BBC Bangla
কাতার-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরা গতকাল সোমবার বাংলাদেশ নিয়ে এক অনুসন্ধানী প্রামাণ্য চিত্রে ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের ঘিরে দুর্নীতির অভিযোগ তোলার পর বাংলাদেশ সরকার আজ এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে।
আল জাজিরার এই অনুসন্ধানে মূলত সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের পরিবারের সদস্যদের অতীত এবং বর্তমান বিভিন্ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরা হয় এবং নানা ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ করা হয়।
‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার’স মেন’ নামের এই প্রতিবেদনটি গতকাল প্রথম প্রচার করার পর থেকে এটি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনা চলছে।
তবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বেশ কঠোর ভাষায় এর প্রতিবাদ জানিয়েছে।
আল জাজিরার প্রায় এক ঘণ্টার এই প্রতিবেদনে মূলত বাংলাদেশের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ এবং তার তিন ভাই-এর কার্যক্রম দেখানো হয়েছে।
সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের আপন তিন ভাই ২০০৪ সালে একটি হত্যাকাণ্ডের অপরাধে আদালতে দণ্ডিত হয়েছিল।
এই ভাইদের মধ্যে আনিস আহমেদ এবং হারিস আহমেদ বর্তমানে পলাতক রয়েছেন।
তৃতীয় ভাই, তোফায়েল আহমেদ জোসেফ, যিনি হত্যার অপরাধে কারাদণ্ডে দণ্ডিত ছিলেন, রাষ্ট্রপতির ক্ষমা নিয়ে কারাগার থেকে মুক্ত হন।
বিবিসি বাংলায় আরো পড়ুন:
যদিও দুই ভাই হারিস আহমেদ এবং আনিস আহমেদ পলাতক, কিন্তু আল জাজিরার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে হারিস আহমেদ এবং আনিস আহমেদকে জেনারেল আজিজ আহমেদের ছেলের বিয়েতে বাংলাদেশে দেখা গেছে। প্রতিবেদনে দেখানো হয় আনিস আহমেদ থাকেন কুয়ালা লামপুরে আর হারিস আহমেদ আছেন হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে।
কী ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ করা হচ্ছে?
প্রতিবেদনে গোপন রেকর্ডিংয়ের মাধ্যমে বুদাপেস্ট-এ হারিস আহমেদের ব্যবসায়িক কার্যকলাপ নিয়ে অনুসন্ধান চালানো হয়।
তিনি নাম পরিবর্তন করে হাসান মোহাম্মদ নাম নিয়ে বিভিন্ন দেশে একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করেছেন সেটা দেখানো হয়েছে।
বুদাপেস্টে একজন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর সাথে এক কথোপকথনে তাকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য বুলেট সরবরাহের কথা বলতে দেখা যাচ্ছে।
আল জাজিরার ঐ প্রতিবেদনে হারিস আহমেদকে বলতে শোনা গেছে পুলিশের চাকরি, যেমন থানার ওসির পদ, পেতে কত টাকা নেয়া হয় ।
তিনি সেখানে বলছেন, এক্ষেত্রে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়।
এই কাজে সরকারের শীর্ষ স্থানের লোক জড়িত থাকেন বলে হারিস আহমেদ উল্লেখ করেন।
এই বিষয়ে আরো পড়ুন:
এছাড়া, নিরাপত্তা বাহিনী ইন্টারনেট এবং মোবাইল ফোন নজরদারি করার প্রযুক্তি ইসরায়েল থেকে আমদানি করেছে এমন কিছু নথিপত্র দেখানো হয়েছে।
তবে এই ক্রয়ের সাথে হারিস আহমেদের কোন যোগাযোগের কথা এই প্রতিবেদনে বলা হয় নি।
বাংলাদেশ সরকার এবং সেনাবাহিনীর প্রতিক্রিয়া
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে কঠোর ভাবে নিন্দা জানানো হয়েছে এই প্রতিবেদনের।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে: “এটা পরিষ্কার না যাদের পূর্বে অপরাধমূলক কাজে জড়িত থাকার রেকর্ড রয়েছে তাদের সঙ্গে কীভাবে আল জাজিরার মত আন্তর্জাতিক নিউজ চ্যানেল যুক্ত হল। প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন অফিসিয়াল, সামাজিক, ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানের ক্লিপ ব্যবহার করে। বেশ কিছু বিচ্ছিন্ন অনুষ্ঠানের দৃশ্য একত্রিত করে সম্পাদনা করে কণ্ঠ দেয়া হয়েছে।”
বাংলাদেশ সরকার এই প্রতিবেদনটিকে মিথ্যা ও অবমাননাকর হিসেবে বর্ণনা করেছে ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আজ এক বিবৃতিতে, একে লন্ডন ও অন্যান্য জায়গায় সক্রিয় উগ্রপন্থী ও তাদের সহযোগীদের উসকানিতে বেপরোয়া ও নোংরা অপপ্রচার বলে উল্লেখ করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার এটি প্রত্যাখ্যান করছে। আরও বলা হয়, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে জামায়াতে ইসলামীর মদদ-পুষ্ট কতিপয় সাজাপ্রাপ্ত পলাতক অপরাধী এবং কুখ্যাত ব্যক্তি তাদের চিরাচরিত ছকে যে ধরনের বাংলাদেশ-বিরোধী অপপ্রচার চালায়, এই রিপোর্টটিও সেই শ্রেণির। এরা বিভিন্ন উগ্রপন্থী আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী ও সংবাদমাধ্যম, বিশেষ করে আল জাজিরার সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিভিন্ন সময় ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, আল জাজিরার প্রতিবেদনের অভিযোগগুলোর মূল সূত্র একজন সন্দেহভাজন আন্তর্জাতিক অপরাধী, যাকে আল জাজিরা নিজেই ‘সাইকোপ্যাথ’ আখ্যা দিয়েছে।
”প্রধানমন্ত্রী বা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ওই বিশেষ ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতার সামান্যতম প্রমাণও নেই। আর মানসিক ভারসাম্যহীন কারও কথার ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো একটি আন্তর্জাতিক নিউজ চ্যানেলের জন্য চরম দায়িত্ব-হীনতা” বলে বিবৃতিতে বলা হয়।