প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলগুলোর দিকে প্রশ্ন রেখে বলেছেন, তারা আমাকে উৎখাত করবে সেটা ঠিক আছে, কিন্তু পরবর্তীতে কারা বা কে আসবে সেটা কি তারা ঠিক করতে পেরেছে? কাকে তারা আনতে চায় তা স্পষ্ট নয় বলেই তারা কেউই জনগণের সাড়া পাচ্ছে না। আমি এটাও বিশ্বাস করি জনগণ যতক্ষণ চাইবে ততক্ষণই আমরা ক্ষমতায় থাকবো। কারণ জনগণের ভোটেই আমরা নির্বাচিত হয়ে এসেছি। আর কিছু দল নির্বাচন বর্জন করে তার কারণ আসলে নির্বাচন করার মতো সক্ষমতা তাদের নেই। নির্বাচন করার উপযুক্ততা না থাকায় ছুতো খুঁজে নির্বাচন বর্জন করে- এটাই আসল কথা।
গত ৭ই জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু হয়েছে এবং এতে জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত হয়েছে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, তাদের দেশে প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।
তাদের আগে নিজের ঘর সামলানো উচিত। কোনো দেশের নাম উল্লেখ না করেই প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক দেশে তো নির্বাচন হচ্ছে আমরা দেখবো। আমরা অবজারভার টিমও পাঠাবো। দেখি কেমন নির্বাচন হয়। সেখানকার মানুষ কেমন ভোট দেয়, আমরা দেখবো। আর আন্দোলন দমনে যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশ যা করেছে, আমার মনে হয় এখন আমাদের পুলিশ কিন্তু আমেরিকান স্টাইলে আন্দোলন দমানোর ব্যবস্থাটা নিতে পারে। নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর তৎপরতা এবং নতুন সরকারকে অভিনন্দন জানানো নিয়ে অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনটা যাতে না হয় সেজন্য অনেক চেষ্টা করা হয়েছে। কারও কারও মনে একটু হতাশা ছিল আমি জানি। তবে আমার শক্তি হচ্ছে দেশের জনগণ। কাজেই জনগণের শক্তির ওপর আমি সব সময় বিশ্বাস করেছি। এটাও বিশ্বাস করেছি, জনগণ যতোক্ষণ চাইবে ততক্ষণই থাকবো ক্ষমতায়।
নির্বাচন করার সক্ষমতা নেই বিএনপি’র
এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বিএনপি’র প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, এখন অনেকগুলো রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জন করছে। এই বর্জন করে কেন, আসলে নির্বাচন করার মতো সক্ষমতা তাদের নেই। নির্বাচন করতে হলে যেমন সংসদ নির্বাচন করতে হলে আপনাকে তো জনগণকে দেখাতে হবে আপনার পরবর্তী নেতৃত্ব কে আসবে বা প্রধানমন্ত্রী কে হবেন কিংবা নেতা কে হবেন। একটা নেতা তো দেখাতে হবে। আপনার কাছে যদি উপযুক্ত নেতা না থাকে, তখন তো আপনাকে একটা ছুতো খুঁজতে হয়। এই যে ইলেকশন করলাম না, বিরাট ব্যাপার দেখালাম। বাস্তবতা তো সেটাই। সরকার প্রধান বলেন, একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে যদি পাবলিকের কাছে নেতা হিসেবে দেখান, তারা তো সেটা মেনে নেবে না। পলাতক আসামিকে তো পাবলিক মেনে নেবে না। রাজনীতি করতে গেলে তো ঝুঁকি নিতে হয়। পঁচাত্তরের পর আমাকে দেশে আসতে দেবে না। রেহানার (জাতির পিতার কনিষ্ঠকন্যা শেখ রেহানা) তো পাসপোর্টও রিনিউ করে দেয়নি। আমার বাবার খুনিরা পুরস্কারপ্রাপ্ত, যুদ্ধাপরাধী খুনিরা ক্ষমতায়। ওই অবস্থায় তো আমি দেশে ফিরে এসেছি। আমার ওপর বারবার আঘাত এসেছে। কিন্তু আমি বেঁচে গেছি। এতবার বেঁচে গেলাম কেন, এটা হয়তো অনেকের ভালো লাগে না। সবকিছু নিজেরা নিয়ে নেবো, নেতাকর্মীদের জন্য কিছু রাখবো না; এটা তো হয় না।