-
১২ জানুয়ারি ২০১৭
বাংলাদেশে ২০০৭ সালে রাজনৈতিক সংকটের প্রেক্ষাপটে ক্ষমতায় আসে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ওয়ান ইলেভেন নামে পরিচিত ওই সরকারের এক দশক পর বাংলাদেশের রাজনীতি এবং গণতন্ত্রের এর প্রভাব নিয়ে নানা বিশ্লেষণ দেখা যায়।
সামরিক হস্তক্ষেপে রাষ্ট্রপতির জরুরি অবস্থা জারি করা এবং গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার স্থায়ী হয় প্রায় দুবছর। শুরুর দিকে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষের বিরাট সমর্থন থাকলেও ধীরে ধীরে সেটি কমে আসে এবং তাদের কার্যক্রম নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়।
ওয়ান ইলেভেন আমলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোঃ. আনোয়ার হোসেন বলেন,
“তাদের যে নীলনকশা সেটাতো বাস্তবায়ন হলো না। তার ফলে যেটা হয়েছে যে বাংলাদেশে সাংবিধানিক রাজনীতি, গণতান্ত্রিক রাজনীতি সেটার পথ সুগম হয়েছে। তবে এটা ঠিক যে আমাদের রাজনৈতিক দলের ব্যর্থতাই বলবো, রাজনৈতিক নেতৃত্বের ব্যর্থতাই বলবো তার কারণে এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশে একটা সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক শাসন আমরা পাইনি।”
ওয়ান ইলেভেন সরকার দুই দলের শীর্ষ নেতাদের রাজনীতি থেকে দূরে রাখা এবং দলীয় সংস্কারের যে উদ্যোগ নিয়েছিল সেটাও ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করা হয়। জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাসিম আখতার হোসাইন মনে করেন, এক-এগারো বরং দুই নেত্রীকে আরও শক্তিশালী করেছে।
“বড় দুটি রাজনৈতিক দল ভেঙে যে নতুন দল করার উদ্যোগ কিংবা দুই নেত্রীকে সরিয়ে দেয়ার যে প্রচেষ্টা ছিল যখন সেটা হলও না তার পর কিন্তু দুই নেত্রী অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে গেলেন। কারণ দুটি দলই তখন কিন্তু দুই নেত্রীর ওপরে অনেক বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েন।”
অধ্যাপক হোসাইন বলেন, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরিবর্তনের কথা বলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে গণতন্ত্রকে মানুষের কাছে ফিরিয়ে দিতে পারেননি।
“তারা ঘোষণা করেছিলেন পরিবর্তন সূচনা করবেন। কিন্তু আবার জনগণ দেখলো কিভাবে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো কিভাবে একে একে দলীয়করণ হয়ে যাচ্ছে। দেখতে পেল নির্বাচন কমিশনকে কিভাবে ব্যর্থ একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে হয়। দেখলো কিভাবে ভোট না দিলেও ভোট দেয়া হয়ে যায়।”
ওয়ান ইলেভেন সরকারের উপদেষ্টা মইনুল হোসেন অভিযোগ করেন, তাদের যে ভাল উদ্যোগগুলো ছিল সেগুলোও ক্রমাগত ধ্বংস করা হচ্ছে।
“শুধু নির্বাচনের মাধ্যমেই তো গণতন্ত্র আসে না। গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা দরকার ছিল। সেজন্য আমরা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা করেছি এবং যেভাবে সুপ্রিম কোর্ট চেয়েছে সেইভাবেই আমরা করে দিয়েছি। তারপর নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন করেছি ভিন্ন সেক্রেটারিয়েট করে দিয়েছি। দুর্নীতি দমন কমিশন সম্পূর্ণভাবে স্বাধীন করেছি যেটা আগে প্রধানমন্ত্রীর অধীনে ছিল।”
মি. হোসেন বলেন, “এই যে আমরা কষ্টটা করলাম এটাকে আস্তে আস্তে সব ভেঙ্গে দেয়া হচ্ছে। নির্বাচনের গণতন্ত্র নাই নির্বাচন রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে। বিচার বিভাগের ওপর আঘাত আসতেছে। এখন পর্যন্ত আমরা একটা বিরাট ষড়যন্ত্রের মধ্যে আছি যাতে গণতন্ত্র সফল না হয়। এখন আমাদের শোনানো হচ্ছে উন্নয়নের গণতন্ত্র, জনগণের গণতন্ত্র না।”
বাংলাদেশে ভবিষ্যতে সামরিক হস্তক্ষেপে ওয়ান ইলেভেনের মতো অনির্বাচিত সরকার ঠেকাতে সংবিধান সংশোধন করে কঠোর সাজার বিধান করা হয়েছে। কিন্তু ওয়ান ইলেভেনের একদশক পরেও প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে সমঝোতা বা ঐক্যমত দেখা যাচ্ছে না।
আরও পড়ুন:
পাঠ্যপুস্তকে বিতর্কিত বিষয়, খুশি করেছে হেফাজতকে?