্তন করা হয়। ৩১ অক্টোবর আবার এবিবি-বাফেদার মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয় ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্স আয়ে ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রণোদনা দেয়ার সীমা তুলে নিয়ে ইচ্ছামতো প্রণোদনা দিয়ে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করতে পারবে।

এ সিদ্ধান্তের কারণে চলতি মাসের শুরুতে ইচ্ছামতো প্রণোদনা দিয়ে কিছু ব্যাংক ১২২-১২৪ টাকা দামে প্রবাসী আয় কেনে। এতে ডলারের দাম এক ধাক্কায় ১২-১৩ টাকা বেড়ে যায়, যার কারণে মাসের শুরুতে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পায়। তবে ইচ্ছমতো প্রণোদনা দিয়ে রেমিট্যান্স কেনার ঘোষণার পর বাজারে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। ফলে গত ৮ নভেম্বর এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে ডলারের দর বেঁধে দেয়া দুই সংগঠন। সেখানে ৩১ অক্টোবরের সিদ্ধান্ত যথাযথভাবে পালন করার তাগিদ দেয়া হয়। আর প্রবাসী আয়ে ব্যাংকের নিজস্ব ও সরকারের প্রণোদনাসহ ডলারের দর কোনোভাবে ১১৬ টাকার বেশি দেয়া যাবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়। কেউ যদি এ সিদ্ধান্ত না মানে তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক হুঁশিয়ারি দেয়। এর পর থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমতে শুরু করেছে। আবার গত বুধবার সব ক্ষেত্রে ডলারের দর ৫০ পয়সা কমানোর প্রভাব পড়ছে বলে জানান ব্যাংকাররা।

নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রবাসী ও রপ্তানি আয় কিনতে ডলারের দাম হবে সর্বোচ্চ ১১০ টাকা, আগে যা ছিল ১১০ টাকা ৫০ পয়সা। আর আমদানি দায় মেটাতে ডলারের দাম নেয়া যাবে ১১০ টাকা ৫০ পয়সা, আগে যা ছিল ১১১ টাকা। তবে প্রবাসী আয়ে সরকারের ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রণোদনার পাশাপাশি ব্যাংকও একই পরিমাণ প্রণোদনা দিতে পারবে। ফলে প্রবাসী আয় পাঠালে ডলারপ্রতি সর্বোচ্চ ১১৫ টাকা ৫০ পয়সা পাবেন উপকারভোগীরা।

ওই দিনের সভা শেষে বাফেদার চেয়ারম্যান ও সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল করিম এবং এবিবির চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আরএফ হোসেন জানিয়েছেন, আমদানি কমেছে এবং রপ্তানি বাড়ছে। এছাড়া চলতি হিসাবে এখন ঘাটতি নেই। এজন্য ডলারের দাম ৫০ পয়সা করে কমানো হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মাসের ২৪ তারিখ পর্যন্ত দেশে ১ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। গত মাসের ২৭ তারিখ পর্যন্ত রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ১ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, চলতি মাসের ২৪ দিনে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১৩৪ কোটি ১৫ লাখ ৯০ হাজার ডলার, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১০ কোটি ৫২ লাখ ৪০ হাজার ডলার, বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ৪ কোটি ১৫ লাখ ২০ হাজার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৪৫ লাখ ৫০ হাজার ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, আনুষ্ঠানিক মাধ্যমে প্রবাসী আয় বাড়াতে হলে বাজারদর অনুযায়ী ডলারের বিনিময় হার ঠিক করতে হবে। বর্তমানে নির্ধারিত বাজারদরের সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। খোলাবাজার ও নির্ধারণ করা দামের মধ্যে পার্থক্য অনেক বেশি। এই অবস্থা যত দিন চলবে, তত দিন আনুষ্ঠানিক মাধ্যমে আসা প্রবাসী আয় বাড়বে না। শীর্ষ কর্মকর্তারা বিষয়টি মানতে চাইছেন না।

শেয়ার বিজ