
ইরানে ইসরাইলের হামলা নিয়ে কয়েক মাস ধরে জল্পনা চলে আসছিল। কিন্তু হামলার ভয়াবহতা এত ব্যাপক হবে, তা ভাবা যায়নি। ইরানও প্রতিশোধমূলক পাল্টা হামলা শুরু করেছে। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা ইসরাইলকে এর চরম পরিণতি ভোগ করতে হবে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তবে এখন পর্যন্ত ইরানের প্রতিশোধ চূড়ান্ত অবস্থায় যায়নি। দু’জন ইসরাইলি জেনারেলসহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু সামরিক কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন বলে বিভিন্ন আরব সূত্র জানিয়েছে। অন্য দিকে ইরানের তাবরিজে হামলা করতে যাওয়া দু’টি ইসরাইলি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করেছে তেহরান। ইসরাইল এই দাবি নাকচ করে দিলেও ইরান দুই পাইলটকে প্যারাসুটে নামার পর গ্রেফতারের ভিডিও প্রকাশ করেছে।
ইসরাইল শতাধিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার বিপরীতে ইরান ৬০টির বেশি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছে। যুদ্ধ দ্বিতীয় পর্যায়ে উন্নীত হলে দু’পক্ষ টেকটিক্যাল যুদ্ধাস্ত্র ছাড়িয়ে স্ট্র্যাটেজিক অস্ত্র ব্যবহার শুরু করতে পারে। তবে যুদ্ধের দ্বিতীয় দিনে ইরানের দ্বিতীয় দফা মিসাইল আক্রমণ এবং দু’টি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ভূপাতিতের পর ট্রাম্প যুদ্ধ বন্ধের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন বলে খবর প্রকাশ হয়েছে।
ইসরাইলের ইরানে হামলা শুরু এবং তাতে শীর্ষ সামরিক কমান্ডার, পরমাণু বিজ্ঞানীদের হত্যা ও পরমাণু স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু করা থেকে স্পষ্ট হয় যে, বিমান হামলাটি ইসরাইলের নেতৃত্বে হলেও এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রসহ ইসরাইলের সব মিত্রের কমবেশি সহযোগিতা রয়েছে। এ হামলা এখানেই শেষ হবে না, এর লক্ষ্য মধ্যপ্রাচ্যকে নতুন একটি অবয়ব দেয়ার গভীর ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন বলে মনে হয়। ওই অপচেষ্টা রুখতে না পারলে আরব দেশগুলোর ইসরাইলের আধিপত্য মেনে নিয়ে এর চাহিদামতো ভূখণ্ড ছেড়ে নিজেদের ক্ষমতা ও মানচিত্র টিকিয়ে রাখার বাস্তবতা তৈরি হবে। এ মুহূর্তে এটি নির্ভর করবে ইরান ইসরাইলি হামলার কতটা সমুচিত জবাব দিতে পারে তার ওপর। এক দিনের মধ্যে তেহরান নিজের সামরিক সক্ষমতা সংগঠিত করতে কার্যকর পাল্টা হামলা শুরু করায় মনে হয় ইসরাইল যেসব মতলব হাসিল করতে এই যুদ্ধ শুরু করেছে, তা সফল সহজে করতে পারবে না।
সাম্প্রতিক সামরিক সঙ্ঘাত
‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামে এ আক্রমণে ইসরাইল শতাধিক স্থাপনায় আঘাত হানে। যার মধ্যে পারমাণবিক স্থাপনা ও সামরিক কমান্ড কেন্দ্রও রয়েছে। এতে ইরানের শীর্ষপর্যায়ের বেশ কয়েকজন সেনা নেতৃত্ব ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ইরান জানিয়েছে, ইসরাইলি হামলায় ৭৮ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো ৩২০ জন ।
