ইসলাম বিদ্বেষ ও ইসলামিস্ট সন্ত্রাসবাদ: ফ্রান্স ও বাংলাদেশে পেরিয়ে,সর্বত্র

 

ইসলাম বিদ্বেষ ও ইসলামিস্ট সন্ত্রাসবাদ: ফ্রান্স ও বাংলাদেশে পেরিয়ে,সর্বত্র
তাজ হাশমী
অনেকেই হয়তো জানেন না যে, ইসলামিস্ট সন্ত্রাসবাদ (যেটা “ইসলামী সন্ত্রাসবাদ” থেকে একেবারে ভিন্ন, কেননা “ইসলামী সন্ত্রাসবাদ” বলে কিছু নেই), যা “ইসলামিজম” বা “রাজনৈতিক ইসলাম” প্রসূত, মাত্র ত্রিশ বছর পুরানো এক নতুন সন্ত্রাসবাদ, যেটা ১৯৯০-এর দশকে শুরু হয়ে ২০১৬র দিকে প্রায় মৃতপ্রায় হয়ে এখন প্রায় সম্পূর্ণ বিলুপ্ত ’। তবে দেশে ও বিদেশে ইসলামবিদ্বেষীদের কল্পনায়, তথা ইসলাম ও মুসলমানদের পর্যুদস্ত এবং ধ্বংস করতে যারা বদ্ধপরিকর, তাদের ধ্যানধারণা ও কার্যকলাপে ইসলামিস্ট সন্ত্রাসবাদ এক জ্বলন্ত বিভীষিকার মতো বিরাজমান ! তারা যে শুধু সারাক্ষন ইসলামী জুজুর অস্তিত্বের কথা ঘোষণা করছে তাই নয়, তারা ইসলামিস্ট সন্ত্রাসবাদকে “ইসলামী সন্ত্রাসবাদ” বলে অবহিত করে, কেননা তাদের অপপ্রচারণায় একটা জিনিসই প্রকট হয়ে সামনে আসে, আর তা হলো ইসলাম মানেই সন্ত্রাস, আর মুসলমানদের অধিকাংশই সন্ত্রাসী ! ফ্রান্সে কদিন আগে এক ধর্মান্ধ, চরমপন্থী মুসলমান রাসূলুল্লাহর বিদ্রুপাত্মক কার্টুনিস্ট কে শিরোচ্ছেদ করে হত্যা করার পর, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোন “ইসলাম ধর্মই সমস্যা” বলে এক প্রচন্ড ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী উক্তি করেন ও ইতোমধ্যে ইস্লামিস্ট সন্ত্রাসী হামলায় ফ্রান্স বেশ কিছু ফরাসি নাগরিক প্রাণ হারান ও ম্যাক্রোন আরো বলেন যে অদ্যাবধি, সেক্যুলারিজম বা ধর্মনিরপেক্ষতা কোনো মানুষ হত্যা করেনি।

প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোনের এই কথা পাগলের প্রলাপ বৈকি! সেয়ানা পাগল! তার নিজ দেশ ফ্রান্সের কথাই ধরা যাক! ১৭৮৯ এর বিপ্লবের পর হাজার হাজার ফরাসি নাগরিককে বিপ্লবীরা হত্যা করে ও ধর্মনিরপেক্ষ এই বিপ্লবকালীন জবরমহ Reign of Terror   বা সন্ত্রাসের রাজত্ব পৃথিবীর ইতিহাসে বিনা বিচারে মানুষ হত্যার এক কলঙ্কজনক অধ্যায় ! “বিপ্লবের সন্তান” নেপোলিয়ানও ধর্মনিরোপিক্ষ ছিলেন’। আমরা জানি তিনি কয়েক লক্ষ্য মানুষ হত্যা করেছিলেন ও ধর্মনিরপেক্ষ ফ্রান্স তার উপনিবেশ আলজিরিয়াতে ১৫ লক্ষের মতো বারবার মুসলমান হত্যা করে ও ধর্মনিরপেক্ষ তথা ধর্মবিরোধী কম্যুনিস্টরা রাশিয়া, চীন, ও অন্যত্র লক্ষ্য লক্ষ মানুষ হত্যা করেছে ! এব্যাপারে ধর্মনিরপেক্ষ প্রথম ও দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের ও ভিয়েতনাম ও ইরাক যুদ্ধের কথা নাই বা বললাম !

