আর্থিক খাতের অপচিত্র সরকারের সক্ষমতাকে বহুলাংশে ম্লান করে দিচ্ছে, ক্ষমতাসীনেরা এই লাভ–ক্ষতির হিসাব বুঝতে পেরে যত দ্রুত প্রতিকারের পথ বেছে নেবেন, ততই মঙ্গল।
ব্রিটিশ আমলে এক এলাকায় চুরির সংখ্যা খুব বেড়ে গিয়েছিল। সেগুলো কমাতে আগের দারোগা সরিয়ে খুব চতুর নতুন এক বাঙালি দারোগাকে সেখানে বদলি করা হলো। তিনি উঁচু মানের ব্রিটিশ কর্তাকে আশ্বস্ত করে এলেন যে চুরির সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নামাবেন। এলাকায় এসেই দারোগা গোপনে দু–একটা চোরকে ডেকে বললেন, ‘লাগলে তোরা ডাকাতি কর।
চুরি করলে রক্ষে নাই।’ এই কৌশল বেশ কাজে দিল। চুরির সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নেমে এল। বেড়ে গেল ডাকাতি। কিন্তু সব চোর ডাকাত দল গড়তে পারেনি। অভাবী ছিঁচকে চোরেরা গৃহস্থের বাড়িতে আবার সিঁধ কেটে ধানচাল ও থালাবাসন নিতে থাকল। এবার দারোগা বুদ্ধি করে এসব কাজকে ‘সম্পদের সুষম বণ্টন’ আখ্যায়িত করে হিসাবের খাতায় চুরির সংখ্যাকে ‘শূন্য’ করে ফেললেন। বাংলাদেশের আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রকেরা মনে হয় এ গল্পটি জানতেন। তাঁদের খেলাপিবান্ধব সংজ্ঞায়ন আর্থিক খাতের অবনতির বড় কারণ।
ব্যাংকিং খাতে খেলাপির মাত্রা কমানোর কৌশল হিসেবে নিরন্তর সংজ্ঞা পাল্টে এ রকম কাজটিই করে যাচ্ছেন বাংলাদেশের আর্থিক খাতের কর্তারা। এতে আর্থিক খাতের ব্যাধি আরও প্রকট হয়েছে। মান্দারগাছকে ‘দারুচিনি বৃক্ষ’ উপাধি দিলেই কি ওটার গন্ধ থেকে নিষ্কৃতি মেলে? অর্থমন্ত্রী পদাসীন হওয়ার প্রথম দিনেই বলেছিলেন খেলাপি ঋণ কমাবেন। শুনে আমরা নড়েচড়ে বসি। যিনি প্রথম দিন বলবেন যে রাজস্ব বাড়াবেন, অন্তত এই বিশ্বখ্যাত রাজস্ব অক্ষমতার দেশে। তিনি কিনা গভর্নরের সিলেবাস থেকে লুফে নিলেন খেলাপি ঋণ কমানোর বাণী। এ দেশ যেন এত দিন পর একজন খেলাপিনাশক শাসক পেল।
কিন্তু হায়! ওটা যে হবে নিছক সংজ্ঞা পাল্টানোর কেরামতি, তা আমরা নির্বোধের দল সেদিন বুঝতে পারিনি। এই কেরামতি সেদিন থেকে ঝানু খেলাপিদের দিয়েছে এক নবযৌবনের উদ্দীপনা। নবপ্রেরণায় তারা পেশাগত লুণ্ঠন চালিয়ে ৮০ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণকে আজ অনামে–বেনামে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকায় তুলে দিয়েছে। পুনর্কাঠামোকরণ ও নিত্য নিত্য নবসংজ্ঞায়ন না করলে এ খেলাপির পরিমাণ আড়াই লাখ কোটি টাকায় ঠেকত। প্রকৃত হিসাবে এটি তা–ই। এ প্রবণতা অন্যায্য ও বিপজ্জনক।
