বিবৃতিতে পাকিস্তানের অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, দেশে গুজব ছড়িয়ে পড়েছে যে সরকার পেনশন ও বেতন-ভাতা বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছে। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং এ ধরনের কোনো নির্দেশনা অর্থ মন্ত্রণালয় দেয়নি। পাকিস্তানের মহাহিসাব নিরীক্ষণ দপ্তর ইতিমধ্যে আগামী মাসের বেতন- ভাতা ও পেনশন প্রক্রিয়াকরণ শুরু করেছে। অন্যান্য বিল পরিশোধের প্রক্রিয়াও চলছে।
পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী ইশাক দার বলেছেন, দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থ ক্ষুণ্ন করতে এই গুজব ছড়ানো হয়েছে। এ ধরনের গুজবে কান না দেওয়ার জন্য জনগণের প্রতি তিনি আহ্বান জানিয়েছেন।
তবে বিশ্লেষকেরা বলেন, এ ধরনের গুজব তৈরি হওয়ার মতো পরিস্থিতি পাকিস্তানে আছে। দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩ বিলিয়ন বা ৩০০ কোটি ডলারে নেমে এসেছে, যা দিয়ে আগামী ১৬ থেকে ১৭ দিনের মতো আমদানি ব্যয় পরিশোধ করা যাবে।
এ পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ঋণের পরবর্তী কিস্তি পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পাকিস্তান। আইএমএফের শর্ত মেনে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি করহার বৃদ্ধি করেছে। এতে মূল্যস্ফীতি ৩০ শতাংশের ওপরে উঠেছে।
এ বাস্তবতায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ গত বুধবার ব্যয় সাশ্রয়ের বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন, যাকে বলা হচ্ছে কৃচ্ছ্রসাধনের নীতি। এতে বছরে ২০০ কোটি রুপি বেঁচে যাবে বলে সরকার দাবি করেছে।
এ ছাড়া পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফসহ পিএমএলের (এন) ১২ জন মন্ত্রী ও ৩ জন প্রতিমন্ত্রী বিনা বেতনে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে জোট সরকারের আরেক গুরুত্বপূর্ণ শরিক দল পিপিপি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়নি।
এদিকে গত সপ্তাহে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী দাবি করেছেন, দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। সে জন্য রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে আমলা, সেনাবাহিনী—সবাই দায়ী।
কিন্তু পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী ইশাক দার সিনেটের ব্যবসা পরামর্শক কমিটির এক সভায় বলেন, ‘পাকিস্তানের অবস্থা খারাপ, সন্দেহ নেই। কিন্তু আমরা ঋণ পরিশোধ করতে পারব না, তেমন ঝুঁকি নেই।’
দার আরও বলেন, যথাযথ সরকারি নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে এসব সমস্যা মোকাবিলা করা হবে।
দুর্দশার মধ্যেও বিলাসিতা
দ্য ডনের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানে খোলা দুধের দাম এখন প্রতি লিটার ২১০ রুপি। প্রতিদিনই বাড়ছে খাবারের দাম। এ পরিস্থিতিতে মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে হিমশিম খাচ্ছে। কিন্তু এর মধ্যে ১০ ফেব্রুয়ারি লাহোরে বিক্রয়কেন্দ্র খুলেছে কানাডার নামী কফি ব্র্যান্ড টিম হর্টন।
দেশের দুরবস্থার মধ্যেও লাহোরে এই ব্র্যান্ডের দোকার খোলার পর থেকে সেখানে পা ফেলার জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। সারাক্ষণই ক্যাফের বাইরে দেখা যাচ্ছে কফির জন্য অপেক্ষমাণ মানুষের দীর্ঘ সারি।