বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও কমেছে। বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) নিট রিজার্ভ ২ হাজার ৩০৬ কোটি ডলারে নেমেছে। এক মাস আগে অর্থাৎ ৩১ জুলাই নিট রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৩৩৪ কোটি ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাসে নিট রিজার্ভ কমেছে ২৮ কোটি ডলার। এই এক মাসে গ্রস রিজার্ভ কমেছে প্রায় ৫১ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) পর্যন্ত গ্রস রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৯২০ কোটি ডলার। ৩১ জুলাই গ্রস রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৯৭১ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি সেপ্টেম্বর মাসেই জুলাই-আগস্ট মাসের এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ব্যয় পরিশোধ করতে হবে ১.২ বিলিয়ন বা ১০২ কোটি ডলার। আগামী সপ্তাহেই এই অর্থ পরিশোধ করতে হবে। আর এর মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরেক দফা কমে ২২ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসবে। যদিও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ পাওয়ার শর্ত অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রার প্রকৃত রিজার্ভ ২৪ বিলিয়ন ডলারের ওপরে রাখতে হবে।
ব্যাংকাররা জানান, ডলারের আন্তপ্রবাহের চেয়ে বহিঃপ্রবাহ বেশি হচ্ছে। আবার রেকর্ড পরিমাণ বাংলাদেশি শ্রমিক বিদেশে গেলেও সেই তুলনায় রেমিট্যান্স আসছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত জুলাই মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেছে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৬ শতাংশ। আর সদ্য বিদায়ী আগস্ট মাসেও আগের মাসের রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়ার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। গত ৩০ আগস্ট পর্যন্ত দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১৫২ কোটি ডলার, যেখানে আগের মাসে অর্থাৎ জুলাইতে ছিল ১৯৭ কোটি ডলার। কিন্তু আমদানি পেমেন্ট কমছে না। বিশেষ করে আগের বকেয়া এলসি ও চলতি এলসির দায় মেটাতে হচ্ছে আন্তপ্রবাহের চেয়ে বেশি হারে। এর ফলে প্রতি মাসেই কমে যাচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বৈদেশিক মুদ্রার নিট রিজার্ভ এক সপ্তাহের ব্যবধানে ১০ কোটি ডলার কমেছে। কারণ, ২৪ আগস্ট দিনের শুরুতে নিট রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৩১৭ কোটি ডলার। বৃহস্পতিবার তা কমে নিট রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩০৬ কোটি ডলার। একই সময়ের ব্যবধানে গ্রস রিজার্ভ কমেছে ১২ কোটি ডলার। গ্রস রিজার্ভ থেকে বিভিন্ন তহবিলে বিনিয়োগ করা অর্থ তুলে নেওয়ায় গ্রস রিজার্ভ বেশি কমেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসেবে গত বছরের ৩০ আগস্ট গ্রস রিজার্ভ ছিল ৩ হাজার ৯০৪ কোটি ডলার। অর্থাৎ গত এক বছরের ব্যবধানে গ্রস রিজার্ভ কমেছে ৯৮৪ কোটি ডলার।
সাম্প্রতিক সময়ে বকেয়া ঋণ পরিশোধ ও আমদানি দেনা মেটানোর কারণে রিজার্ভ থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ডলার দিতে হচ্ছে। এতে রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। এছাড়া জুনের তুলনায় রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স দুটোই কমেছে জুলাইয়ে। এতে রিজার্ভে চাপ বেড়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুলাইয়ে দেশের রফতানি আয় হয়েছে ৪৫৯ কোটি ডলার। জুনে হয়েছিল ৫০৩ কোটি ডলার, মে মাসে হয়েছিল ৪৮৫ কোটি ডলার। সে হিসাবে মে ও জুনের চেয়ে জুলাইয়ে রফতানি আয় কমেছে।
এদিকে গত জুলাইয়ে রেমিট্যান্স এসেছে ১৯৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার। জুনে এসেছিল ২২০ কোটি ডলার। গত বছরের জুলাইয়ে এসেছিল ২১০ কোটি ডলার। গত জুন ও গত বছরের জুলাইয়ের তুলনায় এ জুলাইয়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে। রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় দুটোই কমায় রিজার্ভের ওপর চাপ কিছুটা বেড়েছে। এছাড়া বিদেশি বিনিয়োগ ও অনুদানের অর্থ ছাড়ও কমে গেছে।
এদিকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ায় বাজারে ডলারের দাম বেড়ে যাচ্ছে। ব্যাংকগুলোতে এখন আমদানি খাতে বেঁধে দেওয়া সর্বোচ্চ ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা দামে ডলার বিক্রি হচ্ছে। আগে বেশ কিছু ব্যাংকে ১০৯ টাকা থেকে ১০৮ টাকা ৩০ পয়সার মধ্যে ডলার বিক্রি হতো। গত সপ্তাহে তা সর্বোচ্চ দামে উঠেছে। এখন সব ব্যাংকেই ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা দামে বিক্রি হচ্ছে। যদিও নগদ ডলার বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১১৩ টাকা দামে। অনেক ব্যাংকে ১১১ টাকার বেশি থেকে ১১২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম বেড়ে সর্বোচ্চ ১২০ টাকায় উঠেছে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ১১৮ টাকা থেকে ১১৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে মানি চেঞ্জার্স প্রতিষ্ঠানগুলোও ডলারের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। বেঁধে দেওয়া সীমা অনুযায়ী তারা সর্বোচ্চ ১১২ টাকা ৫০ পয়সা দরে নগদ ডলার বিক্রি করার কথা। কিন্তু কিছু প্রতিষ্ঠান ১১৮ থেকে ১১৯ টাকায় বিক্রি করছে।
এ ঘটনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তদন্ত শুরু করেছে। ফলে মানি চেঞ্জার্সগুলোতে বৃহস্পতিবার ১১২ টাকা ৫০ পয়সা দরে ডলার বিক্রি হলেও খোলাবাজারে দাম কমেনি।