মোট সাড়ে ১৪ লাখ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে এই খেলাপি নিয়ে কেউ হয়তো অঙ্ক কষবেন, এটা শতকরা কত ভাগ। কিন্তু এটি তো শুধু শতকরা হার নয়। এ এক মারাত্মক ব্যাধি এইচআইভির মতো সংক্রামক। এককালে এক ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পদে থাকা একজন অর্থনীতিবিদ সম্প্রতি দাবি করেছেন যে খেলাপি আর অর্থ পাচারকারীরা একই গোষ্ঠীর লোক। তাঁর দাবি যথার্থ। এ জন্য আমরা খেলাপি ও অর্থ পাচার বৃদ্ধির এক সহজ প্রবণতারেখা টানতে পারি। এর পরিণতি রিজার্ভের দ্রুত ক্ষয়।
আজকের খেলাপি ঋণের বিস্ফোরণ, রিজার্ভের অবক্ষয়, টাকার মানের অধঃপতন, রেমিট্যান্সের দুর্বলতা, আমানতকারীর অনাস্থা বৃদ্ধি, ব্যাংক থেকে সঞ্চয় উত্তোলন, তারল্যসংকট, মূলধন ঘাটতি, রাজস্ব অনাদায়, শেয়ারবাজারের ক্রম নিম্নগমন—এই সবকিছুই প্রধানত তিনটি পাপের ফল।
যেমন ১. কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি নির্মাণে ও কর্মবলয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বর্ধমান রাহুগ্রাস, ২. আইন পাল্টে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের অবাধ পরিবার তন্ত্রায়ণ, এবং ৩. খেলাপি ঋণের পুনর্কাঠামোকরণ ও নিত্য নিত্য নবসংজ্ঞায়ন। আমরা টাইটানিকের ডেক থেকে ভয়ানক হিমশৈলের কেবল এক-তৃতীয়াংশ দেখতে পারছি। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে দ্রুত প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের মাধ্যমে এই তিন পাপমোচন না করলে অর্থনীতি সমূহ বিপদে পড়বে।
আর্থিক খাত পরিস্থিতি রসিকতার বিষয় নয়
অর্থমন্ত্রী যতই বলুন না কেন যে তিনি ব্যাংকিং খাতে কোনো ক্ষত দেখতে পারছেন না, আর্থিক খাতের পরিস্থিতি এখন আর রসিকতার বিষয় নয়। শুধু অঙ্ক কষে খেলাপি ঋণের ১০-১৫ শতাংশ দেখিয়ে সান্ত্বনা নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু এখানে অধিকাংশ বিষয়ের ক্ষতি অর্থ–চারিত্রিক। ভয় সেখানেই। যেমন বাজেটে পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনার জন্য প্রণোদনা দেওয়ায় এক টাকাও আসেনি।
এতে যে অবক্ষয়িত অর্থ-চারিত্রিক সংকেত তিনি দিলেন, তা দীর্ঘ মেয়াদে রাষ্ট্রকে আরও মাশুল দিতে বাধ্য করবে। এ জন্য অর্থনীতিবিদেরা ‘মোরাল হ্যাজার্ড’ বা নৈতিক বিপদ বা ঝুঁকি সৃষ্টি হয়, এমন কাজ থেকে দূরে থাকতে বলেছেন। অর্থনীতিবিদ কেনেথ অ্যারোর মতে, এ থেকে যাচাইহীনভাবে জুয়া বা ঝুঁকিপ্রবণতা বাড়ে। কষা মুদ্রানীতিক পল ভলকার ব্যাংকিং খাতে এই জুয়া থেকে দূরে থাকতে বলেছেন। উদার অর্থনীতিক পল ক্রুগম্যানের মতে, এই জুয়ার ঝুঁকি একজন নেয়, অন্যজনকে তার মন্দ ফল বহন করতে হয়।
