আরপিও সংশোধন: জামানত বাড়ছে, পলাতক আসামির ভোটে বাধা

আদালত কর্তৃক পলাতক ঘোষিত কোনো আসামি আর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। এমন বিধান যুক্ত করে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গত মঙ্গলবার এই প্রস্তাব পাঠানো হয়।

বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের লোগো

প্রস্তাবটি আইনে পরিণত হলে, কোনো ব্যক্তি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পরও পলাতক আসামি হিসেবে ঘোষিত হলে তার সংসদ সদস্য পদ বাতিল হয়ে যাবে। আইন অনুযায়ী, কোনো মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়ার পর আসামি আদালতে হাজির না হলে এবং পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়েও তাকে পাওয়া না গেলে আদালত তাকে পলাতক ঘোষণা করতে পারে।

প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে আরও বেশ কিছু নতুন শর্ত যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, প্রার্থীর জামানতের পরিমাণ ২০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা, মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দেশ ও দেশের বাইরে থাকা সম্পদের হিসাব এবং সর্বশেষ বছরের আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা। হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দিলে প্রার্থিতা বাতিল এমনকি নির্বাচিত হওয়ার পর সংসদ সদস্য পদ হারানোর বিধানও রাখা হয়েছে।

রাজনৈতিক দলগুলোর জন্যও নতুন নিয়ম প্রস্তাব করা হয়েছে। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে একটি রাজনৈতিক দল বছরে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা অনুদান নিতে পারবে। তবে অনুদানের পরিমাণ ৫০ হাজার টাকার বেশি হলে তা অবশ্যই ব্যাংকের মাধ্যমে গ্রহণ করতে হবে।

তবে নির্বাচনে পলাতক আসামিদের অযোগ্য ঘোষণার এই প্রস্তাব নিয়ে অতীতে ইসির অবস্থান ভিন্ন ছিল। সম্ভাব্য রাজনৈতিক অপব্যবহারের আশঙ্কায় ইসি এই প্রস্তাবের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছিল। তবে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ জানিয়েছেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনার পর তারা এখন মনে করছেন, এই বিধানটি থাকা দেশের জন্য ভালো হবে। ভবিষ্যতে এর অপব্যবহার হলে বিষয়টি পর্যালোচনা করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

প্রস্তাবিত সংশোধনীতে সংসদ নির্বাচনে অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সুযোগটি বাদ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। যদিও নির্বাচন কমিশনার জানান, তারা এই বিধান যুক্ত করার কথা ভাবলেও আপাতত তা করছেন না এবং ভবিষ্যতে এটি যুক্ত করা হতে পারে।

নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রেও বেশ কিছু পরিবর্তনের প্রস্তাব এসেছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো—সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সদস্যদের সংজ্ঞাভুক্ত করে তাদের ভোটকেন্দ্রে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়া। এ ছাড়া কোনো আসনে একক প্রার্থী থাকলে ‘না’ ভোটের ব্যবস্থা রাখা, ভোট বন্ধে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা বাড়ানো এবং প্রিসাইডিং কর্মকর্তার ক্ষমতা চূড়ান্ত করার মতো বিষয়গুলোও রয়েছে প্রস্তাবে।

প্রস্তাব অনুযায়ী, ভোটকেন্দ্রে সংবাদকর্মীসহ কে কতক্ষণ থাকতে পারবেন, তা নির্ধারণের ক্ষমতা প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে সাংবাদিকদের উদ্বেগ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘ইনশা আল্লাহ সেই ইলেকশন বাংলাদেশে আর হবে না।’ তিনি একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাস দেন, যেখানে ভোটার, এজেন্ট, সাংবাদিক এবং পর্যবেক্ষকদের যথাযথ উপস্থিতি থাকবে।

Source: https://www.bangla.24livenewspaper.com/post-142787

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here