- মাসুদ মজুমদার
- ২১ মার্চ ২০২১
এবার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক দিয়েই লেখাটা শুরু করা যাক। বাইডেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর গণতান্ত্রিক বিশ্বে যখন একটি নতুন আশাবাদ সৃষ্ট হলো, ঠিক তখনই চীন-ইরানসহ ১৬টি দেশের মার্কিনবিরোধী জোট অনেকের মনে নতুন করে প্রশ্ন জাগিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র নাকি জাতিসঙ্ঘকে ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশকে হুমকি ও নিষেধাজ্ঞা দিয়ে যাচ্ছে। সেটি মোকাবেলার জন্যই এই জোট। এই জোটে যোগ দিয়েছে সিরিয়া, ফিলিস্তিন, উত্তর কোরিয়া, ভেনিজুয়েলা এবং কিউবা। প্রতিষ্ঠাতা সদস্য দেশ হিসেবে থাকছে আলজেরিয়া, অ্যাঙ্গোলা, বেলারুশ, বলিভিয়া, কম্বোডিয়া, ইরিত্রিয়া, লাওস, নিকারাগুয়া, সেইন্ট ভিনসেন্ট ও গ্রেনাডাস দ্বীপপুঞ্জ। মার্কিনবিরোধী এসব দেশ মনে করে, বহু পক্ষীয় কর্তৃত্ববাদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র নজিরবিহীনভাবে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট দেশগুলো মনে করে, অনেক চুক্তি থেকে তারা বেরিয়ে যাচ্ছে। এটা একাধিপত্যবাদের লক্ষণ। তাই যুক্তরাষ্ট্রের কারণে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। এখন এর কারণ বিশ্লেষণের দাবি রাখে। তাই আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের উচিত হবে এ ব্যাপারে কথা বলা, লেখা ও গবেষণা করে বিশ্ববাসীকে সঠিক তথ্য দেয়া। এ ছাড়া মিয়ানমারসহ অনেক দেশে নানা ধরনের ঘটনা ঘটছে যা সংক্ষিপ্ত মূল্যায়নে উপলব্ধি করা প্রায় অসম্ভব। মিয়ানমারে সেনাশাসকরা দমনপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছেন। আবার মৃত্যুর হারও বাড়ছে। তা ছাড়া জান্তা তাদের ক্ষমতারোহণকে ‘বিপ্লব’ বলে অভিহিত করে বক্তব্য দিয়েছে। অন্য দিকে যারা আন্দোলনের সাথে জড়িত তারাও ‘বিপ্লবের’ ডাক দিয়েছে। অবশ্য আন্ডার গ্রাউন্ড থেকে।
আওয়ামী লীগ এখন প্রতিপক্ষকে মাঠছাড়া করে নিজেদের মধ্যে খুনোখুনি করেই চলেছে। অবশেষে নোয়াখালীর কাদের মির্জার বিরুদ্ধে হত্যা মামলার উদ্যোগ নিয়েছে। তাই কোম্পানীগঞ্জের আর কোনো আওয়ামী লীগ কর্মী প্রকাশ্যে নেই; সবাই আত্মগোপনে চলে গেছে। অন্য দিকে কাদের মির্জা যিনি ক্ষমতাসীন দলের প্রথমসারির নেতা ও মন্ত্রী এবং তার অগ্রজ ওবায়দুল কাদের সম্পর্কে সরাসরি অভিযোগ না তুলে পরোক্ষভাবে তুলেছেন, এবার তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ তুললেন। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত আত্মঘাতী দলটির অবস্থা শেষ পর্যন্ত কোথায় ঠেকে।