মোদ্দা কথা, ইসলামিস্ট সন্ত্রাসবাদের বয়স মাত্র ত্রিশ বছরের মতো হলেও ইসলাম বিদ্বেষের ইতিহাস ১৪০০ বছর পুরানো, সেই ইসলামের উদ্ভবের শুরু থেকেই ! তবে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ শেষ হবার পর ইউরোপ ও আমেরিকায়, আপাতদৃষ্টিতে হলেও, ইসলামবিদ্বেষ-এর মাত্রা কিছুটা হলেও কমে যায় ও মধ্যপ্রাচ্যে পাশ্চাত্য শক্তির প্রত্যক্ষ্য সহযোগিতায় মুসলিম স্বার্থবিরোধী জায়নিস্ট রাষ্ট্র ইসরাইলের সৃষ্টি (১৯৪৮), ও বিভিন্ন আরব রাষ্ট্রে, ইরানে, ও তুরস্কে তাদের ইসলাম বিরোধী সরকারের সহায়তা করা অবশ্য ইসলামবিদ্বেষী বলে অভিহিত করা যায় ! তবে,  Cold War  বা স্নায়ু যুদ্ধের সময় নিজেদের স্বার্থেই, রাশিয়ার বিরুদ্ধে তাদের জোট শক্তিশালী করার জন্য পশ্চিমা দেশ গুলো ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী কাজের মাত্রা কিছুটা হলেও কমিয়ে দেয় ও তাই ১৯৪৫ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত তারা মুসলমানদের সাথে মোটামোটি বন্ধুসুলভ ব্যবহার করে ! আফগান “জিহাদের” সময় (১৯৭৯-১৯৮৯) আফগানিস্তানে ও পাকিস্তানে আমেরিকা ও তার ইউরোপীয়-এশীয় সহযোগীদের পয়সা আর অস্ত্রের উপর ভর করে আন্তর্জাতিক মুজাহিদীনদের এক বিরাট বাহিনী গড়ে ওঠে ও মুজাহিদীনরা পশ্চিমাদের এতটাই প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠে যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট রেগান কয়েকজন মুজাহেদীন নেতৃবৃন্দকে হোয়াইট হাউসে, তার ওভাল অফিস-এ নিমন্ত্রণ করেন ও শুধু তাই নয়, রেগান মুজাহিদীনদের আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধের বীরদের ও আমেরিকার জাতির পিতাদের (Founding Fathers)  সাথে তুলনীয় বলে প্রশংসা করেন ! উল্লেখ্য, ১৯৭৯-র ডিসেম্বরে সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তানের কমিউনিস্ট সরকার টিকিয়ে রাখার জন্য সৈন্য পাঠানোর পর প্রেসিডেন্ট কার্টার-এর নিরাপত্তা উপদেষ্টা বীগনেও ব্রেজিজিনস্কি পেশোয়ারে পাগড়ি পরে, হাতে তরবারি নিয়ে, সোভিয়েত ইউনিয়ন-এর বিরুদ্ধে “জিহাদ” ঘোষণা করেন ! ভালো কথা, মুসলমানরা নয়, একজন মার্কিন খ্রীষ্টান সর্ব প্রথম রাশিয়ার বিরুদ্ধে “জিহাদ” শব্দটা ব্যবহার করেন ! এই মুজাহেদীনরাই পরে আল -কায়েদা ও তালিবান সৃষ্টি করে ও প্রত্যক্ষ ভাবে না হলেও পরোক্ষ ভাবে আমেরিকা ও তার সহযোগীরাই ইসলামিস্টদের উস্কানি দিয়ে, অস্ত্র ও টাকা পয়সা দিয়ে তথাকথিত জিহাদের নামে সারা পৃথিবীতে ইসলামিস্ট সন্ত্রাসের জন্ম দেয় ! আর সাথে সাথে পশ্চিমাদের ইসলাম বিদ্বেষের রথযাত্রা গতি সঞ্চার করে !

