উপেক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার: টাকার চিন্তায় দিশাহারা টাকা ব্যবসায়ীরা

logo manobkantha


  •  নিজস্ব প্রতিবেদক
  •  ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩

বাংলাদেশ ব্যাংক এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিল দেশের সকল ছেঁড়া, ফাটা, আগুনে পোড়া, অর্থাৎ সাধারণে অচল টাকা ফেরৎ নিয়ে তা বদলে দেয়া হবে। এই ঘোষণা শুনে অনেকেই আশায় বুক বেঁধেছিলেন। তারা তাদের অচল নোটগুলো জমাও দিয়েছেন। কিন্তু দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও সেই কাক্সিক্ষত বদল নোট এখনও মেলেনি। এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একাধিকবার ফোন করে টাকা নিয়ে যাবার কথা বলা হলেও কার্যত সেটি এখন সাপলুডু খেলায় দাঁড়িয়েছে।

এদিকে ব্যাংকের মুলো ধরিয়ে রাখা ঘোষণায় বিপাকে পড়েছেন ছেঁড়া ফাটা নোট বিনিময়ে যুক্ত ৫’শ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। তারা বাজারে প্রচলিত ময়লাযুক্ত ছেঁড়া-ফাটা, আগুনে ঝলসানো, ড্যাম্প, মরিচাযুক্ত, অধিক কালিযুক্ত, অধিক লেখালেখি, স্বাক্ষরযুক্ত, বিভিন্ন খণ্ডে খণ্ডিত টাকা জমা দিয়েও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পরিচ্ছন্ন টাকা আনতে পারছেন না।

ছেঁড়া ফাটা টাকার সঙ্গে যুক্ত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা জানান, দীর্ঘ দিন যাবৎ সারাদেশের বিভিন্ন গ্রাম, হাট-বাজার থেকে ছেঁড়া টাকা সংগ্রহ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী পরিবর্তন করে আসছিল। বর্তমানে তারা ছেঁড়া-ফাটা টাকা পরিবর্তন করতে পারছেন না। এ বিষয়ে গত ২২ জুন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বরাবরে একটি অভিযোগ দায়ের করেন ছেঁড়া ফাটা টাকা বিনিময় ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. নিজাম উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল হোসেন।

অভিযোগে তারা বলেছেন, দীর্ঘ দিন যাবৎ সারাদেশের বিভিন্ন গ্রাম, হাট-বাজার থেকে ছেঁড়া টাকা সংগ্রহ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী অন্য ব্যাংকে ছেঁড়া, সামান্য খাওয়া নোট পরিবর্তন করে আসছিলো ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ীরা। কিন্তু পোকা খাওয়া, ইঁদুরে খাওয়া ড্যাম টাকা অন্য ব্যাংকে জমা দেয়া যায় না। এগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকেই জমা দিতে হয়। কিন্তু কোনো আইনি নিষেধাজ্ঞা ছাড়াই বেশ কিছুদিন যাবত তাদের ছেঁড়া-ফাটা ব্যবসায়ীর কোনো লোককে বাংলাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তরে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। কারণ জানতে চাইলে গেটের সিকিউরিটি সদস্যরা জানান, উপরের নির্দেশ রয়েছে তাদের ঢুকতে না দেয়ার।

রাজধানীর বাসাবো দক্ষিণ মুগদাপাড়ার বাসিন্দা টাকা ব্যবসায়ী মো. জাকির হোসেন বলেন, গত ২২ মে ১০টি ত্রæটিযুক্ত ৫০০ টাকার নোট জমা দেই। ২ মাস ১২ দিন পর গত ৩ আগস্ট সকাল ১১টা ২৯ মিনিটে ৮৮০২৫৫৬৬৫০০৩ নম্বর থেকে আমার মোবাইলে ম্যাসেজ আসে নতুন টাকা নেয়ার। এই ম্যাসেজ প্রাপ্তির পর বাংলাদেশ ব্যাংকে গেলে আমাকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। সিøপ (নং-খম-৩৯০২/ক) দেখালেও সিকিউরিটি গার্ডরা উপরের নিষেধ আছে বলে ঢুকতে দেয়নি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমার মত সিøপধারী শতাধিক লোক রয়েছে। সবমিলিয়ে কয়েক কোটি টাকা জমা রয়েছে।

