আমরা অনেকটাই পরাধীন জাতিতে পরিণত হয়েছি: মেজর (অব.) হাফিজ

নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে দলটির গঠিত ‘স্বাধীনতা দিবস উদ্‌যাপন কমিটি’র বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন কমিটির আহ্বায়ক হাফিজ উদ্দিন আহমেদ
নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে দলটির গঠিত ‘স্বাধীনতা দিবস উদ্‌যাপন কমিটি’র বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন কমিটির আহ্বায়ক হাফিজ উদ্দিন আহমেদসংগৃহীত

স্বাধীনতাযুদ্ধ নিয়ে যাদের কোনো কর্ম-পরিকল্পনা ছিল না, যারা স্বাধীনতার কথা চিন্তাও করেনি, তারা আজ স্বাধীনতা ও স্বাধীনতাযুদ্ধের সব কৃতিত্ব হাইজ্যাক করে বসে আছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর অব. হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম। তিনি বলেন, ‘আজ আমরা অনেকটাই পরাধীন জাতিতে পরিণত হয়েছি। বাংলাদেশে কী রাজনীতি চলছে, কারা আমাদের এই স্বকীয় স্বাধীনতা হরণ করছে, কারা ব্যাংক লুট করছে, কারা জনগণের ভোটাধিকার হরণ করছে, এটা সবাই জানে।’

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির গঠিত ‘স্বাধীনতা দিবস উদ্‌যাপন কমিটি’র বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে কমিটির আহ্বায়ক হাফিজ উদ্দিন আহমেদ এসব কথা বলেন।

দীর্ঘদিন পর বিএনপির অনুষ্ঠানে অংশ নেন মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে নানা আলোচনা থাকলেও শেষ পর্যন্ত ওই নির্বাচনে অংশ নেননি তিনি। সে সময় তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, নতুন দলে যোগ দিয়ে নির্বাচন করার প্রস্তাব থাকলেও তিনি এই নির্বাচন করছেন না। তিনি বিএনপি ছেড়ে যাবেন না। বিএনপিতেই থাকবেন তিনি।

নিজের এই অবস্থান তুলে ধরার পর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ভোটের আগেই চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়েছিলেন। চিকিৎসা শেষে ৩ মার্চ দেশে ফেরেন তিনি। ১১ বছর আগের একটি মামলায় ৫ মার্চ ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চান। সেদিন আদালত আবেদন নাকচ করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। ১০ মার্চ বিচারিক আদালত থেকে জামিন হলে সেদিনই মুক্তি পান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।

এসব ঘটনা পেরিয়ে আজ বিএনপির অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সাম্প্রতিক কালে বিএনপির ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের যেসব ঘটনা ঘটেছে, এমন নির্যাতন আর কোনো রাজনৈতিক দল ভোগ করেনি।

তিনি বলেন, ‘আমার যথেষ্ট বয়স হয়েছে, রাজনীতির অনেক পর্যায় দেখেছি, আমার মনে কোনো সন্দেহ নেই যে অতি অল্প সময়ের মধ্যে জনগণের সমর্থন নিয়ে বিএনপি আবারও রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হবে। যে গণতন্ত্রের জন্য আমরা যুদ্ধ করেছিলাম ১৯৭১ সালে, সেই গণতন্ত্র ও জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই বিএনপি সংগ্রাম করে যাচ্ছে। এই সংগ্রামে আমরা অবশ্যই বিজয়ী হব।’

‘বিএনপি একটি হতাশাগ্রস্ত দল’— আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই, বিএনপি মোটেই হতাশাগ্রস্ত দল নয়, বিএনপি দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল। যদি বিগত নির্বাচনটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতো, তাহলে রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকত আমাদের দল বিএনপি। যদি জনগণের স্বাধীনতা থাকত; ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার, ভোটাধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ থাকত, তাহলে তাদের এই কথা বলার সুযোগ আজকে থাকত না।’