স্নায়ু যুদ্ধের অবসানের পর, ১৯৯০ থেকে পশ্চিমা শক্তিগুলো তাদের যুদ্ধাস্ত্র বিক্রয় করে স্নায়ু যুদ্ধের সময় যে মুনাফা হয়েছিল সেটা ধরে রাখার জন্য মুসলিম বিশ্বের সাথে এক নতুন স্নায়ু যুদ্ধের সূত্রপাত করে ও ১৯৯০-এর শুরুতে, আফগানিস্তানে সোভিয়েত ইউনিয়ন-এর পরাজয়ের পর পশ্চিমাদের উস্কানিতে বিভিন্ন দেশে ইসলামিস্ট সন্ত্রাসী আক্রমণের সূচনা হয় ও যে হাজার হাজার আফগান, পাকিস্তানী, বাংলাদেশী, আরব, ইন্দোনেশিয়ান, ফিলিপিনো, ভারতীয়, উজবেক, তাজিক, ও অন্যান্য ইসলামিস্ট মুজাহেদীন মার্কিন ও পশ্চিমা সাহায্য-পুস্ট হয়ে ১৯৮০-এর দশকে আফগানিস্তানে রাশিয়ার বিরুদ্ধে “জিহাদ” করে, তাদের একাংশ অর্থাভাবে/জীবিকার তাগিদে বিভিন্ন ইসলামিস্ট দলে বা অপরাধীচক্রে জড়িয়ে পরে। এদের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ আফগানিস্তান ছাড়িয়ে পাকিস্তান, ভারত, মধ্য এশিয়া, মধ্য প্রাচ্য, বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিন্স, ইউরোপ ও আমেরিকায় ছড়িয়ে পরে । আমরা জানি কিভাবে ও কি মাত্রায় ইসলামিস্ট সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া হয়ে এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ, আর সবশেষে আমেরিকা ও কানাডায় একটার পর একটা সন্ত্রাসী আক্রমণ চালিয়ে যায় ! তবে ৯/১১ সহ আরো অনেক সন্ত্রাসী আক্রমণ কারা করেছিল সে ব্যাপারে বিস্তর বিতর্ক আছে। ১৯৯০ থেকে অদ্যাবধি পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ইসলামিস্টদের সংঘবদ্ধ বা ছোট ছোট আক্রমণ আর ইসলাম বিদ্বেষীদের অস্ত্র, লেখনী, ছবি, কার্টুন, চলচ্চিত্র (ফিতনা) ও রাষ্ট্রীয় নীতি। আইন দ্বারা ইসলাম ও মুসলমানদের আক্রমণ কিছুটা প্রশমিত হলেও, এখনো অব্যাহত আছে ও কোথায় এর শেষ কেউ জানে না!
তবে একথা না বললেই নয় যে ইসলামিস্ট সন্ত্রাসবাদের মতো পাশ্চাত্যের নব-ইসলাম বিদ্বেষও ১৯৯০-এর দিকে ঈড়ষফ ডধৎ বা স্নায়ু যুদ্ধের পরে জন্ম নেয়া এক নতুন উপসর্গ !

