এবার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংক বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হচ্ছে। সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্প্রতি ব্যাংক একীভূতকরণের নীতিমালা জারি করে। এতে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে স্বেচ্ছায় এবং বাধ্যতামূলকভাবে ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূতকরণের বিস্তারিত দিক–নির্দেশনা রয়েছে। জানা গেছে, সিটি ব্যাংকের সঙ্গে বেসিক ব্যাংকের একীভূতকরণ হবে স্বেচ্ছায়। বেসিক ব্যাংক রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন একটি সমস্যাগ্রস্থ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব দুর্বল ব্যাংককে ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূতকরণের উদ্যোগ নিয়েছে, বেসিক ব্যাংক তার অন্যতম। সিটি ব্যাংক দেশের প্রথম সারির একটি ব্যাংক।
জানা গেছে, আজ সকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সার ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিনের বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে বেসিক ব্যাংককে সিটির সঙ্গে একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক গত মাসে সিটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে বেসিক ব্যাংককে একীভূত করার বিষয়ে পরামর্শ দেয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যস্ততায় দুই ব্যাংকের পর্ষদের মধ্যে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দুই ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও কমকর্তারা বৈঠক করেছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যস্ততায় এরই মধ্যে বেসরকারি খাতের এক্সিমের সঙ্গে পদ্মা একীভূত হওয়ার বিষয়ে এমওইউ সই করেছে। আর গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত এক বৈঠক থেকে রাষ্ট্রীয় মালিকানার সোনালীর সঙ্গে বিডিবিএল এবং বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের একীভূত হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে টাইলে সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন সমকালকে বলেন, ‘স্বতঃপ্রণোদিত একত্রীকরণ হলে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের নীতি সহায়তা যেহেতু অনেক বেশি, তাই সবল ব্যাংক হিসেবে কোনো দুর্বল ব্যাংককে সিটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করা যায় কি-না, তা আমরা খতিয়ে দেখছি। যেটাই করি না কেন, আগে ওই দুর্বল ব্যাংক পুনর্গঠন করবো এবং ৩ বছর বা তার বেশি সময় পরে দুই ব্যালান্সশিট এক করবো।’
তিনি বলেন, ‘এটাই আমাদের ইচ্ছা। পলিসিতে বলা আছে ব্যাংক পুনর্গঠনে ৩ বছর সময় পাবো। ভাল পথে এই তিনটা বছর গেলে আমি আশাবাদী সময় আরও বাড়বে। দুর্বল ব্যাংকগুলো নিয়ে আমাদের বিশ্লেষণ চলছে—এর বেশি কিছু বলতে পারছি না।’
বেসিক ব্যাংক ১৯৮৯ সালে কার্যক্রম শুরু করে। বেসরকারি খাতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ে অর্থায়নের প্রয়োজনীয়তা থেকে ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। শুরুতে ব্যাংকটি বিসিসি ফাউন্ডেশনের ৭০ শতাংশ শেয়ার এবং বাংলাদেশ সরকারের ৩০ শতাংশ শেয়ার নিয়ে একটি যৌথ উদ্যোগে শুরু করে। বিসিসি ফাউন্ডেশন অকার্যকর হওয়ায় এবং বিসিসিআই বন্ধ হওয়ার পর ১৯৯২ সালের জুন মাসে সরকার ব্যাংকের শতভাগ মালিকানা গ্রহণ করে।
বেসিক ব্যাংক এক সময় ভালো ব্যাংক ছিল। ব্যাংকটি ২০০৯ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা ঋণের নামে আত্মসাৎ হয় বলে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং দুদকের তদন্তে বেরিয়ে আসে। ওই সময় ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন বাগেরহাটের একটি আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ আবদুল হাই বাচ্চু। এ বিষয়ে মামলা ও বিচারিক কার্যক্রম এখনও চলছে।
সমকাল