এক ক্রিকেট জুয়াড়ির স্বীকারোক্তি

Netra News — নেত্র নিউজ

অবশেষে মুখ খুলেছেন দীপক আগারওয়াল। সন্দেহভাজন এই ভারতীয় জুয়াড়ির কারণেই নিষিদ্ধ হয়েছেন বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় ক্রিকেট তারকা সাকিব আল হাসান। ক্রিকেট বিশ্বকে কাঁপিয়ে দেওয়া সাম্প্রতিক এই কেলেঙ্কারির অন্যতম হোতা আগারওয়াল এই সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন অজানা কিছু তথ্য।

এক ক্রিকেট জুয়াড়ির স্বীকারোক্তি
দীপক আগারওয়ালকে খুঁজে বের করতে একদমই বেগ পেতে হয়নি। অথচ, এই সেই ব্যক্তি যিনি কিনা সাকিব আল হাসানকে ধসিয়ে দেওয়ার খলনায়ক। সংবাদ মাধ্যমে তাকে ঘিরে রচিত হয়েছে নানা উপাখ্যান। বলা হয়েছে, ভারতের জুয়াড়ি পাড়ার অতি চেনা মুখ আগারওয়াল, যিনি কিনা গুরুতর সব অপরাধ ঘটিয়েও অনায়াসে পার পেয়ে গেছেন। টাইমস অব ইন্ডিয়ার সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে যেমন বলা হয়, ভারতের স্পট-ফিক্সিং জগতে দীপক আগারওয়াল বেশ পরিচিত একটি নাম। ২০১৭ সালের এপ্রিলে নাকি তাকে জুয়াড়ি সন্দেহে গ্রেপ্তারও করা হয়েছিল।কিন্তু এমন একজন অপরাধীর সন্ধান বেশ সহজেই মিললো ইন্টারনেটে। ডোমেইন নিবন্ধন রেকর্ড থেকেই পাওয়া গেল তার ব্যক্তিগত ফোন নম্বর। তার মালিকানাধীন ক্রিকেট একাডেমির ওয়েবসাইটে কয়েকদিন আগেও ঝোলানো ছিল তার ছবি। আগারওয়াল যেন যোগাযোগের অপেক্ষাতেই ছিলেন।

ক্রিকেট দুর্নীতির অন্ধকার অলিগলিতে যার দীর্ঘদিনের আনাগোনা থাকার কথা বলা হচ্ছে, তেমন এক ব্যক্তি এত দ্রুত সব অভিযোগ স্বীকার করে নেবেন ভাবতেই পারিনি। সাকিব কাণ্ডে তার ভূমিকা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতেই সরাসরি জবাব দিলেন, “হ্যাঁ, সব সত্য। শুধু একটা কথা ঠিক নয় — আমি কোনো জুয়াড়ি নই।”

আগারওয়ালের সঙ্গে আমার যোগাযোগের দিন কয়েক আগে ক্রিকেট দুনিয়ায় তোড়পাড় ফেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) দুর্নীতি বিরোধী ইউনিট (এসিইউ) সাকিবকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে। তবে অভিযোগ স্বীকার করে নেওয়া ও তদন্তে সহযোগিতা করার কারণে এক বছর সাজা মওকুফ রাখা হয়। এই ক্রিকেট মায়েস্ত্রোর বিরুদ্ধে যেই অভিযোগ, তা ক্রীড়া জগতে বেশ গুরুতর বলেই বিবেচিত হয়। অভিযোগটা হলো, এক সন্দেহভাজন জুয়াড়ির সঙ্গে তার যোগাযোগ হলেও, আইসিসি’র নিয়ম অনুযায়ী, তিনি তা দুর্নীতি-বিরোধী কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেননি। এই অভিযুক্ত জুয়াড়িই হলেন দীপক আগারওয়াল। আইসিসির দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা বলেছে, “তাকে এসিইউ চিনতো। সন্দেহ করা হয়, তিনি ক্রিকেট দুর্নীতিতে জড়িত।”

আমার সঙ্গে চার সপ্তাহ ধরে তার আলাপ হয়েছে হোয়্যাটসঅ্যাপ ও টুইটারে। এ সময় তিনি বারবার বলেছেন যে, তিনি প্রকৃতপক্ষে কোনো “বুকি” বা জুয়াড়ি নন। তার ভাষ্য, তিনি চাপের মুখে সাকিবের কাছ থেকে “ইনসাইড ইনফরমেশন” বা দলের ভেতরকার তথ্য চাইতে বাধ্য হন: “তারা যখন জানতে পারলো আমার সঙ্গে খেলোয়াড়দের সুসম্পর্ক রয়েছে, তখনই তারা আমাকে তাদের কাছ থেকে তথ্য চাইতে বাধ্য করলো।”

দীপক আগারওয়ালের (ইনসেট) সঙ্গে হোয়্যাটসঅ্যাপ আলাপচারিতার অংশবিশেষ৷

কিন্তু এই তারা কারা? এ বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে আগারওয়াল রাজি হননি। শুধু বলছেন, তাকে প্রাণে মারার হুমকি দিয়েছে ক্ষমতাধর একদল জুয়াড়ি। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে অবশ্য বলা হয়েছে, তিনি গোয়ালিয়র-ভিত্তিক একজন জুয়াড়ির হয়ে কাজ করতেন। আগারওয়ালের ভাষ্য, “আমি শুধু তাদের একজনকে চিনি। তার নাম আমি এসিইউ’কে দিয়েছি।” তার মানে কি তিনি এসিইউ’র তদন্তে সহযোগিতা করেছেন? অন্তত তেমনটাই তার দাবি। কিন্তু অবিশ্বাস্য শোনালেও, তার এই দাবি মিথ্যা হওয়ার সম্ভাবনা কম।

যেমন, আগারওয়াল আমাকে বলেছেন যে, তিনি সাকিবের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় প্রমাণ, অর্থাৎ হোয়্যাটসঅ্যাপ আলাপচারিতার বিস্তারিত এসিইউ’কে দিয়েছেন। অবশ্য, এসিইউ এখনও বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে উল্লেখ করে আগারওয়াল এ ব্যাপারে বাড়তি কোনো প্রমাণ আমাকে দিতে রাজি হননি। কিন্তু, হোয়াটসঅ্যাপ আলাপচারিতার পুরোটাই এনক্রিপশন প্রযুক্তি দ্বারা সুরক্ষিত থাকে। মানে হলো, আলাপচারিতার দুই পক্ষ (অর্থাৎ, সাকিব ও আগারওয়াল) ব্যতিত অন্য কেউ এটি দেখতে পারে না। সুতরাং, সাকিব যদি এসিইউ’র কাছে ওই কথোপকথনের হস্তান্তর করে না থাকেন, তাহলে আগারওয়ালের দাবি সিদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।  নিজের এই বক্তব্যের সমর্থনে তিনি এও বলেছেন যে, এসিইউ’র বিবৃতিতেই বলা হয়েছে যে তাকে এসিইউ চিনতো।