আমরা মানব সভ্যতার ইতিহাসে দেখতে পাই এক গোত্রের, এক জাতির, এক ধর্মের বা এক দেশের লোকদের অন্য গোত্রীয়, অন্য জাতির, অন্য ধর্মের বা অন্য দেশের লোকদের নিজেদের চাইতে অনুন্নত, বর্বর,খারাপ,অস্পৃশ্য, এবং এমনকি সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন করে ফেলার মতো অমানুষ বলে গণ্য করতো ও পন্ডিতেরা জানেন যে “আমরা” আর “তারা” মানব সভ্যতার চেয়েও প্রাচীন, মানুষের এক আদিম প্রবৃত্তি ! তবে মোদ্দা কথা হলো, এই প্রবৃত্তি মূলত অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা প্রসূত ও সর্ব কালের প্রায় সব মানুষ প্রতিযোগীদের শত্রু মনে করে আসছে ! আর সুবিধাবাদী ধূর্ত মানুষ হাজার হাজার বছর ধরে, মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে যারা “আমরা” নই “তারা”, তাদের ঘৃণার মাধ্যমে শত্রু বলে পরিগণিত করে আসছে ও পাশ্চাত্যে, ইসরাইলে, ভারতে আর অন্যত্র ইসলাম বিদ্বেষও ঠিক সুবিধাবাদী ধূর্ত মানুষের ক্ষমতা ও সুযোগ সুবিধা অর্জনের একটা নিমিত্ত মাত্র! আমি মনে করি (অন্যত্র লিখেছি ) আলেক্সান্ডার থেকে চেঙ্গিস খান, ক্রুসেড, নেপোলিয়নের যুদ্ধ এবং পৃথিবীতে আর যত যুদ্ধ হয়েছে আর হবে সবই “Trade  War” বা “বাণিজ্য যুদ্ধ”! এক কথায়, মানুষ বাণিজ্যের কাঁচামাল, বাজার, শ্রমিক, আর trade route  বা “বাণিজ্য-পথ” নিজেদের আয়ত্তে রাখার জন্য যুদ্ধ করে ! নেপোলিয়নের যুদ্ধ গুলো আর প্রথম ও দ্বিতীয় মহা যুদ্ধ সহ বর্তমানে যে চীন-আমেরিকা প্রতিযোগিতা সবই “বাণিজ্য যুদ্ধের” কারণে সংঘটিত হয়েছে আর হচ্ছে! পশ্চিম ইউরোপীয় খৃষ্টানরা আরব মুসলমানদের কাছ থেকে যীশু খ্রীষ্টের জন্মস্থান জেরুসালেম পুনরুদ্ধারের জন্য প্রায় দুশো বছর ব্যাপী মুসলমানদের বিরুদ্ধে ক্রুসেড যুদ্ধ (১০৯৬-১২৭১) করেন। তারা পোপদের কাছ থেকে ফতোয়া নিয়ে সাধারণ খৃষ্টানদের ধর্মযুদ্ধের নামে সিরিয়া-ফিলিস্তিন-এ যুদ্ধ করতে নিয়ে যায়। তারা মধ্যপ্রাচ্যে মুসলমান ও ইহুদিদের অর্থনৈতিক কারণেই হত্যা করে, তবে খ্রীষ্টান আমজনতা মনে করলো তারা তাদের ধর্মের জন্য মানুষ মারছে ! প্রকৃত পক্ষে ক্রুসেডের মুখ্য কারণ ছিল আরবদের কাছ থেকে এশিয়া ও উত্তর আফ্রিকার পণ্য, বাজার, ও “বাণিজ্য পথ” পুনর্দখল করা। যুগযুগ ধরে সমাজপতিরা এই ভাবেই সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়ে তাদের “বাণিজ্য যুদ্ধ” করে আসছে !

আজকের ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষের মূলেও অর্থনৈতিক প্রাধান্য বিস্তার করা,প্রতিযোগীদের পর্যুদস্ত করা বা অমুসলিমদের “বাণিজ্য যুদ্ধ” ছাড়া আর কিছু নয় ! তবে উভয় দিকেই সাধারণ মানুষ বোকার মতো নিজ নিজ ধর্ম রক্ষার জন্য পরস্পরকে মারতে এবং নিজেরা মরতে দ্বিধাগ্রস্থ হচ্ছে না ! এটাকেই বলে “elite cultural hegemony” বা মাতব্বরদের সাংস্কৃতিক আধিপত্য! সমাজের মাতব্বররা সাধারণ মানুষের আবেগ, কুসংস্কার, আর অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে, তাদের মাঝে এক ধরনের “false consciousness” বা অলীক/মিথ্যা সচেতনতা সৃষ্টি করে তাদের “বাণিজ্য যুদ্ধ” চালিয়ে যায়!