পাল্টা জবাবে শুক্রবার গভীর রাতে ইসরাইল অধিকৃত ভূখণ্ডে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে সফলভাবে আঘাত হানার ভিডিওফুটেজ প্রকাশ পেয়েছে। ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ ৩’ নামের এ অভিযানে ইসরাইলের বিভিন্ন স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। পাল্টা আক্রমণে ইরান বিভিন্ন স্থান থেকে ১৫০ থেকে ২০০ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ছোড়ে ইসরাইলের দিকে। এতে অন্তত দু’জন সেনা কর্মকর্তাসহ বেশ কয়েকজন নিহত ও ৪৩ জন আহত হওয়ার খবর দেয়া হয়। বাস্তবে হতাহতের সংখ্যা অনেক বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইরান তাদের ক্ষয়ক্ষতি প্রকাশ করলেও ইসরাইল এ বিষয়ে কঠোর গোপনীয়তা বজায় রাখে। ইসরাইলি দাবি অনুসারে, বেশির ভাগ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার দ্বারা প্রতিহতের পরও তেলআবিব বেনগুরিয়ান এয়ারপোর্টসহ বেশ কয়েকটি লক্ষ্যবস্তুতে এগুলো আঘাত করে।
ইরানি সূত্র অনুসারে, ৬০ শতাংশ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নির্বাচিত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছে। ইরানের তুলনায় ইসরাইলে ক্ষতি কম বলে ধারণা করা হয়। তবে ক্ষুদ্র রাষ্ট্র হিসেবে ইসরাইলের সর্বাত্মক যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা কম।
ইসরাইলি হামলা ও পাল্টা হামলায় ইরানের মধ্যে অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা ও সামরিক নেতৃত্বে টানাপড়েন সৃষ্টির কৌশল নিয়েছে তেলআবিব ও এর মিত্ররা। ইরানকে কয়েকটি প্রতিবেশী দেশ ইসরাইলি হামলার বিষয়ে সতর্ক করলেও তেহরান যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পরমাণু চুক্তি নিয়ে আলোচনা অব্যাহত থাকাকালে এ ধরনের হামলা হবে না বলে প্রতিশ্রুতিতে আস্থা রেখে বড় ধরনের ভুল করেছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। এ ভুল না করলে তেহরান নিজের সামরিক নেতৃত্ব ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বাঙ্কার নিরাপত্তায় নিয়ে যেতে পারত। পরমাণু চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলাকালে এ ধরনের হামলা হওয়ায় পারমাণবিক চুক্তি (এনপিটি) থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছে ইরান, যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চাপ ও উত্তেজনা বাড়াতে পারে।
আক্রমণের পর দু’পক্ষ পরস্পরের বড় ধরনের মানব ও অবকাঠামোগত ক্ষতি করেছে। পুরো পরিস্থিতি একধরনের ভীতিকর পর্যায়ে পৌঁছেছে। বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ বেড়েছে, জ্বালানি ও শস্যবাজারে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। চলমান ঘটনা অবলোকনে মনে হচ্ছে, ইরানের প্রতিশোধ আরো বাড়তে পারে; তবে ইসরাইলের মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সরাসরি যুদ্ধে জড়ানোর মতো পদক্ষেপ নাও নিতে পারে ইরান। আমেরিকান কংগ্রেসও নতুন করে কোনো দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধে জড়াতে চাইছে না।