এছাড়া এসিইউ’র সঙ্গে যোগাযোগের প্রমাণ হিসেবে তিনি আমাকে একটি হোয়্যাটসঅ্যাপ কথোপকথন দেখান। সেখানে দেখা যায়, অপরিচিত নম্বর থেকে যোগাযোগ এড়াতে এসিইউ’র প্রধান অ্যালেক্স মার্শাল তাকে সাময়িক সময়ের জন্য ফোন নম্বর পরিবর্তনের পরামর্শ দিয়েছেন।

আমার সঙ্গে হওয়া আলাপের পুরো সময়ই আগারওয়াল বারবার দাবি করছিলেন যে, তিনি কোনো অপরাধী নন; বরং পর্দার আড়ালে থাকা ক্ষমতাধর ব্যক্তিবিশেষের হাতে ভুক্তভোগী মাত্র। এক পর্যায়ে তিনি ওই চক্র থেকে বের হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এরপরই তিনি এসিইউ’র কাছে যান ও সাকিব আল হাসানের সঙ্গে হওয়া আলাপের বিষয়টি খুলে বলেন।

আগারওয়াল নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের জন্য বেশ উদগ্রীব ছিলেন। ফলে তিনি এমন কিছু বিস্ফোরক তথ্য প্রকাশ করেছেন যা আগে কোথাও প্রকাশিত হয়নি। যেমন, তিনি আমাকে বলেছেন যে, সাকিব আল হাসান অন্তত একবার তাকে দুবাইয়ে নিজের হোটেলের ঠিকানা দিয়েছেন দেখা করার জন্য। তিনি এ-ও বলেছেন যে, সাকিবের নম্বর তাকে দিয়েছিলেন বাংলাদেশেরই সাবেক এক বোলিং কোচ। তার বিরুদ্ধেও এখন এসিইউ তদন্ত করছে।

[এই প্রতিবেদনের জন্য সাকিব আল হাসানের বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হয়। তার এজেন্টের মাধ্যমে নির্দিষ্ট প্রশ্নও পাঠানো হয়। তবে তিনি বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখ করে আগারওয়ালের দাবি ও এই সংশ্লিষ্ট ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। অপরদিকে এসিইউ’র কাছে প্রশ্ন পাঠালে, আইসিসি’র একজন মুখপাত্র বলেন, “সম্ভাব্য বা চলমান তদন্ত নিয়ে মন্তব্য করতে আমরা অপারগ।”]

আগারওয়ালের সঙ্গে যখন প্রথম যোগাযোগ করি, তখন কয়েকশ’ শব্দের সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকার নেওয়ার চিন্তা ছিল। অনেকটা শর্ট ফরম্যাট ক্রিকেট ম্যাচের মতো। কিন্তু তিনি একের পর এক এমন সব তথ্য দিতে লাগলেন যে, সেগুলো যাচাইবাছাই করতে করতে ক্রমেই আমি ঢুকে পড়ি ক্রিকেট-দুর্নীতির গভীর মোহনায়। বেলা যখন সাঙ্গ হলো, ততক্ষণে আমরা টেস্ট ম্যাচ খেলে ফেলেছি।

ক্রীড়াজগতে “ইনসাইড ইনফরমেশন” বা “ভেতরের খবর” বলতে বোঝানো হয় কোনো দল বা খেলোয়াড়ের বিষয়ে গোপন তথ্য যা বাইরের কারও জানার কথা নয়। যেমন, ফাইনাল স্কোয়াডে কে খেলবেন বা কে খেলবেন না। এই ধরণের তথ্যের ওপরও বড় অঙ্কের বাজি ধরা হয়।

ভারতে ক্রিকেট জুয়ার বাজার বেশ বড়। বিবিসি’র এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই বাজারের আকার ৪০০০ কোটি থেকে ১৫০০০ কোটি মার্কিন ডলার বলে ধারণা করা হয়। এই অবৈধ বাজারের এমন প্রকাণ্ড আকারই বলে দেয়, এতে আধিপত্য মূলত আন্ডারওয়ার্ল্ডের হোমড়াচোমড়াদের। যেমন, ক্রিকেট দুর্নীতি নিয়ে আগের অনেক তদন্তে নাম এসেছে দুবাই-ভিত্তিক কুখ্যাত মাফিয়া সংগঠন ডি-কোম্পানির।

কাকতালীয়ভাবে, ভারত ও সংযুক্ত আরব আমিরাত, উভয় দেশেই রয়েছে আগারওয়ালের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ।

বাইরে থেকে দেখলে আগারওয়াল একজন উদ্যোক্তা। ভারতের কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রণালয়ে দাখিল করা বিবরণী থেকে জানা যায়, তিনি ২০১২ সাল থেকে আন্ন্যা সফটওয়্যার প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি আইটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক। এছাড়া তিনি ক্রিকপ্লেক্স নামে একটি ক্রিকেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিরও মালিক। ক্রিকপ্লেক্স ভারতের উত্তর প্রদেশের নয়দায় একটি ক্রিকেট একাডেমি পরিচালনা করে। এছাড়া তাদের আছে একটি ক্রিকেট বিষয়ক ওয়েবসাইট।

কিন্তু এর চেয়েও অনেক ভারি পরিচিতি আছে তার। ২০১৮ সালে “সিন্ধিজ” নামে একটি দলের অন্যতম মালিক ছিলেন তিনি। এই দলটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত টি১০ লিগের দ্বিতীয় মৌসুমে অংশ নেয়। ১০ ওভারের সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের এই লিগে বিশ্বের সেরা সেরা খেলোয়াড়রা অংশ নিয়ে থাকেন। প্রায় প্রত্যেক ফ্রাঞ্চাইজ তাদের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে উড়িয়ে আনে বলিউড তারকাদের। ২০১৮ মৌসুমে সিন্ধিজ’র আইকন প্লেয়ার ছিলেন অস্ট্রেলিয়ান অলরাউন্ডার শেন ওয়াটসন। তবে এরপর দলটির খোলস পরিবর্তন করে নাম রাখা হয় “ডেকান গ্ল্যাডিয়েটর্স”। সদ্য শেষ হওয়া সর্বশেষ মৌসুমে দলটি রানার-আপ হয়েছে।

