মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী, সেনাবাহিনী, শুল্ক কর্মকর্তাসহ এ দেশে ঢুকে পড়া ৩৩০ জনকে আজ বৃহস্পতিবার মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছে বিজিবি।
এদিকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ সীমান্ত এলাকায় গতকাল বুধবার গোলাগুলির শব্দ কম শোনা গেছে।
এ ছাড়া নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তে গতকাল আরও তিনটি লাশ ভাসতে দেখেন স্থানীয় লোকজন। তবে এগুলো উদ্ধার করা যায়নি।
২ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ওপারে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির সংঘর্ষ চলছে। ইতিমধ্যে বিজিপিকে হটিয়ে তুমব্রু রাইট ক্যাম্প ও ঢেঁকিবনিয়া সীমান্তচৌকি আরাকান আর্মি দখলে নিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ৪ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত তিনটা থেকে দুই পক্ষের মধ্যে থেমে থেমে গোলাগুলি ও মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে। পরদিন নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের জলপাইতলী গ্রামের একটি রান্নাঘরের ওপর মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে দুজন নিহত হন। নিহত দুজনের মধ্যে একজন বাংলাদেশি নারী, অন্যজন রোহিঙ্গা পুরুষ।
মিয়ানমারে সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর থেকে ১২ দিন ধরে কখনো প্রচণ্ড গোলাগুলি, আবার কখনো থেমে থেমে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এপারে বাংলাদেশের বসতবাড়ি ও দোকানে গুলি পড়েছে। তবে গতকাল চিত্র ছিল ভিন্ন। সকালে ঘুমধুম সীমান্তে কয়েকটি গোলাগুলির শব্দ শুনেছেন বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দা এনামুল হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এত দিন পর গতকাল গোলাগুলির শব্দ কম হয়েছে।
এদিকে উখিয়া ও টেকনাফ সীমান্তে গতকাল কোনো গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়নি। গতকাল সীমান্ত এলাকায় লোকজনকে জমিতে সার দেওয়াসহ নানা কাজ করতে দেখা গেছে।
৩৩০ সীমান্তরক্ষীকে ফেরত পাঠানো হবে আজ
বাংলাদেশে ঢুকে পড়া মিয়ানমার বর্ডার গার্ড (বিজিপি), সেনাবাহিনী, শুল্ক কর্মকর্তাসহ ৩৩০ জনকে আজ সকাল আটটায় ফেরত পাঠানো হবে। গতকাল দুপুরে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
শরীফুল ইসলাম জানান, বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী বিজিপিসহ মিয়ানমারের ৩৩০ নাগরিককে বিজিবির সার্বিক তত্ত্বাবধানে কক্সবাজারের উখিয়ার ইনানী নৌবাহিনী জেটিঘাট থেকে বৃহস্পতিবার (আজ) সকাল আটটায় মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
মিয়ানমারের রাখাইনে সংঘর্ষ, গোলাগুলি শুরু হলে উখিয়া সীমান্তের রহমতের বিল, টেকনাফের হোয়াইক্যং ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্ত দিয়ে ৩৩০ জন আত্মসমর্পণ করে অস্ত্র জমা দিয়ে এ দেশে ঢুকে পড়েন। তাঁরা বর্তমানে বিজিবি হেফাজতে রয়েছেন।
ভাসছে আরও তিনটি লাশ
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের সীমান্তের জিরো পয়েন্টে নাফ নদীসংলগ্ন একটি খালে আরও তিনটি লাশ ভাসছে। ঘুমধুম সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা কলেজছাত্র তাহসানুল হক গতকাল দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের ঘরের পাশে নাফ নদীসংলগ্ন একটি খালে তিনটি লাশ ভাসতে দেখেছেন। লাশগুলো পচে ফুলে গেছে। স্থানীয় লোকজন বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েছেন।
ঘুমধুম পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মাহফুজ ইমতিয়াজ ভুঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, লাশ ভাসতে দেখে স্থানীয় লোকজন পুলিশকে খবর দেন। কিন্তু নিরাপত্তার কারণে উদ্ধার করা যাচ্ছে না।
এর আগে ঘুমধুমের একই এলাকায় আরেকটি লাশ ভাসতে দেখেছেন লোকজন। কিন্তু উদ্ধার করা যায়নি।
গত শুক্রবার উখিয়ার রহমতের বিল সীমান্ত এলাকা এবং গত রোববার বালুখালী তেলিপাড়া ব্রিজের নিচ থেকে মাথায় হেলমেট গ্লাভস পরা আরও দুটি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।