আনোয়ারুল আজীমকে ধরিয়ে দিতে ২০০৭ সালে পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারি করেছিল বাংলাদেশ পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে দেশের আদালতেও তখন গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছিল। এরপরও তিনি পলাতক থাকায় ২০০৮ সালে চুয়াডাঙ্গার একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তাঁকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন।
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম গত ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন কমিশনে যে হলফনামা জমা দেন, তাতে তিনি নিজের বিরুদ্ধে ২১টি মামলা থাকার কথা উল্লেখ করেন। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে মামলাগুলোর কোনোটিতে খালাস, কোনোটিতে অব্যাহতি পান তিনি, সে বিষয়টিও হলফনামায় তুলে ধরেন। এখন ভারতের কলকাতায় তাঁর খুন হওয়ার ঘটনার প্রেক্ষাপটে দুই দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রগুলো বলছে, এর পেছনে সীমান্তে চোরাচালান-সংক্রান্ত বিরোধের বিষয় থাকতে পারে।
আনোয়ারুল আজীমের বিরুদ্ধে এমন নানা অভিযোগের মধ্যে তিনি কীভাবে তিন দফায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন; তাঁকে দেশের অন্যতম একটি প্রধান দল আওয়ামী লীগই–বা কীভাবে মনোনয়ন দিয়ে আসছে, এখন এসব প্রশ্ন সামনে এসেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, রাজনৈতিক দলের দুর্বলতার কারণেই নানা ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ ওঠার পরও একজন ব্যক্তি সংসদ সদস্য হওয়ার সুযোগ পান। সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, দলের দুর্বলতা আছে বলেই ২১টি মামলা থাকার পরও আনোয়ারুল আজীমকে বারবার মনোনয়ন দিতে হয়েছে।
আনোয়ারুল আজীমের আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার বিষয়েও নানা আলোচনা ছিল। ১৯৮৮ সালে তৎকালীন বিএনপি নেতা আবদুল মান্নানের হাত ধরে রাজনীতিতে আসেন আনোয়ারুল আজীম। সেই আবদুল মান্নান যখন ১৯৯৫ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দেন, তখন তাঁর সঙ্গে আনোয়ারুল আজীমও আওয়ামী লীগে আসেন।
তবে আনোয়ারুল আজীমকে ঘিরে যেসব প্রশ্ন উঠছে, সেগুলো আমলে নিতে চান না আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব। দলটির সূত্রগুলো বলছে, আনোয়ারুল আজীম রাজনীতির নানা সিঁড়ি পার হয়ে সংসদ সদস্য হয়েছেন। ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, যশোর ও খুলনার কিছু অংশ একসময় সন্ত্রাসের জনপদ ছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সেটা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। এ ব্যাপারে সরকারকে সহযোগিতা করেছিলেন আনোয়ারুল আজীম। এটাও তাঁকে সংসদের টিকিট পাওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে।
গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, হুন্ডি ব্যবসা, সোনা চোরাচালানসহ বিভিন্ন অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারি ছিল ২০০৮ সাল পর্যন্ত। এ কারণে তিনি ২০০৮ সালে দলীয় মনোনয়ন পাননি বলে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন। তবে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ইন্টারপোল থেকে তাঁর নাম বাদ দেওয়া হয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন, ফৌজদারি মামলার পরও কাউকে মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে থাকে। সেই যুক্তি কতটা গ্রহণযোগ্য, সে প্রশ্নও তোলা যেতে পারে। সাবেক নির্বাচন কমিশনার সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নির্বাচনী আইনেই অনেক ধোঁয়াশা রয়েছে, সে কারণে বিভিন্ন অভিযোগ থাকার পরও আনোয়ারুল আজীমের মতো কেউ কেউ বারবার সংসদ সদস্য হয়ে আসছেন।
prothom alo