ডেকান গ্ল্যাডিয়েটর্সের বর্তমান মালিক হলেন গৌরব গ্রোভার। তিনি নিজেকে “আইটি টাইকুন” হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন। অন্যান্য ব্যবসার পাশাপাশি তার রয়েছে ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবসা। দীপক আগারওয়াল দাবি করেছেন, গ্রোভার তার পারিবারিক বন্ধু ও ব্যবসায়িক আংশীদার। তারা ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়েও একসঙ্গে কাজ করেছেন।

আগারওয়ালের সঙ্গে ক্রিপ্টোকারেন্সির যোগসূত্র এখানে বলতেই হয়। কারণ, এসিইউ’র মতে তিনি সাকিবকে বিটকয়েনে অর্থ দিতে চেয়েছিলেন। বিটকয়েন হলো সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিপ্টোকারেন্সি। আর ক্রিপ্টোকারেন্সি হলো এক ধরণের ডিজিটাল মুদ্রা। কোনো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তত্বাবধান ছাড়াই এই মুদ্রার লেনদেন হয়। এ কারণে ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেনের কোনো ছাপ বা ট্রেস খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়। এই বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণে বিটকয়েন বর্তমানে বিশ্বজুড়ে অবৈধ অর্থ স্থানান্তর, ঘুষ প্রদান, অর্থ পাচার, কর ফাঁকি ও জুয়ায় ব্যবহারের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় মুদ্রায় পরিণত হয়েছে।

তবে ডেকান গ্ল্যাডিয়েটর্সের সঙ্গে দীপক আগারওয়ালের সম্পর্ককে উড়িয়ে দিয়েছেন গৌরব গ্রোভার। তিনি হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেছেন, ডেকান গ্ল্যাডিয়েটর্সের সঙ্গে আগারওয়াল বা ক্রিকপ্লেক্সের কোনো সম্পর্ক নেই। টি১০ লিগের চেয়ারম্যান সাজি উল মুল্‌ক, যিনি এই টিম বিক্রি করেছেন, তিনি দাবি করেছেন যে, ডেকান গ্ল্যাডিয়েটর্স বা লিগের সঙ্গে আগারওয়াল “কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নন”। তবে ডোমেইন নিবন্ধন রেকর্ড থেকে দেখা যায়, ডেকান গ্ল্যাডিয়েটর্সের ওয়েবসাইট ক্রয় করা হয়েছে আগারওয়ালের মালিকানাধীন ক্রিকপ্লেক্স ওয়েবসাইটের ইমেইল ঠিকানা ব্যবহার করে। এ থেকে ইঙ্গিত মিলে, দুই পক্ষের মধ্যে সম্পর্ক বেশ ঘনিষ্ঠই।

টি১০ লিগের ২০১৮ সালের মৌসুমে সিন্ধিজ বনাম পাখতুনজ ম্যাচ শেষে পুরষ্কার বিতরণী মঞ্চে একসঙ্গে উপস্থিত ছিলেন গ্রোভার ও আগারওয়াল। অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ড্যানি মরিসন তাদের নাম ধরে ডাকার পর, গ্রোভার “ম্যাক্সিমাম সিক্সেস ইন দ্য ম্যাচ” পুরষ্কার ও আগারওয়াল “স্টাইলিশ প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ” পুরষ্কার হস্তান্তর করেন। সাধারণত, কোনো দলের মালিক বা জ্যেষ্ঠ কোনো কর্মকর্তাই পুরষ্কার বিতরণী মঞ্চে উপস্থিত থাকেন।

আমি এ ব্যাপারে জানতে টি১০ লিগের সাবেক একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি দ্বিতীয় মৌসুমে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, “সিন্ধি মূলত প্রথমে করাচিয়ান্স নামে পরিচিত ছিল। তবে পাকিস্তানের একটি আদালতের রায় অনুযায়ী দলটি নাম পরিবর্তন করে ‘সিন্ধিজ’ রাখতে বাধ্য হয়। ফলে করাচি-ভিত্তিক ওই মূল মালিকরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। তারা দলটি লিগ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে চলে যান। মৌসুম চলাকালেই কীভাবে যেন সাজি [উল মুল্‌ক] এই দীপক ও গৌরবকে খুঁজে পান। তারা যৌথভাবে দলটি কিনতে রাজি হয়। নিয়মানুযায়ী সাজি তাদের নাম আগে আইসিসি’র অনুমোদনের জন্য পাঠান। কিন্তু আইসিসি গৌরবের ব্যাপারে ছাড়পত্র দিলেও দীপকের ব্যাপারে দেয়নি। সুতরাং, দীপক সম্ভবত আনুষ্ঠানিক কোনো মালিক ছিলেন না, কিন্তু তার সঙ্গে গৌরবের কোনো না কোনো ধরণের অনানুষ্ঠানিক আংশীদারিত্ব বা বোঝাপড়া নিশ্চিতভাবেই ছিল।”

বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করা হলেও গ্রোভার আমার প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি। তবে ডেকান গ্ল্যাডিয়েটর্স-এর জনসংযোগ প্রতিষ্ঠান থেকে বলা হয়, “ক্রিকপ্লেক্স সম্পর্কিত কোনো বিষয়ে গ্রোভার কথা বলবেন না।”

টি১০ লিগের সাবেক ওই শীর্ষ কর্মকর্তা আরও বলেন, তার কাছে দীপক আগারওয়াল ও গৌরব গ্রোভার — দু’ জনকেই “সন্দেহজনক” মনে হয়েছিল। তিনি জানান, তারা এই দল প্রায় ১৩ লাখ মার্কিন ডলারে কিনেছিলেন! এই দল কেনার সংবাদের বদৌলতে মূলত গ্রোভার প্রথম আলোচনায় আসেন। ডেকান গ্ল্যাডিয়েটর্সের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ব্যতিত তার অন্য কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে পাবলিক ডোমেইনে তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তার কাছে আমি প্রশ্ন পাঠানোর পর সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাতের দ্য ন্যাশনাল পত্রিকায় তার একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে। সেখানেও তিনি নিজের ব্যবসা সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দেননি।