বর্ণাঢ্য রাজনীতিবিদ মওদূদ আহমদ আর নেই। তার বন্ধু কম থাকলেও শত্রু ছিল না বললেই চলে। বাংলাদেশের প্রধান সব ক’টি দলেই তিনি উদ্যোক্তাদের একজন। একসময় আওয়ামী লীগের সাথে ছিলেন। তারপর জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। শেষ পর্যন্ত আমৃত্যু বিএনপির সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। বলা যায়, তার মৃত্যুতে জাতি যে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
ভারতীয় মন্ত্রীর ভাষ্যমতে, বিহারে বন্যার জন্য ফারাক্কা বাঁধই দায়ী। অন্য দিকে আমরা মনে করি শুকনো মৌসুমে আমরা পানি পাই না, যখন আমরা বড় ধরনের ক্ষতির মধ্যে পড়ি তখনো আমরা ফারাক্কা বাঁধকে দায়ী করি। এ ব্যাপারে যৌথ নদী কমিশনের ভাবা উচিত, কিভাবে সমস্যা সমাধান করা যাবে।
আগেই উল্লেখ করেছি, ভারত চায় কানেকটিভিটি; যা এই সরকার অনেক আগেই শুরু করে দিয়েছে। বাংলাদেশ-ভারত সংযোগ স্থাপনে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। আর কী কী দিলে ভারত সন্তুষ্ট হবে, সেটি কূটনীতিবিদদের ভেবে দেখা প্রয়োজনের বিষয়। আমাদের সংশ্লিষ্ট স্বার্থগুলো সব ক্ষেত্রে উপেক্ষিত হচ্ছে। অথচ ভারত সরকার ‘আরো চাই’ বলে যেন হা করে আছে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্নীতি অনেকটা ওপেনসিক্রেট বিষয়। ইতোমধ্যে সুর চৌধুরী ও শাহ আলমের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে। সীতাংশু সুর চৌধুরী বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ও শাহ আলম নির্বাহী পরিচালক। প্রথম অভিযোগ ওঠে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে। তারপর এনবিআর সংশ্লিষ্ট হয়েছে। এরপর হয়তো দুদকও জড়াবে। শেষ পর্যন্ত মামলা মোকদ্দমা হয়ে হয়তো একসময় ক্ষমাই পেয়ে যেতে পারেন তারা। কারণ দেশে অনেক আর্থিক অনিয়মের শেষটা আর শেষ হয় না। শেষ পর্যন্ত মানুষ বিষয়টা নিয়ে ভাবে না; যথারীতি সরকারি তদবিরে শেষ হয়ে যায়। দুর্নীতির এই দেশে পরিণতি তেমন উল্লেখযোগ্য পরিণতি পায় না।
করোনা আরো কত দিন চলবে, আল্লাহই ভালো জানেন। মৃত্যুর হার দিন দিন বেড়েই চলেছে। এর মধ্যে মহানগরীর কোনো হাসপাতালে আইসিইউ খালি পাওয়া যাচ্ছে না। এরই মধ্যে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল আইসিইউতে আগুনে তিনজন রোগী মারা গেলেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, করোনা মহামারী হিসেবে থেকেই যাবে এবং মৌসুমি রোগ হয়ে উঠতে পারে। এর মধ্যেই ঢাকা মেডিক্যালের আইসিইউ পুড়ে ছারখার হয়ে গেছে। টিকা দেয়ার লাইনে বয়স না কমালে, ভালো ব্যবস্থাপনার মধ্যেও সংক্রমণের হার কমানো কোনোভাবেই সম্ভব হবে না।