আমাদের কপালেও তা–ই। অনৈতিক মাফিয়া চক্র ব্যাংক লুণ্ঠন করে, ব্যাংকগুলো বাধ্য হয়ে স্প্রেড (ঋণহার বিয়োগ আমানত হার) বাড়ায়, কমে যায় আমানতের সুদ, শাস্তি পায় খুদে সঞ্চয়কারী ও সামান্য পেনশনভোগী মধ্যবিত্ত। একদিকে বড় দাগে তহবিল উধাও। অন্যদিকে খুদে ও মাঝারি উদ্যোক্তারা সামান্য ঋণ পেতে বারো ঘাটের পানি খায়। একজন সাবেক প্রতিমন্ত্রী মন্তব্যে, ২৫ হাজার টাকা অনাদায়ে কেউ জেলে যায়, অথচ হাজার কোটি টাকা লোপাট করেও কেউ ঘুরে বেড়ায়।
ঘুরে দাঁড়ানোর সময় আছে
এখনো ঘুরে দাঁড়ানোর সময় আছে। প্রথম কাজ হবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন ব্যাংকিং ডিভিশন বিলুপ্ত করা। এটি এক ঘণ্টার মধ্যে করলেও ব্যাংকিং ব্যবস্থার এক রত্তি ক্ষতি হবে না। যেটুকু নজর রাখা বা মনিটরিংয়ের দরকার, তা প্রধানমন্ত্রী নিজের দপ্তরে একটি সেলের আওতায় নিয়েই করতে পারেন। বড় ঋণ অনুমোদনের চূড়ান্ত ক্ষমতা থাকবে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্ষদের হাতে।
এর সঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কোনো সম্পর্ক থাকবে না। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরকে একজন ‘টেকনোক্র্যাট’ প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় আসীন করে তাকে সরাসরি অর্থবিষয়ক সংসদীয় কমিটির কাছে দায়বদ্ধ করতে হবে। বাজেটঘাটতির জন্য ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নেওয়ার জন্য অর্থমন্ত্রী প্রস্তাব দেবেন সংসদীয় কমিটিতে। তিনি সরাসরি ব্যাংকের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারবেন না।
তৃতীয়ত, গভর্নর অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে অগ্রাধিকারের সংগতি রেখে প্রতি তিন মাস অন্তর সংসদে মুদ্রানীতি পেশ করবেন। জাতীয় আয়ের ১৮ শতাংশ দখল করা বাজেট নিয়ে আমাদের অনেক হইচই। অথচ জাতীয় আয়ের ৩৫ শতাংশ ঋণ বিতরণ ও ৫৫ শতাংশ মুদ্রায়নের মালিক মুদ্রানীতি শিশিরের শব্দের মতো নিভৃতেই চলে যায়। যুক্তরাষ্ট্রে দেড় মাস পরপর মুদ্রানীতি আসার আগে ও পরে মিডিয়ায় ঝড় ওঠে।
সে অনুপাতে বার্ষিক বাজেট নিয়ে অত মাথাব্যথা নেই মার্কিন মুল্লুকে। আমাদের আর্থিক খাতের প্রথা সেই আদি ব্রিটিশ ধাঁচের। ব্রিটিশরা নিজের দেশে পাল্টে গেছে। কিন্তু ওরা ভারত শাসনের স্বার্থে যেভাবে কর্তৃত্ববাদী নিয়ন্ত্রণ রাখত, এ দেশের অর্থ মন্ত্রণালয়ও সব প্রতিষ্ঠানের ওপর সে রকম শাশুড়িসুলভ কর্তৃত্ব রেখে এই খাতের পঙ্গুত্ব দিন দিন বাড়িয়েছে। এখানে ব্যাংকিং খাতের সব কথা অর্থমন্ত্রীই বলে ফেলেন। গভর্নরের আর বলার কিছু থাকে না। এ সংস্কৃতির পরিবর্তন জরুরি।
পরিবারতান্ত্রিক আইন বাদ যাক