অপরদিকে সাজি উল মুল্‌কের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, “দীপক আগারওয়াল টি১০ লিগের কোনো দলের মালিক নন, কখনও ছিলেন না। তিনি সিন্ধিজ বা অন্য কোনো দলের অন্যতম মালিক ছিলেন মর্মে যেই দাবি করেছেন, তা ভুল।” তবে আগারওয়ালের নাম যে আইসিসি’র কাছে সিন্ধিজ দলের মালিক হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছিল, সেই বিষয়টি সরাসরি অস্বীকার করেননি মুল্‌ক। এ বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, “অন্য কোনো কর্মকর্তার যেকোনো বক্তব্য এখানে অপ্রাসঙ্গিক ও বিভ্রান্তিকর।”

সিন্ধিজ ও পাখতুনজের মধ্যকার ওই ম্যাচের পুরষ্কার বিতরণী মঞ্চে আগারওয়ালের উপস্থিতির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মুল্‌ক এক্ষেত্রে দলের মালিককে দায়ী করেন। তিনি বলেন, “এই প্রশ্নের জবাব দিতে হবে গ্রোভারকে। কোনো দল পুরষ্কার বিতরণের জন্য কোন অতিথি, পৃষ্ঠপোষক বা কর্মকর্তাকে হাজির করবে, সেই ব্যাপারে আমাদের কোনো বিধিনিষেধ নেই।” তিনি আরও যোগ করেন, টি১০ লিগ এসিইউ’র সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। এছাড়া যারাই অবৈধ কর্মকান্ডে জড়িত বলে প্রমাণিত হয়েছেন, তাদেরকে বরখাস্ত করার ক্ষেত্রে “জিরো টলারেন্স” নীতি অনুসরণ করা হয়।

তবে মুল্‌ক যত কথাই বলুন না কেন, বাস্তবতা হলো, শুরু হওয়ার পর থেকে টি১০ লিগের নাম বারবার দুর্নীতি কেলেঙ্কারিতে এসেছে। ১০ ওভারের এই খেলার সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটই ম্যাচ-ফিক্সিং সহ বিভিন্ন দুর্নীতির ক্ষেত্রে সহায়ক বলে অনেকে মনে করেন। ২০১৮ সালের মে মাসে কাতার-ভিত্তিক আল জাজিরা চ্যানেল “ক্রিকেট’স ম্যাচ ফিক্সার্স” নামে একটি তথ্যচিত্র প্রকাশ করে। ক্রিকেট দুনিয়ায় আলোড়ন সৃষ্টি করা ওই তথ্যচিত্রে দেখানো হয় কীভাবে শুধুমাত্র ফিক্সিং করার উদ্দেশ্যেই সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চালু করা হয়।

এক সময় টি১০ লিগের প্রেসিডেন্ট ছিলেন সালমান ইকবাল। লিগে “স্বচ্ছতা” ও “নজরদারির পর্যাপ্ত কাঠামো” না থাকার কথা উল্লেখ করে তিনি প্রথম মৌসুম শেষেই পদত্যাগ করেন। তিনি আমাকে জানান, এই ধরণের গুরুতর বিষয় সঠিকভাবে মোকাবিলা করার ব্যাপারে লিগ কর্তৃপক্ষের প্রস্তুতি তেমন নেই। তিনি বলেন, “আমি দ্বিতীয় মৌসুমের আগেই পদত্যাগ করি। ফলে আপনি যেই দলের ব্যাপারে জানতে চান, সেই ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। তবে দেখুন, ডেকান গ্ল্যাডিয়েটর্স কিন্তু লিগ কর্তৃপক্ষ বিক্রি করেছিল। আর এবার দেখুন, সেটি ফাইনালে উঠে গেছে!” এ কথা বলেই ফোনের অপরপ্রান্তে হেসে উঠেন তিনি।

এই মে মাসে দুই শ্রীলংকান খেলোয়াড়কে এই টুর্নামেন্টে দুর্নীতিতে জড়ানোর অভিযোগে আইসিসি বহিষ্কার করে। ২০১৭ মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন কেরালা নাইটসের অন্যতম মালিক আশফাক আলি থারা সেপ্টেম্বর মাসে ভারতের বাইরে অবস্থানরত জুয়াড়িদের সঙ্গে জুয়ায় অংশগ্রহণ ও ম্যাচ পাতানোয় ভূমিকা থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন। পরের মাসেই কেরালা নাইটসেরই খেলোয়াড় ও আরব আমিরাত জাতীয় দলের অধিনায়ক মোহাম্মদ নাভিদকে দুর্নীতিতে জড়ানোর অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়।

কাকতালীয়ভাবে, সাকিব আল হাসানও এই কেরালা নাইটসে খেলেছিলেন প্রথম মৌসুমে। হয়েছিলেন চ্যাম্পিয়ন। পরের মৌসুম শুরু হওয়ার মাস খানেক আগে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে এই সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে সাকিব ও আগারওয়ালের দেখা হওয়ার কথা ছিল। সেই মৌসুমেই মালিক হিসেবে নাম লেখানোর কথা ছিল আগারওয়ালের। তবে সাকিব ইনজুরির কারণে খেলতে পারেননি। আগারওয়ালও সম্ভবত আনুষ্ঠানিকভাবে মালিক হতে পারেননি।

ওই সময় সাকিবের সঙ্গে হওয়া হোয়্যাটসঅ্যাপ আলাপচারিতার কিয়দাংশ আমাকে দেখাতে রাজি হন আগারওয়াল। সেখানে দেখা যায়, তিনি সাকিবের সঙ্গে দেখা করার আগ্রহ প্রকাশ করেন দুবাইয়ে। জবাবে সাকিব তাকে দুবাই ফেস্টিভাল সিটিতে (ডিএফসি) অবস্থিত নিজের হোটেল ঠিকানা দেন। এসিইউ তাদের বিবৃতিতে বলেছিল, সাকিব কিছু হোয়্যাটসঅ্যাপ বার্তা মুছে ফেলেছিলেন। আগারওয়াল দাবি করেন, দুবাইয়ের হোটেল ঠিকানা দেওয়ার বিষয়টিও সেই মুছে ফেলা বার্তার অংশ।

