উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে লড়তে হলে জামানত গুনতে হবে এক লাখ টাকা। এর আগে তা ছিল ১০ হাজার টাকা। ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামানত পাঁচ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৭৫ হাজার টাকা করা হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সভা থেকে এসব সিদ্ধান্ত আসে। সভা শেষে ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
একই সঙ্গে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে ভোটারের সমর্থনসূচক সইয়ের তালিকা জমা দেওয়ার বিধান বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে এই বিধান এবারের উপজেলা ভোটে কার্যকর হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। ইতোমধ্যে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করেছে ইসি। আগামী মে মাসে চার ধাপে ৪৮১ উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তবে ইসি সিদ্ধান্ত নিলেও তা এখনই কার্যকর হচ্ছে না। প্রথমে তা ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হবে আইন মন্ত্রণালয়ে।
মন্ত্রণালয় যাচাই-বাছাই করে তা আবার ইসির কাছে ফেরত পাঠাবে। ইসি পর্যালোচনা করে প্রজ্ঞাপন জারি করবে।
এদিকে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য বিদ্যমান বিধান পরিবর্তন করে শুধু অনলাইনে জমা দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। বর্তমানে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে সরাসরি অথবা অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সুযোগ আছে। ২০১৫ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার প্রবণতা ঠেকাতে সরাসরি জমা দেওয়ার পাশাপাশি অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সুযোগ চালু করা হয়েছিল। কারণ, তখন স্থানীয় সরকারের একাধিক নির্বাচনে প্রভাবশালীদের পছন্দের প্রার্থীর বাইরে অন্যদের মনোনয়ন ঠেকাতে পেশিশক্তি ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে।
ইসি সচিব জানান, ইসির আইন সংস্কারবিষয়ক কমিটি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা ও আচরণ বিধিমালায় কিছু হালনাগাদ করার প্রস্তাব করেছিল। কমিশনের বৈঠকে প্রস্তাবগুলো অনুমোদন দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, আরও যেসব প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে, তার মধ্যে আছে– প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর থেকে প্রতীক বরাদ্দের আগ পর্যন্ত সময়ে সর্বোচ্চ পাঁচজন সঙ্গে নিয়ে জনসংযোগ করতে পারবেন। বিদ্যমান বিধিমালায় এ বিধান ছিল না। এটি নতুন সংযুক্ত করা হচ্ছে।
বর্তমান অবস্থায় প্রার্থীর জামানত রক্ষায় প্রার্থীদের প্রদত্ত ভোটের আট ভাগের এক ভাগ ভোট পেতে হয়। এটি ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। অর্থাৎ কোনো প্রার্থী প্রদত্ত ভোটের ১৫ শতাংশ ভোট না পেলে তাঁর জামানতের টাকা বাজেয়াপ্ত হবে। এ ছাড়া সাদাকালো পোস্টারের পাশাপাশি রঙিন পোস্টার ছাপানো যাবে, এমন প্রস্তাবও অনুমোদন করা হয়েছে।
এ ছাড়া বৈঠকে নির্বাচনী পোস্টারে পলিথিনের আবরণ এবং প্লাস্টিক ব্যানার ব্যবহার বন্ধ; শব্দদূষণ কমানোর লক্ষ্যে মাইকের সাউন্ড ৬০ ডেসিবেলের নিচে রাখা; চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর নির্বাচনী খরচ ২৫ লাখ এবং মহিলা সদস্যদের এক লাখ টাকাসহ মনোনয়নপত্রে লিঙ্গ পরিচয়ে হিজড়াদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কোনো পদে সমান ভোট পেলে পুনঃভোটের বদলে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের উপস্থিতিতে লটারির মাধ্যমে ফল নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ইসি সচিব জানান, গত বছর গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধন করে কিছু ক্ষেত্রে সাজা ও ক্ষমতা বাড়ানো হয়। উপজেলা নির্বাচন বিধিমালায় এটি সমন্বয় করার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে।
উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোট আগামী ৪ মে, দ্বিতীয় ধাপে ১১ মে, তৃতীয় ধাপে ১৮ মে এবং চতুর্থ ধাপের ভোট হবে ২৫ মে। আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে জানিয়েছে, তারা এবার স্থানীয় সরকারের কোনো নির্বাচনে দলীয় প্রতীক দেবে না। অন্যদিকে সংসদ নির্বাচন বর্জন করা বিএনপির দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা কম। ফলে এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হবে মূলত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে। এর মধ্যেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার বিধান শিথিল করার সিদ্ধান্ত নিল ইসি। এখন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে হলে ২৫০ ভোটারের সমর্থনসূচক সই মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হয়। ইসির এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে সমর্থনসূচক সই জমা দিতে হবে না।
সমকাল