মনের মাধুরী মিশিয়ে ইতিহাস রচিত হচ্ছে

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ বাঙালির সবচেয়ে বড় গৌরবের বিষয় উল্লেখ করে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, দুঃখের বিষয়, ৫৩ বছরে স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাসকে অনেক বিতর্কিত করে ফেলা হয়েছে। মনের মাধুরী মিশিয়ে কবিতাগ্রন্থ রচনার মতো করে ইতিহাসও প্রতিদিনই রচিত হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা যুদ্ধকালীন ছিল ৮০ হাজার… খুব বেশি হলে ১ লাখ। আজকে আমরা দেখতে পারছি, আড়াই লাখ মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের সূচনা কীভাবে হলো, এই সম্পর্কেও জনগণকে ধোঁয়াশার মধ্যে রাখা হয়েছে। বর্তমান শাসক দল আওয়ামী লীগ এই ইতিহাস বিকৃত করার জন্য দায়ী। তারা মুক্তিযুদ্ধকে হাইজ্যাক করেছে।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ২৫ মার্চে ভয়াবহ ক্র্যাকডাউনের পর দেশবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে চট্টগ্রাম থেকে অষ্টম ইস্ট বেঙ্গলের উপ–অধিনায়ক মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তাঁর এই ঘোষণা দেশবাসীকে উজ্জীবিত করেছে, অনুপ্রাণিত করেছে, বিশ্ববাসী এ সম্পর্কে জেনেছে।

জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে ক্ষমতাসীনদের বিরূপ মন্তব্যের উল্লেখ করে হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘এটিকে নিয়ে শাসক দল অনেক মশকরা করে থাকে… তারা বলে যে দারোয়ান ঘণ্টা বাজিয়েছেন। জিয়াউর রহমান অসীম সাহসী একজন যোদ্ধা ছিলেন, জেড ফোর্সের অধিনায়ক ছিলেন। এখন শিশুদের ধারণা দেওয়া হচ্ছে, তিনি ছিলেন পাকিস্তানি এজেন্ট। অথচ আমরা এখনো জীবিত আছি।’

এ সময় ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর জেড ফোর্সের অধিনায়ক মেজর জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে সিলেট জেলা মুক্ত করার ইতিহাস তুলে ধরেন হাফিজ।

‘মুক্তিযোদ্ধারা মামলা-হয়রানির শিকার’

সংবাদ সম্মেলনে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ১১ বছর আগে জনতা ব্যাংকের গাড়ি পোড়ানোর মামলার উল্লেখ করে বলেন, তাঁকে মিথ্যা মামলায় কারাভোগ করে আসতে হয়েছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘আমি কি জনতা ব্যাংকের বাস পোড়াতে গিয়েছিলাম? আমি ৩৪ বছর আগে এই ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলাম। অনেক ব্যাংকলুটেরা চেষ্টা করে ব্যাংকের টাকা মেরে দেওয়ার জন্য, আমি কঠিনভাবে সেটি প্রতিরোধ করেছিলাম। যে ব্যাংকের স্বার্থ রক্ষা করে এসেছি, সেই ব্যাংকের গাড়ি পুড়িয়েছি, এই অভিযোগে আজকে আমি কারাভোগ করে এসেছি।’

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিএনপি রাজধানী ও রাজধানীর বাইরে যথাযোগ্য মর্যাদায় স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করবে। এ উপলক্ষে হাফিজ উদ্দিনের সভাপতিত্বে স্বাধীনতা দিবস উদ্‌যাপন কমিটির প্রথম বৈঠক হয়। এতে স্বাধীনতা দিবস উদ্‌যাপন কমিটির সদস্যসচিব রুহুল কবির রিজভী, সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন, আবদুস সালাম আজাদ, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার, সাখাওয়াত হাসান, বিলকিস জাহান শিরীন, অনিন্দ্য ইসলাম, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী, ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাদেক খান উপস্থিত ছিলেন।

prothom alo