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন প্রভাবমুক্ত রাখতেই মন্ত্রী-এমপি’র পরিবারের সদস্যদের প্রার্থী না হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অবশ্য পরিবার বলতে তিনি ‘নিজে (মন্ত্রী বা এমপি), তার স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েকে’ বুঝিয়েছেন বলেও ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, নির্বাচনকে প্রভাবমুক্ত রেখে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক। সেক্ষেত্রে যারাই জিতে আসে আসুক, মানুষ যাকে চাইবে সে-ই আসবে। সংবাদ সম্মেলনের প্রশ্নোত্তর পর্বে এমপি-মন্ত্রীদের পরিবারের সদস্যদের নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হলেও তারা শোনেননি এমন মন্তব্য করে এ বিষয়ে এক সাংবাদিক প্রধানমন্ত্রীর মত জানতে চাইলে সরকারপ্রধান বলেন, ফ্যামিলি ফর্মুলা কী? নিজে, ছেলে-মেয়ে স্ত্রী; এই তো? এর বাইরে তো পরিবার হয় না। একবার হিসাব করেন তো, কয়জনের (মন্ত্রী-এমপি) ছেলে-মেয়ে-স্ত্রী ভোটে দাঁড়িয়েছে। এটা বলার কারণ হচ্ছে, আমরা চাইছি নির্বাচনটা প্রভাবমুক্ত যেন হয়, মানুষ যেন স্বাভাবিকভাবে ভোটটা দিতে পারে। সেটাই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য। এ সময় নির্বাচনে প্রার্থিতায় আওয়ামী লীগের কর্মীদের অগ্রাধিকারের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, দলে অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে এক একটা জায়গায়, তারা আগে থেকেই যিনি এমপি হয়েছেন তারও বহু আগে থেকে নির্বাচন করে কেউ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, কেউ পৌর চেয়ারম্যান, সেরকম ট্রেডিশনালি আছে। তাদের আমরা মানা করি কীভাবে? তবে এটা ঠিক হয়তো এক জায়গায় বউকে দিলো, আরেক জায়গায় ছেলেকে দিলো, আরেক জায়গায় মেয়েকে- এটা তো ঠিক না। আমি সেটাই বলতে চেয়েছি, আমাদের নেতাকর্মীদের। আমাদের কর্মীদেরও মূল্যায়ন করা উচিত। সবকিছু নিজেরা নিয়ে নেবো, নেতাকর্মীদের জন্য কিছু রাখবো না- এটা তো হয় না। সেই কথাটা আমি বলতে চেয়েছি। আর যেন বেশি প্রভাব না ফেলে। সবাই দাঁড়িয়েছে, ইলেকশন করছে। এর লক্ষ্যটা হলো নির্বাচনটাকে অর্থবহ করা।
পরবর্তীতে কে আসবে সেটা কি ঠিক করতে পেরেছে?
এক প্রশ্নের জবাবে দেশের বাম রাজনৈতিক দলগুলো তাদের আদর্শ থেকে ৯০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, বাম দলগুলো ৯০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আমরা সব সময় মনে করি, অতি বাম খুব মানেই প্রোগ্রেসিভ দল, তারা খুবই গণমুখী দল। আমার প্রশ্নটা হচ্ছে, ঠিক আছে তারা আমাকে উৎখাত করবে। পরবর্তীতে কে আসবে তাহলে? সেটা কি ঠিক করতে পেরেছে? সেটা আমার প্রশ্ন, কারা আসবে? কে আসবে? কে দেশের জন্য কাজ করবে? কাকে তারা আনতে চায়? সেটা কিন্তু স্পষ্ট না। আর সেটা স্পষ্ট না বলে তারা কিন্তু কেউই জনগণের সাড়া পাচ্ছে না। তিনি বলেন, আন্দোলন করে যাচ্ছে কেউ ফিউগেটিভ হয়ে বিদেশে বসে। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি, সেই ডিজিটাল বাংলাদেশের বদৌলতে প্রতিদিন অনলাইনে আন্দোলন-সংগ্রাম করেই যাচ্ছে। নির্দেশ দিয়েই যাচ্ছে। সেখানেও প্রশ্ন আছে। যারা আন্দোলন করার করুন, আমরা তো বাধা দিচ্ছি না!