যেদিন থেকে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে পরিবারতান্ত্রিক আইন এল, তার পর থেকে ব্যক্তি খাতের ব্যাংকগুলোর অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। এখন এই পরিবারায়নের মাশুল দিতে হচ্ছে এবং খেলাপি ঋণের থলের বিড়াল একের পর এক উদিত হচ্ছে। আরও হবে। তাই চতুর্থ কাজ হবে এই আইনটিকে পূর্বাবস্থায় নিয়ে যাওয়া। কয়েকটি ব্যবসায়ী গ্রুপ সরকারের ওপর রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করে এই পারিবারিক লুণ্ঠনবান্ধব আইন করিয়ে নিয়েছে। এটি করপোরেট সংস্কৃতির পরিপন্থী হওয়ায় পেশাদার ব্যাংকারদের কাছে এটি ছিল একটা কর্মজৈবনিক পরাজয়। খোদ বাংলাদেশ ব্যাংকের ভেতরেও এর বিরোধিতা ছিল। অর্থনীতিকেরাও এটিকে অর্থব্যবস্থার এক নীতিগত অধঃপতন হিসেবেই দেখেছেন।
আমলারা বুঝে নিলেন সংসদ ব্যবসায়ীদের দখলে। অবস্থা বুঝে ব্যবসায়ী গ্রুপের সঙ্গেই সুর মেলালেন। কেবিনেট সেক্রেটারির মতো একজন শীর্ষ আমলা ‘মায়াতত্ত্ব’ প্রদান করে যুক্তি দেখালেন যে এতে ব্যাংকগুলোর প্রতি মালিকদের মায়া–মমতা বাড়বে। লুণ্ঠনের কিসিম দেখে মনে হয় না এখানে বিন্দুমাত্র মমতার ব্যাপার রয়েছে। নেই বিন্দুমাত্র পরিণতি চিন্তা।
শুধুই তহবিল লুফে নেওয়ার এক একটা চ্যানেল তৈরি করার স্বার্থেই এই আইন করা হয়েছে। উন্নত দেশে অনেক পরিবার আছে যারা ব্যবসা নিজেদের মধ্যে রাখতে চায়। সেটি করার জন্য ওরা ‘প্রোপ্রাইটরশিপ’ বা ‘পার্টনারশিপ’ করে। করপোরেট কাঠামোর নামে পারিবারিক দোকান খোলে না। এ দেশের ব্যবসায়ীরা চালাক। করপোরেট কাঠামো করলে জনগণের আমানত জোগাড় করা যায়। তাতে বড় বড় দাগে লুণ্ঠন কর্ম সম্পাদন করা সম্ভব। আবার নীতিপ্রণেতারা যদি পক্ষে থাকে, তাহলে তো কথাই নেই।
বিদেশে ব্যক্তি উদ্যোগ বড় হয়ে কোম্পানি হয়। এর সুফল হচ্ছে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন। এতে রাষ্ট্রের আয় বাড়ে। ওয়ালমার্ট, অ্যাপল, মাইক্রোসফট, আমাজন—এদের ইতিহাস তাই বলে। উল্টো পথে হেঁটে আমরা কোম্পানিকে মুষ্টিমেয় গোষ্ঠীর লুণ্ঠন স্বার্থে পারিবারিক দোকান বানাচ্ছি। দোকান চরিত্রীয় ব্যাংকগুলো খেলাপি দেখিয়ে রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। আনুপাতিকভাবে রাষ্ট্রের আয় কমছে।
বিদেশে বড় ব্যবসায়ীরা সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পান। কারণ, তাঁরা সরকারকে বেশি রাজস্ব আয় দিয়ে থাকেন। তাঁরা অর্থনীতির একটা বড় চালিকা শক্তি। তাই বলে তাঁদের নীতিপ্রণেতা বা ‘রেগুলেটর’ বানানো আর শেয়ালের কাছে মুরগি বন্ধক রাখা যে এক কথা, এটি উন্নত সরকারগুলো ভালো করেই জানে। আমাদের রাজনীতিকেরা সে জায়গায় বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে পারেননি। তার খেসারত দিচ্ছে আর্থিক খাত।
