আ. লীগ নেতা বললেন ‘নৌকার লোক পালানোর সুযোগ পাবে না’

নৌকার লোক পালানোর জায়গা পাবে না বলে মন্তব্য করেছেন নরসিংদীর মাধবদী থানা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম।

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নরসিংদী-১ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী নজরুল ইসলাম হিরু। তিনি ছাড়াও আরও ৮ জন প্রার্থী এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান কামরুল স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিচ্ছেন।

নির্বাচনী আচরণবিধি অনুসারে, ১৮ ডিসেম্বর নির্ধারিত প্রতীক বরাদ্দ না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচারণা চালানো যাবে না।

এই আচরণবিধি ভেঙে আয়োজিত সভায় সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘মাধবদীর মেয়র মোশারফ সাহেব বক্তব্য দেওয়ার পরে দক্ষিণ এলাকার ৫টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় গণজাগরণ তৈরি হবে ইনশাল্লাহ। এই গণজাগরণে কেউ বাধা দিতে পারবে না। আপনারা যখন জানবেন মাধবদীর মেয়র মোশারফ হোসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল ভাইয়ের জন্য নামছেন, তখন কেউ বাধা দিতে পারবেন না। কাল থেকে হিরুর নৌকার লোক পালানোর জন্য জায়গা পাবে না। নৌকার লোক পালানোর সুযোগ পাবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কাল থেকে স্বতন্ত্রপ্রার্থী কামরুল ভাইয়ের হয়ে মাঠে নামব। কোনো বাধা-বিপত্তি নেই। যতই প্রোপাগান্ডা করুক, গণজাগরণ ফেরাতে পারবে না। মোশারফ ভাই যেভাবে বলবেন, কাল থেকে সেভাবে কাজ করবেন।’

পরে সভায় উপস্থিত লোকজন হাসাহাসি শুরু করলে তিনি নিজের বক্তব্য সংশোধন করে বলেন, ‘হিরুর নৌকার লোক পালানোর সুযোগ পাবে না।’

আজ বুধবার বিকালে মাধবদী পৌর পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত এ মতবিনিময় সভায় জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও স্বতন্ত্রপ্রার্থী কামরুজ্জামান কামরুল, মাধবধী পৌর মেয়র মোশারফ হোসেন মানিক, নরসিংদী পৌর মেয়র আমজাদ হোসেন বাচ্চুসহ আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

সিরাজুল ইসলামের বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়।

নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক শিক্ষা ও মানব বিষয়ক সম্পাদক এস এম কাইয়ুম বলেন, ‘কাউকে প্রকাশ্যে হুমকি দেওয়ার এখতিয়ার রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত। একজন আওয়ামী লীগ নেতা হয়ে, নৌকার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সমালোচনার দলের সঙ্গে বিদ্রোহ ঘোষণা করার সামিল।’

নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিএম তালেব হোসেন বলেন, ‘আমাকে বক্তব্য পাঠানো হয়েছে। আমি সিরাজুল ইসলামের বক্তব্য শুনেছি। তার বক্তব্য নৌকার বিরুদ্ধে, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। আমি তার বক্তব্য সমর্থন করি না। তার বিরুদ্ধে সাংগাঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে অচিরেই।’

জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। তার বক্তব্যও আমি শুনিনি। তাই কোনো মতামত দেবো না। দল কী সিদ্ধান্ত নেবে, সেটার অপেক্ষায় আছি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘নৌকার বিরুদ্ধে আমি কোনো বক্তব্য দিইনি।’

আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হিরু বলেন, ‘সিরাজুল ইসলাম আওয়ামী লীগের পদধারী নেতা। অন্যায় হলে তিনি ব্যক্তির বিরুদ্ধে সমালোচনা করতে পারেন, তার স্বাধীনতা আছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতা হয়ে নৌকার বিরুদ্ধে কথা বলতে পারেন না।’

এদিকে সভা করে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ প্রসঙ্গে নরসিংদীর জেলা প্রশাসক ড. বদিউল আলম বলেন, ‘বিষয়টি এখনও আমাদের নজরে আসেনি। বিষয়টি আমাদের নজরে আসলে অথবা কেউ লিখিত অভিযোগ করলে আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

 

ডেইলি স্টার বাংলা