বিশেষ রিপোর্ট : : শেখ হাসিনার ব্যাংক ডাকাত সরকারের কবলে পড়ে এবার ডুবতে বসেছে ন্যাশনাল ব্যাংক । শেখ হাসিনার ব্যাংক ডাকাত পরিবারের সদস্য এবং আওয়ামী লুটেরাদের খুশি করতে পারলেই ঋণ মেলে, ঋণ খেলাপি হওয়া যায় আবার নানা অজুহাতে ঋণ অবলোপন করা যায়। ব্যাংকিং খাতে বছরের পর বছর ধরে এমন অনাচারের পর ও শেখ হাসিনার ভয়ে কেউ সাহস করে মুখ খুলছেনা।
বেসরকারি খাতের একটি লাভজনক ব্যাংক ছিল ন্যাশনাল ব্যাংক। কিন্তু শেখ হাসিনার ব্যাংক ডাকাত সরকারের আমলে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে ব্যাংকটি এখন নানামুখী সংকটে। বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ, প্রভিশন ঘাটতি এবং লোকসানি শাখার কারণে অনেকটা ঝুঁকির মধ্যে সময় পার করছে প্রথম প্রজন্মের এ ব্যাংকটি। ৩ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে খেলাপির খাতায় যার অবস্থান এখন দ্বিতীয়।
এই ব্যাংকটি ক্রমেই ব্যাংক ডাকাত মহিউদ্দিন খান আলমগীর-মুনতাসির মামুনদের ফারমার্স ব্যাংকের ভাগ্য বরণ করতে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকা আউটসোর্সিং নামের একটি অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে বিপুল পরিমাণ ঋণ অনুমোদন করে ন্যাশনাল ব্যাংক। তাদের মতে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের পথেই হাঁটছে ন্যাশনাল ব্যাংক। দীর্ঘদিন ধরে অনিয়মের ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রায় সব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ। যদিও বেসরকারি খাতের বেশির ভাগ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ২ থেকে ৫ শতাংশ। কিন্তু ন্যাশনাল ব্যাংকের খেলাপি ঋণ প্রায় সাড়ে ১৩ শতাংশ, যা ৩৯টি বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। তাদের মতে, বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১৩ শতাংশ হওয়া নিঃসন্দেহে উদ্বেগের বিষয়। এভাবে চলতে থাকলে ন্যাশনাল ব্যাংকও একদিন বিপর্যয়ে পড়া অন্যান্য সরকারি ব্যাংকের সারিতে কিংবা মখা রাজাকার ও তার ভাতিজা মুনতাসির মামুনদের ফারমার্স ব্যাংকের মতো একই পরিণতি বরণ করতে হতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, কয়েক বছর আগেও সেরা পাঁচটি ব্যাংকের একটি ছিল ন্যাশনাল ব্যাংক। যখন থেকে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদে একই পরিবারের ৫ জন সদস্য এলো তখনই ব্যাংকটির অবনতি ঘটতে থাকে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক নোটিশ দিয়েছিল। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তা আর কার্যকর হয়নি। তাদের কারণে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করা হচ্ছে। বিলটি পাস হলে বেসরকারি ব্যাংকের পর্ষদে একই পরিবারের চারজন এবং টানা ৯ বছর পরিচালক থাকার সুযোগ সৃষ্টি হবে, যা ব্যাংকিং খাতকে ধ্বংস করে দেবে। মূলত উপর মহলের আশকারায় ন্যাশনাল ব্যাংকের আর্থিক পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, ১৯৮৩ সালে কার্যক্রম শুরু করে ন্যাশনাল ব্যাংক। বর্তমানে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদে সিকদার পরিবারের সদস্য রয়েছেন পাঁচজন। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হিসেবে আছেন সিকদার গ্রুপের কর্ণধার জয়নুল হক সিকদার। এছাড়া নীতিনির্ধারণী প্রায় সব পদই এ পরিবারের নিয়ন্ত্রণে। ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালক পদে রয়েছেন জয়নুল হক সিকদারের স্ত্রী মনোয়ারা সিকদার। নির্বাহী কমিটি (ইসি) ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে আছেন জয়নুল হক সিকদারের কন্যা পারভীন হক সিকদার। এছাড়া পর্ষদ সদস্য হিসেবে রয়েছেন চেয়ারম্যানের দুই পুত্র রিক হক সিকদার ও রন হক সিকদার।
অথচ বিদ্যমান ব্যাংক কোম্পানি আইনে একই পরিবারের দু’জনের বেশি সদস্যের কোনো ব্যাংকের পরিচালক থাকার সুযোগ নেই। এ সংশোধনীসহ ২০১৩ সালে জাতীয় সংসদে আইনটি পাস হলেও ন্যাশনাল ব্যাংকে এখন পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। সুশাসনের ঘাটতি সৃষ্টি হওয়ায় ২০১৪ সালেই ব্যাংকটিতে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ন্যাশনাল ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল ১ হাজার ৩৪৩ কোটি টাকা। কিন্তু ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে ব্যাংকটির খেলাপি বেড়ে ৩ হাজার ২৭ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। অর্থাৎ মাত্র ৯ মাসে ব্যাংকটির আড়াই গুণের বেশি খেলাপি ঋণ বেড়েছে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সাল শেষে ন্যাশনাল ব্যাংকের বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন ঘাটতি ছিল ১২৩ কোটি টাকা। কিন্তু ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে সে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৬১ কোটি টাকা। এতে মাত্র ৯ মাসেই ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে ৭৩৮ কোটি টাকা। এছাড়া ২০১৬ সাল শেষে ন্যাশনাল ব্যাংকের লোকসানি শাখা ছিল ৩৩টি। বিদায়ী বছরের সেপ্টেম্বরে ব্যাংকটির লোকসানি শাখা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬টিতে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ঋণখেলাপি এবং প্রভিশন ঘাটতি দুটোই অস্বাভাবিক। এত স্বল্প সময়ে একটি ব্যাংকের এমন করুণ পরিণতি হতে পারে না। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকটির ঋণের মান এবং বিতরণ প্রক্রিয়া নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে। এর দায় পরিচালনা পর্ষদ এড়াতে পারে না।
The article appeared in http://dailybdtimes.com/2018/01/15/