ইরানি প্রতিশোধে চাপ বাড়লে পশ্চিমা দেশগুলো ও ইউএন যুদ্ধ বন্ধে মধ্যস্থতায় যেতে পারে। যুদ্ধ ছয়-সাত দিন অতিক্রম করলে তা ইসরাইল-গাজা অথবা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মতো দীর্ঘস্থায়ী রূপ পেতে পারে। যুদ্ধ এভাবে প্রসারিত হলে তা অবশ্যম্ভাবীভাবে অঞ্চলজুড়ে চরম ধ্বংসলীলা সৃষ্টির দিকে এগিয়ে যেতে পারে।
নতুন উপলব্ধি, সমর্থন পাচ্ছে না তেলআবিব
মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের নীতি নিয়ে একসময় বেশ বিতর্ক ছিল। বেশির ভাগ প্রতিবেশী দেশের সাথে ইরানের সম্পর্ক ছিল বৈরী। ইসরাইলের এবারের হামলার পর নতুন মূল্যায়ন দেখা যাচ্ছে। ওআইসি এ হামলার নিন্দা করেছে। নিন্দা করেছে সৌদি আরব, তুরস্কসহ বেশির ভাগ গুরুত্বপূর্ণ মুসলিম দেশ।
ইরানের প্রতি সমালোচনামুখর তুর্কি সম্পাদক ইব্রাহিম কারাগুলের মন্তব্য এ প্রসঙ্গে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। তার মূল্যায়ন হলো এ রকম- ‘সবার ভাবা উচিত যে, যারা আজ তেহরানে হামলা করেছে তারা আগামীকাল ইস্তাম্বুলে হামলা করার অপচেষ্টা করবে। এটি শিয়া-সুন্নির সমস্যা নয়। এটি ইরানের সমস্যা নয়। এটি এ অঞ্চলের ভূগোলের সমস্যা। এক শতাব্দী ধরে পশ্চিমা আগ্রাসনে এ অঞ্চলকে ধ্বংস করা হয়েছে, যখন এটি পুনরুদ্ধার শুরুর চেষ্টা হচ্ছে তখন আবার ধ্বংস হচ্ছে।’
কারাগুল প্রশ্ন করেন, ‘গাজার মানুষ কি শিয়া? ইসরাইল যখন ইরাকি পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালায়, তখন কি সাদ্দাম শিয়া ছিলেন? এক শতাব্দী আগে ধ্বংসপ্রাপ্ত অটোমান সাম্রাজ্য কি শিয়া ছিল? আপনি যখন সাম্প্রদায়িক যুদ্ধের দৃষ্টিকোণ থেকে অঞ্চলটিকে দেখছেন, হামলাকারীরা এটিকে দীর্ঘমেয়াদি হিসাব-নিকাশের সাথে দেখছেন। কারণ তারা এটিকে এভাবে দেখেন, তারা আমাদের দুর্বলতাগুলো অস্ত্রে পরিণত করেছে, আমরা একটি শতাব্দী এবং একটি প্রজন্ম হারিয়েছি।’
কারাগুল আরো লিখেন, ‘হামলাকারীদের নিশানা ইরাক, সিরিয়া, এরপর ইরান, তার পর তুরস্ক! ক্রুসেডের পর থেকে একটি লড়াই চলছে। আমরা এর কেন্দ্রবিন্দুতে আছি। এ ভূগোলের এক বর্গমিটারও দখল এবং যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও ইসরাইলের কাছে আত্মসমর্পণকে বৈধ বলে মনে করে এমন কোনো যুক্তি নির্দোষ হতে পারে না।’ তার মূল্যায়নের বিশেষ প্রতীকী গুরুত্ব রয়েছে। হামলাকে ‘যুদ্ধ ঘোষণা’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে ইরান। পাল্টা হামলায় শত শত ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইসরাইলে। সামরিক ও কূটনৈতিক প্রস্তুতি জোরদার করেছে। ইরানঘনিষ্ঠ জোট হিজবুল্লাহ লেবানন সীমান্তে ইসরাইলের সাথে সংঘর্ষ বাড়িয়েছে। ইরাক ও সিরিয়ায় ইরানপন্থী মিলিশিয়ারা সজাগ রয়েছেন। সম্ভাব্য আঞ্চলিক যুদ্ধের আশঙ্কা বাড়ছে। সৌদি আরব ও উপসাগরীয় দেশগুলো ইসরাইলি হামলার নিন্দা এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে। বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়ার মধ্যে রাশিয়া ইসরাইলকে সতর্ক করেছে আঞ্চলিক যুদ্ধ বাধাতে পারে এমন পদক্ষেপ না নিতে। ইরানের সাথে সম্পর্ক রক্ষায় সচেষ্ট দেশটি। চীন শান্তিপূর্ণ সমাধানের ওপর জোর দিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে নিজস্ব বাণিজ্য ও জ্বালানির স্বার্থে স্থিতিশীলতা চায় বেইজিং।
