২৯ মে ২০২৩
বিশেষ প্রতিনিধি
৩০ মে। বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কালোদিন। ১৯৮১ সালের ৩০ মে জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকী। নানা প্রতিকূলতা অতিক্রম করে দেশকে এগিয়ে যাচ্ছিল তাঁর নেতৃত্বে। তখনই দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে হত্যা করা হয়েছিল প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়াউর রহমানকে। ৩০ মে তাঁর ৪২তম শাহাদাত বার্ষিকী। ১৯৮১ সালের ৩০ মে গভীর রাতে বিপথগামী একদল নেতা অফিসারের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন তিনি। দেশি-বিদেশী ষড়যন্ত্রে বিপথগামী সেনাদলটি চট্টগ্রামে সার্কিট হাউজে টার্গেট করেছিলেন দেশের প্রেসিডেন্টকে। রাজনৈতিক এক সফরে সেদিন চট্টগ্রামে ছিলেন তিনি। সারাদিনের ক্লান্তিহীন কর্মসূচি শেষে রাতে ঘুমিয়ে ছিলেন সার্কিট হাউজে। সেখানেই প্রেসিডেন্টকে হত্যার উদ্দেশ্যে হানা দিয়েছিলেন বিপথগামী সেনাদলটি।
জিয়াউর রহমানকে হত্যার মাধ্যমে দেশকে সুশাসন ও উন্নয়নের পথ থেকে বিচ্যুত করা হয়েছিল। তাই বাংলাদেশের ইতিহাসে এই দিনটি একটি কলঙ্কজনক কালো দিবস হিসাবে চিহ্নিত হয়ে আছে।
শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যর্থতা থেকেই উত্থান হয়েছিল জিয়াউর রহমানের। একজন সেনা অফিসার হিসাবে ১৯৭১ সালের মার্চে স্বাধীনতার ডাক দিয়ে মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিল জিয়াউর রহমান নামটি। তাঁর ডাকে সারা দিয়েই অস্ত্রহাতে যুদ্ধে নেমেছিল মানুষ। শেখ মুজিবুর রহমান রাজনৈতিক নেতা হিসাবে স্বাধীনতার ডাক দিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত জিয়াউর রহমান উই রিভোল্ট বলে বিদ্রোহ করে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন।
শেখ মুজিবুর রহমান যেখানে ব্যর্থ ছিলেন, জিয়াউর রহমান ছিলেন সেখানে সফল। স্বাধীনতা পরবর্তীতে দেশ শাসনে শেখ মুজিবুর রহমান চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছিলেন। গণতন্ত্রকে হত্যা করে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নিজেকে আজীবনের জন্য প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। চরম দু:শাসনে মানুষ ছিল অতীষ্ঠ।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এক সফল সেনা অভ্যুত্থানে শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনের অবসান হয়েছিল। তবে ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ নেতা খন্দকার মুশতাক আহমদ দেশের দায়িত্ব নিয়েছিলেন ১৫ আগস্টে। পরবর্তীতে ৩ নভেম্বর পাল্টা এক অভ্যুত্থানে খন্দকার মুশতাক আহমদের সাড়ে ৩ মাসের শাসনের পতন ঘটে। সেদিন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানকে বন্দি করেছিল অভ্যুত্থানকারীরা। কিন্তু মাত্র ৩ দিনের মাথায় আরেকটি অভ্যুত্থানে জিয়াউর রহমানকে বন্দিত্ব থেকে মুক্ত করা হয়। সেদিনটি ৭ নভেম্বর ১৯৭৫ সাল। সেদিন সিপাহী জনতার সম্মিলিত বিপ্লবের মাধ্যমে জিয়াউর রহমানের হাতে দেশ শাসনের ভার অর্পণ করা হয়েছিল।
একজন সৈনিক হয়েও রাজনৈতিক জীবনে সাফল্যের উচ্চতায় ঈর্শনীয় পর্যায়ে ছিলেন তিনি। দেশ শাসনের দায়িত্ব পেয়ে সংবিধানের ৫ম সংশোধনীর মাধ্যমে শুরুতে সংযোজন করেছিলেন বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। মূলনীতিতে যুক্ত করেছিলেন ধর্মনিরপেক্ষতার জায়গায় সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর আস্থা এবং বিশ্বাস। মূলনীতির সমাজতন্ত্রের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছিল অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার কথা। দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রতীক হিসাবে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের দর্শন দিয়েছিলেন। যার মাধ্যমে স্বাধীনতা উত্তর জাতি খুজে পেয়েছিল নিজেদের স্বতন্ত্র আত্মপরিচয়।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাক হানার বাহিনীর আক্রমণের পর দিশেহারা ছিল পুরো জাতি। রাজনৈতিক নেতা হিসাবে শেখ মুজিবুর রহমানের নিকট থেকে মানুষ নির্দেশনার অপেক্ষায় ছিলেন। অথচ, স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন তিনি। উল্টা পাকিস্তানিদের হাতে আটক হওয়ার জন্য ব্যাগ গুছিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ‘উই রিভোল্ট’ বলে বিদ্রোহ করলেন নিজের বাহিনীর সাথে। তখন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন তরুণ মেজর। কাল বিলম্ব না করে স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন। দিশেহারা জাতি পথ খুঁজে পায় তাঁর স্বাধীনতার ঘোষণার মাধ্যমে। ঘোষণা দিয়ে অস্ত্র ধরেছিলেন পাকিস্তান সেনাদের বিরুদ্ধে। মানুষ সেদিন জানতে পেরেছিলেন জিয়াউর রহমানের নাম। স্বাধীনতার ঘোষক হিসাবে পরিচিত পায় জনতার মাঝে।