এখন দেশে প্রতিদিন মারা যাচ্ছে গড়ে ১৫ জন। একসময় বলা হতো, শীতে করোনা কমে যাবে। একটা পুরো শীত মৌসুম পার করে এখন আবার গরমের মধ্যে রোগটা বাড়ছে। গত মার্চে করোনার কথা আমরা প্রথম শুনি। এ মার্চে এসেও করোনা মহামারী পিছু ছাড়ছে না। এ ব্যাপারে আমাদের অদৃষ্টবাদী না হয়ে উপায় কী! কারণ বলা হলো, শীতে করোনা কমবে। তারপর শীত গিয়ে আবার গ্রীষ্মকাল শুরু হলো।
এখন আবার দিনান্তে বাড়ছে। অনেকেই আক্রান্ত হয়েও বেঁচে যাচ্ছে। অনেকেই অচিহ্নিত অবস্থায় মারা যাচ্ছে। পরে জানা যায়, তার করোনা ছিল। তাই বলছি অদৃষ্টবাদী হওয়ার কথা। বাস্তবে আমি নিজে অদৃষ্টবাদী নই। দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আল্লাহর হুকুম ছাড়া একটা পাতাও নড়ে না। আর জন্ম-মৃত্যুর বিষয়টি তো শতভাগ আল্লাহর হাতে। প্রত্যেক জীবনকে একবার মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। এ জন্যই আমাদের দেশে বলা হয়ে থাকে ‘জন্ম মৃত্যু বিয়ে- এ তিন বিধাতার হাতে’। আপনারা কি বাতাস দেখেন? না। অনুভব করেন। তাই আমি প্রায় বলি, কোনো চিন্তা করে লাভ নেই। জন্ম মৃত্যু বিয়ে- এই তিন বিধাতা দিয়ে। কিন্তু চিকিৎসা করা সুন্নত। চেষ্টা ফিকির করা সৃষ্টিকর্তার বিধান। কোনো কিছুই ঘটবে না আল্লাহর হুকুম ছাড়া। এ জন্যই আল্লাহ বলে দিয়েছেন, তোমরা দুনিয়াকে পরীক্ষাক্ষেত্র হিসেবে গ্রহণ করো। এই স্বল্পকালীন জীবনে কে কখন কিভাবে মৃত্যুবরণ করবে, তা মানুষের হাতে নেই। আল্লাহ বলে দিয়েছেন যাকে দীর্ঘ হায়াত দিই, তাকে একসময় শিশুতুল্য করে দিই।’ আমাদের ঘরে ঘরে এর প্রমাণ মিলবে।
তা ছাড়া বলে দেয়া আছে, ছেলেসন্তান কিংবা কন্যাসন্তান আমি আল্লাহই নির্ধারণ করে দিই। বলা আছে, আমি কাউকে দিই কন্যাসন্তান, কাউকে দিয়ে দিই পুত্রসন্তান, আবার কাউকে কাউকে বানিয়ে দিই বন্ধ্যা। আবার কাউকে কাউকে দিই পুত্র ও কন্যাসন্তান উভয়টা। এসব কথা আল্লাহর বাণী। বিজ্ঞান এ ব্যাপারে কিছুই করতে পারে না। তবে বিজ্ঞান চর্চাও সুন্নাহ। আল্লাহ চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন, বারবার দৃষ্টি নিবদ্ধ করো, তোমার চোখ ক্লান্ত হয়ে ফিরে আসবে। আল্লাহর গুণাবলি লেখো; সব পানি শেষ হয়ে যাবে যদি কালি বানিয়ে লেখো।
তাই প্রসঙ্গটার ইতি টানব এই বলেই যে, ধনী হওয়ার চেষ্টা করার মধ্য কোনো অকল্যাণ নেই। বরং কল্যাণই বেশি। কারণ তাতে জাকাতের পরিমাণ বাড়বে। দারিদ্র্য দূর হবে। তবে শর্ত, সৎপথে অর্জন করতে হবে। রিজিক আল্লাহ দেন। একবার ভেবে দেখুন, পৃথিবীর প্রত্যেক বস্তু প্রয়োজন। হিংস্র প্রাণীর যেমন প্রয়োজন আছে, তেমনি নিরীহ প্রাণীরও প্রয়োজন। আল্লাহ অকারণে কোনো কিছুই করেন না।
যেমন এক প্রাণী অন্য প্রাণী খায়। নগদ উদাহরণ দেয়া সম্ভব। লেখা দীর্ঘ হয়ে যাবে। তাই উপসংহার টানাই সঙ্গত। এ দিকে করোনায় ক্ষতির একটা হিসাব দিয়েছে সরকারের অর্থ বিভাগ। টাকার হিসাবে সেটি ৮৪ হাজার কোটি টাকা। হিসাবটা দেখে কি গা চমকে দিয়ে ওঠার মতো বিষয় নয়!
