ভোট প্রভাবমুক্ত রাখতে দলীয় মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও এমপির কাছে আত্মীয়দের প্রার্থী হতে নিষেধ করা হচ্ছে।
কিন্তু এবার উপজেলা নির্বাচনে কেন স্বজনদের প্রার্থী করতে চায় না আওয়ামী লীগ? এবারও তো মাঠে বিএনপি নেই।
প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন চায় আওয়ামী লীগ
মূলত নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করার কৌশল নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এতে ভোটের মাঠে যেমন প্রার্থী বেশি দরকার, তেমনি নির্বাচনের পুরো প্রক্রিয়াকেই নিরপেক্ষ করা দরকার মনে করছে তারা। ৪৭৫ উপজেলার মধ্যে মন্ত্রী-এমপির প্রার্থী খুব অল্প হবে বলে ধারণা করছে আওয়ামী লীগ। তাই মাঠ পর্যায়ে নির্বাচনকে প্রভাবমুক্ত রেখেই প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করা সম্ভব হবে।
মন্ত্রী-এমপির বাইরেও স্থানীয় পর্যায়ে কেন্দ্রের প্রভাবশালী নেতাদের আধিপত্য রয়েছে। সেটাও যেন কোনোভাবে নির্বাচনকে প্রভাবিত না করে, সেদিকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে খেয়াল রাখা হচ্ছে। এতে প্রভাবশালী নেতারা যদি মনঃক্ষুণ্ন হন, তাতেও পরোয়া করবে না দল।
এক প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিএনপি ভোটে না এলেও নির্বাচনকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করবে। তারা সব সময় জনগণের বিপক্ষে। তাদের নিয়ে আমাদের ভাবনা নেই। কিন্তু আওয়ামী লীগের কৌশলের কারণে আমাদের কিছু প্রভাবশালী নেতা কষ্ট পেতে পারেন।’
বৈঠকে তালিকা উপস্থাপন এজেন্ডায় নেই
আগামী ৩০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক হতে যাচ্ছে। কিন্তু বৈঠকে দলীয় নির্দেশ না মেনে ভোটে থাকা প্রার্থীদের তালিকা উপস্থাপন এজেন্ডায় নেই।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘তালিকা আমাদের কাছে আছে। কিন্তু মিটিংয়ে সেই তালিকা উপস্থাপনের কোনো এজেন্ডা নেই। মিটিংয়ে যদি আলোচনা ওঠে, নেত্রী (আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা) যদি তালিকা চান, তাহলে আমরা সেটি উপস্থাপন করব। তিনি যে সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটি সবাই মেনে নেবেন।’
একক প্রার্থী নিয়ে ভাবনা নেই
এখন পর্যন্ত প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে ২৫ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। একক প্রার্থী হওয়ায় ওসব জায়গায় ভোটের প্রয়োজন হচ্ছে না। একদিকে আওয়ামী লীগ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন করতে চাইলেও একক প্রার্থীর পরিমাণ কম হওয়ায় এ নিয়ে দলের তেমন ভাবনা নেই।
এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কোথাও একক প্রার্থী হয়ে গেলে আমাদের তো কিছু করার নেই। দলের কাউকে জোর করে বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে কি না বা প্রার্থী হতে বাধা দেওয়া হচ্ছে কি না, এমন ঘটনা থাকলে দল থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেমন ধরেন, একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পলকের (ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক) শ্যালক শেষ মুহূর্তে নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। সেখানে তো এখন একক প্রার্থী হয়ে গেছেন। এতে আমাদের কী করার আছে।’
দুই উপজেলায় দুজনকে প্রার্থী ঘোষণা
বরিশালের গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য আওয়ামী লীগের অন্তত ১০ নেতা প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ছয় মাস ধরে তাঁরা গণসংযোগ করেছেন। এর মধ্যে গত ২৮ মার্চ রাতে জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের উপস্থিতিতে দুই উপজেলায় দুজনকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। এতে প্রচারণায় থাকা অন্য নেতারা হঠাৎ নিশ্চুপ বনে গেছেন।
বরিশাল-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহর বাসভবনে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গৌরনদীতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মো. হারিছুর রহমান ও আগৈলঝাড়ার এমপির ছেলে সেরনিয়াবাত আশিক আব্দুল্লাহ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই বৈঠকে উপস্থিত একজন কালের কণ্ঠকে বলেন, এমপির বাসভবনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের উপস্থিতিতে রাতে দুজনকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। যেহেতু আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ দুজনকে মনোনীত করেছেন, এ জন্য তিনি প্রার্থী হবেন না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, গৌরনদী পৌরসভায় মেয়র পদে হাসনাতের মেজো ছেলে মঈন আব্দুল্লাহ নির্বাচন করবেন। তাই বর্তমান মেয়র হারিছুর রহমানকে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হাসনাত নির্দেশ দিয়েছেন।
kalerkantha