আমি বয়াতি শরিয়ত সরকারকে ডিজিটাল. নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতারের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। যাঁরা একজন বয়াতিকে ধর্মের নামে জেলে ঢুকালেন এই ফ্যসিস্ট রাষ্ট্র একই আইন আপনাদের বিরুদ্ধেও মওকা মতো ব্যবহার করবে।
গত শনিবার ১১ জানুয়ারি ছিল কুখ্যাত সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ক্ষমতারোহন এবং বাকশালের পর ২০০৭ সালে বাংলাদেশকে নিউলিবারেলিজম কালপর্বে নতুন করে আরও নিখুঁত ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থায় পর্যবসিত করবার স্মৃতিধন্য দিন।
কাকতালীয় কিনা জানি না, কিন্তু প্রতীকী অবশ্যই। এই তারিখে বয়াতি শরিয়ত সরকারকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করা হয়েছে। এক সময় ফ্যসিবাদ বাঙালি জাতিবাদী ও সেকুলারদের ঘাড়ে চড়ে কায়েম হয়েছে। এখন নতুন পর্ব শুরু হয়েছে। দীর্ঘস্থায়িত্বের জন্য ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থা শুধু সংস্কৃতি বা মতাদর্শের ওপর নির্ভর করে না। হিটলার, মুসোলিনি, নরেন্দ্র মোদীর মতো সংবিধান,আইন, পুলিশ, বিচার ব্যবস্থা ইত্যাদিকে নিজের হাতিয়ারে পরিণত করে। এই ব্যবস্থা এখন বাংলাদেশে ধর্মবাদীদের কাঁধে ভূত হয়ে আছর করতে চাইছে। সেকুলার গণমাধ্যমগুলোই দাবি করছে, শরিয়ত সরকার মহানবীকে নিয়ে ‘কুরুচিপূর্ণ’ বক্তব্য দিয়েছেন (সময় টিভি দেখুন)। যেন, ডিজিটাইল আইনে শাস্তিই তার একমাত্র প্রাপ্য।
শরিয়ত সরকার সব ঠিক বলেছেন কি? না, আমি মনে করি না। তাঁর বলার ধরণ ও প্রকাশভঙ্গীও অনেকের অপছন্দ হতে পারে। কিন্তু আমরা মানুষ,আল্লাহ নই। অথচ দয়ার দয়া আল্লাহতালা ত্রুটিপূর্ণ মানুষকেই তাঁর ‘খলিফা’ হিশাবে পাঠিয়েছেন যেন ভুলচুকের মধ্যদিয়ে এবং শয়তানের প্ররোচনা ও ছলনা উপেক্ষা করে মানুষ আইয়ুব নবীর মতো শুধু তাঁর কাছেই নিজেকে সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ করে জীবন কাটিয়ে দিতে পারে।
বাংলার বয়াতি সুফি ও ভক্তিবাদী ধারার প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তাঁরা মনে প্রাণে আল্লার দাস ও রাসুলের প্রেমিক তারা দোজখের ভয়ে আল্লাকে ডাকে না, কিম্বা বেহেশতের সত্তর হাজার হুর পরীর লোভেও আল্লার এবাদত-বন্দেগি করে না, রাসুল তাদের হৃদয়ে নিত্য হাজির। শরিয়ত সরকারের গান যতোটুকু শুনেছি তাতে তাঁকে ব্যতিক্রম মনে হয় নি। একমাত্র আশেকানই জানে মাশুকের কাছে ভুলের শাস্তি হচ্ছে স্নেহের তিরস্কার। আল্লাহ বারবারই বলেন,আমি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালবাসি, আমি দয়ার দয়া। বাংলার ভক্তিবাদী ধারায় তিনি তাই ‘দয়াল’, পরম দয়ালু।
তাই ডিজিটাল আইন দিয়ে ধর্মানুভূতিতে আঘাতের উসিলায় রসুলের আশেকান একজন বয়াতির বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া, দশদিনের রিমান্ড চাওয়া এবং তিন দিনের রিমান্ড চেয়ে তার ওপর অত্যাচার করার অর্থ কি? এর অর্থ ফ্যসিস্ট রাষ্ট্র ব্যবস্থা এখন ধর্মের ওপর আছর করে দীর্ঘস্থায়ী হতে চায়। নিজেকে ন্যায্য প্রমাণ করবার জন্য এখন বয়াতি বাউল ফকির দরবেশদের ওপর অত্যাচার শুরু হয়েছে। অন্যদিকে পাশ্চাত্য এবং এখন বিশেষভাবে হিন্দুত্ববাদীরা ইসলামকে বর্বরদের ধর্ম হিশাবে যে প্রচার চালায়, শরিয়ত সরকারের গ্রেফতার সেই প্রচারকেই প্রমাণ করতে সচেষ্ট।
আলেম উলামা বয়াতি সুফি ভক্তিবাদী আস্তিক নাস্তিক সবাইকেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবার আহ্বান জানাই।
শরিয়ত সরকারকে অবলম্বে মুক্তি দেওয়া হোক। (চলবে)