ওই সময় ডেইলি স্টার পত্রিকার একটি প্রতিবেদনেও বলা হয়, তখন এশিয়া কাপ চলছিল। আর সাকিব সহ বাংলাদেশ দল শ্রীলংকার সঙ্গে একটি ম্যাচের আগে ডিএফসি এলাকায় দুবাই ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে অবস্থান করছিল। আগারওয়ালের দাবির সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও কিছু ছবি ও ভিডিওর সন্ধান পাই। যেখানে দেখা যায় সাকিব ওই সময় ডিএফসি এলাকাতেই ছিলেন।

নিজেকে নির্দোষ হিসেবে দাবি করে আগারওয়াল বলেন, সাকিব তার হোটেল ঠিকানা দিলেও তিনিই তার সঙ্গে দেখা করতে যাননি। তার ভাষ্য, সাকিব কিছু বার্তা মুছে ফেললেও, “আমি একটি বার্তাও মুছিনি। আমি আমার ফোন নম্বরও পরিবর্তন করিনি।”

সিন্ধিজ দলের সঙ্গে আগারওয়ালের দৃশ্যমান সম্পৃক্ততা থেকে বোঝা যায় যে, কেন তিনি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে এতটা মরিয়া ছিলেন। খ্যাতনামা কোনো ফ্রাঞ্চাইজ বা দলের মালিক হওয়ার যেই খায়েস তার, তা পূরণের পথে জুয়াড়ি দুর্নাম ছিল বিরাট এক বাধা। কিন্তু তারপরও এটি স্পষ্ট নয় যে, ঠিক কেন তিনি এসিইউ’র কাছে গিয়েছিলেন। তিনি তো চাইলেই চুপ থাকতে পারতেন।

এক্ষেত্রে তার বক্তব্য, এসিইউ’র কাছে না গেলে, ওই “বদ লোকদের” হাতে সবসময় জিম্মি থাকতে হতো। তিনি বলেন, “আমি স্ব-উদ্যোগে এসিইউ’কে দিয়ে নিজেকে কালোতালিকাভুক্ত করি, যেন তাদের কাছে আমার আর কোনো মূল্য না থাকে।”

আগারওয়ালের মালিকানাধীন ক্রিকেট বিষয়ক ওয়েবসাইট ক্রিকপ্লেক্সেও এ ব্যাপারে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, “আইসিসি কালোতালিকাভুক্ত ও নিষিদ্ধ করলে আগারওয়াল খুব খুশি হয়ে উঠেন। তিনি ভেবেছিলেন যে, একটি দলের মালিক হওয়ার যেই স্বপ্ন তার, সেই স্বপ্ন পূরণে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হলেও সমস্যা নেই।”

২০১৮ সালের ২৬শে নভেম্বর, অর্থাৎ সিন্ধিজ বনাম পাখতুনজ ম্যাচের পুরষ্কার বিতরণী মঞ্চে উপস্থিত হওয়ার দুই দিন পর আগারওয়ালকে কালোতালিকাভুক্ত ও নিষিদ্ধ করে এসিইউ। এরপর থেকে তার সঙ্গে আর যোগাযোগ (বা যোগাযোগের প্রয়োজন বোধ) করেনি ওই কথিত “বদ লোকেরা”।

তবে এই স্বস্তির বিনিময়ে বেশ চড়া বাণিজ্যিক মূল্য চুকাতে হয়েছে আগারওয়ালকে। ২০১৮ সালে তিনি নিজেই একটি আন্তর্জাতিক টি২০ লিগ শুরু করতে চেয়েছিলেন। এই টুর্নামেন্টের জন্যই সাকিব আল হাসান সহ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) খেলোয়াড়দের নম্বর জোগাড় করতে শুরু করেন তিনি। তার ভাষ্য, “এটি ছিল সৎ ও পেশাদার প্রচেষ্টা।” তার দাবি, ওই সময় খেলোয়াড় ও কোচদের সঙ্গে তিনি যেই সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন, সেই কারণেই তার দিকে জুয়াড়িদের চোখ পড়ে।

আগারওয়ালকে সাকিব ও অন্য খেলোয়াড়দের নম্বর কে দিয়েছিল তা এসিইউ প্রকাশ করেনি। এ কারণে বাংলাদেশে এ নিয়ে অনেক সন্দেহ ও গুজব ছড়িয়েছে। তবে আগারওয়াল আমাকে জানান যে, সাবেক জিম্বাবুইয়ান লিজেন্ড ও বাংলাদেশ দলের সাবেক বোলিং কোচ হিথ স্ট্রিকই তাকে ওই নম্বর দিয়েছিলেন। তবে সঙ্গে সঙ্গে তিনি এ-ও জানান যে, স্ট্রিক ভালো মনেই তাকে নম্বর দিয়েছিলেন: “হিথ কোনো ভুল করেননি। তার উদ্দেশ্যও অসৎ ছিল না। তিনি আমাকে নম্বর দিয়েছিলেন যেন আমি টি২০ টুর্নামেন্টের জন্য তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারি।”

হিথ স্ট্রিকই যে আগারওয়ালকে সাকিবের নম্বর দিয়েছিলেন, এই ব্যাপারে আমি অন্য একটি সূত্র থেকেও নিশ্চিত হতে পেরেছি।

তবে ক’দিন বাদেই কাহিনীর মোড় পুরোদমে ঘুরিয়ে আগারওয়াল দাবি করেন, তিনি হিথ স্ট্রিকের কাছেও “ইনসাইড ইনফরমেশন” বা ভেতরকার তথ্য চেয়েছিলেন! তার ভাষ্য, “যখন খারাপ লোকেরা হিথের সঙ্গে আমার সম্পর্কের কথা জানতে পারলো, তারা আমাকে তার কাছ থেকেও তথ্য চাইতে বাধ্য করলো।” তবে সাবেক জিম্বাবুইয়ান অধিনায়ক ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আগারওয়ালকে স্পট ফিক্সিং-এর জগত থেকে ফিরে আসার অনুরোধ জানান। আগারওয়াল বলেন, “তিনি সবসময় আমাকে বোঝাতেন যেন আমি ওই পথে না যাই। কিন্তু আমি তাকে তখন বলিনি যে আমি চাপের মুখে ছিলাম।”