ফরাসী সরকার খুব পরিকল্পিত ভাবে মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে রসুলুললাহ বিরোধী কার্টুনের সমর্থন করেছে। কারণ? তারা জানে এটা বোকা ও পাগল মুসলমানদের কিছু ফরাসী নাগরিক হত্যায় উস্কে দেবে। এক উন্মাদ মুসলমান ইতিমধ্যেই কার্টুনিস্ট কে হত্যা করেছে, তার শিরোচছেদ করে। এতে ফরাসী সরকারের কি লাভ? লাভ প্রচুর! জনগনের দৃষ্টি ফ্রান্সের ক্রমবর্ধমান করোনা পরিস্থিতির অবনতি ও অর্থনৈতিক দুরাবস্থা থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ইসলামিস্ট ( ইসলামিক নয়, কেননা কোরান একজন নিরপরাধ ব্যক্তিকে হত্যা করা সমগ্র মানব জাতিকে হত্যার সমতুল্য মনে করে।) ফরাসী, বৃটিশ, আমেরিকান সহ পশ্চিমারা মূলত তথাকথিত ইসলামিস্ট সন্ত্রাসবাদের জনমদাতা। আমরা জানি ১৯৯০ এর আগে পৃথিবীর কোথাও “ইসলামিস্ট সন্ত্রাস” বলে কিছু ছিল না। পশ্চিমারা আবার যুদ্ধ বানাতে চায়। অস্ত্র বিক্রি করে বহু বিলিয়ন ডলার রোজগার করতে চায়। ইসরাইল সহ পশ্চিমাদের দালাল রাষ্ট্র গুলো, ভারত, সৌদি আরব, কুয়েত, আমিরাত ইত্যাদি রক্ষা করতে চায়। এখন ইরান,

তুরস্ক, পাকিস্তান ও মালয়েশিয়া ওদের গোদের উপর বিষফোড়া। ভালকথা, সিনজিয়াং চীনের দখল করা উইঘর মুসলমানদের দেশ, ভারত দখলকৃত কাশ্মীর ও জায়নিস্ট দখলকৃত ফিলিস্তিনের মত।
কেউ প্রশ্ন করতে পারে: কারা বড় সন্ত্রাসী, মুসলমান না অমুসলমান? উত্তরে বলা যেতে পারে:

মুসলমানদের এক অতি,অতি,অতি ক্ষুদ্রাংশ– খুব বেশী হলে একশ পাঁচ কোটির মধ্যে এক লক্ষ — ১৯৯০ সাল থেকে ইসলামের নামে সন্ত্রাসী কাজ করে খুব বেশী হলে দশ হাজার নিরপরাধ মানুষ হত্যা করেছে। তার মধ্যে আবার বেশীর ভাগ মুসলমান। একমাত্র ৯/১১ হামলায় নিউ ইয়র্কে তারা একসাথে প্রায় তিন হাজার মানুষ হত্যা করে। আর বিভিন্ন অজুহাতে আমেরিকা, বৃটেন, ফ্রান্স, ইসরাইল, ভারত, জার্মানি ও তাদের মিত্রেরা আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া, কাশ্মীর, গুজরাট, ফিলিস্তিন,ইয়েমন, পাকিস্তান ও অন্যত্র গত ত্রিশ বছরে কমপক্ষে ২৫ লক্ষ মুসলমান বেসামরিক ও নিরস্ত্র মানুষ হত্যা করেছে। তাহলে মূলত কারা বড় সন্ত্রাসী?! আমেরিকা ১৯৪৯ সালে সিরিয়ার গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট শুকরী আল কুয়াতলিকে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অপসারণ করে ; পশ্চিমারা সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে ইসরাইল সৃষ্টি করে; ১৯৫৩ সালে  Ayatollah কাশানীকে ঘুষ দিয়ে ইসলামিস্ট দের সাহায্য নিয়ে গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত ইরানী প্রধানমন্ত্রী ডক্টর মুসাদদেকের সরকার উৎখাত করে; সাদ্দাম হুসেন, হুসনী মুবারক, সৌদি ও অন্যান্য আরব রাজতন্ত্র সমর্থন করে। আর এসব ইসলামিস্ট দের উত্থানের প্রধান কারন। এরপরও কি ইসলাম আর মুসলমানরা সন্ত্রাসবাদের জন্য দায়ী?!

