আন্দোলন জোরদারের ঘোষণা বিএনপি’র

mzamin

আন্দোলন জোরদার করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে বিএনপি। ঢাকায় সমাবেশ থেকে দলটির নেতারা এ প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। মে দিবস উপলক্ষে পহেলা মে প্রথম সমাবেশ করে দলটি। আর  দ্বিতীয় সমাবেশ করে গতকাল। গতকালের সমাবেশে সরকারের উদ্দেশ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, যত জুলুম, যত লুটপাট এবং যত টাকা চুরি করেছেন- ক্ষমতাচ্যুতির পরে শাস্তিটা কিন্তু আকাশচুম্বি। ক্ষমা চাইবেন, সুযোগ পাবেন না। সুতরাং যারা যেখানেই ক্ষমতার অপব্যহার করেন, জবাব একদিন দিতে হবে।

গতকাল রাজধানীর নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র উদ্যোগে ‘বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসাসহ নিঃশর্ত মুক্তি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, মহানগর দক্ষিণের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নবী উল্লাহ নবীসহ সকল রাজবন্দির মুক্তির দাবিতে’ মিছিলপূর্ব সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। সমাবেশ শেষে একটি মিছিল বের করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি। তাদের মিছিলটি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে কাকরাইল মোড় হয়ে ফকিরাপুল ঘুরে আবারো বিএনপি কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলে খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগানে স্লোগানে নেতাকর্মীরা নয়াপল্টন মুখরিত করে তোলেন।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমাদের হতাশার কোনো কারণ নাই। আমাদের কর্মীরা ক্লান্ত, কিন্তু হতাশ নয়। জেল-জুলুম-অত্যাচার ও নির্যাতনকে সহ্য করে এখনো বুক টান করে দাঁড়িয়ে আছে স্বাধীনতা রক্ষায়। এই স্বাধীনতা কেড়ে নেয়ার ক্ষমতা প্রতিবেশীদের নাই। কারও নাই। আর প্রতিবেশীদের দালালি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশিদিন টিকতে পারবেন না। যারা অন্যায়ভাবে বেশিদিন ক্ষমতায় থাকে তাদের পরিণতিটা কী, বিভিন্ন দেশের ইতিহাস পড়েন। তাই প্রধানমন্ত্রীসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যারা আমাদের সঙ্গে যতটুকু আচরণ করেন, এর ১০ ভাগের ১ ভাগও আচরণ আপনাদের সঙ্গে যদি করি তাহলে কী সহ্য করতে পারবেন? তা বহন করতে পারবেন?

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, শিগগিরই বিএনপি বিজয়ের পতাকা উড়াবে। দেশে থেকে বাংলাদেশের বিরোধী যারা আছে তাদেরকে যথাযোগ্যভাবে শাস্তি দেয়ার জন্য যথাসময়ই ব্যবস্থা হবে।
বিএনপি চলে রিমোট কন্ট্রোলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্য উল্লেখ করে গয়েশ্বর বলেন, হ্যাঁ বিএনপি তো রিমোট কন্ট্রোলেই চলেন। রিমোট কন্ট্রোলটা কার হাতে? বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার হাতে, নয় তো বা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের হাতে। আপনাদের (আওয়ামী লীগ) রিমোট কন্ট্রোলটা কোথায়? আপনার রিমোট কন্ট্রোলটা কোথায়? সরকারের রিমোট কন্ট্রোলটা কার হাতে? ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাতে? নাকি ‘র’ এর চিফে হাতে? তাদের রিমোট কন্ট্রোলেই তো আপনাদের চলতে হয়।

প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ৭ই জানুয়ারি থেকে কম ছিল বলে দাবি করেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
বিএনপি’র এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, আমাকে অনেকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসমর্থন শূন্যের কোঠায়। উনার পায়ের নিচে মাটি নাই। আসলেই পায়ের নিচে পাটি নাই। তিনি তো শ্বেত পাথরের ওপরে দাঁড়িয়ে থাকেন। উনি মাটির মানুষ চেনেন না। কারণ তিনি মাটিতে হাঁটেন না। আর জনগণকে তার দরকার নাই। তার যাদের দরকার তারা তো আছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের অনেক কথা বলার আছে। গত ১৫টি বছর অনেক কথা বললাম। কিন্তু কথায় কোনো কাজ হবে না। কাজ করতে হলে কিছু করতে হবে। বলাটা কমিয়ে দিতে হবে। আসল কাজটা আপনাদের (নেতাকর্মী) করতে হবে। এই সরকারকে যদি আপনি ক্ষমতায় বসে রেখে বছরের পর বছর মিটিং-মিছিল করেন, সেখানে লক্ষ লক্ষ লোক হবে- কিন্তু সরকার তার জায়গাতেই থাকবে।

সমাবেশে অংশ নিতে ব্যানার, ফেস্টুনসহ মিছিল সহকারে বিকাল পৌনে ৩টা থেকে দলটির হাজার হাজার নেতাকর্মী নয়াপল্টনে জড়ো হন। খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে আসেন তারা। এ সময় তারা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিসহ সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেন। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নয়াপল্টন ও এর আশপাশের এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে সরগরম হয়ে ওঠে।

এদিকে সমাবেশকে ঘিরে নয়াপল্টন ও এর আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পাশাপাশি সাদা পোশাকেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দেখা গেছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সতর্ক অবস্থানে ছিলেন তারা।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি’র সদস্য সচিব আমিনুল হক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র সিনিয়র সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোনায়েম মুন্না, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, জাসাসের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন রোকন, ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহিয়া প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

এ ছাড়া সমাবেশে বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, সহ-প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসানসহ বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

manabzamin