হিথ স্ট্রিক ওই প্রস্তাব গ্রহণ করেননি। কিন্তু সাকিবের মতো তিনিও একটি ভুল করেন: তিনি এসিইউ’কে আগারওয়ালের প্রস্তাবের বিষয়ে অবহিত করেননি। ফলে এসিইউ’র কাছে আগারওয়াল যখন নিজের অপকর্মের সব তথ্য দিলেন, তখন এসিইউ বাংলাদেশের সাবেক বোলিং কোচকে নিয়েও তদন্ত শুরু করে।

তবে এই প্রসঙ্গে যোগাযোগ করলে স্ট্রিক আমার ইমেইলের উত্তর দেননি।

আগারওয়ালের সব শিকারই যে নিয়ম ভঙ্গ করেছে তা নয়। যেমন, সাবেক জিম্বাবুইয়ান খেলোয়াড় সিকান্দার রাজার কাছেও তথ্য চেয়েছিলেন আগারওয়াল। কিন্তু সিকান্দার রাজা রাজি তো হনইনি, বরং তিনি এসিইউকে জানিয়ে দেন। আবার উলটো ঘটনাও ঘটেছে। যেমন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুই খেলোয়াড় তার কাছেই গিয়েছিল অর্থের বিনিময়ে তথ্য প্রদানের প্রস্তাব নিয়ে। আগারওয়াল বিষয়টি এসিইউকে জানালে তদন্তের পর ওই খেলোয়াড়দের বহিষ্কার করা হয়।

ওদিকে বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমে খবর আসে যে, আগারওয়াল আরেক বাংলাদেশী তারকা তামিম ইকবালের কাছ থেকেও তথ্য চেয়েছিলেন। এ বছরের শুরুতে সাকিবকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে আসা এসিইউ তদন্ত দল তামিমকেও প্রশ্ন করেছিল। তবে তামিম তাদের জানান যে, তিনি ওই প্রস্তাবের বিষয়টি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) দুর্নীতি বিরোধী ইউনিটকে অবহিত করেছিলেন।

আগারওয়াল আমাকে জানান, তিনি তামিম ইকবালের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তা কোনো অবৈধ লেনদেনের জন্য ছিল না। তার ভাষ্য, “আমি তাকে পেশাদার প্রস্তাব দিয়েছিলাম ওই টি২০ টুর্নামেন্টের ব্যাপারে।” তিনি আরও বলেন, সাকিব ইস্যুতে তিনি কোনো বিসিবি কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেননি: “আমি জানি না কোনো বিসিবি কর্মকর্তা এ ব্যাপারে জানতেন কিনা।”

এদিকে, আগারওয়াল যেহেতু কালোতালিকাভুক্ত হলেন, তার পরিকল্পিত সেই টুর্নামেন্ট — ক্রিকপ্লেক্স প্রিমিয়ার লিগ (সিপিপিএল) — পরে আর কখনই অনুষ্ঠিত হয়নি। তার বক্তব্য ও হিন্দুস্তান টাইমসের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই টুর্নামেন্ট বাতিল করে দিয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)-এর দুর্নীতি বিরোধী ইউনিট। আগারওয়াল জানান, “বিসিসিআই থেকে কেউ একজন আমার এক কর্মকর্তাকে লিগের আয়োজন থামাতে বললো। এরপর আমরা প্রস্তুতি থামিয়ে দিই।”

কিন্তু বিসিসিআই-এর দুর্নীতিবিরোধী বিভাগের প্রধান অজিত সিং সেখাওয়াত বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, “আগারওয়াল ওই লিগ আয়োজনের জন্য কোনো অনুমতি চাননি,” বিসিসিআইও নিজ উদ্যোগে তা বন্ধ করতে বলেনি। অজিত সিং এর আগে বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন যে, আগারওয়াল ঠিক কালোতালিকাভুক্ত নন, তিনি বড় জোর “পারসন অব ইন্টারেস্ট।” এই বক্তব্যই অজিত সিং আমার কাছে পুনর্ব্যক্ত করলেন। তিনি জানান, তাদের কাছে এমন কোনো প্রমাণ ছিল না যে আগারওয়াল জুয়াড়ি: “যদি কোনো প্রমাণ থাকতো, তাহলে আমরা ব্যবস্থা নিতাম।”

কিন্তু সাকিব আল হাসানের শাস্তির ঘোষণা আসার পর, বহু সংবাদ মাধ্যমেই আগারওয়ালের অতীত কীর্তির কথা উঠে আসে। যেমন, অন্য অনেক সংবাদ মাধ্যমের মতো টাইমস অব ইন্ডিয়ায় বলা হয়, ২০১১ সালে ভারতের রাজস্থানের উদয়পুরে এক তরুণ খেলোয়াড়ের আত্মহত্যার জন্য অভিযুক্ত হয়েছিলেন দীপক (আগারওয়াল)। পত্রিকাটির ২০১১ সালের মূল প্রতিবেদনে উদয়পুরের তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তেজরাজ সিং-কে উদ্ধৃত করা হয়। তিনি বলেছিলেন, আত্মহত্যার আগে ওই তরুণ ক্রিকেটার এক জুয়াড়িকে দায়ী করে যায়। অভিযুক্ত জুয়াড়ির নাম “দীপক আগরাওয়াল”।

এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে আগারওয়াল এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন। ৩১শে অক্টোবর তিনি দিল্লি পুলিশের কাছে তেজরাজ সিং ও নিউজ ১৮ টিভি চ্যানেলের সম্পাদকের বিরুদ্ধে মানহানির অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের একটি অনুলিপি তিনি আমাকে দিয়েছেন। তেজরাজ সিং বর্তমানে রাজস্থান রাজ্য দুর্যোগ প্রতিরোধ বাহিনীর কমান্ড্যান্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, আট বছর আগের ওই মামলা সম্পর্কে তার কোনো কিছুই স্মরণে নেই বলে জানান। তিনি এ ব্যাপারে উদয়পুর পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।

উদয়পুর পুলিশ সুপার কৈলাশ চন্দ্র বিষ্ণই জানান, “দীপক [আগরাওয়াল] ছিল স্থানীয় এক জুয়াড়ি। তাকে সবাই ছোটু নামে চিনতো। তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ওই তরুণ ক্রিকেটারের রেখে যাওয়া সুইসাইড নোটের ভিত্তিতে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রও জমা দেওয়া হয়। এরপর নিয়ম অনুযায়ী মামলার বিবরণী চলে যায় আদালতে। এরপর এই মামলায় কী হয়েছে তা আমার জানা নেই।”

