আদানির বিদ্যুৎ বন্ধ হওয়া থেকে আমরা কী বুঝতে পারি

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব

আদানি গ্রপের কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ আছে এই মুহূর্তে। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ভারতের ঝাড়খণ্ডের আদানি গ্রুপের ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিটই পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। এখান থেকে আমাদের শিক্ষা কী, আমরা কী বুঝতে পারলাম?

১.
যে ইউনিটটি আগেই যান্ত্রিক রক্ষণাবেক্ষণে ছিল, সেটা ঘণ্টা মেপে মেরামতের বিল (ওভারহোলিং চার্জ) পাচ্ছিল। এখন দুটি ইউনিটই বন্ধ হওয়ায় পুরো কেন্দ্র থেকেই বিদ্যুৎ সরবরাহ একেবারে বন্ধ। কিন্তু আদানি শূন্য বিদ্যুতের বিপরীতেও পূর্ণ সক্ষমতার ক্যাপাসিটি চার্জ পাবে। রক্ষণাবেক্ষণের ঘোষণা দিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র বছরে ৬০ দিন বন্ধ রাখার সুযোগ পায়। আর চুক্তিমাফিক ওই সময়ে জন্যও ক্যাপাসিটি চার্জ পায়।

এই সময়টায় জ্বালানি হিসেবে আদানির কয়লা বাঁচবে। কিন্তু যান্ত্রিক সমস্যা থেকে বাংলাদেশের ক্যাপাসিটি চার্জে কোনো সাশ্রয় হবে না। বিদ্যুৎ দিতে না পারার চন্য আদানিদের জরিমানা করার বা দেওয়ার বিধান নেই। অথচ সার্ভিস (এসএলএ) একটি নির্দিষ্ট সময়ের বেশি বন্ধ থাকলে আয় কমে যায় (রেভিনিউ লিকেজ) হয়, তাই আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনযায়ী এসব ক্ষেত্রে সরবরাহকারীকে জরিমানা করা হয়।

২.
ভারতের নির্মিত দুটি বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র রামপাল ও আদানি। দুইটাই ঘন ঘন যান্ত্রিক ত্রুটিতে বন্ধ হয়। কারিগরি দুর্বলতার কারণে কেন্দ্রগুলোর প্ল্যান্ট ফ্যাক্টর কম। এরা দীর্ঘসময় একটানা সচল থেকে বিদ্যুৎ সরবারহ করতে পারে না।

মাত্র দেড় বছর মেয়াদি আদানি কেন্দ্র এই নিয়ে দ্বিতীয় দফা যান্ত্রিক ত্রুটিতে পড়েছে। অন্যদিকে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র কয়লা সংকটসহ নানা যান্ত্রিক ত্রুটিতে বন্ধ হয়েছে অন্তত আটবার। এসব ভারতের তত্বাবধানে তৈরি বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারিগরি সক্ষমতার নিম্নমানের নির্দেশক।

স্যাবোটাজের ভয়

বাংলাদেশের বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলো নিম্নমানের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে, মিথ্যা সক্ষমতার (ইনস্টলড ক্যাপাসিটি) বিপরীতে ক্যাপাসিটি চার্জ নিয়ে, বিদ্যুৎ খাতের ১ লাখ কোটি টাকার বেশি লুটেছে। পিডিবির গত বছরের বিদ্যুৎ উৎপাদনের তথ্য ঘেঁটে  দেখা গেছে, প্রায় ২১% বিদ্যুৎ উৎপাদন ইউনিট যান্ত্রিক ত্রুটিতে বন্ধ  ছিল, জ্বালানি সংকটে বন্ধ ছিল আরও ২৫%। কিন্তু সামিট, ইউনাইটেডসহ কোনো গ্রুপে আয় তাতে বন্ধ থাকেনি। তারা বরাবরের মতোই ক্যাপাসিটি চার্জ ও ওভারহোলিং চার্জ পেয়েছে।

সরকার আজ দুর্নীতির জন্য কাউকে ছাড় দেবে না বলছে। কিন্তু বিদ্যুৎ খাতের  কাঠামোগত দুর্নীতির চুক্তি যারা করেছে, তাদের বিচার না হতে তারাই আইন বানিয়ে দায়মুক্তি দিয়ে রেখেছে।

নিশ্চয়ই আদানিরা সিস্টেমটা জানে। তাই যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হওয়াকে আমি সন্দেহ করি মাঝে মাঝে। চুক্তিতে বিদ্যুৎ না দিয়েই পূর্ণ সক্ষমতার বিপরীতে ক্যাপাসিটি চার্জ পাবার বিধান যেহেতু দেওয়া আছে, সেহেতু সেটা তারা ভোগ করবেই। যে স্যাবোটাজ দেশীয় মাফিয়ারা করেছে, সেটা আদানিরা করবে না কেন?

Bangla outlook

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here