মুদ্রিত সংস্করণ

নয়া দিগন্ত ডেস্ক
গণ-অভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডের বিচার ও সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে বাংলাদেশে আবার পুরনো সমস্যাগুলো ফিরে আসবে। মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আমার কাজ হলো একটি গ্রহণযোগ্য, পরিচ্ছন্ন ও উপভোগ্য নির্বাচন করা। যদি বৈধ না হয় তাহলে নির্বাচন আয়োজনের কোনো মানে হয় না।
গত বুধবার মালয়েশিয়ার সফরকালে কুয়ালালামপুরে সিঙ্গাপুরভিত্তিক চ্যানেল নিউজএশিয়া (সিএনএ) টেলিভিশনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এ কথা বলেন। তিনি জানান, আগামী ফেব্রুয়ারিতে দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য যেসব সংস্কার করা প্রয়োজন, তা দ্রুত সম্পন্নের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, নির্বাচন যদি বৈধ না হয়, তাহলে এর কোনো অর্থ নেই। আমার কাজ হলো এমন একটি গ্রহণযোগ্য, পরিষ্কার ও আনন্দদায়ক নির্বাচন নিশ্চিত করা। এ সময় তিনি সরকার প্রধানের দায়িত্ব নেয়ার পর যেসব লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন, সেগুলো অর্জনের কাছাকাছি পৌঁছেছেন বলে জানান।
গত বছরের জুলাইয়ের সহিংস আন্দোলনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এরপর প্রথমবার বাংলাদেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আমাদের অনেক কিছু সংস্কার করতে হবে, কারণ আমাদের যে রাজনৈতিক ব্যবস্থা রয়েছে সেটি কারচুপি ও অপব্যবহারের শিকার হয়েছে। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর গত বছরের আগস্টে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিবেশী দেশ ভারতে পালিয়ে যান। তার অনুপস্থিতিতে বিচার শুরু হয়েছে।
সিএনএর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করে শিক্ষার্থীরা। পরে নিরাপত্তা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের সমর্থকদের সংঘর্ষে সেই আন্দোলন প্রাণঘাতী সহিংসতায় পরিণত হয়। এরপর গণ-অভ্যুত্থানে স্বৈরশাসন, ব্যাপক দুর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং ভিন্নমত দমনের নির্মম অভিযানের অভিযোগে কলঙ্কিত শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনের পতন হয়। তিনি পালিয়ে ভারত চলে যান। তার অনুপস্থিতিতেই দেশে বিচার চলছে। এমনকি শেখ হাসিনার নির্দেশে গত বছরের গণঅভ্যুত্থানে প্রায় এক হাজার প্রাণহানি ঘটেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এ দিকে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনা নিয়ে বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্ক তিক্ত হয়ে ওঠে। সিএনএ জানায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেখ হাসিনা অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানানোর পর তাকে ‘মিথ্যা ও মনগড়া’ বক্তব্য দেয়া থেকে বিরত রাখার জন্য ভারত সরকারকে অনুরোধ করেছিল বাংলাদেশ।
এ বিষয়ে অধ্যাপক ইউনূস জানান, শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে বের করতে আমরা ভারতের সাথে সঙ্ঘাতে যাচ্ছি না। আমরা ভারতকে বলেছিলাম, আপনারা তাকে রাখতে পারেন। তবে আমাদের বিচার চলবে। এর মধ্যে তাকে বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা তৈরির কোনো সুযোগ দেয়া উচিত হবে না। এখনো বাংলাদেশে তার অনেক অনুসারী রয়েছেন; তারা অতীতে যেমন দেশকে অস্থিতিশীল করেছিলেন, এখনো তেমন চেষ্টা করতে পারেন। জবাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, তারা সামাজিক মাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। এ ছাড়া শেখ হাসিনাকে প্রত্যাবাসনের অনুরোধেও ভারত সাড়া দেয়নি।
সিএনএ জানায়, শেখ হাসিনার আমলে ভারতের সাথে ঘনিষ্ঠ কৌশলগত ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক থাকলেও বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে বাংলাদেশ এখানে পিছিয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। গত মাসে চীন সফরে গিয়েছিলেন অধ্যাপক ইউনূস। সেখানে দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাথে সাক্ষাৎ করেন তিনি। বৈঠকে বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থানকে দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের প্রবেশদ্বার হিসেবে তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টা। চীন ও পাকিস্তানের তুলনায় ভারতের সাথে সম্পর্কে বাংলাদেশ পিছিয়ে গেছে কিনা জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অর্থনৈতিক দিক বিবেচনায় যে কোনো সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। দেশে বিনিয়োগে আগ্রহী, এমন যেকোনো দেশের সাথেই কাজ করতে প্রস্তুত ঢাকা। পাকিস্তান ও চীনের সাথে আমাদের ভালো সম্পর্ক রয়েছে এবং আমরা ভারতের সাথেও ভালো সম্পর্ক রাখতে চাই। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, চীনের জন্য বিনিয়োগের সুযোগ বিশেষ কিছু নয়। ভারতও চাইলে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারে। চাইলে যে কেউ বিনিয়োগ করতে পারে। বিষয়টি হলো সুযোগের ব্যবহার। শুধু চীনকে যে বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হয়েছে, তা নয়। গত বছরের জুলাই অভ্যুত্থানের পর নেতৃত্বে আসা ৮৫ বছর বয়সী ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানান, প্রথমে তিনি দায়িত্ব নিতে
সাক্ষাৎকারে নির্বাচনের পর আর সরকারে থাকার পরিকল্পনা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, আশাকরি এখন থেকে বাংলাদেশ সঠিক পথে থাকবে এবং আর কখনো পথভ্রষ্ট হবে না