‘দ্য ফোর্বস-২০২২’-এর বিশেষ সংখ্যায় সর্বোচ্চ ধনী ৪০০ আমেরিকানের তালিকায় দেখানো হয়েছে যে গত দুই বছরে যুক্তরাষ্ট্রে ধনিকদের সম্পদ কমে গেছে। ঠিক এ সময়েই আমাদের দেশে ধনিক পরিবারের সংখ্যা ও সম্পদ বেড়েছে। নানাভাবেই আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলে দিচ্ছি।
একজন মন্ত্রী বলেছেন, মানবাধিকারের বিচারেও আমরা নাকি ওদের চেয়ে এগিয়ে। নীতি প্রণয়নে ধনিক তোষণের এ–জাতীয় ‘মানবাধিকার’ প্রবল সম্ভাবনাময় একটা অর্থনীতিকে বিপদে ফেলবে। তার আগাম লক্ষণ দৃশ্যমান। আয়বৈষম্য ও বেকারত্ব প্রকট হচ্ছে। সঞ্চয়ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। ধনিকেরা কর না দেওয়াকেই একটা আইনে পরিণত করেছেন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাজ যা হবে
তাই পঞ্চম কাজটি হবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের রাজস্ব আদায়ের পুরো কাজটা একটা স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে আসা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাজ হবে রাজস্ব ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে বাজেট প্রণয়ন করা ও তার অগ্রগতি নিশ্চিত করা। অর্থ মন্ত্রণালয়কে শুধু এটুকুর মধ্যে সীমাবদ্ধ না রাখলে দিন দিন এর অদক্ষতা আরও বাড়বে ও সময় পেলেই এই মন্ত্রণালয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজের ওপর খামচা দেবে। কারণ, এর রাজস্ব অনাদায় ঢাকতে হলে ব্যাংকিং খাত থেকে টাকা নেওয়া ছাড়া উপায় নেই।
এই তো ১০ বছর আগেও রাজস্ব ছিল জাতীয় আয়ের ১২ শতাংশ। দিন দিন এটি কমতে কমতে ৯ শতাংশে নেমে গেছে, যেখানে এটি দিন দিন বেড়ে ২০ শতাংশে ওঠার কথা ছিল। এ হার প্রতিবেশী সব দেশের তুলনায় কম। ভারতে এটি ১৭ শতাংশ। জাতীয় আয়ের মাত্র ২ শতাংশ দেয়, এমন বিভাগকে আমরা স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় বানিয়ে ফেলেছি। অথচ জাতীয় আয়ের ১০ শতাংশে দেয়, এমন গুরুত্বপূর্ণ বিভাগকে একটা বোর্ড বানিয়ে ওর দায়িত্ব দিয়ে রেখেছি একজন পদস্থ আমলার হাতে। রাজস্ব বাড়বে কীভাবে? এখানে একজন গণপ্রতিনিধি থাকা উচিত।
নানা বিষয়ে উন্নয়নের দৃষ্টান্ত থাকা সত্ত্বেও আর্থিক খাতের এই অপচিত্র সরকারের সক্ষমতাকে বহুলাংশে ম্লান করে দিচ্ছে। ক্ষমতাসীনেরা এই লাভ–ক্ষতির হিসাব বুঝতে পেরে যত দ্রুত প্রতিকারের পথ বেছে নেবেন, ততই মঙ্গল। আর্থিক খাত ধসে গেলে রাষ্ট্রের অস্তিত্বই বিপন্ন হবে।
ড. বিরূপাক্ষ পাল : যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্ক অ্যাট কোর্টল্যান্ডে অর্থনীতির অধ্যাপক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