অনেকে মনে করেন যে কারও ধর্মীয় বা জাতীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া মানেই তার বিরুদ্ধে বিদ্বেষ সৃষ্টি করা নয়! আসলেই কি ব্যাপারটা এত সরল?! ইসলাম ও মুসলমানদের সম্পর্কে খারাপ কথা বলা যদি কেবলমাত্র এক জনের মত প্রকাশের স্বাধীনতা হতো, একজন মুসলমান হিসেবে তাতে আমার কোন আপত্তি থাকার কথা নয়। যেমন কারও Holocaust বা হিটলারের লক্ষ লক্ষ ইহুদী নিধনের অস্বীকার করার ব্যাপারটা একজন ইহুদী সেই ব্যক্তির মত প্রকাশের স্বাধীনতা বলে গণ্য করতে পারেন! কিন্তু ব্যাপারটা কি আসলেই তাই? Holocaust আমাদের শিক্ষা দিয়েছে যে প্রথমে সমগ্র ইউরোপে ইহুদীদের বিরুদ্ধ কৌতুক ও আজেবাজে গল্প সৃষ্টি করা হয়েছিল। এবং পরে ছয় মিলিয়ন ইহুদীদের নিধন বা Holocaust ! তাই ইউরোপের ১৭টা দেশে Holocaust অস্বীকার করা একটা গর্হিত অপরাধ বা hate-crime  ! ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইসলামকে “সমস্যা” বলে কিন্তু অলরেডি একটা hate- crime সব বা ঘৃণাঅপরাধ করে ফেলেছেন।

আজকে যার সূত্রপাত ইসলাম ও মুসলমানকে ঘৃণা দিয়ে, কাল যে সেটা মুসলিম নিধনের রূপ নেবে না তার নিশ্চয়তা কি দিতে পারবেন তসনিম খলিল? তিনি পারবেন না। তাই আমি গণতন্ত্র ও বাক স্বাধীনতার ১০০% সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও সকল ইসলাম বিদ্বেষী কাজকর্ম Holocaust অস্বীকার করার মত অপরাধ বলে মনে করি। সকল ধর্মাবলম্বীর, এমনকি নাস্তিকদের বিশ্বাস বা অবিশ্বাস নিয়ে কটু কথা বলা ঘৃণাঅপরাধ বলে গণ্য করা উচিৎ। বাংলাদেশে একদিকে রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, কবি, সাহিত্যিক নানা ভাবে ইসলাম ও মুসলমানদের কটূক্তি করে নিজেদের “প্রগতিশীল” বলে পরিচয় দিচ্ছেন ’। দাউদ হায়দার, তসলিমা নাসরিন, ও হুমায়ুন আজাদ এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ও আবার প্রকাশ্যে নাস্তিকদের অকথ্য ভাষায় গাল দেয়াও এখানে একটা অতি সাধারন ব্যাপার! অনেক হুজুররা নাস্তিক, আহমদিয়া, আর হিন্দুদের গাল দিতে না পারলে তো তাদের ওয়াজ বা বক্তৃতা শেষ করতে পারেন না ! বাংলাদেশের বহু মুসলমান হিন্দুদের চরম অবজ্ঞার সাথে “মালাউন” বা অভিশপ্ত, কাফির (অবিশ্বাসী) ও মুশরিক (একাধিক ঈশ্বর-এ বিশ্বাসী) বলে অহরহ গালমন্দ করে থাকে ও ভাবটা এমন যেন এতে কি বা আসে যায়! তাদের এই নাস্তিক ও অমুসলিম বিরোধী মনোভাব একটা অজানা ভয় প্রসূত। আর ইতোমধ্যেই বেশ কিছু নাস্তিককে উৎকট ও অজ্ঞ মুসলমানরা হত্যা করেছে। এক কথায় কাউকে ঘৃণা বা অবজ্ঞা করা থেকেই কিছু ঘৃণা বা অবজ্ঞার পাত্রপাত্রীকে পরে হত্যা করা হয়। তাই সকল প্রকার বিশ্বাসী বা অবিশ্বাসীর বিরুদ্ধে কূৎসা, নিন্দা ও অবজ্ঞা অবশ্যই পরিহার করতে হবে। এককথায় বলা যায়, ইসলামবিদ্বেষ, অমুসলিম বিদ্বেষ, ও ইসলামের নামে, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের নামে যুদ্ধ ও সন্ত্রাসী কার্য কলাপ পৃথিবীর কোথাও মানব সভ্যতার সহযোগী নয়, বরং মানব সভ্যতা বিনাশের সহায়ক শক্তি !