মিয়ানমার পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবার দিকে যাচ্ছে। খাদ্য ও জ্বালানি সঙ্কট নিয়ে জাতিসঙ্ঘ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। নিজেদের বিনিয়োগের নিরাপত্তা নিয়ে চীন উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে। বিক্ষোভ দমাতে গিয়ে গুলি-হত্যা মিয়ানমারে নিত্যদিনের ঘটনা। এ অবস্থা কত দিন চলবে, বলা মুশকিলা; যদিও বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। কার্যত ‘অহিংসা পরমধর্ম’ বলে বৌদ্ধ রাষ্ট্র মিয়ানমার পৃথিবীর সবচেয়ে হিংসার রাজনীতি করছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের দৃষ্টিতে এই মুহূর্তে রোহিঙ্গারা সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে রয়েছে।
পরিস্থিতির কারণে একুশের ঐতিহ্যবাহী বই মেলা ১৮ মার্চ থেকে শুরু হলো; প্রাণের মেলাটি এমন একটি ঐতিহ্য ধারণ করত, যেখানে লেখক ও পাঠকের একধরনের সম্মিলন ঘটত, প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো কে কতটা বই নিয়ে হাজির হবে, লেখকরা কোন বইটি মেলা উপলক্ষে মোড়ক উন্মোচন করবেন, তার রীতিমতো হিড়িক পড়ে যেত। লেখক, কবি, উপন্যাসিক, প্রবন্ধকার, নিবন্ধকাররা বইমেলা উপলক্ষে প্রকাশ করার জন্য রাতদিন কাজ করতেন, সেই প্রাণছোঁয়া পরিস্থিতি এবার আশা করাটাও যেন সম্ভব হচ্ছে না।
শেষ পর্যন্ত হাজী সেলিমপুত্র এরফান সেলিমেরও জামিন দিয়ে দিলো হাইকোর্ট। তার বিরুদ্ধে একজন নৌসেনা কর্মকর্তাকে মারধর করার অভিযোগ ছিল। এভাবেই প্রভাবশালীরা বিচার-আচারকেও প্রভাবিত করে শেষ পর্যন্ত পার পেয়ে যায়।
সফরে আসা মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহর সাথে বাংলাদেশের পিটিএ চুক্তি স্বাক্ষর করতে উভয় দেশের মধ্যে সম্মত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এই চুক্তির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। মালদ্বীপ একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। ওআইসির সদস্যও। বাংলাদেশের উচিত হবে উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্কের পরিধি যেন আরো বাড়ানো হয়।
এ দিকে বাংলাদেশের শেয়ার মার্কেটের সূচকের বড় ধরনের দরপতনের প্রেক্ষিতে লেনদেন বন্ধের গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। শেয়ার মার্কেট কেলেঙ্কারির যেন শেষ নেই। এই সরকার আগেই একবার ক্ষমতায় এসে শেয়ার মার্কেটে ধস নামিয়েছিল। তখন ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্ব তদন্ত কমিটিও হয়েছিল। সেই তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আজো প্রকাশ করা হলো না। ইতোমধ্যে ইব্রাহিম খালেদের মৃত্যু ঘটেছে। আমরা জানি না বাংলাদেশের শেয়ারবাজার এই সরকারের আমলে আর কোনো দিন মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে কি না! এই সরকার উন্নয়ন ও অর্থনীতির ব্যাপক উন্নয়নের জন্য ডুগডুগি বাজিয়েই চলছে, অথচ দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির সয়লাবে দেশটা যেন ভাসছে।