তাদের কাছ থেকেই আবার মানবাধিকারের কথা শুনতে হয়, সবক নিতে হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের দেশে এই যে প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, গুলি করে একেবারে সাধারণ নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে, এসব তো তাদের দেখা উচিত। নিজের ঘর আগে সামলানো উচিত। আমেরিকায় বিভিন্ন স্কুল, বিভিন্ন শপিং মল, রেস্টুরেন্টে অনবরত গুলি হচ্ছে, আর মানুষ মারা যাচ্ছে। এমন কোনো দিন নেই বোধ হয়, আমেরিকায় মানুষ না মারা হচ্ছে। তাদের সেদিকে নজর দেয়া উচিত। আমেরিকায় বাংলাদেশি নিহত হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদ করে শেখ হাসিনা বলেন, এর আগেও আমাদের বাংলাদেশি কয়েকজনকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা প্রতিবাদ করেছি এবং বিচার করে তারা আমাকে জানিয়েছে। আমাদের যেটুকু করার, সেটুকু আমরা করে যাচ্ছি। শুধু এখানেই নয়, আমেরিকায় বসেও প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে। এ সময় সমপ্রতি ফিলিস্তিনের ওপর ইসরাইলি হামলার প্রতিবাদে বিভিন্ন আন্দোলন দমন করতে আমেরিকার পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি, আমরা যদি আমাদের পুলিশকে বলে দেই, আমেরিকার পুলিশ যেভাবে আন্দোলন থামায়, সেটা অনুসরণ করতে পারে। সেটা করতে পারি? তিনি বলেন, আমরা তো পুলিশকে ধৈর্য ধরতে বলেছিলাম। সেই ২৮শে অক্টোবর ২০২৩ সালে আমি তো পুলিশকে বলেছিলাম ধৈর্য্য ধরতে। ফল হয়েছে আন্দোলনের নামে তারা পুলিশকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে। সেই সঙ্গে তাদের হাসপাতালে আক্রমণ, গাড়ি পোড়ানো। কাজেই আমার মনে হয়, এখন আমাদের পুলিশ কিন্তু আমেরিকান স্টাইলে আন্দোলন দমানোর ব্যবস্থাটা নিতে পারে। আমার মনে হয়, সাংবাদিকরা এ ব্যাপারে আমাকে সমর্থন করবেন।
ফিলিস্তিনে গণহত্যার বিরুদ্ধে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আওয়ামী লীগের উদ্যোগে কোনো বিক্ষোভের আয়োজন করা হবে কিনা, এই প্রশ্নের জবাবে দলটির সভাপতি বলেন, যেখানে মানুষ নির্যাতিত হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ দাঁড়াচ্ছে। আমরা সব সময় ফিলিস্তিনিদের পক্ষে আছি। যেখানেই যাই আমার কথা আমি বলবোই। যেভাবে গণহত্যা চলছে এটা অমানবিক। যুক্তরাষ্ট্রের ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভকারীদের দমনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা নাকি গণতন্ত্রের একটা অংশ, সেটাও আমাদের শুনতে হয়। যেভাবে একজন প্রফেসরকে ধরে মাটিতে ফেলে হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে গ্রেপ্তার করা হলো, ২০২১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পরপরই যেভাবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর বিএনপি’র সন্ত্রাসী ও পুলিশ বাহিনী অত্যাচার করেছিল, এটা সেই অত্যাচারের কথাটাই মনে করিয়ে দেয়। আবার তাদের (যুক্তরাষ্ট্রের) কাছ থেকেই আবার মানবাধিকারের কথা শুনতে হয়, সবক নিতে হয়। এটাই হচ্ছে সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের।
যত বাধাই আসুক আমরা সে বাধাটা উৎরে যেতে পারি
সাংবাদিকদের একাধিক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা জনগণের ভোটেই নির্বাচিত হয়ে আসছি ক্ষমতায়। আমাদের দল তো অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী কোনো মিলিটারি ডিকটেটরের পকেট থেকে বের হয়নি। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে সামনে রেখে দেশের মানুষ যে শোষণ-বঞ্চনার শিকার হচ্ছিলো, তার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর জন্য আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সব সময় মানুষের কল্যাণে কাজ করে যায় এবং এটা প্রমাণিত সত্য। সে কারণে যত বাধাই আসুক আমরা সে বাধাটা উৎরে যেতে পারি, যত চক্রান্তই হোক তা পাস কাটিয়ে দেশের মানুষকে নিয়ে বিজয় নিয়ে আসি। সেটা স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধের বিজয় থেকে এই নির্বাচন সবকিছু কিন্তু প্রমাণিত।