এ বিষয়ে ছেঁড়া ফাটা টাকা বিনিময় ব্যবসায়ী সমিতির ( রেজি নং-০০০৪৮) সভাপতি মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, আমরা ছেঁড়া-ফাটা নোট ব্যাংকে জমা দিতে পারিনি। দেড় থেকে ২ কোটি টাকা আমাদের কাছে পড়ে রয়েছে। এই ছেঁড়া ফাটা নোট পরিবর্তন করতে পারলে বাংলাদেশ ব্যাংকও ৪০ লাখ টাকা কমিশন পেত। আমরা ছেঁড়া ফাটা নোট জমা দিয়ে নতুন টাকা পেতে চাই।

সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল হোসেন বলেন, আমাদের সমিতির ৫শ’ সদস্য দুর্দশার মধ্যে আছে। ছেঁড়া-ফাটা টাকা পরিবর্তন করতে না পেরে আমাদের ছেলে-মেয়েদের লেখা পড়া বন্ধ হয়ে গেছে। এ বিষয়ে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের কারেন্সি অফিসার, নির্বাহী পরিচালক (প্রশাসন বিভাগ) ও গভর্নর বরাবরে আবেদন করেছি। কিন্তু তারা কোনো সাড়া দেননি।

গত ২৪ জুলাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারির মাধ্যমে বাজার থেকে ছেঁড়া-ফাটা ও অপ্রচলনযোগ্য নোট তুলে নিয়ে এর বিপরীতে পরিচ্ছন্ন নোট সরবরাহ নিশ্চিত করা বিষয়ে নতুন নীতিমালা ঘোষণা করা হয়। এটি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। নীতিমালায় বলা হয়, বাজারে বর্তমানে প্রচলিত ময়লাযুক্ত ছেঁড়াফাটা, আগুনে ঝলসানো, ড্যাম্প, মরিচাযুক্ত, অধিক কালিযুক্ত, অধিক লেখালেখি, স্বাক্ষরযুক্ত, বিভিন্ন খণ্ডে খণ্ডিত নোট রয়েছে। এগুলো বাজার থেকে পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহার করা হবে। এর বিপরীতে পরিচ্ছন্ন নোট সরবরাহ করা হবে। বাজারে প্রচলিত নোটের স্থায়িত্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে পদক্ষেপ নেয়া হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পুনঃপ্রচলনযোগ্য নোট সরবরাহ করা হবে। নোটের স্থায়িত্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে জনসচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকেও সম্পৃক্ত করা হবে। নোট ব্যবহারে অধিক যতœবান হওয়ার বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে।

নীতিমালায় বলা হয়, পরিচ্ছন্ন নোট সরবরাহের লক্ষ্যে নোটের সর্টিং, প্যাকেজিং, ব্যান্ডিং নোটের প্যাকেটে ফ্লাইলিফ লাগানো ও স্ট্যাপলিং বিষয়ক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা পরিপূর্ণভাবে পালন করতে হবে। ওই নির্দেশনা অনুযায়ী নোটের বান্ডিলে কোনো স্ট্যাপলিং করা যাবে না। একই সঙ্গে নোটের বান্ডিল সুঁইয়ের মাধ্যমে ছিদ্র করে সুতা দিয়ে বাধা যাবে না। চাহিদা নিরূপণ করে নোট উৎপাদনের সক্ষমতা বাড়ানো হবে। এটি উৎপাদনে দীর্ঘস্থায়ী, আধুনিক ও উন্নতমানের কাগজ, কালি ও নিরাপত্তাবৈশিষ্ট্য ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
এই সার্কুলার জারির পরও ছেঁড়া-ফাটার সঙ্গে জড়িত ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ীরা বাংলাদেশ ব্যাংকে ঢুকতে পারছেন না।

বিষয়টি অবাক করার মতো ঘটনা বলেই মনে করেন ভুক্তভোগীরা। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিকিউরিটি ইনচার্জ মো. রবিউল এবং ব্যাংকের কারেন্সি অফিসার প্রকাশ চন্দ্র বৈরাগীর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।

মানবকণ্ঠ/এআই