আন্তর্জাতিক সংগঠনের মধ্যে জাতিসঙ্ঘ যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে এবং জরুরি বৈঠকের আয়োজন করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন উভয়পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র কী করছে, কী চাইছে
ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক অবকাঠামোয় ইসরাইলের হামলা চালানোর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি অংশ না নিলেও ওয়াশিংটনের ভূমিকা ছিল। যুক্তরাষ্ট্র গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগি, নীরব অনুমোদন এবং হামলা-পরবর্তী কূটনীতির মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে সংঘর্ষ এবং নিয়ন্ত্রণের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে ভূমিকা পালন করে।
ইসরাইলকে যুক্তরাষ্ট্র কৌশলগত গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করে এবং হামলা-পূর্ব পরিস্থিতি নিয়ে সচেতনতা বজায় রাখে। ওয়াশিংটন প্রকাশ্যে সমর্থন না করে ইসরাইলের পদক্ষেপে নীরব সম্মতি দিয়েছিল। আঘাত-পরবর্তী কূটনৈতিক উত্তেজনা হ্রাস এবং জোটের আশ্বাসের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখে ওয়াশিংটন। আমেরিকার নীতিগত উদ্দেশ্য হলো পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ ছাড়াই ইরানের পারমাণবিক ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে আত্মসমর্পণমূলক একটি পরমাণু চুক্তিতে পৌঁছানো।
সিআইএ ও মোসাদের মাধ্যমে ঘনিষ্ঠ গোয়েন্দা অংশীদারিত্ব বজায় রয়েছে দুই দেশের মধ্যে। সিগন্যাল ইন্টেলিজেন্স ও স্যাটেলাইট নজরদারির মাধ্যমে সংবেদনশীল ইরানি স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করতে ইসরাইলকে সহায়তা করে ওয়াশিংটন। প্রকাশ্যে সংযমের আহ্বান জানালেও একাধিক কূটনৈতিক সূত্রের তথ্য অনুসারে যুক্তরাষ্ট্র গোপনে হামলার বিষয়ে ‘সবুজ সঙ্কেত’ দেয়। হামলার পর মার্কিন বিবৃতিতে ‘ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকারে’ জোর দেয়া হয়েছে। সেই সাথে সব পক্ষকে উত্তেজনা এড়াতে আহ্বান জানানো হয়েছে।
কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে যুক্তরাষ্ট্র দ্বৈত নিয়ন্ত্রণ মডেলের অধীনে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশন ও চ্যাথাম হাউজের তথ্য অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্র নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক নয়, বরং একটি নীরব কৌশলবিদ। এর লক্ষ্য, নিজেকে অন্য একটি আঞ্চলিক যুদ্ধে না জড়িয়ে ইরানকে চাপ দিতে ইসরাইলকে যথেষ্ট ক্ষমতায়ন করা। এক দিকে ইসরাইলকে সামরিকভাবে সমর্থন করা। অন্য দিকে কূটনৈতিকভাবে ইরানকে নিয়ন্ত্রণ করা।
ভবিষ্যৎ ভূরাজনৈতিক প্রভাব