খেলোয়াড় হিসেবে সাকিব আল হাসান অত্যন্ত সফল। কিন্তু তিনি সবসময়ই ভক্তদের অকুণ্ঠ সমর্থন পেয়েছেন, এমনটা বলা যাবে না। বিশেষ করে, মাঠ ও মাঠের বাইরে তার দুর্বিনীত আচরণ এক্ষেত্রে কিছুটা দায়ী। কিন্তু সবকিছুই পালটে যায় এবারের বিশ্বকাপের পর। এই বিশ্বকাপে তিনি ৮ ম্যাচে ২ সেঞ্চুরি ও ৫ হাফ সেঞ্চুরি সহ ৯৬.০৩ গড়ে করেছেন ৬০৬ রান! যেকোনো ব্যাটসম্যানের জন্য এমন পারফরম্যান্স স্বপ্নের মতো ব্যাপার। বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় ভারতের রোহিত শর্মা আর অস্ট্রেলিয়ার ডেভিড ওয়ার্নারের চেয়ে ৫০ রানেরও কম ব্যবধানে পিছিয়ে ছিলেন তিনি। এছাড়া বাঁ-হাতি স্পিনার হিসেবে এক বার ৫ উইকেট সহ নিয়েছেন মোট ১১ উইকেট। ইতিহাসে প্রথম কোনো খেলোয়াড় হিসেবে তিনি বিশ্বকাপের মঞ্চে ১০০০ রান ও ৩০ উইকেট নিয়েছেন।

ফলে খুব স্বাভাবিকভাবেই সাকিব আল হাসানের শাস্তির ঘোষণা বাংলাদেশে খুবই তীব্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়। আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগেই যখন সমকাল পত্রিকায় এই সংবাদ প্রকাশ হয়, তখন অনেকে অভিযোগ করছিলেন যে, বোর্ডের স্বার্থ রক্ষা করতেই এমন সংবাদ বের হচ্ছে। এমনটা ভাবার কারণও ছিলো। দিন কয়েক আগ থেকেই সাকিব পেশাদার খেলোয়াড়দের বেতন ও ভাতা নিয়ে বোর্ডের বিরুদ্ধে এক নজিরবিহীন বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন।

তবে শুধু নিজেদের ক্রিকেট বীরের প্রতি সংহতি প্রকাশের তাড়নাই সাকিবের পক্ষে ভক্তদের অবস্থান নেওয়ার একমাত্র কারণ ছিল না। অনেকেই ধরে নেন যে, সাকিব যেই অপরাধ করেছেন তার তুলনায় শাস্তি বেশি হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে যুক্তি ছিল যে, আগারওয়ালের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেও কেন সাকিব এত বড় শাস্তি পেলেন! কিন্তু আসল কথা হলো, এসিইউ নিজেও এ ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু বলেনি। শুধু বলেছে, “তিনি প্রস্তাব গ্রহণ করেননি বা ওই অনুযায়ী কাজ করেননি।” আগারওয়াল আমাকে বলেছেন, সাকিব কখনই তার প্রস্তাব স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেননি। তবে এ-ও সত্য, সেই প্রস্তাব তিনি গ্রহণ করেননি বা সেই অনুযায়ী কাজ করেননি।

এসিইউ’র বিবৃতি অনুযায়ী, সাকিবের সঙ্গে হোয়্যাটসঅ্যাপ কথোপকথনের এক পর্যায়ে কীভাবে অর্থ লেনদেন করা হবে সেই প্রসঙ্গ তোলেন আগারওয়াল। তিনি অর্থ দেওয়ার উদ্দেশ্যে সাকিবের ডলার অ্যাকাউন্ট বা বিটকয়েন ওয়ালেটের বিস্তারিত জানতে চান। সাকিব তখন আগারওয়ালকে বলেন, তিনি তার সঙ্গে “আগে” দেখা করতে চান।

এই প্রসঙ্গেই আগারওয়াল সাকিবের সঙ্গে হোয়্যাটসঅ্যাপ কথোপকথনের ওই অংশ আমাকে দেখাতে সম্মত হন। সেখানে আগারওয়াল দেখা করার প্রস্তাব দিলে দুবাইয়ে অবস্থানরত সাকিব নিজের হোটেল ঠিকানা পাঠান। আগারওয়াল বলেন, “সাকিব আসলে দেখতে চাইছিলেন যে, আমি কতটা বিশ্বাসযোগ্য।” তিনি দাবি করেন, শেষ অবদি তিনিই সাকিবের সঙ্গে দেখা করতে যাননি। তার বক্তব্য, এ থেকেই প্রমাণ হয় যে তার নিজের আসলে অসৎ কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। কিন্তু যেই ব্যক্তি নিজেই ক্ষমতাধর জুয়াড়িদের ক্রীড়নক হিসেবে কাজ করার কথা স্বীকার করেছেন, তার ওই বক্তব্য বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তো আছেই।

সাকিব আল হাসান বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট তারকাই শুধু নন, সবচেয়ে ধনীও। তিনিই একমাত্র বাংলাদেশী খেলোয়াড় যিনি বিশ্বের প্রায় সকল শীর্ষ টি২০ লিগে ধারাবাহিকভাবে খেলেছেন। এর মধ্যে লোভনীয় ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগও (আইপিএল) রয়েছে। এসব ছাড়াও তিনি গ্রামীনফোন, হুয়াওয়ে, উবার ও ইয়ামাহা’র মতো বহু কর্পোরেট ব্রান্ডের সঙ্গে স্পন্সরশিপ চুক্তি করেছেন। তার নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও আছে। ঢাকার মিরপুরে রয়েছে রেস্তোরাঁ, সাকিব’স ৭৫। খুব সম্প্রতি সাতক্ষীরায় তার বিশাল চিংড়ী ও কাকড়া খামার থাকার কথা সংবাদ মাধ্যমে এসেছে। আগারওয়ালের সঙ্গে যোগাযোগেরও দুই বছর আগে ক্রিকেট বিষয়ক ওয়েবসাইট ক্রিকট্র্যাকার তার সম্পদের পরিমাণ ৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা প্রায় ২৭০ কোটি টাকা (তখনকার হিসাবে) হতে পারে বলে উল্লেখ করেছিল।