৯ মাস যুদ্ধের পর স্বাধীন হয়েছিল দেশ। শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে ফিরে আবারো রাজনৈতিক নেতৃত্বের আসনে। দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল শেখ মুজিবুর রহমানের কর্তৃত্বে। চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছিলেন দেশ পরিচালনায়। শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের চুরি, লুটপাট, দুর্নীতি, সন্ত্রাসে মানুষ ছিল অতীষ্ঠ। দুর্নীতি ও দু:শাসনে মাধ্যমে দেশের মানুষকে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল দুর্ভিক্ষের দিকে। রাস্তার পাশে ডাস্টবিনে কুকুর আর মানুষের খাবার নিয়ে টানাটানির দৃশ্য প্রকাশিত হয়েছিল তৎকালীন পত্র-পত্রিকায়। শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনের অবসানের পর ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লবের মাধ্যমে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছিলেন জিয়াউর রহমান।
দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে কঠোর পরিশ্রমে নামেন তিনি। দুর্ভিক্ষ কবলিত একটি দেশের মানুষকে মাত্র সাড়ে ৪ বছরে উন্নয়নের পথ দেখিয়েছেন। চরম দু:শাসন থেকে সুশাসনের দিকে এগিয়ে গিয়েছিল দেশ। দ্রব্যমূল্য কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণ করে মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে এসেছিলেন।
সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে শেখ মুজিবুর রহমান দেশকে একদলীয় বাকশাল কায়েম করেছিলেন। মানুষের কথা বলার অধিকার থেকে শুরু করে সব অধিকার কেড়ে নিয়েছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। সেনাবাহিনীর প্যারালাল রক্ষীবাহিনী গঠন করে আগাম ইনডেমনিটি দেওয়া হয়েছিল। এই বাহিনীর অত্যাচারের বিরুদ্ধে কোন আদালতে প্রশ্ন উত্থাপন করার সুযোগ নেই মর্মে আগাম ইনডেমনিটি দিয়ে আইন তৈরি করেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। এই বাহিনীকে বিলুপ্ত করে দেশে গণতান্ত্রিক শাসন ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেন জিয়াউর রহমান। সব রাজনৈতিক দলের রাজনীতি করার অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্র চর্চার পথ সুগম করেন তিনি।
চতুর্থ সংশোধনীর পর শেখ মুজিবুর রহমান সকল পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত চারটি পত্রিকা রাখা হয়েছিল শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনের গুণকীর্তন করার জন্যে। সিপাহি-জনতার জাতীয় বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতা পাওয়ার পর জিয়াউর রহমান গণমাধ্যমের অধিকার ফিরিয়ে দেন। মুক্ত সাংবাদিকতা চর্চার পথ খুলেছিল জিয়াউর রহমানের নির্দেশনায়।
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ করে শেখ মুজিবুর রহমান সব ক্ষমতা নিজের হাতে নিয়েছিলেন। বিচারক নিয়োগ ও বরখাস্তের ক্ষমতা ছিল শেখ মুজিবুর রহমানের নিয়ন্ত্রণে। জিয়াউর রহমান বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। এক কথায় রাষ্ট্রের প্রতিটি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী করে দেশকে সুশাসনের পথে এগিয়ে নিতে জিয়াউর রহমান অনেক বৈপ্লবিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কর্মের মাধ্যমে তিনি অর্জন করেছিলেন ঈর্শনীয় জনপ্রিয়তা। তাঁর কর্মের মাধ্যমেই তিনি বেঁচে আছেন এবং বেঁচে থাকবেন। জিয়াউর রহমানের জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করেই তার প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল বিএনপি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ ভোটে মানুষের সমর্থন নিয়ে বারবার ক্ষমতায় গিয়েছে।
ভোটের অধিকার হারা মানুষ আজো একজন জিয়াউর রহমানকে খুঁজেন। দেশের বর্তমান দু:শাসনের কারণেই মানুষ প্রতিমূহুর্তে স্মরণ করেন জিয়াউর রহমানকে।