ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডার ও গ্রাহক অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের মানববন্ধনে ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলা

 

  • নয়া দিগন্ত অনলাইন
  • ০৪ ডিসেম্বর ২০২২

ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডার ও গ্রাহক অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের মানববন্ধনে ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলা। – ছবি : সংগৃহীত

লুটেরাদের হাত থেকে ইসলামী ব্যাংককে রক্ষা করা এবং আত্মসাৎ ও পাচার করা টাকা ফেরত পাওয়ার দাবিতে রাজধানী ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

রোববার (৪ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টায় ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডার এবং গ্রাহক অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত এ মানববন্ধনে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের কয়েক হাজার শেয়ারহোল্ডার ও গ্রাহক অংশগ্রহণ করেন।

ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট এস এম কামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে এই মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. আবদুল লতিফ মাসুম, সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট ড. গোলাম রহমান ভূঁইয়া, অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজ) সাধারণ সম্পাদক মো: শহিদুল ইসলাম, ডা: ফখরুদ্দিন মানিক, ড. আবদুল মান্নান, শ্রমিক নেতা আবদুস সালাম, আতাউর রহমান সরকার, ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন প্রমুখ।

মানববন্ধনে প্রধান অতিথি ছিলেন সমাজ চিন্তক ও কলামিস্ট ফরহাদ মজহার। আরো অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. নকিব নসরুল্লাহ, দৈনিক নয়া দিগন্তের সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজ) সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজ) সভাপতি কাদের গণি চৌধুরী, কবি হাসান হাফিজ, ড. মোয়াজ্জম হোসেন, ব্যবসায়ী আবদুল মান্নান প্রমুখ।

প্রশাসনের বাধা ও ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের হামলার কারণে সকল অতিথি মানববন্ধনে এসে উপস্থিত হতে পারেননি। মানববন্ধন চলাকালে ছাত্রলীগ ব্যানার এবং ফেস্টুন ছিনিয়ে নেয়। পরে সামনে থেকে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে। অন্যদিকে পেছন থেকে যৌথভাবে হামলা চালায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা। তাদের হামলায় বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়। রক্তাক্ত অবস্থায় তাদের হাসপাতালে নেয়া হয়। এ সময় সন্ত্রাসীরা সাংবাদিকদের ওপরও হামলা চালায়। তারা ভিডিও ক্যামেরা, একাধিক মোবাইল সেটও ছিনিয়ে নেয়।

মানববন্ধনে বক্তারা হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, ইসলামী ব্যাংকে রাখা আমানতের সংরক্ষণ ও জনগণের সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে আয়োজিত শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন কর্মসূচিতে কোন যুক্তিতে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও পুলিশ প্রশাসন যৌথভাবে হামলা করেছে? কী তাদের উদ্দেশ্য? এতে কি তারা এটা প্রমাণ করছে না যে ভয়াবহ এ লুটপাটের সাথে সত্যিকার অর্থে তারাও জড়িত? আসলে এটা দেশবাসীর কাছে পরিস্কার, সরকার ও প্রশাসনের কতিপয় লোক এর সাথে অবশ্যই জড়িত। না হলে তারা মানবন্ধনের মতো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতেও কেন হামলা করে সাধারণ মানুষকে রক্তাক্ত করেছে? মানুষের হাত থেকে কেন মোবাইল ও ভিডিও ক্যামেরা কেড়ে নিয়েছে?

মানববন্ধনে বক্তারা আরো বলেন, এখন অরাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক কর্মসূচিও সরকার মেনে নিতে পারছে না। দেশে মানুষের কথা বলার অধিকার কতটা সীমিত হলে এ অবস্থা তৈরি হতে পারে, তা সহজেই বুঝা যায়।

বক্তারা বলেন, বাংলাদেশসহ মুসলিম বিশ্বে ইসলামী ব্যাংকিং জগতে অনন্য সাফল্যের অধিকারী ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড আজ ভয়াবহ ষড়যন্ত্রের শিকার। বাংলাদেশের আপামর জনতার আমানত ও উদ্যোক্তাদের কঠোর পরিশ্রম, সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালনের ফলে ব্যাংকিং জগতে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড বিগত প্রায় ৪০ বছর ধরে সুদবিহীন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে সাফল্যের সাথে কাজ করছিল। অথচ বিগত কয়েক দিন ধরে দেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংকের ব্যাপারে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে ব্যাংকের অর্থ আত্মসাৎ ও লুটপাটের সংবাদ প্রচারিত হচ্ছে। এ সংবাদগুলো আমাদের জন্য উদ্বেগজনক ও অত্যন্ত ভীতিকর। কার্যত ক্ষমতার জোরে ডাকাতির কায়দায় ২০১৭ সালে সরকারের ছত্রছায়ায় একটি অপশক্তি ব্যাংকের কর্তৃত্ব দখলে নেয়। সেই থেকে তারা ব্যাংকটাকে লুটপাট করে ধ্বংস করার জন্য উঠে পড়ে লেগে যায়। আমরা ইসলামী ব্যাংকের অর্থ লুটপাটের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে জনগণের আমানতের টাকা ব্যাংকে ফেরত আনার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। একইসাথে আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করছি, ব্যাংকটি জবর দখল করে লুটপাট ও অর্থ-আত্মসাতের যে ব্যবস্থা করা হয়েছে, ইসলামী ব্যাংকের বিনিয়োগকারী ও গ্রাহকগণ তা কিছুতেই মেনে নেবে না।

তারা আরো বলেন, আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে ২০১৭ সালের পর থেকে পরিকল্পিতভাবে এই ব্যাংকের অর্থ আত্মসাতের প্রচেষ্টা চালানো হলেও বাংলাদেশ ব্যাংক নীরব ভূমিকা পালন করে আসছে। কোম্পানি আইন ও বিধানের তোয়াক্কা না করে ঋণ প্রদানে সীমালঙ্ঘন করে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও গ্রুপকে সর্বোচ্চ পরিমাণ ঋণ দেয়ার নামে মূলত ইসলামী ব্যাংকের অর্থ লুটপাট করা হয়েছে। নীরবে এসব কর্মকাণ্ড অবাধে চলতে থাকা সত্ত্বেও নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। সংবাদপত্রে অনিয়ম, জালিয়াতি ও লুটপাটের খবর প্রকাশিত হওয়ার পর ক্ষমতাসীন সরকার মায়াকান্না শুরু হয়েছে।

আমরা অবিলম্বে লুটপাট করা অর্থ ফেরত আনার এবং নিয়মবহির্ভূত উপায়ে এই লুটপাট ও আর্থিক কেলেঙ্কারির সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে জড়িত সকলকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ মানববন্ধনে হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি। একইসাথে বিনিয়োগকারী ও গ্রাহকদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশবাসীকে সাথে নিয়ে ইসলামী ব্যাংক ধ্বংসের চক্রান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।

প্রেস বিজ্ঞপ্তি