রোববার দুপুরে ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ইউনিভার্সিটি টিচার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব) এ আলোচনা সভা আয়োজন করে।
মির্জা ফখরুল বলেন, নিজের সততা দিয়ে দেশের আমূল পরিবর্তন এনেছিলেন জিয়াউর রহমান। তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছিলেন। জিয়াউর রহমান গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছেন। শেখ মুজিবুর রহমান ৪টি বাদে সব গণমাধ্যম বন্ধ করেছিলেন। জাতীয় প্রেসক্লাব তো জিয়াউর রহমানের অবদান। অথচ তার নামই উচ্চারণ করতে চায় না।
তিনি বলেন, আজ দেশের প্রত্যেক ব্যক্তির ওপর ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা ঋণের বোঝা। এরপরও তারা বাজেট দেয় যেখানে কোনো দিকনির্দেশনা নেই। আজকে এই সরকার দেশটাকে কোথায় নিয়ে গেছে? এরপরও যেসব বুদ্ধিজীবী তাদের প্রশংসা করেন তারা কী নিজেদের বিবেককে প্রশ্ন করেন? সুতরাং আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বলব, আপনারা জাতি গঠনে কাজ করুন। দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তৈরি করুন। আজকে ডাকসু নির্বাচন নেই। কোনো নির্বাচন নেই। এ সময় জিয়াউর রহমানের কর্মকাণ্ড নিয়ে সারাদেশে ওয়ার্কশপ করার কথাও বলেন বিএনপি মহাসচিব।
জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন ইউট্যাবের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম। সভায় ‘বাংলাদেশে বিজ্ঞান গবেষণা ও শিক্ষিত জাতি গঠনে শহীদ জিয়া’ এবং ‘জিয়াউর রহমান: ক্রান্তিকালের ত্রাণকর্তা ও আধুনিক বাংলাদেশের স্থপতি’ শীর্ষক দুটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।
ইউট্যাবের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ড. মো. রইছ উদদীনের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রো-ভিসি অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন, পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মো. আবদুর রশিদ, অধ্যাপক লুৎফর রহমান, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান, অধ্যাপক ড. আবুল কালাম সরকার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শামসুল আলম সেলিম, ড. কামরুল আহসান, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গোলাম হাফিজ কেনেডি, রুয়েটের অধ্যাপক ড. আখতার হোসেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হাবিবুর রহমান, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আলী নূর রহমান, সিলেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. শামীউল আক্তার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মো. আমজাদ হোসেন, শের মাহমুদসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকাল জিয়াউর রহমানের নাম নেওয়া যায়না। পরবর্তী প্রজন্ম তাকে স্মরণ করতে পারবে না। এমনকি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকে তার সম্পর্কে কোনো কিছু লেখা নেই। এটা করা হচ্ছে পরিকল্পিতভাবে। যে লোকটি স্বাধীনতার ঘোষণা দিল তার নামই নাই।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের বাইরে যেতে পারেনা। তাদের কেমিস্ট্রিতে এটা নাই। আওয়ামী লীগের চরিত্রই কাউকে সহ্য করতে না পারা। তারা প্রথমত সহিষ্ণুতায় বিশ্বাস করেনা। পক্ষান্তরে জিয়াউর রহমান সবার কথা শুনতেন। তিনি কথা কম বলতেন। তিনি বিভিন্ন বিষয়ে অভিজ্ঞ ও দক্ষ ব্যক্তি সবার সঙ্গে কথা বলে যে শিক্ষা কমিশন গঠন করেছিলেন তা বাংলাদেশে আর কখনও হয়নি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, জিয়াউর রহমান সন্ত্রাস নির্মূলে কাজ করেছেন। তিনি দেশের মানুষের মনের ভেতর ঢুকে গিয়েছিলেন। তার অলৌকিক শক্তি দিয়ে তিনি মানুষকে কাছে টানতেন। আজ তার সম্পর্কে আমরা ঠিকভাবে বলতে পারিনা। এত সৎ মানুষ ছিলেন, কোনো স্বজনপ্রীতি ছিল না। নিকটাত্মীয়রাও কম আসতেন বাসায়। তার সততার ধারে কাছেও কেউ যেতে পারবেনা। এ কারণে তার কফিন ঢাকায় আনা হলে বন্যার পানির মতো মানুষ ভিড় জমাতে থাকল।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, জিয়াউর রহমানের সবচেয়ে বড় অবদান তিনি বাঙালি জাতিকে একটি নতুন পরিচিতি দিয়েছিলেন। সেটি বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ। তার কেবিনেটে দেশের সর্বশেষ্ঠ ব্যক্তিরা ছিলেন। দেশসেরা মেধাবীদের নিয়ে তিনি যাত্রা শুরু করেছিলেন। প্রত্যেক শ্রেণির মেধাবী শিক্ষার্থীদের নিয়ে তিনি হিজবুল বাহারে করে সমুদ্র দেখাতে নিয়ে গেছিলেন।
তিনি আরও বলেন, আজ জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে বিতর্ক করছে। এ কে খন্দকার তো তার বইয়ে লিখতে গিয়ে তাকে নানাভাবে মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে। জিয়াউর রহমান জিয়াউর রহমান। তিনি বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা। তার কোনো তুলনা নেই।
সভাপতির বক্তব্যে ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, জাতির এই দুঃসময়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শ সামনে রেখে এগিয়ে যেতে হবে। কারণ আজকে বাংলাদেশের ওপর শকুনের চোখ পড়েছে। দেশের জনগণের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার করতে হবে। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে সবাইকে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
সমকাল
