শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১ মাসে ১৬ দশমিক ১ শতাংশ কমেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার এই দ্বীপদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ এখন ১ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলার বা ১৯৩ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। এই পরিস্থিতিতে ঋণ পুনর্গঠনের আহ্বান করেছে তারা।
চরম অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। খাদ্য, জ্বালানি ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঘাটতি নিয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে; গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের পদত্যাগের দাবিতে হাজার হাজার মানুষ কলম্বোর রাস্তায় নেমে আসেন। জ্বালানির অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে শ্রীলঙ্কায়। বৈদেশিক মুদ্রার অভাবে প্রয়োজনীয় জ্বালানি আমদানিও করতে পারছে না তারা। দিনে ১০ ঘণ্টার ওপরে লোডশেডিং হচ্ছে।
হিন্দুস্তান টাইমস–এর এক সংবাদে বলা হয়েছে, চলতি বছর শ্রীলঙ্কার অন্তত ৮৬০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু এখন তাদের হাতে রিজার্ভ আছে মাত্র ১৯৩ কোটি ডলার। অথচ ফেব্রুয়ারি মাসেও দেশটির রিজার্ভ ছিল ২৩০ কোটি ডলার।
চলতি মাসেই বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে বড় আরেকটি পরীক্ষা দিতে হবে শ্রীলঙ্কাকে। এ মাসেই তাদের দুটি বন্ডের বিপরীতে প্রায় আট কোটি ডলার সুদ পরিশোধ করতে হবে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে প্রথমেই শ্রীলঙ্কাকে যা করতে হবে, তা হলো কার্যকর এক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন করা। এরপর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে তাদের চুক্তি করতে হবে।
এত দিন আইএমএফের সঙ্গে শ্রীলঙ্কা আলোচনায় বসতে রাজি না হলেও সম্প্রতি তারা অবস্থান পাল্টেছে। এ মাসেই আইএমএফের সঙ্গে তাদের আলোচনায় বসার কথা। এ ছাড়া শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট সংকট উত্তরণে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করেছেন।
এ ছাড়া ভারত ও চীনের কাছে সহায়তা চেয়েছে শ্রীলঙ্কা। ভারত তাদের ২০০ কোটি ডলারের লাইন অব ক্রেডিট দিয়েছে। ইতিমধ্যে ভারতের সহায়তায় এক জাহাজভর্তি জ্বালানি তেল শ্রীলঙ্কায় পৌঁছেছে। শিগগিরই চালও পাবে তারা।
কিন্তু আইএমএফের সঙ্গে আলোচনার আগে বড় ধাক্কা খেয়েছে শ্রীলঙ্কা। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের ভাই বাসিল রাজাপক্ষে অর্থমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করার পর আলি সাবরি অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু তিনি দায়িত্ব গ্রহণের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ করেছেন।
সাবরি মনে করেন, এ বছরের জুলাই মাসে যে ১০০ কোটি ডলারের সার্বভৌম ঋণের সুদ পরিশোধের কথা ছিল, তা অবশ্যই পুনর্গঠন করা উচিত শ্রীলঙ্কার। আর শুধু আইএমএফ নয়, বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের কাছ থেকেও শ্রীলঙ্কার সহায়তা নেওয়া উচিত বলে তাঁর মত।
এই সংকটের মধ্যেও শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে পদত্যাগ করবেন না বলে জানিয়েছেন। এর মধ্যেও বিরোধীরা দেশের হাল ধরার ইচ্ছা প্রকাশ করছে না, অথচ এত দিন ধরে তারাই প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে কাদা ছুড়ছিল। কিন্তু বাস্তবে দায়িত্ব নিয়ে দেশের মানুষকে স্বস্তি দেওয়ার কোনো রাস্তা কার্যত জানা নেই বিরোধীদেরও। প্রেসিডেন্টকে সরানোর মতো পরিস্থিতিতেও তারা নেই।