প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, আপনারা সাংবাদিক, আপনারাই বলেন ১৫ বছর আগে দেশের অবস্থাটা কী ছিল? এখন কী কোনো পরিবর্তনই হয়নি। কেউ যদি না দেখে আমাদের তো কিছু করার নেই। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের কিছু লোক আছে সারাক্ষণ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কান ভারি করে। তারা এখন অনেক জ্ঞানী-গুণী-বুদ্ধিজীবী। তাদের মতামত সারাক্ষণ বলতেই থাকে। মানুষ তো প্রভাবিত হয়, এটা স্বাভাবিক। দেশের মানুষ অনেকে প্রভাবিত হয়, বিদেশে তো হবেই। তবে সাধারণ মানুষগুলো কিন্তু হয় না, তারা ঠিক আছে। তাদের আত্মবিশ্বাস আছে। জনগণের অধিকার নিশ্চিত করেই আমরা নির্বাচন করেছি।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সহযোগিতার আশ্বাস থাই প্রধানমন্ত্রীর
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে থাইল্যান্ড সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও মিয়ানমার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মিয়ানমার থেকে রিফিউজি হিসেবে আমাদের এখানে আশ্রয় নিয়েছে, তাদের প্রত্যাবর্তনের ক্ষেত্রে আমরা আলোচনা করেছি। মিয়ানমারের ওপর থাইল্যান্ডের একটা প্রভাব আছে। সেক্ষেত্রে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি এটা আরও গভীরভাবে দেখবেন। প্রত্যাবর্তনের যতটা সহযোগিতা দরকার সেটা তিনি করবেন। এ ব্যাপারে তিনি কথা দিয়েছেন। মিয়ানমারের এই বিষয়টি নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন। বর্তমান যে পরিস্থিতি চলছে সেটা নিয়ে থাইল্যান্ডও বেশ উদ্বিগ্ন। তবুও এটা চেষ্টা চলবে, এটুকু আশ্বাস দিয়েছেন। থাইল্যান্ডের সঙ্গে আলোচনা প্রসঙ্গে সরকার প্রধান আরও বলেন, আলোচনার ক্ষেত্রে দেশের সার্বিক উন্নতি বিশেষ করে এসডিজি অর্জনের বিষয়টি এসেছে। পাশাপাশি আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে আমাদের সহযোগিতা প্রয়োজন, বিশেষ করে যোগাযোগটা বেশি প্রয়োজন। সেদিক থেকে থাইল্যান্ডের সঙ্গে আমাদের আলোচনাটা অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে হয়েছে। তাছাড়া ব্যবসা ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আমি থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার জন্য আহ্বান করেছি। আমরা হাইটেক পার্ক ও অর্থনৈতিক জোনে তাদের জায়গা দেবো। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীরা সহজে থাইল্যান্ডে যেতে পারবে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সহজে পণ্য রপ্তানি-আমদানি সহজভাবে করতে পারবো। ব্যবসা-বাণিজ্য, থাইল্যান্ড যেহেতু পর্যটনক্ষেত্রে অগ্রগামী সেই অভিজ্ঞতাটাও আমরা নিতে পারি। সেখানে বিনিয়োগ করতে পারবে, আমরা জায়গাও দিতে পারবো। পাশাপাশি আমাদের যে ৮০ মাইল লম্বা বালুকাময় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত রয়েছে, সেখানেও বিনিয়োগ করতে আহ্বান জানিয়েছি। সেখানে জায়গা চাইলে আমরা দেবো।
ঢাকাকেন্দ্রিক প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে যানজট কমে যাবে
এ সময় ঢাকার যানজট প্রসঙ্গে করা এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ট্রাফিক নিয়ম অনেকেই মানেন না, এটা যানজটের জন্য অন্যতম একটি সমস্যা। মানুষ যদি নিজে সচেতন না হয়, তাহলে আর কত সচেতন করা যাবে। সেটা হলো বাস্তবতা। তবে ঢাকা শহরকেন্দ্রিক প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে যানজট কমে যাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে যানজট শুধু কমবে না, জেলার সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ হবে। তাহলে সবাইকে আর ঢাকায় থাকতে হবে না। ঢাকার বাইরের উপ-শহরগুলো অনেকেই থাকবেন, ঢাকা এসে কাজ করে চলে যাবে। আর ডিজিটাল পদ্ধতিতো আছেই।
১৪ দলীয় জোট শেষ হয়ে গেছে কে বলল?
আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠার হীরকজয়ন্তী পালন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে সংবাদ সম্মেলনে দলটির সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দলের ৭৫ বছর পালন করবো ব্যাপকভাবে। বিশ্ব পরিস্থিতি বিবেচনা করে দেখবো, আমরা কোন কোন দেশকে আমন্ত্রণ করবো। ব্যাপক কর্মসূচি পালনের জন্য আমরা উপ-কমিটি করবো। উপমহাদেশের একটি দল ৭৫ বছর উদ্যাপন করছে এটা বড় কথা। এ সময় ১৪ দলীয় জোট প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ১৪ দলতো অবশ্যই আছে। থাকবে না কেন? তাদের সঙ্গে আমাদের সবসময় যোগাযোগ আছে। যোগাযোগ নেই তা তো না। দুই-চার জন বিক্ষিপ্তভাবে কী বলেছে, আমি জানি না। আমাদের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু সাহেবের উপর দায়িত্ব দেয়া আছে। তিনি যোগাযোগটা রাখেন। আমি শিগগিরই তাদের সঙ্গে বসবো।
মানুষের কেনার সক্ষমতা বেড়েছে
কৃষকদের সুবিধার কথা বিবেচনায় নিয়ে সমবায়ের ভিত্তিতে জমি চাষাবাদ এবং ফসল বাজারজাতকরণের সুযোগ রেখে ২০২০ সালে ‘জাতীয় কৃষি সমপ্রসারণ নীতিমালা’ অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। এই ব্যবস্থায় কৃষকদের জমি নিয়ে নেয়া হবে এমন ‘আস্থাহীনতার’ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন আমরা ডিজিটালাইজড করে ফেলেছি, যার জমি তারই থাকবে। কৃষকের জমি কখনো নেয়া হবে না। সমবায়ভিত্তিক কৃষি নিয়ে নিজের ভাবনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমবায়ভিত্তিক কৃষি ব্যবস্থায় সার, বীজ, চাষ ও মাড়াইয়ে সব ব্যবস্থাই সমবায়ের মাধ্যমে হবে। এখানে কৃষকের নিজের ব্যক্তিগতভাবে কোনো খরচ করতে হবে না। ওই ফসলের একটা অংশ সমবায়ের কাছে বা সরকারের কাছে থাকবে। যা পরবর্তী চাষের জন্য ব্যবহার করা হবে। সেভাবেই আমরা এটা করতে চাইছি। যেটা জাতির পিতা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু করতে দেয়া হয়নি। করতে দেয়া হলে আজ দেশে খাদ্যের ঘাটতি হতো না।
জমির মালিকানা যার, তারই থাকবে আশ্বস্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, এখন আমরা (ভূমি ব্যবস্থাপনা) ডিজিটালাইজড করে ফেলেছি, যার জমি তারই থাকবে। কৃষকের জমি কখনো নেয়া হবে না। এখন তো সমলয় চাষ হচ্ছে। সমলয়টা কিন্তু একই ধরনের (সমবায়ের মতো), অনেকটা সমবায়ভিত্তিক। একসঙ্গে চাষ করে যার জমির ভাগ সে নিয়ে নিচ্ছে। এতে আস্থা হারানোর কোনো বিষয় নেই। বরং আমি বলবো, যদি আমরা এভাবে চাষ করতে পারি, আমাদের ফসল উৎপাদন দ্বিগুণ-তিনগুণ হবে।
দেশে ফসল উৎপাদন বেড়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এখন কয়েক গুণ বেশি ফসল উৎপাদন করি। সেইসঙ্গে মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও বেড়েছে, খাদ্য চাহিদাও বেড়েছে। আগে যেখানে একবেলাও খাবার জোটাতে পারতো না, সেখানে এখন কম করে হলেও দুই বেলা, তিন বেলাও মনে হয় খেতে পারে। সেই সক্ষমতা বেড়েছে। আমরা তো হিসাব করি, কত ফসল হলো, কত মানুষ, কে কতটুকু খেতে পারে।
manabzamin