দায়িত্ব গ্রহণ করে নবনিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেছেন, ‘ভোটের প্রতি মানুষকে আগ্রহী করে ভোটকেন্দ্রে আনব। আমাদের নিয়ত সহি। ইনশাআল্লাহ আগামীতে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে।
গতকাল রোববার শপথ নেওয়ার পর বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রথম মতবিনিময় সভায় ভবিষ্যৎ নানা পরিকল্পনার কথা জানান নতুন সিইসি। এ সময় শপথ নেওয়া নতুন চার নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, আবদুর রহমানেল মাছউদ, তহমিদা আহ্মদ ও আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ এবং ইসি সচিব শফিউল আজিম উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ নবনিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অপর চার কমিশনারকে শপথ পড়ান। পরে তারা নির্বাচন কমিশনে আসেন। এ সময় তাদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়।
সিইসি নাসির উদ্দীন বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, গোপনীয়তা রক্ষা করে খুবই স্বচ্ছতার মধ্যে আমাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছে নাম চাওয়া হয়েছিল। এর পর বাছাই কমিটি থেকে যাচাই-বাছাই করে স্বচ্ছতার মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। দেশের এই ক্রান্তিকালে আমাদের এই নিয়োগ ভিন্ন মাত্রা যুক্ত করবে।
নিয়োগের স্বচ্ছতা প্রশ্নে সিইসি বলেন, ‘টেলিভিশনের স্ক্রল দেখে জানতে পেরেছি, সিইসি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছি। এটা কোনো রাজনৈতিক দলের পছন্দে নয়।’
সিইসি বলেন, আমরা শপথের সম্মান রাখতে চাই। আমার শপথ ভঙ্গ হবে না, আমি এই দায়িত্বকে জীবনের একটি বড় সুযোগ হিসেবে দেখছি। দেশের মানুষ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত, তারা অবাধ, নিরপেক্ষ একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সংগ্রাম করেছে, অনেক আন্দোলন করেছে, রক্তপাত হয়েছে। আমি তাদের একটি স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমি আমার সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। আমরা সবাই মিলে দেশবাসী ও রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতায় এ জাতিকে একটি স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে পারব। প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব হবে, তার আগে নয়।
তিনি বলেন, জাতির প্রত্যাশা পূরণের জন্য আমরা শতভাগ চেষ্টা করব। আমাদের যথেষ্ট সাহস আছে। আমরা বয়সে বৃদ্ধ হলেও মনের দিক দিয়ে খুবই শক্ত।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তিন নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ডামি নির্বাচন হয়েছে, ১৫৩ জন বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন। সেসব নির্বাচন মোকাবিলা করার জন্যই আল্লাহতায়ালা আমাদের পাঠিয়েছেন।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নতুন প্রজন্ম ভোট দেওয়ার জন্য বছরের পর বছর মুখিয়ে আছে। তাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। নতুন করে ভোটার তালিকা তৈরি করতে হবে। নির্বাচন আইন সংস্কার করতে হবে। এ বিষয়ে সংস্কার কমিশন কাজ করছে। আগে তাদের পরামর্শ আসুক। এর মধ্যে যেগুলো গ্রহণযোগ্য, সেগুলো আমাদের বাস্তবায়ন করতে হবে।
কবে নাগাদ নির্বাচন দেবেন– সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, নির্বাচন নিয়ে দিনক্ষণ তো এখন বলা যাবে না। আগে দায়িত্বটা নিই, কাজকর্ম বুঝে নিই– তারপর জানানো হবে।
আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলীয় জোটকে ভোটে আনা হবে কিনা– জানতে চাইলে সিইসি বলেন, নির্বাচন সংস্কার কমিটির সুপারিশ আসুক, আওয়ামী লীগ নিয়ে অনেক বিতর্ক চলছে, আগে বিতর্কের বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে ফয়সালা হোক। আমরা সে জন্য অপেক্ষা করছি। ফয়সালা হলে আপনারা দেখতে পারবেন।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধানের কোনো রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ নেই। আমাদের ওপর তাই কোনো রকম চাপ নেই। আমি নিশ্চিত সামনেও কোনো চাপ থাকবে না।
সরানো হলো বঙ্গবন্ধুর ছবি
সিইসির বিফ্রিংয়ের আগে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের ষষ্ঠ তলার সভাকক্ষ থেকে নামানো হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি। এ নিয়ে কোনো কর্মকর্তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
samakal