এবার ফ্লোরিডা উপকূলে মার্কিন কোস্টগার্ড বাংলাদেশি অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নৌকা আটকে দিল

 

কোস্টগার্ডের জাহাজ ভিগোরাসে আটক অভিবাসনপ্রত্যাশীরা।

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের উপকূলে অভিবাসনপ্রত্যাশী বহনকারী একটি নৌযান আটকে দিয়েছে দেশটির কোস্টগার্ড। গতকাল বুধবার ফ্লোরিডার এটি ফেডারেল আদালতে দায়ের করা এক ফৌজদারি অভিযোগে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। নৌযানটিতে বাংলাদেশি ছাড়াও আরও কয়েকটি দেশের বেশ কয়েকজন নাগরিক ছিলেন।

ফ্লোরিডার স্থানীয় সংবাদমাধ্যম মিয়ামি হেরাল্ডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এর আগেও এ ধরনের অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বহনকারী নৌযান আটক করা হয়েছে। এই ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে মানবপাচারের সাম্প্রতিক প্রবণতার অংশ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মানবপাচারকারীরা ফ্লোরিডা উপকূলের কোরাল গেবলস, কি বিসকেইন ও ব্রিকেল এলাকাকে অভিবাসীদের নামানোর স্থান হিসেবে বেছে নিচ্ছে।

এতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, অনেক অভিবাসী চীন থেকে আসছেন এবং বাহামাস হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের চেষ্টা করছেন। পাচারকারীরা তাদের নৌকায় তুলে দক্ষিণ ফ্লোরিডার জলপথের ম্যানগ্রোভ জঙ্গলে নিয়ে আসে। এরপর সেখান থেকে অপেক্ষমাণ ভ্যান তাদের দেশের অভ্যন্তরে নিয়ে যায়।

মার্কিন ফেডারেল আদালতে দেশটির আইনশৃঙ্খলাবাহিনী হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ইনভেস্টিগেশনস (এইচএসআই) কর্তৃপক্ষের দায়ের করা অভিযোগ এবং মার্কিন কোস্ট গার্ডের এক বিবৃতি থেকে জানা গেছে, নৌকায় থাকা লোকজন চীন, হাইতি এবং বাংলাদেশের নাগরিক।

মামলার নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, নৌকাটি চালাচ্ছিলেন নাম আর্লিন কার্লান কারগিল নামে এক ব্যক্তি। অভিযোগে বলা হয়েছে, বাহামাসের বিমিনিতে পাচারচক্রের সংগঠকেরা তাঁকে একটি ফোন সরবরাহ করেছিল। সেই ফোনে আগে থেকেই কি বিসকেইনের স্থানাঙ্ক (কো–অর্ডিনেট) ইনপুট করা একটি অ্যাপ ইনস্টল করা ছিল।

গত ১১ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ৮টার দিকে কাস্টমস এয়ার অ্যান্ড মেরিন অপারেশনস এজেন্টরা পাম বিচ শেরিফের অফিসের একটি রাডার স্টেশন পর্যবেক্ষণ করার সময় দেখতে পান, বাহামাস থেকে একটি নৌকা কি বিসকেইনের বিয়ার কাটের দিকে আসছে।

পরে কাস্টমস টহলের একটি নৌকা কি বিসকেইনের পূর্ব দিকে প্রায় চার নটিক্যাল মাইল দূরে ওই নৌকাটির নাগাল পায়। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, নৌকাটি হাতে তৈরি বলে মনে হচ্ছে; এর গায়ের রং নীল, এতে একটি মাত্র ইঞ্জিন আছে এবং কোনো নিবন্ধন নম্বর ছিল না। এজেন্টরা আরও লক্ষ্য করেন, এটি গভীর রাতে কোনো নেভিগেশনাল বাতি না জ্বালিয়েই নৌযানটি চলছিল।

টহল নৌকার নীল আলো জ্বেলে ও সাইরেন চালু করে কারগিলকে থামতে সংকেত দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি থামেননি। তখন এজেন্টরা নৌকার সামনের দিকে একটি সতর্কতামূলক গুলি ছোড়েন। পরে কারগিল নৌকা থামাতে বাধ্য হন।

অভিযোগ অনুযায়ী, বাহামাসের নাগরিক কারগিলের সঙ্গে নৌকায় ১২ জন যাত্রী ছিলেন। অতিরিক্ত ওজনের কারণে নৌকাটি পানিতে অনেকটাই ডুবে গিয়েছিল। অভিযোগে নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি, কতজন যাত্রী কোন দেশের নাগরিক ছিলেন।

মিয়ামি-ডেড ফায়ার রেসকিউর একটি নৌকা দল এক নারীকে চিকিৎসার জন্য কোকোনাট গ্রোভের মার্সি হাসপাতালে নিয়ে যায়। যদিও অভিযোগে তাঁর চিকিৎসাজনিত সমস্যার বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়নি। বাকি যাত্রীদের, কারগিলসহ, কোস্ট গার্ডের জাহাজ ‘ভিগোরাসে’ স্থানান্তর করা হয়।

কাস্টমসের দল নৌকাটি টেনে উপকূলে আনার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু ঢেউ ক্রমাগত পেছনের অংশে আছড়ে পড়তে থাকলে এটি ডুবে যায়। অভিযোগ অনুসারে, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ইনভেস্টিগেশনে দুই দিন পর কারগিলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তীরে নিয়ে আসে।

কারগিল এজেন্টদের জানান, বাহামাসে পাচার চক্রের সংগঠক তাঁকে কি বিসকেইনে লোক পৌঁছে দিতে অনুরোধ করেছিল। এ কাজের জন্য তাকে ৭০০ ডলার দেওয়া হয়েছিল। কারগিল আরও বলেন, বিমিনির ডকে তিনি পৌঁছানোর আগেই লোকজন নৌকায় ছিল। পাচারকারীরা তাকে পরিধানের জন্য কাপড় দেয় এবং একটি মোবাইল ফোন দেয়, যাতে একটি জিপিএস অ্যাপ ইনস্টল করা ছিল, যেখানে গন্তব্য হিসেবে কি বিসকেইনের স্থানাঙ্ক আগেই সেট করা ছিল।

ফেডারেল ব্যুরো অব প্রিজনসের রেকর্ড অনুযায়ী, কারগিল বর্তমানে মিয়ামির ফেডারেল ডিটেনশন সেন্টারে বন্দী। তাঁর আইনজীবীর বিষয়ে কোনো তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। অনুবাদ: আজকের পত্রিকা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here