সুতরাং, তার মতো খেলোয়াড় কীভাবে দীপক আগারওয়ালের মতো একজন সম্ভাব্য জুয়াড়ির সঙ্গে কথা চালিয়ে নিলেন বা দেখা করার আগ্রহ প্রকাশ করলেন, তা স্পষ্ট নয়। ইংল্যান্ড দলের সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভন টুইটারে যেমনটা উল্লেখ করেছেন, “এই জমানায় খেলোয়াড়দের সবসময় ব্রিফ করা হয় তারা কী করতে পারবে, কী পারবে না, আর কোন বিষয় সঙ্গে সঙ্গে [কর্তৃপক্ষকে] অবহিত করতে হবে।” সাকিব নিজেও এসিইউ তদন্ত দলের কাছে স্বীকার করেন যে, আইসিসি আচরণবিধি অনুযায়ী নিজের করণীয় ও দায়িত্ব সম্পর্কে তিনি সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল ছিলেন। এ কারণেই বিষয়টি হতবুদ্ধিকর ঠেকে যে ঠিক কেন তিনি এসিইউ’র কাছে যাননি যখন তার “মনে হয়েছিল আগারওয়াল একজন জুয়াড়ি।” এ ব্যাপারে অবশ্য আগারওয়াল আমাকে বলেন, সাকিব তার প্রস্তাবের বিষয়ে খুব আগ্রহীও ছিলেন না: “আমি বা সাকিব কেউই খুব জোরাজুরি করিনি।”

সাকিবের শাস্তির ঘোষণা আসার একদিন বাদে বিবিসি বাংলা বিসিসিআই-এর দুর্নীতি-বিরোধী কর্তৃপক্ষের প্রধান অজিত সিং শেখাওয়াতকে উদ্ধৃত করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এর শিরোনাম ছিল: “সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে তদন্তে আমরা শুধু সম্মতি দিয়েছিলাম: বিবিসিকে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড।” এই প্রতিবেদনের প্রকাশের পর মুহূর্তেই বিতর্ক শুরু হয় বাংলাদেশে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছিলেন যে, বাংলাদেশ দলের প্রথম ভারত সফরের পূর্বে সাকিবের এই নিষেধাজ্ঞার পেছনে ভারতীয় বোর্ডের হাত ছিল কিনা। “এখনই কেন?” — এই প্রশ্ন তখন সাংবাদিক থেকে ভক্ত সকলের মুখে মুখে।

আইসিসি’র ওপর ভারতীয় বোর্ডের প্রভাব থাকার কথা অজানা কিছু নয়। তবে সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমানে বিসিবি কর্মকর্তা আকরাম খান অবশ্য এর একটা ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি জানান যে, সাকিব নিজেই আইসিসিকে অনুরোধ জানান যেন তার শাস্তি একটু এগিয়ে আনা হয়। তাহলেই হয়তো তিনি আগামী বছর অনুষ্ঠেয় টি২০ বিশ্বকাপে খেলতে পারবেন।

আমি এ ব্যাপারে অজিত সিংকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি আমাকে বলেন, “তদন্ত করেছে আইসিসি। তবে তদন্তের জন্য বিসিসিআই আইসিসিকে সম্মতি দিয়েছিল।” আমি জিজ্ঞেস করলাম, আইসিসি কোনো তদন্ত করতে হলে বিসিসিআই-এর সম্মতি জরুরী কেন? তিনি বিস্তারিত না বলে সংক্ষেপে জবাব দেন, “নিয়মে এই বাধ্যবাধকতা আছে।” তবে বিসিসিআই-এর সম্পৃক্ত থাকার ক্ষেত্রে একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হলো, সাকিব যখন ২০১৮ সালে আইপিএল-এ খেলছিলেন তখন তার কাছ থেকে তথ্য চান আগারওয়াল। ওই মৌসুমে সাকিব সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের হয়ে খেলছিলেন। সেই কারণেই হয়তো বিসিসিআই-এর সম্মতি প্রয়োজন ছিল।

২০১৩ সালে মোহাম্মদ আশরাফুল স্পট ফিক্সিং-এর অভিযোগে নিষিদ্ধ হওয়ার পর, সাকিবের নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য সবচেয়ে বড় ধাক্কা। বিসিবি প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপন সাংবাদিকদের বলেন, আর সকলের মতো শাস্তির কথা শুনে তিনিও স্তম্ভিত হয়ে গেছেন। যেন পুরো বিষয়টিই তার কাছে অত্যন্ত অপ্রত্যাশিত। কিন্তু এমন একাধিক ইঙ্গিত পাওয়া গেছে যে বোর্ড আগেই জানতো কী হতে যাচ্ছে।

যেমন, আইসিসি’র আনুষ্ঠানিক ঘোষণার দুই দিন আগে প্রকাশিত সমকাল পত্রিকার প্রতিবেদনের পুরোটাই ছিল অজ্ঞাত বিসিবি কর্মকর্তাদের বরাতে। সুতরাং, বোর্ড কর্মকর্তারা যেই তথ্য জানবেন, তা প্রেসিডেন্ট জানবেন না, এমন সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। সমকালে ওই প্রতিবেদন যিনি করেছেন, সেই আলি সেকান্দার পরে ডয়েচে ভেলেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে, সাকিব যখন বিদ্রোহ শুরু করলেন খেলোয়াড়দের নিয়ে, তারও আগ থেকেই বিসিবি কর্মকর্তারা তার শাস্তির বিষয়টি জানতেন। অন্য কর্মকর্তাদের মন্তব্য থেকেও এই ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

কিন্তু পরিহাসের বিষয় হলো, স্পট ফিক্সিং-এর কালিমা নিয়ে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ হওয়ার কয়েক দিন আগে সাকিব নিজেই ঘরোয়া লিগে ম্যাচ পাতানোর অভিযোগ তুলে সমাধানের দাবি জানিয়েছিলেন। মাঝে প্রথম আলো সহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ঘরোয়া ক্রিকেটে “ম্যাচ ছেড়ে দেওয়া”র প্রবণতা নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু এখন সাকিব নিজেই যখন এই কেলেঙ্কারিতে নিষিদ্ধ, তাই সেই অভিযোগের গুরুত্বও কমে গেছে। ২৯ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে দুঃখ প্রকাশ করার পর সাকিব এই প্রসঙ্গে আর কোনো মন্তব্য করেননি। দীপক আগারওয়াল কিন্তু নিজের বক্তব্য দিয়েছেন। সাকিব আল হাসান কি তার বক্তব্য শোনার সুযোগ আমাদের দেবেন? ●

নাজমুল আহসান, সাংবাদিক।

The article appeared in the Netra News on