ইরান-ইসরাইল সরাসরি যুদ্ধে জড়ালে পুরো মধ্যপ্রাচ্য অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে। বিশেষ করে পারস্য উপসাগরের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে বিশ্বব্যাপী জ্বালানির বাজারে অস্থিরতা বাড়বে। ইরানের জ্বালানি নেটওয়ার্কে হামলা চালানো হলে তেহরান ভূমধ্যসাগরের তলদেশের ইসরাইলি পাইপ লাইন উড়িয়ে দেবে। যুদ্ধ অব্যাহত থাকলে ইরান-রাশিয়া-চীন বনাম ইসরাইল-যুক্তরাষ্ট্র-আমিরাতের নতুন সামরিক জোট গঠনের সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রশ্ন হলো- ইসরাইল-ইরান হামলা ও পাল্টা হামলায় সবচেয়ে বাজে পরিস্থিতি কী হতে পারে। আপাতত ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে লড়াই শুধু দু’টি দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ বলে মনে হচ্ছে। জাতিসঙ্ঘ ও অন্যান্য দেশ ও সংস্থা সংযমের আহ্বান জানিয়েছে। যদি লড়াই আরো তীব্র ও প্রসারিত হয় তাহলে যুক্তরাষ্ট্র এর সাথে জড়িয়ে যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র অস্বীকার করলেও ইরান গভীরভাবে বিশ্বাস করে, মার্কিন বাহিনী ইসরাইলের আক্রমণ সমর্থন করেছে; তা না হলে মৌন সমর্থন করেছে।
এতে ইরান মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে পারে। আমেরিকা এ ধরনের হামলার আশঙ্কা করে কিছু কর্মী প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। এটি হলে ইসরাইল সঙ্ঘাতের সাথে আমেরিকাকে জড়ানোর যে চেষ্টা করছে; তা সফল হবে। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করা হচ্ছে যে, ইরানকে পরাজিত করার জন্য সাহায্য করতে আমেরিকাকে টেনে আনতে চান তিনি। সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, কেবল আমেরিকার কাছেই বোমারু বিমান এবং বাঙ্কার-বিধ্বংসী বোমা রয়েছে, যা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনার গভীরতম অংশে প্রবেশ করতে পারে, বিশেষ করে ফোর্ডোর।
ট্রাম্প তার নির্বাচনী এলাকার জনগণকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, তিনি মধ্যপ্রাচ্যে কোনো তথাকথিত ‘অনন্ত যুদ্ধ’ শুরু করবেন না। তা সত্ত্বেও সমানভাবে বহু রিপাবলিকান ইসরাইলের সরকার ও তেহরানে শাসন পরিবর্তনের সময় এখনই বলে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি উভয়ই সমর্থন করেন। এ ক্ষেত্রে সত্যি সত্যি যদি আমেরিকা সক্রিয় যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, সেটি হতে পারে দীর্ঘ, সম্ভাব্য ধ্বংসাত্মক পরিণতি।
বিবিসির বিশ্লেষণ, ইরান যদি ইসরাইলের সুরক্ষিত সামরিক ও অন্যান্য লক্ষ্যবস্তুর ক্ষতি করতে না পারে, তাহলে সর্বদা উপসাগরের সহজ লক্ষ্যবস্তুগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র তাক করতে পারে। বিশেষ করে যেসব দেশ বছরের পর বছর তেহরানের শত্রুদের সাহায্য করেছে এবং মদদ দিয়েছে তাদের দিকে।
ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা ধ্বংস করতে ইসরাইল ব্যর্থ হলে কী হবে? ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ভূপৃষ্ঠের গভীরে খুব সুরক্ষিত বলে মনে করা হয়। এমনও মনে করা হয় যে, ইরানের হাতে ১৬ থেকে ১৮টি পরমাণু বোমা পাঁচ থেকে আট দিনের মধ্যে ৩০০ থেকে ৩৫০ সেন্টিফিউজ পরিমাণে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ রয়েছে। চরম চাপে পড়লে ইরান পরমাণু পরীক্ষা চালাতে দ্বিধা নাও করতে পারে। এটি হলে অনেক ভারসাম্য পাল্টে যেতে পারে।